Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debashis Ghosh

Abstract

3  

Debashis Ghosh

Abstract

লাইফ ইন্স্যুরেন্স

লাইফ ইন্স্যুরেন্স

10 mins
728


এবার বলো পলিসিটা কেমন লাগল? নীল রঙের পাতলা ফ্রেমের ঝকঝকে চশমা পরা রিপন, বৌদির দিকে তাকিয়ে বলে। বৌদি মানে অমিতদার বৌ। অমিতদার সঙ্গে রিপনের পরিচয় প্রায় পনেরো বছর। অমিত রিপনকে পড়াতো। ওদের বাড়িতে গিয়ে। অমিত তখনো চাকরী পায় নি। টিউশন সম্বল। আর চাকরী জোটানোর লড়াই চালিয়ে যাওয়া। অনেকে ভুলে গেলেও কয়েকজন তাকে মনে রেখেছে। রিপন তাদের একজন। পরশুদিন রিপন ফোন করেছিল।


দাদা তোমার সঙ্গে দেখা করব। একটা বিষয়ে কথা বলতে চাই। কখন সময় হবে বলো। আজ রবিবার বলে ওকে সময় দিয়েছে অমিত। রিপনের সঙ্গে এসেছে ওর সিনিয়র একটি যুবক। ল্যাপটপ খুলে নানান কোম্পানীর পলিসির সঙ্গে ওর কোম্পানির পলিসির পার্থক্য দেখিয়ে দিল ছেলেটি। সবার শেষে একটা পলিসি বেশ মনে ধরল অমিতের। বছরে দশ হাজার টাকা দিলে পঁচাশী বছর বয়স পর্যন্ত পঞ্চাশ লাখ টাকার কাভারেজ। পলিসি চালু হওয়ার পর যে কোনো সময় স্বাভাবিক অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে তার পরিবার পেয়ে যাবে পঞ্চাশ লাখ টাকা। আজকের হিসেবে বেশ মোটা টাকাই। অন্ততঃ তার পক্ষে। চকচক করে ওঠে বৌদির মুখ। দ্যাখো তোমার দাদা কি বলে। তার পছন্দ হয় কিনা। আমার তো ভালোই লাগল। মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা কোথায় আজকের দিনে।

এমনিতেই তোমার দাদার প্রেসার ধরে গ্যাছে। হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে ছেলেটাকে নিয়ে আমি ভেসে যাব। তখন আমার পাশে কাউকে পাব না। 

 অমিত সব কিছুর অগ্র পশ্চাত ভেবে কাজ করে। তাই সে রিপনকে বলল আমার তো খারাপ লাগল না। তবে আরেকটু ভেবে তোকে আমি ফাইনাল জানাবো। দিন পাঁচ পরে রিপনকে ফোন করে বলে আমি সামনের মাসের শুরুতে পলিসিটা করব রে রিপন। তুই ফর্ম নিয়ে আসিস। আর আমার কি কি ডকুমেন্টস লাগবে বল আমি রেডি রাখব। 

 পরের মাসে পলিসিটা নিয়ে নেয় রিপন। ওর স্ত্রী দীতি আর ছোট্ট ঋক ওর নমিনি থাকে। 

দেখতে দেখতে আরো তিন বছর কেটে যায়। ওদের বাড়ির ডানদিকে কৃষ্ণচূড়া গাছের বড় ডালটা এক রাতের ঝড়ে ভেঙে যায়। পাড়ার নৃপেনবুড়োও তার বিশ বছরের বুকফাটা কাশির সমাধান করে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাদের পাড়ার নীলরঙ ক্লাবের ঘর দোতলা হয়ে যায়। ছোট্ট পুঁটি বান্টির সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে। পুঁটির মা সাড়ে তিনদিন বিস্তর কান্নাকাটি করে শেষে হাল ছাড়ে।

 অমিতের কাজের চাপ আরো বেড়ে যায়। অটোমোবাইল কোম্পানির সেলস এক্সিকিউটিভের কাজ। সম্প্রতি অটোমোবাইল শিল্পে ধস নেমেছে। বিক্রি পড়ে গেছে। আগে তো সবাই গাড়ি কিনছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে খুব কম। সম্ভাব্য অনেক কারণ হতে পারে। কার ইন্সুরেন্সের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, মেইনটেন্যান্স খরচ বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি তার ওপর রয়েছে রাস্তার গাড়ি থেকে কারণে অকারণে পুলিশের তোলা আদায়, দু কিলোমিটার পরপর পৌষ কালী, রক্তদান, মা শীতলা, নাম সংকীর্তন উপলক্ষে জবরদস্তি চাঁদা আদায়।

তবু রাস্তাঘাটে গিজগিজ করছে গাড়ি। চলাচলের উপায় নেই। যানজট জীবনের অনিবার্য অঙ্গ হয়ে গেছে। এইরকম চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় তাঁর চাপ নেওয়ার ক্ষমতাও সহনশীলতার শেষ সীমায় পৌছে যায়। এর মধ্যেই দীতি ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে গ্যাংটক চলো। সঙ্গে যোগ দিয়েছে সানাইয়ের পো তার ছোটোটাও। দমদম স্টেশনের কাছে ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতি মাসে পঁচিশ হাজার ই এম আই কাটাতে হয়। আর মায়ের জন্য মাসে পাঁচহাজার করে দিতে হয়।

অসুখ বিসুখ ইত্যাদি এমার্জেন্সি খরচ তো আছেই। তবু দীতি যখন বলেছে ওটা করতে হবে। সত্যিই তো ওর জন্য কিইবা করতে পারে সে! বিয়ের আগে তিন বছরের প্রেম. সে সময়টা কত সুন্দর ছিল। একজন আরেকজনকে না দেখে থাকতে পারত না। কিন্তু বিয়ের দু'বছর পরেই সেই প্রেম ভালোবাসায় মরচে পড়তে লাগলো। দীতি একটু খিটখিটেও হয়ে গ্যাছে। ওর জন্য অন্তত এটুকু করা দরকার। সেই দু'বছর আগে শেষবার ঘোরা হয়েছিল কেদার বদ্রী।

তারপর আর বেরোনো হয় নি। কাজের চাপে প্রেম ভালোবাসাও ফুরিয়ে আসে। সকাল বেলা বেরিয়ে যাওয়ার পর সারাটা দিন লাগাতার দৌড়নো আর ওর সাবঅর্ডিনেটদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া। ওরই ফাঁকে মাঝে মাঝে দীতিকে ফোন করা। ঋকের খোঁজ নেওয়া। ইদানিং দীতিকে ফোন করলে প্রথম বারে পাওয়া যায় না। এনগেজ টোন আসে। অবশ্য এক মিনিটের মধ্যেই দীতি কল করে। অমিত জানে দীতিকে এ নিয়ে কিছু জিগ্গেস করা যাবে না। সেও কায়দা করে বলে আচ্ছা ঝুমার সঙ্গে কী এত কথা থাকতে পারে তোমার! দরকার হলে একদিন বাড়িতে নেমন্তন্ন করে যত খুশি কথা বলে নেও। বরের সময়টা কেন ও দখল করবে! জবাবে দীতি বলে-যাও। তোমার এত হিংসে কেন ঝুমার ওপর!

 এমনিতেই তো খুব বেশী সময় কথা বলা যায় না। বেশী হলে পাঁচ মিনিট। এরই মধ্যে ওর অফিসের কারো না কারো কল ঢোকার চেষ্টা করবে। তাকেও বেশী সময় অপেক্ষা করানো যাবে না।  

 অমিত একটা প্ল্যান করে ফেলে। অফিসের সিইও মিসেস দাসকে একটা ফোন করে। 

ম্যাডাম। 

বলুন। 

বলুন কথাটায় কী একটু তিরিক্ষে ভাব শোনালো। কি জানি! আগের বলুনগুলোও কি আজকেরটার মতোই! না তাহলে তো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। সাবধানে এগোতে থাকে অমিত।

বলছি ম্যাডাম আমি বিভিন্ন জেলায় একটা এগ্জহস্টিভ অ্যাডভারটাইজিং চালাতে চাই। 

হুমম। করতে পারেন। কিন্তু আপনার মনে হয় তাতে কাজ হবে?

হবে। অবশ্যই হবে। তবে একাজটা আমি শুরু করতে চাই নেক্সট উইকে। এ সপ্তাহে আমি গ্যাংটক ঘুরতে যাব। আর এজন্য কিছু টাকাও দরকার। 

ঠিক আছে আপনি মিষ্টার গাঙ্গুলীকে একটা প্রেয়ার দিয়ে দিন। 

অমিতের আশা ছিল মিসেস দাস তাকে নিরাশ করবেন না। আধঘন্টা পরে একটা ফোন করে সে। দীতি, বলছি চলো তোমার গ্যাংটক থেকে ঘুরে আসি। 

আমার গ্যাংটক মানে! তোমার নয়! খোঁচা দ্যায় দীতি। 

তাই বললাম বুঝি! কেন তোমার মানে কী আমার নয়! কৌশলী হওয়ার চেষ্টা করে অমিত।

হুম, বলি দিন দিন এত সুন্দর করে কথা বলতে শেখাচ্ছে কে হ্যাঁ? নিশ্চয়ই তোমার মুটকি সিইও মিসেস দাস? মাথাটা খাচ্ছে রাতদিন।

'কি যে বলো! উনি রীতিমতো তোমাকে ঈর্ষা করেন জানো!' কথাটা একটু বানিয়ে বলতেই হল। যে দেবতা যাতে সন্তুষ্ট থাকে। তাকেও তো অফিসের জুনিয়র শর্মী নানা রকমভাবে ফ্ল্যাটারী করে। কখনো বলে স্যার, আপনার চেহারায় একটা মাদকীয় আকর্ষণ আছে। কখনো বলে আজ আপনাকে ভীষণ স্মার্ট লাগছে। অমিত জানে কথাগুলো সবসময় পুরো সত্যি নয়। তবুও প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! হোক মিথ্যে বা আংশিক সত্য তবু তা প্রশংসা তো।

ঈশ্বর নিজেও কী প্রশংসা ভালো বাসেন না! তাই তো শ্রীকৃষ্ণের একশো আটটা নাম। সবগুলোতেই তাঁর গুণকীর্তন। 

 সেই রাতেই তৎকালে টিকিট, হোটেল বুকিং করে ফ্যালে অমিত। রাতে গোছানোর পর্বও শুরু হয়ে যায়। পরের দিন শুক্রবার বাদ দিয়ে শনিবার বেরিয়ে পড়বে ওরা। দীতির ভীষণ প্রিয় গ্যাংটক। দার্জিলিং তাঁর কাছে বড্ড চাপা মনে হয়। ঘিঞ্জি হয়ে গ্যাছে। এখন তো রাস্তার পাশেও উঁচু বাড়িঘর দাঁড়িয়ে গ্যাছে। ফলে শহরে ঢোকার মুখে পাহাড়ের ভিউ আর মেলে না। কী বিচ্ছিরি লাগে তাঁর। তুলনায় গ্যাংটক এখনো সুন্দর। কেমন একটা ছিমছাম ভাব। আর সিকিমের মধ্যে কেমন একটা বিদেশী লুক রয়েছে যেন। কেন যে এমন মনে হয় দীতি বুঝে উঠতে পারে না। 

 মোবাইলে খান কুড়ি মেল ঢুকে রয়েছে অমিতের। একটা একটা করে চেক করে সে। অধিকাংশই বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল প্রচার মেল। আঙুলের স্পর্শে সিলেক্ট করে ডিলিট করে ফ্যালে সে। তারপর সে গুরুত্বপূর্ণ মেলগুলো দেখে। কোনোটায় অফিসের রঘু ডেইলি রিপোর্ট পাঠিয়েছে । কোনোটায় পরেরদিনের শেডুল জানানো হয়েছে তাকে। আরেকটা মেল এসেছে সেই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার রিমাইন্ডার। অনলাইনে টাকাটা পাঠিয়ে দ্যায় অমিত। খানিকক্ষণের মধ্যে রিসিট চলে আসে। পাশের খোপে ঋক পড়াশোনা করছে। দীতির গোছগাছ চলছে। তিনটে লাগেজ রেডি। এক ঝলকে লাগেজের দিকে দৃষ্টিপাত করে অমিত। তাকে ভারী ভারী দুটো বইতে হবে। ঋক একটু আধটু হাত লাগায় না তা নয়। সমস্ত গোছগাছ শেষ হতে হতে রাত দেড়টা। 

 একদিন পর শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে তিনজনে রওনা হয়। মোবাইলে মগ্ন দীতি। কখনো ছবি তুলছে, কখনো ফেসবুক, কখনো হোয়াটসঅ্যাপ। কিবোর্ডে আঙুল চলছে। শব্দ, বাক্য তৈরী হচ্ছে লাগাতার। প্রতি মুহূর্তের জীবনযাপন একজন আরেকজনকে জানাতে চায়। হাঁপিয়ে উঠছে অমিত। ওর আর ভালো লাগে না ঐসব। মোবাইল দিয়ে সে কিছু ছবি তুলবে অবশ্যই।

কিন্তু এখন হোয়াটসঅ্যাপ খুলে অফিসের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ আর ভালো লাগছে না। শুধু রাতে একবার মেল চেক ও হোয়াটসঅ্যাপের জরুরী মেসেজ চেক করতেই হবে।

 সকালে এন জে পি পৌঁছে গেল ট্রেন।‌ সেখান থেকে আগে ঠিক করা গাড়ি ওদের নিয়ে চলল গ্যাংটক। রাস্তার দুধারে পাহাড়ের শোভা চোখকে মুগ্ধতা এনে দিচ্ছে ওদের। বাবার ফোনে ঋক ফটাফট ছবি তুলতে লাগলো। কয়েক শ ছবি তোলা হয়ে গেছে ওর। ঋক সবে ক্লাস টু। এরই মধ্যে সে বেশ ভালো ছবি তোলে। অমিত ড্রাইভারকে বলে সামনে কোথাও খেয়ে নিই চলো।

ড্রাইভার জানায় এখনোও আরো দুঘন্টা গেলে পরে খাবার মতো জায়গা মিলবে। 

 লাঞ্চ সেরে গ্যাংটক পৌঁছতে প্রায় তিনটে। ওরা গিয়ে উঠল এম জি মার্গের উপর একটা হোটেলে। চারপাশের চমৎকার ভিউ। মাঝে মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘা দূরের মেঘের মতো ভেসে ওঠে। মনটা ভালো হয়ে যায় ওদের সবার। রাত নেমে আসে পাহাড়ের কোলে। পাহাড়ের অন্ধকারের খাঁজে খাঁজে আলোর কারুকাজ দেখতে দেখতে মনটা কলকাতার খুপরি জীবন, যানজটের হাঁসফাঁস সব কিছু খানিকক্ষণ ভুলে যায়। 

 হোটেলের রুমে একটা টিভি আছে। একঝলক দেখে নিতে ইচ্ছে করে অমিতের। এখানে বাংলা চ্যানেল মিলবে কিনা কে জানে! চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে একটা বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করে অমিত। রাজ্যের কোথায় কি হচ্ছে একটু দেখা যাক। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেড়াতে আসা একটি পরিবারের উত্তর সিকিমের পাহাড়ের খাদে পড়ে মৃত্যু। খবরটা বন্ধ করে দ্যায় অমিত। এ খবরে মন খারাপ হয়ে যায়। ওরাও তো আগামী কাল ভোরে রওনা হবে লাচুংয়ের উদ্দেশ্যে। দীতি একটা চেয়ারে বসে একমনে মোবাইলে কিছু লিখে যাচ্ছে। বিরক্ত হয় অমিত। বাড়িতেও যা করো এখানে এসেও তাই করতে হবে! খিঁচিয়ে ওঠে দীতি - কেন, কী করলাম আমি! আচ্ছা তুমি যখন বাড়ি এসেও লাগাতার মোবাইল ‌নিয়ে তোমার অফিস বান্ধবীদের সঙ্গে চ্যাট করে যাও আমি কি একবারও কিছু বলেছি! অফিস তো বাহানা মাত্র। আমি কি বুঝিনা তুমি কার সাথে কী কথা বলতে পারো। পুরুষরা এমনই হয়! আহত হয় অমিত - দীতি, এসব কী বলছো! আমি তোমাকে কখনো একবারও মোবাইল ব্যবহার করতে বারণ করেছি! আমি শুধু বলেছি তুমি এখানে আসার পরেও যদি মোবাইলে তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে চ্যাট করতে থাকো তবে বেড়াতে এলে কেন! বাড়িতে বসেই থাকতে পারতে।

উত্তরে দীতি আরো অসহিষ্ণু হয়ে বলে - বুঝেছি, বুঝেছি। আমাকে গ্যাংটক নিয়ে আসতে তোমার জ্বালা। সারাদিনের যে জার্নিটা গেল তার কোনো কষ্ট বোধ থাকতে নেই আমার! সবাইকে তোমার মতোই ভাবো। কথায় কথা বাড়ে। আনন্দের মুহূর্তে তো আরো ভারী হয়ে ওঠে। ছোটো ঋক অসহায় হয়ে বোঝার চেষ্টা করে কী ঘটছে তার বাবা ও মায়ের মধ্যে। শিশুমনে বাবাকেই তার দোষী মনে হয়। মায়ের সঙ্গে সে বেশীটা সময় কাটায়। বাবা তো রাতে বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিন শুরুর জন্য। সে রাতে আর কেউ কোনো কথা বাড়ায় না। ঋককে ওর মা খাইয়ে দ্যায়। সে নিজে কিছু খায় না। ফলে অমিতেরও আর রাতের খাওয়া হয় না। ইস কী ভুল সে করেছে গ্যাংটক এসে। সামান্য কথায় এমন প্রতিক্রিয়া! আসলে দীতি দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। 

 ভোর হয়। নিঃশব্দে পাহাড়ে আলো ফোটে। আজ ওদের লাচুং যাওয়ার জন্য গাড়ি ঠিক করা আছে। না গেলে ভাড়া ফেরত হবে না। আরো আরো অসুবিধা আছে। পুরো প্যাকেজটাই গুবলেট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যেমন হয়ে থাকে তাই হল। বরফ ভাঙানোর দায়িত্ব অমিতকেই নিতে হল। দীতি, রাতের কথা ছাড়ো। আই অ্যাম রিয়েলি সরি ফর হোয়াট আই সেইড। এখন ওসব ছেড়ে দিয়ে তৈরী হয়ে নাও। আমাদের গাড়ি আসবে ঠিক আটটায়। তার আগে স্নান টান করে এসো সবাই ব্রেকফাস্ট সেরে নিই। তারপর রওনা হই।

দীতি প্রথমে কোনো সাড়া দ্যায় না। তারপরেও আরেকটু ভেজানোর চেষ্টা চলতে থাকে অমিতের দিক থেকে। ছোটো ঋকও বাবার প্রচেষ্টায় যোগ দ্যায়। শেষে কাজ হয়। দীতি তৈরী হতে থাকে। তিনজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট সেরে নেয়। একসময় হোটেলের সামনে গাড়ি চলে আসে। হর্ণ বাজিয়ে ড্রাইভার ডাকতে থাকে। হোটেলের ম্যানেজার জানালেন গাড়ি এসে গেছে। উনিও বাঙালী। ওনার নাম তারক বিশ্বাস। বাড়ি নবদ্বীপ। পুরীতেও ওনার হোটেল আছে। এরপর পুরী গেলে অবশ্যই যেন তাঁর আশাদ্বীপ হোটেলে উনি ওঠেন এই অনুরোধ রেখেছেন। তাঁর ভিজিটিং কার্ড দিয়েছেন। 

  সবাই উঠে পড়ে শাদা রঙের স্করপিওতে। ড্রাইভার ছেলেটির বয়স অল্প। মেরেকেটে কুড়ি হবে। সবসময় ফুর্তিতে আছে। চমৎকার হাত ওর। তবে কখনো কখনো বেশ ঝুঁকিও ন্যায় এরা। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। এবার রাস্তা আরো দুর্গম। এখন চারিদিকের পাহাড় বেশ খাড়া। ছায়া ফেলেছে একজন আরেকজনের গায়ে। সবুজে ঢাকা পাহাড়। পাশে নীচে নদীও চলেছে। কোথাও দুপাশে বেশ গাছপালার জঙ্গল। নীচে একটা বিয়ার বা মদের কারখানা। এখানে পাহাড় কী বিশাল উঁচু! একমাত্র শুয়ে পড়ে পাহাড়ের মাথা দেখা সম্ভব। এমনি একটা উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে লাফিয়ে নামছে ঝর্ণা। অপূর্ব সে দৃশ্য। ড্রাইভার ঝর্ণার নাম বলল।

আরেকটু এগিয়ে গিয়ে একটু ফাঁকা জনহীন স্থানে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে অমিত। এবার একটু ভারমুক্ত হতে হবে। গাড়ির পেছন দিকে নেমে পড়ে ওরা। ড্রাইভারও নেমে ওদের বিপরীতে এগিয়ে যায়। পাশে গভীর খাদ। নীচে বিশাল বিশাল পাথরের বোল্ডার ছড়ানো ছেটানো। মনের আনন্দে ঋক ছুটে যায়। অমিত ও দীতি একসাথে এগিয়ে চলে ধীর পায়ে। হঠাৎ একটা পতন শব্দ। চিৎকার করে ওঠে দীতি। থমকে দাঁড়ায় ঋক। মা কি হয়েছে! খাদের দিকে আঙুল দেখিয়ে দীতি বলে ওঠে তোর বাবা। ড্রাইভার ছুটে আসে। ইয়ে ক্যায়সে হো গায়া ম্যাডাম। ড্রাইভার ওদের দুজনকে নজরে রাখে আর বলে উধার মত যাইয়ে ম্যাডাম। আব তো পুলিশকো বুলানা পড়েগা। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার খাদের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। খাড়া নেমে গেছে প্রায় দেড়শো ফুট গভীর খাদ। এর মধ্যে ড্রাইভার ফোন করেছে পুলিশকে। ততক্ষণ অপেক্ষা।

পুলিশ পৌঁছতে প্রায় তিন ঘন্টা। সঙ্গে এনেছে ছজনের রেসকিউ টিম। এসেই দড়িদড়া বেঁধে নেমে পড়ল তারা। তারপর অনেক কসরতের পর দোমড়ানো মোচড়ানো অমিতের দেহ তুলে আনা হল। অঝোরে কেঁদে চলেছে ঋক। দীতির মুখ কালচে হয়ে উঠল। আত্মীয় স্বজনকে ফোন করে সে। একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢোকে - এখনও গাড়িতে? দীতি দুটো শব্দ লেখে - পরে বলছি। তারপর মেসেজের ঝাঁক ও দীতির ইগনোর।

 তিন মাস পরের এক বিকেল। দীতি ফোন করে রিপনকে- রিপন, আমার একেবারেই মাথার ঠিক নেই । তোমাকেই যা করার করতে হবে। বুঝতেই পারছো মাথার ওপর কেউ নেই। ঋককে কিভাবে বড় করব? উত্তরে রিপন ভরসা দ্যায়- যে অঘটন ঘটে গ্যাছে তাকে তো আর আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না কিন্তু ভেবে দ্যাখো বৌদি, আমি দাদাকে দিয়ে ভাগ্যিস ইন্সুরেন্সটা করিয়েছিলাম। নাহলে আজ কী হত ভাবতে পারো! মাত্র দুটো প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিচ্ছে তোমাকে। আশা করা যায় তেমন সমস্যা হবে না বৌদি। তোমার আর ঋকের চলে যাবে। কথা বলতে বলতে স্ক্রিনে ফুটে ওঠে প্রিয়ম কলিং.


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract