Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

arijit bhattacharya

Fantasy

1  

arijit bhattacharya

Fantasy

প্রত্যাবর্তন

প্রত্যাবর্তন

3 mins
246


বিষ্ণুপুর স্টেশনে বিকেল বেলা ট্রেন থেকে নামল জয়ন্ত। হেমন্তের বেলা,একটু পরেই পশ্চিম দিগন্তকে নানা রঙে রাঙিয়ে দিবাকর অস্তাচলে যাবেন। সন্ধ্যা নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। জয়ন্ত অনুভব করল,তার নিজের জীবনের সূর্য হয়তো মধ্যগগনে আছে, কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই একদিন তার জীবনে সায়াহ্ন নেমে আসবে।

বহুদিন পরে লেখক জয়ন্ত চক্রবর্তী ফিরছেন নিজের গ্রাম ডাঙরপাড়ায়। মধ্য চল্লিশেও জয়ন্ত একজন অবিবাহিত পুরুষ, কোনো এক অমোঘ কারণে জীবনে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তার বিবাহবন্ধনে জড়িয়ে পড়া হয় নি। বহুদিন পরে ফিরছেন তিনি নিজের গ্রামের বাড়িতে। অনেকদিনই শহরের কৃত্রিমতা,ব্যস্ততা ও যান্ত্রিকতায় হাঁসফাঁস করছিল তার মন ,আর এখন মন পাচ্ছে মুক্তির হাওয়া। মুক্তি আছে ঐ চোখজুড়ানো দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেতের মধ্যে, মুক্তি আছে ঐ লাল সুরকি বেছানো পথে, মুক্তি আছে ঐ দীঘির শরীর জুড়ানো ঠাণ্ডা জলে, মুক্তি আছে ঐ পথের পাশে বাবলা ও খেজুর গাছে। মুক্তি আছে ঐ গ্রামবাঙলার শস্যশ্যামলা প্রকৃতির মধ্যে।জয়ন্তর মনে পড়ে গেল দাদুর কথা। ছোটবেলায় দাদুর হাত ধরে বিকেলে ঘুরতে বেরতো ঐ লালমাটির পথে, দাদু কতো ভূতের গল্প শোনাতেন পথের ধারের ঐ বাঁশবন,আশশ্যাওড়া আর বাবলা গাছ নিয়ে। রবিবার বেলার দিকে দীঘির পাশে ঐ পিপুল গাছের ছাওয়ায় বসে দাদু শোনাতেন কতো দেশ বিদেশের রূপকথার গল্প,আরব্য রজনীর কতো কাহিনী! এখানকার চণ্ডীমণ্ডপে বা দ্বারকেশ্বরের শুভ্র সৈকতভূমে কতো নানা রঙের মুহূর্ত কাটিয়েছে দাদুর সঙ্গে! দাদু আজ আর নেই। কতো কথা বলতেন দাদু-পুরাণের কথা,ঠাকুর দেবতার কথা। নিমেষে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। মাঠের পিছনে দিগচক্রবালে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। পৃথিবীর বুকে গোধূলির নরম আলো। রাস্তার পাশেই বোসদের দীঘি,রাজহাঁস ডাকছে। গ্রামে ঢুকতেই খেজুরগাছে বাবুইপাখিদের বাসা ছিল,সেই গাছটাও চোখে পড়ল না। বাবুইরা কোথায় গেল! তাহলে কি শহরের যান্ত্রিকতা তথা কৃত্রিমতার ছোঁয়া এখানেও লাগল! কিন্তু না এখানে এখনোও বেঁচে রয়েছে সবুজ। পৃথিবীর বুকে যতোদিন থাকবে সবুজ আর বুক ভরা ভালোবাসা,ততোদিন বেঁচে থাকবে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন।

এখানেই আছে মা বাবার অকৃত্রিম আদর, প্রতিবেশীদের অকৃত্রিম স্নেহ ও ছোটবেলার বন্ধুদের ভালোবাসা। ছোটবেলার বন্ধুদের কথা মনে করতেই দুচোখে জলে ভরে আসে জয়ন্তের। ছোটবেলা থেকেই সে আর সিংহবাড়ির সমিত ছিল অভিন্ন আত্মা। এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে,তার বন্ধু আর ইহজগতে নেই। বন্ধুবিরহে খাঁ খাঁ করে জয়ন্তের হৃদয়,আটকে ওঠে শ্বাস,ঝাপসা হয়ে আসে তার দৃষ্টি।


সন্ধ্যা নামব নামব করছে। চাষীরা হাট থেকে বাটে ফিরছে। দূরে কোথাও শিয়াল ডাকছে। সত্যিই এই গ্রামবাঙলার নিজস্ব এক সঙ্গীত রয়েছে,যা উপলব্ধি করতে হয়। জয়ন্তের মনে পড়ে রাইকে,তার জীবনের মরুভূমিতে মরূদ্যান- তার প্রথম যৌবনের সেই প্রথম ও শেষ প্রেম। অনেকে বলে,বাল্যপ্রণয়ে অভিসম্পাত আছে। জয়ন্তের মনে হয়,সত্যিই বাল্যপ্রণয়ে অভিসম্পাত রয়েছে। কতো রঙিন মুহূর্ত তার আর রাইয়ের ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই লালমাটির দেশের আনাচে কানাচে। জয়ন্তের মনে পড়ে গেল,প্রথম প্রেমের সেই সন্দর্শন,শরীর আর মননে জেগে ওঠা শিহরণ। বিকেলের পড়ন্ত মায়াবী আলোয় দ্বারকেশ্বরের ধারে রাইয়ের সাথে কাটানো কতো ঘনিষ্ট মুহূর্ত! কখনো মন চুরি করে নেওয়া দৃষ্টি,কখনো হাতের নরম ছোঁয়া, কখনো নিজের ভালোবাসার ব্যক্তিকে শুধুমাত্র একঝলক দেখার জন্য মনের মধ্যে এক প্রচণ্ড আকুতি-সত্যিই কতো রঙ আছে এই ভালোবাসার। বসন্তের সোনালী বিকালে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় রাইকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেওয়া ও রাইয়ের তাতে সম্মতি জানানো। বিকালে এই নদীর শুভ্র সৈকতভূমে গাঢ় আলিঙ্গনে প্রেমিকার হৃদস্পন্দন অনুভব করতে করতে অধরসুধা পান করা। সত্যিই কৈশোরপ্রণয়ে অভিসম্পাত আছে। নইলে কেন বাড়ির লোক বিরোধিতা করবে রাই ও তার সম্পর্কের,কুলীন বাড়ির ছেলে বলে সে নাকি কোনো অব্রাহ্মণ মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না! রাই যে তার বুকের প্রতিটি হৃদস্পন্দন,রাই যে তার প্রাণ। রাই ছাড়া তার জীবন মরুভূমি। কিন্তু,কেউ বুঝল না,তার বিরহের ব্যথা। তাই তো বিরহের ব্যথাকে তরবারি বানিয়ে সে ছিন্ন করেছে জীবনে একের পর এক বাধা,গড়ে তুলেছে নিজের সাফল্যের অনুপম কাহিনী। তাও তার জীবন আজ উষর মরুভূমি। সে রাইকে অনুভব করে জীবনের নানা রঙের মধ্যে,এই প্রকৃতির মধ্যে। তার পরিবারের প্রত্যাখ্যানের পরেই রাইয়ের কোমল প্রেমপরিপূর্ণ হৃদয়

এই আঘাত সইতে পারে নি। অপমানে আত্মহত্যা করেছিল রাই। অতল অবসাদে তলিয়ে গেছিল জয়ন্ত। আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল জীবনে।

এখন সে জানে রাই আছে গোধূলির রক্তিমায়,রাই আছে আকাশের নীলিমায়,রাই আছে ফুটে ওঠা গোলাপে,রাই আছে প্রকৃতির নানা রঙে।রাই আছে তার হৃদয়ে। রাই তার জীবন,রাই তার প্রেরণা,রাই তার সোনালী সূর্যকিরণ। সব অনুভূতিরা যে পাবার জন্য নয়!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy