Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aayan Das

Drama Tragedy Inspirational

1.3  

Aayan Das

Drama Tragedy Inspirational

লক্ষ্মী

লক্ষ্মী

4 mins
9.1K


 ১

লক্ষ্মী র চোখের পাতায় তখন রাত নেমে এসেছে ঘুমের মত।একটু দূরেই গঙ্গার জলে দোল খাচ্ছে পূর্ণিমার মস্ত একটা চাঁদ।রাত প্রায় বারোটা।গঙ্গার ধারটা শুনশান হয়ে গেছে।তবু লক্ষ্মী দাঁড়িয়ে আছে কাস্টমারের আশায়।এইসময় দু- এক পিস্ ব্যবসাদার রাতের শেষ লঞ্চ মিস্ করে এখানেই শুয়ে পড়ে।

লক্ষ্মী দেখল কিছু দুরে একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে।লক্ষ্মী কে দেখে অটো ওয়ালা ছেলেটা বেরিয়ে এল।এই ছেলেটা নতুন।অটো ওয়ালা দের বেশ কয়েকজন লক্ষ্মীর কাষ্টমার কিন্তু, এই ছেলেটাকে সে প্রথম দেখল।ছেলেটার বয়স আঠেরো উনিশ,রোগা পাতলা চেহারা।

"-যাবে?"

''-যাবো''

"-কত?"

''-একঘন্টা তিনশো'',

"-বেশি বলছ,..দুশো দেবো..এসো-"

''-অটোতেই?''

"-হ্যাঁ, এত রাতে ঘর কোথায় পাবো?"

ছেলেটি লক্ষ্মীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে।এইবার আঁচল ধরে টান দিতেই লক্ষ্মী বলে,-"আঃ ছিঁড়ে যাবেনা?সেপটিপিন দিয়ে আঁটকানো আছে দেখছনা?"

"-এ্যাই ব্লাউজ খুলবে না..যা করার উপর থেকে করো-"

''-তার মানে?উপর থেকে হয় নাকি?''

"-বুকে হাত দিও না..আমার বুকে ঘা আছে..অনেকদিনের পুরোনো ঘা-"

''-কী ই ই..এই তুমি নামো..এক্ষুনি নামো-''

"-টাকাটা মেটাও,..নেমে যাচ্ছি-"

''কিসের টাকা?..শালা, ব্লাউজ টা পর্যন্ত খুলতে পারিনি-''

লক্ষ্মী কেমন বিমূঢ় হয়ে যায়-

''-না্‌ও,খোলো,..ঘা নেই..এমনি বলছিলাম-''

ছেলেটি বিদ্যুৎ বেগে লক্ষ্মী কে উন্মোচিত করে..ঝাঁপিয়ে পড়ে লক্ষ্মীর ভারি বুকে-

লক্ষ্মীর চোখের উপর ভেসে ওঠে তার সদ্যোজাত শিশুর মুখ।ঘা নয় আসলে তার বুক ভর্তি দুধ,বাড়ি ফিরে তার বাচ্চাকে স্তন দিতে হবে।

লক্ষ্মীর কাষ্টমার লেহন করছে লক্ষ্মীর ভারি বুক।যুবকের মুখ থেকে বিচিত্র শব্দ বেরোচ্ছে।রাত আরো গভীর হয়ে নেমে আসছে এক মায়ের বুকে।

////////////////////////////////////////////

                            ২

''ডাক্তারবাবু আমার বাড়ির থেকে কোনো চিঠি এসেছে?''

''-না গো লক্ষ্মী,আসেনি।''

''-কী ব্যাপার বলুন তো?এতগুলো চিঠি লিখলাম,ঠিকানা টা ভুল লিখলাম?নাকি ওরা ওগুলো লেটার বক্সে ফেলেইনি?ডাক্তারবাবু আপনি একটা চিঠি লিখবেন আমার হয়ে?''

''-হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই লিখব।''

''ঠিকানাটা ঠিকমত দেখে নেবেন কিন্তু,''

''-হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই।''

''আমার মনে হয়, ওরা চিঠি পায়না জানেন..চিঠি পেলে আমাকে একবার দেখতে আসবেনা বলুন?''

লক্ষ্মী এই মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে পাঁচ বছর।বাড়ির লোকেরা ভুল ঠিকানা দিয়ে লক্ষ্মী কে ভর্তি করে দিয়ে চলে গেছে,এখন আর কেউ লক্ষ্মী র খোঁজ করেনা যদিও ও এখন প্রায় পুরোপুরি সুস্থ।

লক্ষ্মী হাসপাতালের বাগানের গাছে জল দিতে দিতে শুনতে পায় ঢাকের আওয়াজ,সে দৌড়ে যায় গেটের কাছে,দূর্গা ঠাকুর কে নিয়ে আসছে ক্লাবের ছেলেরা,লক্ষ্মী র ইচ্ছে করে ঐ ছেলেগুলোর সঙ্গে ছুটে যেতে।সে চিৎকার করে বলে ওঠে,''-আমাকেও নাও,...তোমাদের সঙ্গে আমাকেও নাও......।''লক্ষ্মীর কথা কেউ শুনতে পায়না,কেউ বুঝতে পারেনা।লক্ষ্মীর চোখের জল বন্যার জলের মত উপচে পড়ে ।সে সারা জীবনের জন্য বন্দী হয়ে গেছে,তার আর ফেরার উপায় নেই।

////////////////////////////////////////////

                           ৩

''লক্ষ্মী আজকের দুপুরের পাঁঠার মাংস টা কিন্তু তুই রাঁধবি,তোর রান্নার হাত ভাল''-বলল যুথিকা দি-,

জেল খানার মধ্যে দুর্গাপুজো হচ্ছে।

লক্ষ্মী একজন খুনের আসামি।সে ভোগ করছে দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড।মাঝেমাঝে লক্ষ্মীর নিজের উপর এক ভয়ঙ্কর রাগ হয়।সে ভুল মানুষ কে খুন করেছে।

মেয়েটির সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া সে যখন ধরতে পারল, তখন সম্পর্কটা অনেকদূর এগিয়ে গেছে।লক্ষ্মী পথের কাঁটা দূর করতে চেয়েছিল।তাই গল্প করার নাম করে মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে সন্দেশের মধ্যে বিষ মিশিয়ে......

দেখতে দেখতে আট বছর হয়ে গেল।আর দু বছর।আজ মেয়েটির জন্য বড় মায়া হয়।আসল শয়তান তো সেই পুরুষটি,যে তার স্বামী,অন্যায় করা সত্ত্বেও সে কেন বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে?

লক্ষ্মী নিজের ডানহাতের আঙুলগুলোকে আদর করল।এই হাত দিয়ে একটা খুন যখন হয়েছে তখন আরো একটা খুন হতে অসুবিধা কি?

লক্ষ্মীর ঠোঁটের কোনে এক নিষ্ঠুর হাসি ফুটে ওঠে।

////////////////////////////////////////////

                         ৪

'বাজলো তোমার আলোর বেনু,মাতলো রে ভুবন'গানটা শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল লক্ষ্মীর।এত এত গান তিনি সারাজীবনে শুনেছেন,একসময় নিজেও অল্পস্বল্প গান করতেন তবু এই গানটির মধ্যে একটা জাদু আছে।এই গানটি যেন পুজোর বার্তা নিয়ে হাজির হয়,মনের মধ্যে তৈরি করে দেয় এক অনির্বচনীয় আনন্দ।

পৃথিবীতে শুরু হচ্ছে আলোর অভিষেক।আস্তে আস্তে পরিষ্ফুট হচ্ছে সামনের সুবিশাল গঙ্গা।বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় এসে বসেছেন আবাসিক বৃদ্ধারা।মাঝখানে একটা বড় রেডিও থেকে ভেসে আসছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র র অনন্য কন্ঠস্বর।

আজ লক্ষ্মীর মনের মধ্যে বেজে চলেছে খুশির এক মৃদু জলতরঙ্গ।আজ ছেলের বাড়িতে তার নেমন্তন্ন।তাদের সেই দুকামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট টা ছেড়ে ছেলে নতুন বাড়ি করেছে।আজ তার গৃহপ্রবেশ।লক্ষ্মী সারাজীবন চাকরি করেছেন,বেঁচেছেন দাপটের সঙ্গে।ছেলের বিয়ের পর বুঝেছিলেন তার প্রবল ব্যক্তিত্ত্বের আঁচে এই নব বিবাহিত দুটি ছেলেমেয়ে দগ্ধ হচ্ছে।ঐ টুকু ফ্ল্যাটে কোনো প্রাইভেসি থাকেনা।লক্ষ্মী বুঝেছিলেন এখানে থাকলে অশান্তি অনিবার্য।তাই নিজেই কাগজে অ্যাড্ দেখে চলে এসেছেন এই বৃদ্ধাশ্রমে,ছেলে বৌ এর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও জোর করে।

এখানে ভালই আছেন তবু মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে হু হু করে।তিনি নাতির বেড়ে ওঠা দেখতে পারেননি,সেই আফসোস্ মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেয়।

............................................................................

''মা,এবার চলে এসো।..এতবড় বাড়ি,..তোমার জন্য একটা আলাদা ঘর তৈরি কর্‌ছি..আমার নিজের বাড়ি থাকতে তুমি ওল্ডহোমে থাকবে-এটা কী ভাল দেখায়?তাছাড়া তুমি থাকলে আমরাও নিশ্চিন্ত হই।''লক্ষ্মী ছেলে বৌমার আন্তরিকতা টের পান।

লক্ষ্মীর বুকের মধ্যে শুরু হয়েছে সামুদ্রিক ঝড়।এই বাড়িটা বড় সুন্দর করে বানানো হয়েছে,ঠিক এমন একটি বাড়িরই স্বপ্ন দেখতেন তিনি।এই বাড়িতে থাকলে তার প্রানাধিক প্রিয় নাতি কে তিনি নিজের হাতে মানুষ করতে পারবেন তবু কি যেন একটা বাধা,একটা অভ্যাস থেকে আরেকটা অভ্যাসে যাওয়ার অনিশ্চয়তা...

লক্ষ্মীর বুকের সামুদ্রিক ঝড় থেমে গেছে।তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। না....একসঙ্গে এই বাড়িতে তিনি থাকবেন না,বৃদ্ধাশ্রমের একাকীত্বের জীবন যাপনই ভাল।দৈনন্দিনের প্রাত্যহিকতায় রঙ চটে যায়,ভালবাসা,শ্রদ্ধা হারিয়ে যায়।তখন সেই জীবনযাপন হয়ে যায় বড় অসম্মানের।

লক্ষ্মী তার বৌমা র পিঠে হাত রেখে বললেন,''-না গো ..আমাকে এখানে থাকতে বোলোনা,আমিতো আছিই।''


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama