Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Suravi Roy

Abstract

5.0  

Suravi Roy

Abstract

সমুদ্রকন্যা

সমুদ্রকন্যা

11 mins
10.4K


সাল 2350, 12th ডিসেম্বর, সকাল থেকে মেঘনার একবারে ফুরসত নেই, ব্রেকফাস্ট তৈরী, অনিকের অফিসের টিফিন তৈরী, রান্না নিয়ে পরে আছে। আবার আর ওপর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হয়েছে আর এক জ্বালা। সারাদিন ভাইবোনের মারপিট লেগেই আছে।

অনিক অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর মেঘনা একটু শান্ত হয়ে বসল। এর পর গেল রান্না ঘরের দিকে গেল। 

কিছুক্ষণ পর ছেলে সায়কের ঘর থেকে কিছু একটা ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পেল মেঘনা। মেঘনা সায়কের ঘরের দিকে যেতে যেতে মনে মনে বলল," এদের নিয়ে আর কি করব ভেবে পাই না। এই বোধ হয় শুরু হল ভাইবোনের মারপিট।...." মেঘনা ঘরে যেতেই সায়ক চিৎকার করে মাকে বলল," Mommm......see.... সিম্মু কি করেছে ...।

  সায়ক, সায়ক চ্যাটার্জি। মেঘনা আর অনিকের একমাত্র বড়ো ছেলে। বয়স বারো বছর হবে। আর সিম্মু হল সামুদ্রিকা চ্যাটার্জি , ডাক নাম সিম্মু। বছর তিনেকের ছোট্ট কিউট একটা মেয়ে। মেঘনা আর অনিকের একমাত্র মেয়ে। এই বারো বছরের ছেলে আর তিন বছরের মেয়ের মধ্যে মারামারির মীমাংসা করতে করতে মেঘনা সারাদিন হিমসিম খায়। অন্যদিকে অনিক একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, প্রায় সারাদিন অফিসের কাজে বাইরে থাকে। তাই এই সব ঝামেলা ওকে নিতে হয় না।সায়ক আর সামুদ্রিকা ছোট ছোট বাচ্চা হলে কী হবে, দুই জনেই সমান হিংসুটে। নিজের ভাইবোন হলেও কারুরই পরস্পরকে সহ্য হয় না।

 যাইহোক, মেঘনা সায়কের কথায় সামুদ্রিকার দিকে তাকিয়ে দেখল, একটা বই অর্ধেক ছেঁড়া, যার কিছু অংশ মাটিতে পড়ে আর কিছু অংশ সামুদ্রিকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে।

মেঘনা, সিম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল," তুই কি করেছিস? সিম্মু! ......দাদাই এর স্টোরি বুকটা ছিঁড়লি কেন??...." 

সিম্মু আদুরে সুরে বলল," মম্..., দাদাই আমার ব্লু - টেডি বিয়ারটার ব্ল্যাক নোজ্ টা ছিঁড়ে দিয়েছে।....তাই আমি দাদাই এর স্টোরি বুকটা ছিঁড়ে দিয়েছি।...বেশ্ করেছি!...

মেঘনা, মেয়ের কথা শুনে সায়কের দিকে কটমট করে তাকালো,আর সায়ক মুখটা কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইল। এবার মেঘনা বলল," সায়ক! তুই বুনুর টেডি বিয়ারে হাত দিয়েছিলি কেন?....সারাদিন তোদের ঝগড়া আর হিংসুটেমির জন্য তোদের দুজনের দুটো আলাদা রুম করে দিলাম কেউ কারো ঘরে যাবি না তাও বলে দিলাম তাও তুই বুনুর রুমে কেন গেছিলি??....." মেঘনা কথা শেষ না হতেই সিম্মু বলে উঠল ," বকো বকো...আরো বকো দাদাই কে.....খুব বদমাশ দাদাই...ছোট্ট বুনুটাকে সব সময়ই জালাই...." 

ব্যাস্ আর যায় কোথাই, এতক্ষণ সায়ক চুপ ছিল এবার চিল্লিয়ে উঠল," আর তুই আমাকে জালাস না???"....."মম্ !..... এই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অন্তত বাড়িতে একটা সন্তান মেয়ে থাকা বাধ্যতামুলক , না হলে মা-বাবাকে গ্রেফতার করা হবে। এই নিয়মটা যদি না থাকত না, তাহলে কবেই আমি বুনুকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতাম।" মেঘনা ছেলের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই সামুদ্রিকা আরো চিল্লিয়ে বলল, " আর আমি তোর প্রীয় প্রীয় জিনিসগুলো নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতাম আর তুই ওই গুলো আনতে যেতিস আর তখন আমি বাড়ির দরজাটা বন্ধ করে দিতাম আর তুই বাইরে বসে বসে ভ্যা-ভ্যা করে কাঁদতিস......." কথাটা বলেই সিম্মু ওর হাতে ধরা অর্ধেক বই ছেঁড়াটা ছুড়ে মারল সায়কের গায়ে। আর সায়ক গজগজ করতে লাগল।

এই ছোট্টো মেয়ের এই রকম কথা শুনে মেঘনা হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে না পেরে একটু গম্ভীর হয়ে সায়কে বলল," কি রে সায়ক তুই বুনুকে ফেলে দিবি??....তোর বুনুকে ভালো লাগে না? ? বুনু না হয়ে যদি ভাই হতো তাহলে তুই বেশি ভালোবাসতিস ভাইকে??..."

 সায়ক মুখটা একটু বেঁকিয়ে বলল, " নো! মম্..। ভাই হলে আগেই ফেলে দিয়ে আসতাম নাহলে শুধু বই বা খেলনা বাদ দিয়ে রুম, ড্রেস সব কিছু শেয়ার করতে হতো ভাই এর সাথে ...। ওহ! আমি পারতাম না....। কথাটা শেষ করেই সায়ক , সিম্মুর দিকে তাকিয়ে রাগে একটা চিনামাটির ফুলদানি ছুড়ে মারল। কিন্তু ফুলদানিটা সিম্মুর গায়ে না লাগলেও, মাটিতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

এই সব দেখে মেঘনা এবার ক্ষেপে গেল এবং দুই ছেলে-মেয়েকে চিৎকার করে বলল," তোরা কি পেয়েছিস বলতো???.......তোদের জন্য আর বাড়িতে একটা ভালো জিনিসও আর আস্ত থাকবে না....। আর যদি কেউ একটা কথাও বলেছিস! তাহলে তোদের দুজনকে আমি কি করি দেখ্ ।............." কথাগুলো শেষ না হতেই কোথাও থেকে একটা পোড়া গন্ধ সবার নাকে ভেসে আসতে লাগলো আর সিম্মু চিল্লিয়ে বলল," Mom...! something is burning! !!......"

সিম্মুর কথায় মেঘনার মনে পড়ল যে ও রান্না করতে করতে, এই দুই ভাইবোনের ঝগড়া মেটাতে এসেছিল....। " ও নো!!!....আমি নুডলস বানাচ্ছিলাম.....আর মনে হয় ওটাই পুড়ল ...তোদের জন্যই ....." কথাগুলো বলেই মেঘনা ছুটে রান্না ঘরের দিকে গেল।

দুই ভাইবোন সামনাসামনি মুখটা বেজার করে দাঁড়িয়ে থাকলো কারণ নুডলস ওদের দুজনেরই প্রীয় খাবার ......তাই পুড়ে গেলে ওরাই আর খেতে পাবে না। এমন সময়ে সায়ক বলে উঠল," সিম্মু তোর জন্যই নুডলসটা পুড়ল...।" 

সিম্মু আদুরে গলায় বলল," না। দাদাই তোর জন্যই নুডলস পুড়ল, তুই ই তো মম্ কে ডেকে আমার নামে নালিশ করছিলি....তোর জন্য পুড়েছে ........।

মেঘনা রান্না ঘর থেকে শুনতে পেল ওরা দু’জনেই আবার শুরু করেছে এবার মেঘনা রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে বলল," তোরা আবার শুরু করলি? ...এবার আর একটা কথাও বললে, আমি তোদের কাউকে একটুও নুডলস দেবো না। ....সবটাই আমি খেয়ে নেব....।"

  মায়ের কথা শুনে দুজনেই চুপ করে গেল। এবার সিম্মু আস্তে করে বলল," দাড়া , পাপ্পা আসুক। পাপ্পাকে সব বলে দেব.....হি হি!!" বলেই সিম্মু, সায়কের ঘর থেকে ছুটে পালাল। আর সায়ক মুখটা ফুলিয়ে ঘরে বসে রইল।

 কিছুক্ষণ পর মেঘনা সায়কের ঘরে এল, সায়কের ওই রকম মুখটা দেখে মেঘনার খুব হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু হাসলেই, মা হাসছে দেখে অতো বড়ো ছেলে কান্না শুরু করবে।

 মেঘনা নিজেকে সামলে নিয়ে সায়কে বলল," নুডলস তৈরী .....খাবি চল।" কথাটা বলে সায়কের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল মেঘনা।

খাবার টেবিলে পৌঁছে সায়কের মাথাটা আবার গরম হয়ে গেল। এসেই দেখল সামুদ্রিকা আগে থেকেই চেয়ারে বসে খিলখিল করে হাসছে।

  

এবার সায়ক রাগি রাগি মুখে মাকে বলল," মম্ । আমি এখানে খাব না। নুডলসটা আমার ঘরে দিয়ে এসো। "

মেঘনা বলল," এখানে বসে না খেলে গল্পটাও শুনতে পাবি না। শুধুমাত্র সিম্মু শুনবে।"

মায়ের কথা শুনে সায়ক চেয়ারে বসে পড়ল এবং খুব উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, " মম্। কি গল্প বলবে? বলো.... বলো....।" সামুদ্রিকা দাদার চেঁচিয়ে বলল," মম্। বলো..বলো...তাড়াতাড়ি বলো।

 মেঘনা বলল," সায়ক । তুই একটু আগে বলছিলি না যে ,প্রত্যেক পরিবারে একটা মেয়ে জন্মানো বাধ্যতামুলক। এটাই সরকারি নিয়ম।

কিন্তু এই নিয়ম কেন তৈরী করা হয়েছে জানিস??..."

 সায়ক একটু কৌতূহলী হয়ে বলল," Why mom??"

 মেঘনা বলল, " কেন এই নিয়ম!!.....এই গল্পই আজ আমি তোদের বলল.....।"

 দুই ছেলে-মেয়ের প্লেটে নুডলস দিয়ে মেঘনা ওদের এক কঠিন সত্য ঘটনা গল্পের আকারে বলা শুরু করলো।.........

    

   """আজ থেকে প্রায় তিনশো পঁচিশ বছর আগেকার কথা, ,,,সালটা আনুমানিক 2025, তখন ভারতে তথা সারা পৃথিবীতে চলছিল এক অভিনব ডিজিটাল যুগ। উন্নত মোবাইল, উন্নত মানের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ,নতুন নতুন আবিষ্কারে নেশার ফলে প্রত্যেকটা দেশ আকাশছোঁয়া উন্নতির কম্পিটিশন্ এ নেমেছিল। উন্নতিও করছিল ঠিক সেই ভাবে।......

    

কিন্তু এইরকম উন্নতির ফলে দেশে ডিজিটাল যুগের সূচনা হলে কি হবে, ,, মানুষের মনের ঘৃণ্য বর্বরতা লোপ পায়নি। সেটাও ওই ডিজিটাল যুগের উন্নতির সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল।....এই ডিজিটাল যুগে যতটাই বা উন্নতি হয়নি তার চেয়েও দশগুন ভাবে বেড়ে চলছিল কন্যা ভ্রুন হত্যা, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা।....এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । এই সময়ে মানুষ যুগের উন্নতির সাথে সাথে এতোটাই নৃশংস হয়ে উঠেছিল যে কন্যা ভ্রুন হত্যার সাথে সাথে কন্যা সন্তান গর্ভে ধারণকারী মাকেও মেরে ফেলা হত। আর সেই সময়ে ধর্ষণ আর শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার হাত থেকে আর মানুষের লোভ লালসার হাত থেকে ছয় মাসের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা কেউ ই ছাড় পেত না। যে পুরুষগুলো একসময়ে এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো ,তারাও এই সময়ে হয়ে উঠেছিল এক-একটা নারীখেকো রাক্ষস। সমাজের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেকটা নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।কয়েকজন পুরুষ যারা প্রথম থেকেই মেয়েদের গুরুত্ব বুঝতো তারাও চেষ্টা করেছিল এই নৃশংসতা বন্ধ করার। কিন্তু পারেনি। না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছিল তারা। 

 

  ভারত সরকার সহ অন্যান্য দেশের সরকার নানারকম নিয়ম-আইন করেও এই নৃশংসতা বন্ধ মেয়েদের বাঁচানোর আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্তু এই সবের মধ্যে যে মেয়েদের অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টিকর্তী মা দের সংখ্যা দিন দিন দুঃস্বপ্নের মতো কমে আসছিল। কিন্তু এইসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না ওই ডিজিটাল দুনিয়ার লোকের। এই নৃশংসতা বেড়ে চরম আকার ধারণ করে 2030 সালের দিকে। এই সময়ে যার মেয়ে জন্মাত, সেই মা নিজেই সেই কন্যা সন্তান গলা টিপে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করত শুধুমাত্র সমাজের এই নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। এই ভাবেই হঠাৎই মেয়ের সংখ্যা কমে যায়। সারা পৃথিবীতে এক কোটি ছেলের মধ্যে মাত্র একটা মেয়েকে দেখা যেত।.....এবার মেয়ের অভাব দেখা দেওয়া শুরু হল। বিবাহ যোগ্য ছেলেরা অবিবাহিত থাকতে শুরু করল।দেশে মেয়ে কোথাই যে তাদের বিয়ে হবে। সেই সময়ে ভারতে একশো চল্লিশ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মেয়ে মাত্র দশ হাজার জন,,,, ভাবতেই আশ্চর্য লাগছে। আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি....যেভাবে ধর্ষণ আর কন্যা ভ্রুন হত্যা শুরু হয়েছিল....এটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। 

   সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওই নারীখেকো রাক্ষসের মধ্যে মানুষের মনুষ্যত্ব জাগলো...।তারা বুঝলো নারী ছাড়া সৃষ্টি সম্ভব নয়,...নারী কোনো পন্য বস্তু বা ব্যাবহার্য বস্তু নয়,.এই নারী ছাড়া পৃথিবী অচল.।

   এতোদিন ধরে যারা মেয়েদের ঘৃনা করত তারাই এবার মেয়ের গুরুত্ব দিন দিন বুঝতে পারছে। আজ তারাই একটা মেয়ে সন্তান হিসেবে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে।.....এখন সবাই মেয়েদের উপর সবরকম অত্যাচার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্ত কন্যা সন্তান পাওয়ার লোভে ওই বেঁচে থাকা দশ হাজার মেয়ের ওপর শুরু হয় এক নতুন অত্যাচার।.. 

   ভগবানেরও এক অদ্ভুত খেলা.... ওই দশহাজার মেয়ের মধ্যে যারই সন্তান জন্মাত তারই পুত্র সন্তান জন্মাত। আর পরপর পাঁচ বার পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে ওই মেয়েটি মারা যেতে শুরু করল। আর কারুর যদি কন্যা সন্তান জন্মাত তাহলে সেই বাচ্চাটি একঘন্টার মধ্যে মারা যেত।  

   এই ভাবেই দুই বছরের মধ্যে ওই দশহাজার মেয়ের মধ্যে আরো পাঁচ হাজার মেয়ে মারা গেল। তখন মানুষ বুঝতে পারলো যে তারা এতো দিন কতো বড়ো ভুল করছে। যে শাশুড়ি একদিন বৌমার গর্ভের কন্যা সন্তানকে নষ্ট করে দিয়েছে সেই শাশুড়ির আজ তার বৌমার কাছে একটা কন্যা সন্তান ভিক্ষা চাইছে।....

   এবার সবাই মিলে উন্মাদের মতো কন্যা সন্তান পাওয়ার জন্য ভগবানের নানা ধরনের পুজো, হোম যোজ্ঞ্য, তপস্যা শুরু করল। কয়েক বছর ধরে এমন চলতে থাকলো।....কোনো ফল হল না। ....

   2050 সালে প্রায় সমগ্র পৃথিবীতে শুরু হল কন্যা সন্তান পাওয়ার হাহাকার। প্রত্যেকটা মানুষ পাগল হয়ে যেতে লাগল। দেশের উন্নতি- আবিষ্কার ছেড়ে কন্যা সন্তানের জন্য প্রত্যেকটা ধর্মের লোক নিজের নিজের নিয়মে ভগবান, আল্লাহ, যিশুর কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করে। কিন্তু কেউ কোনো ফল পায় না।

    পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি থেমে যায় এবং প্রায় চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।.........পৃথিবীতে মানুষের মতো উন্নত মানের প্রাণীর ধ্বংসের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে শুধুমাত্র এই স্বার্থপর কাম্ লালসার লোভী মানুষ গুলোর জন্য ।.... কিন্তু এদের পাপের ফলে কিছু নির্দোষ মানুষও শাস্তি পায়। শয়তান লোকর মধ্যে থেকে কাম্ লালসা আর লোভ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যায়, তারা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত এই ভাবেই করতে হবে। এই ভাবেই কেটে যায় প্রায় একশো বছর।..............

2150 সালের 15th ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন প্রত্যেকটা মানুষ কন্যা সন্তান পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত ঠিক তখনই ঘটে এক মহাপ্রলয়, প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় আর বিশাল বিশাল ঢেউ এর প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাস যুক্ত সুনামি..... গোটা পৃথিবীর কেঁপে ওঠে একবিশাল ভুমিকম্পে। মানুষ ও সমস্ত রকম প্রানীর মধ্যে এই হঠাৎ আসা মহাপ্রলয়ে......হাহাকার শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি ঘটল কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। শুরু হল ধ্বংসলীলা। লাখে লাখে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীরা মরতে শুরু করল। একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, পৃথিবী থেকে সমগ্র প্রাণের অস্তিত্বই মুছে যাবে চিরন্তনকালের জন্য। কিছু মানুষের মনে হতে লাগলো এই সব তাদের কন্যা সন্তান হত্যা আর ধর্ষণের মতো পাপের জন্য প্রকৃতির দেওয়া শাস্তি। প্রত্যেকেই ভগবানকেই স্মরণ করতে লাগলো। মানুষেরা সমুদ্রের কাছে তাদের করা পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে শান্ত হতে বলল।.....

   হঠাৎই সমুদ্র তার ধ্বংসলীলা বন্ধ করল....এর সাথে সাথে গোটা পৃথিবী শান্ত হয়ে গেল। যারা বেঁচে থাকলো তারা সবাই সমুদ্রকে প্রনাম করতে লাগল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে অবাক করে ,,,, পৃথিবী, সমুদ্র আর প্রকৃতির মিলিত আশীর্বাদে ঘটল এক অভাবনীয় চমৎকার। ......শান্ত সমুদ্রের হালকা প্রত্যেকটা ঢেউ এর সাথে সাথে সমুদ্রতটে জন্ম নিল একহাজার করে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। এই ঘটনা প্রায় একঘন্টা সময় ধরে চলল। তারপর বন্ধ হল। সহস্র সহস্র কন্যা সন্তানে সমগ্র পৃথিবী ছেয়ে গেল। অতো বড়ো ধ্বংসলীলার দুঃখ ভুলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কন্যা সন্তানের জন্মের মহাআনন্দে উৎসব নৃত্য করতে করতে চিৎকার করে বলতে লাগল ,"সমুদ্র কন্যা"...."সমুদ্র কন্যা"।। প্রত্যেকটা মানুষই ওই কন্যা সন্তানের নিজের নিজের বাড়ি নিয়ে এল। পুত্রের সমতুল্য করে মানুষের মতো মানুষ করতে লাগল। আবার কেউ কেউ তো এই সমুদ্র কন্যাদের দেবী বলেও পুজো করত।.....

  

   এর পরেই আর কোনো দিন যেন এই রকম ভয়ংকর পরিস্থিতি না তৈরী হয়...এই কথা ভেবেই পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশে আইন কথা হয় যে প্রত্যেক পরিবারে অন্তত একটা মেয়ে জন্মানো বাধ্যতামুলক। না হলে ওই বাবা-মা কে গ্রেফতার করা হবে।....এর পর থেকে সবাই নারীকে শ্রদ্ধা করত,,, কন্যা ভ্রুন হত্যাতো বটেই ,এমনকি ওই পরিস্থিতির পর ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

সেই সময় থেকেই পৃথিবী আনন্দপূরীতে পরিনত হয়েছে ।।""" 

 --------এই কঠিন সত্য ঘটনা ছেলেমেয়েকে গল্পের আকারে বলে একটু থামল মেঘনা। এতক্ষণ সায়ক আর সামুদ্রিকা নিঃশব্দে মায়ের বলা কথাগুলো শুনছিল। এবার সাইলেন্ট মুড্ ভেঙে সামুদ্রিকা প্রথম বলল," মম্। তুমি ওই সমুদ্র কন্যাদের দেখেছো?? "....মেঘনা ওর মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে একটু হেসে বলল," না সিম্মু । আমি ওই সমুদ্র কন্যাদের দেখিনি। তবে হ্যা। আমার দিদুনের মা অর্থাৎ আর বম্মা ছিলেন ওই সমুদ্র কন্যাদের মধ্যে একজন সুন্দরী সমুদ্র কন্যা। যাকে আমি ছবিতে দেখেছি।"

  মায়ের কথা শুনে সায়ক হঠাৎই একটু বিজ্ঞের মতো প্রশ্ন করল," মম্। সিম্মুরও তো জন্ম 15th ডিসেম্বর,,,যেদিন সমুদ্র কন্যাদের জন্ম হয়েছিল।" এবার মেঘনা সায়ককে বলল," হ্যা সায়ক তাই ই। তাই আমি আর তোর পাপ্পা মিলে তোর বুনুর নাম রেখেছিলাম সামুদ্রিকা। ওইতো আমাদের সমুদ্র কন্যা।" কথাটা বলে মেঘনা ওর পাশে বসে থাকা সামুদ্রিকা কে জড়িয়ে ধরল। আর সায়ক হেসে উঠল।

"কী ব্যাপার আজ আমার গুন্ডা গুন্ডা ছানা দুটো এতো শান্ত হয়ে আছে কেন??..." কথাটা বলে হাসতে হাসতে অনিক বাড়ি ঢুকলো। আর সামুদ্রিকা," পাপ্পা ...." বলে চিৎকার করে লাফিয়ে অনিকের কোলে উঠে পড়ল।

মেঘনা অনিককে হঠাত অফিস থেকে ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই অনিক বলল," আজ তোমাদের সাথে একটু আড্ডা দেব বলেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। আর দুই দিন পরই তো 15th ডিসেম্বর, আমার প্রিন্সেসের বার্থডে। তাই আজ বিকেলে একটু সপিং এ ও যাবো।" সায়ক বলল," Mom & Pappa...।তোমরা সবাই শোনো। আমি আর কোনো দিন বুনুকে ডিস্টার্ব করবো না। বুনুকে আমি খুব খুব ভালোবাসবো। একটুও মারবো না।.....রোজ রাত্রে আমি বুনুকে, ফেয়ারি টেলস্ এর গল্প বলে ঘুম পাড়াবো। সামুদ্রিকা আমার বেস্ট বুনু।"

দাদাই এর কথাই ছোট্ট সামুদ্রিকার কিউট মুখটা হাসিতে ভরে গেল। ও আদুরে গলায় বলল," দাদাই। আমি আর কোনো দিন তোর প্রীয় স্টোরি বুকটা ছিঁড়ে দেবো না।" অনিক আর মেঘনা ওদের দুজনের কথাই "হো হো ....." করে হেসে উঠল। এবার মেঘনা বলল," আমি এবার ওদের ভাইবোনের খুনসুটি ঝগড়া মেটানোর হাত থেকে রক্ষা পেলাম।" কথাগুলো বলে হাসতে লাগল মেঘনা। আর অনিক বলল," এইবার আমাদের সমুদ্র কন্যা, সামুদ্রিকার বার্থডে টা....বেস্ট্ বার্থডে হিসাবে সেলিব্রেট হবে।" কথাটার সাথে সাথে সায়ক আর সামুদ্রিকা একসাথে চিৎকার করে উঠল," YEAH.....!!!"

      


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract