Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Siddhartha Singha

Fantasy

1  

Siddhartha Singha

Fantasy

জিভে তিল

জিভে তিল

5 mins
730


দেওয়ালের পেরেকে ঝোলানো ডালের কাঁটা নামাতে গিয়ে জানালায় চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলেন প্রতিমা। পইপই করে বারণ করা সত্ত্বেও আবার গাছে উঠেছে ও! এইমাত্র বৃষ্টি হয়ে গেছে। যদি পিছলে পড়ে হাত-পা আর আস্ত থাকবে! বাঁদর কোথাকার। অ্যাই রুনু রুনু... অ্যাই রুনু... 

মায়ের চিৎকার শুনে গোয়ালঘর থেকে দৌড়ে রান্নাঘরে এল মেয়ে। কী হয়েছে মা?

— কী হয়েছে আবার জিজ্ঞেস করছিস? ওইটুকু একটা ভাই, তাকে দেখে রাখতে পারিস না? যা। গিয়ে দ্যাখ। ছোটকু আবার জামগাছে উঠেছে...

— ভাইটাকে নিয়ে আর পারি না... একটু চোখের আড়াল হলেই... গজগজ করতে করতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।

না। দু’মিনিটও হল না। আবার ফিরে এল সে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কী দেখতে কী দ্যাখো... ভাই কোথায়? জামগাছে তো একটু হনু বসে আছে।

ভাইকে ভীষণ ভালবাসে রুনু। মায়ের মনে হল, তাঁর বকুনি খাওয়ার হাত থেকে ভাইকে বাঁচানোর জন্যই ও মিথ্যে কথা বলছে। তাই উনি বললেন, কেন বাজে কথা বলছিস? ওকে নামিয়েছিস?

— কাকে নামাব?

প্রতিমা আনাজ কুটতে কুটতে রুনুর দিকে কড়া চোখে তাকালেন। সেই চাহুনি দেখেই মেয়ে বুঝতে পারল, মা তার কথা বিশ্বাস করছে না। তাই বলল, বিশ্বাস না হলে জান্লা দিয়ে দ্যাখো।

প্রতিমা উঠে দাঁড়ালেন। জানালা দিয়ে দেখলেন, হ্যাঁ। সত্যিই তো... ছোটকু কোথায়! জামগাছে তো একটা হনুমান বসে আছে। কিন্তু একটু আগেই যে উনি দেখলেন তার ছেলেকে। তা হলে কি উনি ভুল দেখেছেন! কী জানি বাবা। হতেও পারে। তাই ফের আনাজ কোটার জন্য নীচে বসতে বসতে মেয়েকে বললেন, ঠিক আছে। যা। ওদের জাবনা দিয়েছিস?

— দিচ্ছি, বলেই মেয়ে গোয়ালঘরের দিকে হাঁটা দিল।

প্রতিমা নিজের মনেই বিড়বিড় করলেন, বেলা শেষ হয়ে দুপুর গড়াতে চলল, এখনও গরুগুলিকে জাবনা দিয়ে উঠতে পারল না! যত্তসব অকাজের ঢেঁকি... সংসারের কত্তা যদি একটু কড়া না হয়... ওদের আর কী দোষ! ওরা হাজার অন্যায় করলেও ওদের বাবা যদি তা দেখতে না পায়... চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। তা হলে এ রকমই হবে। বাবা তো নয়, যেন শিবঠাকুর...

বলামাত্রই উনি দেখলেন, তাঁর কাটা আনাজগুলির উপরে একটা লম্বা ছায়া এসে পড়েছে। কার ছায়া! দরজার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলেন তিনি। দেখলেন, শিবের মতো সং সেজে একটা লোক তাঁর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই উনি মুখ ঝামটা মেরে উঠলেন, এ কী! এখানে কী? একেবারে রান্নাঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছ যে! যাও যাও, গেটের বাইরে যাও। দরজা খোলা দেখলেই... যদি কিছু চাওয়ার হয়, গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে চাইবে।

এখানে ভিখারি খুব কম। তবে মাঝে মাঝেই ঢোল করতাল বাজিয়ে একদল লোক নামগান করতে করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষে চায়। চাল, ডাল, আলু, পটল যে যা দেয়, কাঁধের থলেতে ভরে নেয়। কেউ কেউ মা মনসা, শেতলার নামে সিধে চায়। কেউ কেউ আবার ঠাকুর-দেবতা সেজেও হাত পাতে। তবে সেটা বেশির ভাগই হয় চৈত্র মাসে। গাজনের সময়। কিন্তু এটা তো চৈত্র মাস নয়, তা হলে এ শিব সেজেছে কেন! তার থেকেও বড় কথা, ওকে চলে যাওয়ার জন্য বললেও ও গেল না কেন! উলটে তাঁর দিকে ড্যাবড্যাব করে কেমন তাকিয়ে আছে, দ্যাখো। ব্যাপারটা কী! ভাবতে ভাবতে প্রতিমা উঠে গেলেন দরজার কাছে। না। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মাঠ থেকে তাঁর স্বামীর ফেরার সময় হয়ে গেছে। এক্ষুনি এসে পড়ল বলে। কীগো, কী বললাম, শুনতে পাওনি? যাও। গেটের বাইরে যাও।

লোকটা কোনও কথা বলল না। পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করল। আর তার হাঁটা দেখেই প্রতিমার কেমন যেন একটা খটকা লাগল। মনে হল, এই হাঁটাটা তাঁর খুব চেনা। তাই তিনি বললেন, এই দাঁড়াও তো। এ দিকে ফেরো...

উনি ফিরতেই লোকটার চোখের দিকে তাকালেন প্রতিমা। মনে হল, এই চোখ দুটো তাঁর চেনা। হ্যাঁ, খুব চেনা। মুখে যতই রংচং মাখা থাক, তাঁর চিনতে ভুল হয়নি। হ্যাঁ হ্যাঁ, এই চোখ দুটো তাঁর কত্তারই। তা হলে কি... 

মুহূর্ত খানেক থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। তার পর কী মনে হতেই রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে গোয়ালঘরে ঢুকলেন। ঢুকেই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। যেখানে গরুগুলোর খাওয়ার জন্য ইয়া বড় বড় দুটো মাটির গামলা ক’হাত দূর দূর থাকে, তার সামনে একটা মাঝারি মাপের ঢেঁকি। না। এখানে কোনও ঢেঁকি ছিল না। থাকার কথাও নয়। কোত্থেকে এল এটা! তা হলে কি... উনি আর কিছু ভাবতে পারলেন না। তাঁর পা দুটোয় যেন আর সার নেই। পাথর হয়ে গেছে। তবু কোনও রকমে পা দুটোকে টানতে টানতে উনি সেই ঢেঁকিটার কাছে নিজেকে নিয়ে গেলেন। যেখানে পা দিয়ে ধান ভানা হয়, উনি সেই পাদানিতে পা রেখে চাপ দিতে গিয়ে দেখলেন, শুধু চাপ নয়, ওখানে শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে চাপ দিয়েও কিচ্ছু হচ্ছে না। নট নড়নচড়ন। মানে ঢেঁকিটা অকেজো।

মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল তাঁর। বুক ঠেলে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু বেরোতে পারল না। গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে গেল। শরীর থেকে সমস্ত শক্তি কে যেন শুষে নিয়েছে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি। কিন্তু ছেলের কথা মনে পড়তেই দিক্জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ি কি মড়ি করে ছুটে গেলেন জামগাছের কাছে। গিয়ে দেখলেন, গাছের মাথায় একটা বাঁদর বসে আছে। সেটা দেখে উনি হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে গাছের তলায় বসে পড়লেন। এ কী করলাম আমি! এ কী করলাম!


বেশ কয়েক বছর আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বারোভূতের মেলায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে মেলার এক কোণে লাল জোব্বা পরা এক সাধুবাবা বসে ছিলেন। না। উনি হাত দেখেন না। কোষ্ঠী বিচার করেন না। এমনকী জন্মছক নিয়েও কোনও কাজ করেন না। ভূত ভবিষ্যৎ যা বলার, উনি নাকি শুধু জিভ দেখেই বলেন।

এ রকম কোনও সাধুবাবার কথা এর আগে প্রতিমা কখনও শোনেননি। তাই তিনি স্বামীকে বলেছিলেন, আমিও দেখাব। 

স্বামী বলেছিলেন। ঠিক আছে, দেখাও।

সেই সাধুবাবা তাঁর জিভ এক ঝলক দেখেই আঁতকে উঠেছিলেন। তার পর ধাতস্থ হয়ে বলেছিলেন, খুব সাবধান। কোনও কিছু বলার আগে অন্তত দশবার ভাববি। তোর জিভে কিন্তু তিল আছে। কোন দিনক্ষণের ফেরে কোন কথা লেগে যাবে, কিচ্ছু বলা যায় না।

তাঁকে এ কথা বললেও, তাঁর স্বামী আর ছেলেমেয়েকে বলেছিলেন, তোরা এমন কোনও কাজ ভুল করেও কখনও করিস না, যাতে তোদের মা এমন কোনও কিছু বলে ফেলে, যার ফলে তোদের যা হবার তা তো হবেই, তোদের মাকে যেন তা নিয়ে সারাজীবন আফসোস করতে না হয়...

তা হলে কি এই দিনটার কথাই উনি বলেছিলেন! আমি একটুও বুঝতে পারিনি! ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

সঙ্গে সঙ্গে উনি বলতে লাগলেন, না না বাঁদর না, বাঁদর না। এটা আমার ছেলে। ওটা অকাজের ঢেঁকি না, ঢেঁকি না। আমার মেয়ে। আর ওখানে যে দাঁড়িয়ে আছে, সেও শিব নয়, শিব নয়। আমার স্বামী।

একবার নয়। দু’বার নয়। বারবার। বাজার বার বলার পরেও তারা আর ছেলে হল না। মেয়ে হল না। স্বামীও হল না। তখনই তাঁর মনে পড়ে গেল, ওই সাধুবাবা বলেছিলেন, ‘কোন দিনক্ষণের ফেরে কোন কথা লেগে যাবে...’ তার মানে, জিভে তিল থাকলেও, শুধু বললেই হবে না, দিনক্ষণের ব্যাপার আছে।

তা হলে কখন বললে ওরা আবার যে যার মতো হয়ে যাবে! কখন বললে! তার জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হবে! অপেক্ষা করলেও আদৌ ওরা আবার আগের মতো হবে তো! ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

এ আমি কী করলাম! কেন ছেলেকে বাঁদর বলতে গেলাম! কেন মেয়েকে ঢেঁকি বলতে গেলাম! কেন স্বামীকে শিবঠাকুর বলতে গেলাম! কেন? কেন? কেন?

উনি কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতেই লাগলেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy