Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aayan Das

Others

3  

Aayan Das

Others

ফার্ষ্ট-বয়ের মা

ফার্ষ্ট-বয়ের মা

5 mins
9.7K


উৎকন্ঠা! এক ভয়ঙ্কর উৎকন্ঠা!

চৈতি র গলা দিয়ে যেন ভাত নামছে না।একটু পরেই বাবান এর স্কুলে ভর্তি হওয়ার ইন্টারভিউ।সঙ্গে বাবা মা কেও ইন্টারভিউ দিতে হবে।ঐ দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়েই বড্ড উদ্বেগ হচ্ছে।সে এবং সুমন্ত দুজনেই বাংলা মিডিয়াম।কেউই ভাল ইংরিজি বলতে পারেনা।অথচ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।এখানে বাংলা চলবেনা।

এ'কদিন বাবান কে পাখিপড়া করানো হয়েছে।কালারগুলো শেখানো হয়েছে।বাবান এখন শিখে গেছে কোনটা রেড্ কোনটা গ্রীন্ কোনটা ভায়োলেট্ আর কোনটা পার্পেল্।

চৈতি শিখিয়েছে ঐ দেখ মুন।বলতো কটা মুন?বাবান বলেছে,''-ওয়ান টা।''

-''বলতো কটা ফিঙ্গার?''

-''ফাইভ টা৷''

-''কটা আই?''

-''টু টা।''

বাবান কে শেখানো হয়েছে স্কাই,স্টার, সান, ট্রি,বার্ড সবকিছু।

ট্রেনে করে যেতে যেতে বাবান চিৎকার করে ওঠে,''-মা ঐ দেখো প্যাডি ফিল্ড!''

                               

বাবান কালারগুলো ঠিকঠাক চিনতে পারলেও আর কোনো প্রশ্নের কোনো উত্তরই দিলনা।তারপর লিখিত পরীক্ষা হল বাবা-মা এর।বিভিন্নরকম ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে অভিভাবকের রোজগার কত।চৈতি সুমন্ত কে কানে কানে বলল,''-একটু বাড়িয়ে লেখ।আমাদের যেন বড়লোক ভাবে।''লিখিত পরীক্ষার পর শুরু হল ভাইভা।

অবশেষে লটারির টিকিট পাওয়ার মত- বাবান সামনের দরজা দিয়েই স্কুলে ভর্তি হতে পারল।চৈতি ও সুমন্ত র যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।

নার্সারি তে সারাটা বছর বাবানের কেঁদে কেঁদেই গেল।সে কারো সাথে ঠিক মিশতে পারেনা,ভয় পায়।দুবার গার্জিয়ান কল হল।চৈতির মনের মধ্যে অশান্তির কালো মেঘ জমল।রেজাল্ট বেরোনোর দিন সে লজ্জায় প্রোগ্রেস রিপোর্ট টা তাড়াতাড়ি ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল।

নার্সারি তে ফার্ষ্ট হয়েছে দেবার্ক।দেবার্কর মা বিশ্বকাপ জয়ের হাসি নিয়ে বেরিয়ে এল।সে প্রোগ্রেস রিপোর্ট টি এমনভাবে ধরে আছে যেন সেটি একটি দর্শনীয় বস্তু।সে জনে জনে ডেকে তার মেধাবি ছেলের রেজাল্ট দেখাচ্ছে।

চৈতি র কান্না পেয়ে গেল।যদি বাবান টা ফার্ষ্ট হতে পারত..

'লোয়ার- প্রেপ' এর হাফইয়ার্লি পরীক্ষায় বাবান আচমকা সেকেন্ড হয়ে গেল।ম্যাম্ চৈতি কে ডেকে বললেন,''-মিসেস মিত্র ওর মধ্যে কিন্তু একটা স্পার্ক আছে।দেখবেন যেন নষ্ট না হয়ে যায়।''

চৈতি র কেমন যেন একটা জেদ চেপে গেল,একটা নেশা।ছেলেকে যেভাবেই হোক অ্যানুয়ালে ফার্ষ্ট হওয়াতেই হবে।সে সুমন্ত কে বলল,''-রান্নার লোক রাখো।আমাকে আরো বেশিক্ষন পড়াতে হবে।''

চৈতি র অক্লান্ত পরিশ্রমে অ্যানুয়ালে ফার্ষ্ট হয়ে গেল বাবান।

চৈতি উইম্বলডন ট্রফি হাতে নেওয়ার মত করে প্রোগ্রেস রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে-যেন কিছুই হয়নি,এমনটাতো কতই হয়,এমন মুখ করে মায়েদের প্রাতঃকালীন জটলার দিকে এগিয়ে গেল।

দেবার্ক র মা বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়েছিল।চৈতি নিতান্ত ক্যাজুয়াল ভাবে জিজ্ঞাসা করল,''-কি গো, ছেলে কেমন করল?''

''-ঐ করেছে একরকম,তোমার ছেলে?''

চৈতি প্রোগ্রেস রিপোর্ট টা সবার সামনে মেলে ধরল।যেন সেও প্রথমবার দেখছে এমন ভাব করে বলল,''-দেখছি তো লিখেছে ফার্ষ্ট।ধুর,এই নিচু ক্লাসে আবার ফার্ষ্ট সেকেন্ডের কোনো ভ্যালু আছে নাকি?''

রেজাল্ট দেখে সমস্ত মায়েদের মুখে নেমে এসেছে শ্মশানের স্তব্ধতা।চৈতীর এক অদ্ভুত শ্লাঘা বোধ হল।সে মনে মনে বলল,''-দেখ্, দেখ,ভাল করে দেখ,দেখবি আর জ্বলবি,লুচির মত ফুলবি।''

                                

'লোয়ার- প্রেপ' এর অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ফার্ষ্ট হওয়ার পর বাবান 'আপার- প্রেপ' এর সবকটি পরীক্ষাতেও ফার্ষ্ট হল।এরপর ক্লাস ওয়ান'এও ক্লাসে প্রথম হওয়া থেকে বাবান কে কেউ টলাতে পারলো না।

চৈতি র জীবনটা যেন নতুন এক খাতে বইতে লাগল।এতদিন তার কোমর পর্যন্ত চুল ছিল।একদিন হঠাৎই চৈতি র লম্বা বিনুনি বাতাসে অদৃশ্য হয়ে গেল।এতদিনের সালোয়ার কামিজ ছেড়ে সে যখন সাদা এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ পরে এবং চোখে স্টাইলিস্ট কালো ফ্রেমের চশমা পরে তার মেধাবি ছেলের সঙ্গে স্কুলের দিকে হেঁটে যায় তখন, তার বয়কাট চুলের প্রান্ত উড়তে থাকে হালকা হাওয়ায়,তারই ফাঁকে ফাঁকে খেলা করে সকালের রোদ।চৈতি অনেক চিন্তা করেই এই লুকে নিজেকে প্রকাশ করেছে।তাকে দেখে সত্যিই মনে হয় সে ফার্ষ্ট বয়ের মা।

চৈতি সম্প্রতি ভর্তি হয়েছে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসে।মায়েদের গাছতলার প্রভাতী কনফারেন্সে অন্যান্যদের মত সেও কেন শাশুড়ি বরের নিন্দে করবে!সে এখন ইংরিজি বাংলা মিশিয়ে কথা বলে,প্রায়ই সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে।মিসেস চৈতি মিত্রের কথা বাকি মায়েরা খুব মন দিয়ে শোনে,গুরুত্ব দেয়।হাজার হলেও ফার্ষ্ট বয়ের মা।নিশ্চয়ই কোনো স্পেশাল ট্রেনিং উনি ছেলেকে দিচ্ছেন যা অন্যরা দিতে পারেনা।

গতবছর টিচাররা অভিরূপ এর মা কে গার্জিয়ান মিটিং এ কিছু বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু, ইংরিজিতে কথা বলতে না পারার জন্য সে কিছু বলতে পারেনি।চৈতি এবার রেডি হয়ে আছে।এবার সে দেখিয়ে দেবে স্পিচ্ কাকে বলে।

একদিন মিসেস চৈতি মিত্র মায়েদের কনফারেন্সে বললে্‌''-ইংলিশ প্রোনাউনসিয়েসন ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। ইউ নো,না হলে উঁচুতে উঠে আর টাল সামলানো যায়না।''একথা শুনে বাকি মায়েরা সমস্বরে মাথা নাড়লো।অনেক মা-ই অভিরূপের মা কে ফলো করেন।অভিরূপরা কোনো রবিবার রাজারহাটের ওয়াক্স মিউজিয়মে গেলে বাকি মায়েরাও তার ছেলেমেয়ের বাবাকে জোর করে ওয়াক্স মিউজিয়মে নিয়ে যায়।নিশ্চয়ই ওখানে কিছু শিক্ষনীয় আছে,নাহলে অভিরূপরা কেন যাবে!অভিরূপের মা সবসময় শাড়ি এবং এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ পরেন বলে আজকাল অনেক মা-ই চুড়িদার এবং জিন্স ছেড়ে শাড়ি ধরেছেন।

                           

বাবান প্রতি রবিবার সকালে ড্রয়িং ক্লাসে যায়,সোমবার ক্যারাটে ক্লাস,বুধবার রিসাইটেশন ক্লাস আর শনিবার সুইমিং।সমস্ত বিষয়েই পারদর্শিতা লাভ করতে হবে।না হলে বড় হয়ে কল্কে পাবেনা।চৈতির বড্ড আক্ষেপ হয়।বাবা মা কী তাকে গানটাও শেখাতে পারতোনা? ছোটোবেলা থেকেই তাকে নিতান্ত সাধারন করে গড়ে তোলা হয়েছে।পড়াশুনোয় ছিল ব্যাকবেঞ্চার।শিক্ষকদের ভালবাসা কোনোদিনই পায়নি।বিয়ের পর সুমন্তর কাছেও গুরুত্বহীন।কোনো জায়গাতেই তাকে কেউ সম্মান বা শ্রদ্ধা করেনি।সব জায়গাতেই সে যেন এলেবেলে।চৈতি গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে।তারপর বহু প্রতীক্ষার পর সে খুঁজে পেয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।সে এখন তার ফার্ষ্টবয় ছেলের মা,এ প্রদীপ তাকে জ্বালিয়ে রাখতেই হবে।

মা বাবানের সঙ্গে সব জায়গায় যায়।স্যারদের সঙ্গে আলোচনা করে।মা পাশে না বসে থাকলে বাবানের কনসেনট্রেশন আসেনা।মায়ের প্রতি এই নির্ভরতা দেখে চৈতির বুক গর্বে ভরে ওঠে।সে বেঁচে থাকার এক নতুন মানে খুঁজে পায়।

ক্লাস থ্রি তে হাফইয়ার্লি পরীক্ষায় বাবান দু নম্বরের জন্য সেকেন্ড হয়ে গেল।সৌমাভ বলে কোনোদিন কিছু না হওয়া একটি ছেলে আচমকা ফার্ষ্ট হয়ে গেল।চৈতি র মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।কিন্তু সে যে অভিরূপের মা।সে কেন তার দুঃখ অন্যের কাছে প্রকাশ করবে?সে একমুখ হাসি নিয়ে সৌমাভর মায়ের পিঠ চাপড়ে বলল,''-কনগ্রাটস্! খুব খুশি হয়েছি।একটা টাফ কম্পিটিশন না থাকলে বাবান ও ঝিমিয়ে যাচ্ছিল।''সৌমাভ র মা যেন বিগলিত হয়ে গেল।

অ্যানুয়াল পরীক্ষার কদিন আগে চৈতির নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুমন্ত র মা এসে থাকলেন।বাবানের টনসিলের ধাত বলে তার জন্য আইসক্রিম নিষিদ্ধ।কিন্তু নাতির আবদার না রেখে ঠাকুমা পারে নাকি?

অতএব আইসক্রিম সেবন এবং তার ফলে তুমুল কাশি এবং পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগেরদিন ধুম জ্বর।

চৈতি সাপের মত হিসহিসে কন্ঠস্বরে সুমন্ত কে বলল,''-যদি বাবানের পরীক্ষা খারাপ হয়,তোমার মা কে কিন্তু আমি ছাড়ব না।তুমি আমাকে চেনোনা!''

সারারাত ধরে মাথায় জলপট্টি দিয়ে আর অ্যান্টিবায়োটিক ও প্যারাসিটামলের শ্রাদ্ধ করে সকালের দিকে বাবান মাথা তুলল।

সুমন্ত কোনো রিস্ক না নিয়ে মা কে বাড়ি থেকে বিদায় করেছে।বাবান কে স্কুলে ঢুকিয়ে চৈতি বাড়ি ফিরে এসেছে।ছেলেটা ভয়ঙ্কর দুর্বল হয়ে পড়েছে।ও কী পারবে ঠিকমত লিখতে?যদি না পারে?যদি পরীক্ষা ভাল না হয়?যদি ভাল নম্বর না পায়?যদি ফার্ষ্ট হতে না পারে?

চৈতির মনে হল সারা পৃথিবীটা দুলছে।যেন দশ রিখটার স্কেলের ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্প,যেন তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে,সে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে চোরাবালির অন্ধকারে।

ঠাকুরের সিংহাসন আলো করে বসে আছেন প্লাষ্টার অফ প্যারিসের লোকনাথ বাবা।চৈতি লোকনাথ বাবার পা ধরে হু হু করে কেঁদে ফেলল।

#positiveindia


Rate this content
Log in