কর্মফল
কর্মফল
শ্বশুরমশাইয়ের দেওয়া বিশাল পালঙ্কে বসে নববধূ সুস্মিতার হাতে হিরের আংটিটা পরাতে যায় সৌম্য; কিন্তু খুট করে একটা আওয়াজ সৌম্যকে মুখ তুলে দেখতে বাধ্য করে। চোখ চলে যায় পালঙ্কটার ডানদিকের স্ট্যান্ড আকারে থাকা কাঠের নারী মুর্তিটার দিকে। মুর্তিটার মুখটা কি সামান্য ঘোরানো লাগছে এদিকে! আগে তো বোধহয় এমন ছিল না। বেশি ভাবার সময় পায়না সৌম্য, সুস্মিতার নরম ঠোঁট ইতিমধ্যেই ছুঁয়ে ফেলে ওর সিগারেটপ্রেমী ঠোঁট দুটোকে। কিন্তু একি আবার একটা আওয়াজ, এবার যেন বামদিক থেকে। কোনো এক অজানা তাড়নায় নিজের ঠোঁট দুটোকে সুস্মিতার ঠোঁটের আলিঙ্গন থেকে দ্রুত মুক্ত করে সৌম্য চোখ ঘোরায় আওয়াজের উৎস।কাষ্ঠল নারী মূর্তিটার জায়গায় এবার দেখতে পায় একটা ধোঁয়া ধোঁয়া সত্যিকারের নারী অবয়ব যার মুখটা দেখে চমকে ওঠে সৌম্য। এ মুখশ্রী তো তার বহু চেনা, শুধু মুখশ্রী নয় এই শরীরের প্রতিটা অলিগলির সাথেও পরিচিত ছিল একসময়। কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে তো সে নিজে হাতে পাহাড় থেকে ফেলে খুন করেছিল একসময় কেননা সৌম্যর ঔরসে এই অনাথা মেয়েটার জঠরে সূচনা হয়েছিল নতুন একটা প্রাণের কিন্তু সৌম্যর এই বার্ডেন নেওয়ার কোনো কোনো ইচ্ছেই ছিল না সেসময়। এবোর্শন করতে বলতে মেয়েটা বড্ড ঘ্যানঘ্যান করছিল, সৌম্যকে বলছিলো তাকে নাকি বিয়ে করতে হবে না হলে সৌম্যর বাড়িতে এসে সব জানিয়ে দেবে।
কিন্তু সৌম্য কি পাগল নাকি যে এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করবে! মেয়েটা কি দিতে পারতো সৌম্যকে! শুধু নিজের শরীরটা আর সেটা তো সৌম্য পেয়েই গেছিল ইতিমধ্যে, তাহলে সৌম্যর জীবনে আর কাজ কি মেয়েটার! সুতরাং এই ঝামেলা দূর করতে নিজের হাতেই নতুন আর পুরোনো দুটো প্রাণকে একইসাথে শেষ করেছিল সৌম্য। কিন্তু আজ প্রিয হতভম্ভ, ভীত সৌম্য ঘুরে তাকায় ডানদিকে; ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে ভেসে থাকা দ্বিতীয় মেয়েটাকেও চিনতে অসুবিধা হয়না তার। শ্রীজা… ধনী বাবার একমাত্র আদুরে কন্যার কাছ থেকে একসময় ভালোই টাকা পয়সা আদায় করেছিল সৌম্য কিন্তু সুস্মিতাকে পাওয়ার পর যেইনা ছুঁড়ে ফেললো মেয়েটাকে অমনি সে মেয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়ে একদিন। ভাগ্গিস সুইসাইড নোট রেখে যায়নি কোনো তাই এই বছর খানেকেও কেউ সৌম্যর টিকি অবধি ছুঁতে পারেনি। আর অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কার আপন বলতে কেউ ছিলোনা তাই একটা জলজ্যান্ত মেয়ে স্রেফ হারিয়ে গেল অথচ কোনো হইচইই হলোনা সেভাবে। কিন্তু আজ প্রিয়াঙ্কা আর শ্রীজা একসাথে… সৌম্যর ফুলশয্যার ঘরে…একটু একটু করে এগিয়ে আসচে ওরা, একরাশ ধোঁয়ার মতন অবয়ব নিয়ে ঘিরে ফেলছে সৌম্যকে।
সুস্মিতার আঙুলে একটা তীব্র জ্বালা অনুভূত হয়। হিরের আংটিটা যেন দাঁত বের করে কামড়ে ধরছে ওর অনামিকা। আর্তনাদ করে আংটিটা ছুঁড়ে ফেলে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও। মেঝেতে একাকী পড়ে রয়ে যায় বিস্ফারিত চোখে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা সৌম্যর নিস্পন্দন দেহটা।
শেষ...