Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Horror Crime

1.3  

Debdutta Banerjee

Horror Crime

একলা চলো রে .....

একলা চলো রে .....

6 mins
18.1K


ঠিক রাত নটায় বৃষ্টিটা কমে গেছিলো। মুহূর্তের মধ‍্যে আকাশ পরিস্কার হয়ে গোল থালার মত চাঁদ উঠেছে ।আশেপাশের পাহাড় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আর দূরের হিমালয়ের ঐ রূপালী চূড়াগুলো মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁওয়া যাবে। এমন দিনে তন্নি পথে বেরিয়ে যেত, অথবা ছাদে উঠে পড়তো, গলা ছেড়ে গান গাইতো। প্রকৃতিকে প্রাণ দিয়ে অনুভব করতে ভালো বাসতো মেয়েটা।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে দেবের বুক চিরে। এবার যেতে হবে। গুনগুন করে তন্নির প্রিয় গানটা গাইতে গাইতে কয়েকটা টেকনিক‍্যাল কাজ করে নেয় তাড়াতাড়ি।

রিসিপশনের ছেলেটার হাতে বিলের খামটা দিয়ে ম‍্যানেজার চৌধুরী বলল, -" 403 খুব ভোরে চেক আউট করবে, তাই এখনি ফোন করে গেস্টকে বিল দিয়ে সব ক্লিয়ার করে রাখুন।" লিফটে উঠে নিজের ঘরে চলে যায় চৌধুরী। একটু পরেই ফোন পেয়ে রিসিপশনে নেমে আসে দেবেন। সব পেমেন্ট করে বিল বুঝে নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে যায়। 

দুবার বেল দিতেও দরজা খুলল না রীতা। আলতো ঠেলতেই খুলে গেল দরজাটা। ঢুকেই একদিকে বাথরুমের দরজা, অন‍্যদিকে প‍্যাসেজ পার করে বেডরুম। রীতা উপুড় হয়ে পরে রয়েছে বেডে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সাদা বিছানা। কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল দেবেনের ব‍্যাপারটা বুঝতে , তারপর ....

ম‍্যানেজার চৌধুরীর ঘরে বসে কথা বলছিল ইন্সপেক্টর দুবে। এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরে বদলী হয়ে এসেছেন মাত্র দু'মাস। এর মধ‍্যেই চারটে খুন!! আর একেকটা খুন হয়েছে একেক ভাবে। 

প্রথম খুনটা খুন, না দুর্ঘটনা বোঝা যাচ্ছে না। দেড় মাস আগের ঘটনা। গিজার শর্ট হয়ে জলে কারেন্ট খেয়ে মারা যায় তরুন ছেলেটি। মেয়েটি রুমেই ছিল। পাশেই এই মালিকের আরেকটা রিসর্ট আছে, স্কাই ভিউ। সেখানেই হয়েছিল ঘটনাটা। কেস চলছে এখনো।

এর আগের খুনটা হয়েছিল দশ দিন আগে। এই হোটেল ব্লু'হিলেই। এমনি অল্প বয়স্ক দম্পতী। ওয়েলকাম ড্রিঙ্কসে ওয়াইন আর সফট ড্রিঙ্ক দেওয়া হয়েছিল। খেয়েই মারা যার মেয়েটি। স্বামীকে বহু জেরা করা হয়েছে। হানিমুন কাপল ছিল, এ্যারেঞ্জ ম‍্যারেজ। কোনো প্রমান নেই। স্ত্রীর লেমন ড্রিঙ্কসের গ্লাসের তলানিতে ছিল কড়া বিষ। হোটেলের যে ছেলেটি ড্রিঙ্কস নিয়ে গেছিল তাকে গ্ৰেফতার করেও বিশেষ লাভ হয় নি। মোটিভ নেই।

ম‍্যানেজার চৌধুরী মালিকের কথামত নিজে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কের সাথে সব হানিমুন কাপলকে এ্যাটেন্ড করেছিল। সেও কিছু বলতে পারেনি। মেয়েটির মামা আবার এম.এল.এ। তাই চাপ আসছে প্রচুর।

তার বারো দিন আগে হয়েছিল আরেকটা খুন। এটাও হোটেল স্কাইভিউতে। ছেলেটি সন্ধ‍্যায় বেরিয়েছিল পরদিনের জন‍্য গাড়ি ঠিক করতে। মেয়েটি একটা পাসতা স্যালাডের অর্ডার করেছিল। সেই পাস্তাতেই ছিল মারাত্মক বিষ।

আজ মালিক মিঃ আকাশ ঠাকুর ছেলেকে নিয়ে ছুটে এসেছিল থানায়। ওনার বক্তব‍্য এশহরে কেউ ওনার ব‍্যবসা বন্ধ করতে চায়। না হলে বেছে বেছে ওনার হোটেলেই এ্যাটাক হচ্ছে কেন!! ওনার আরো দুটো হোটেল আছে অন‍্য জায়গায়। এখন সব ছেড়ে ছেলে সহ এখানে বসে রয়েছেন এই ঝামেলার জন‍্য।

আপাতত দুবে কোনো সুত্রই হাতে পায় নি। একটাই মিল , সবাই সদ‍্য বিবাহিত। তবে ঐ তরুণের গিজারের ঘটনাটা যদি আ্যকসিডেন্ট হয় তবে ওটা বাদ দিলে আরেকটা মিল আছে। অন‍্য মিলটা হল বাকিরা মহিলা।

চৌধুরীর কাছে সিসি'টিভির ফুটেজ চেয়েছিল দুবে। চৌধুরী বলে, "চার তলার ক‍্যামেরাটা সেদিন সকাল থেকেই খুব ডিস্টার্ব ছিল। খুব কাঁপছিল। কোম্পানিকে জানানো হয়েছিল। পরদিন আসার কথাও ছিল কোম্পানির লোকের।তাই মালিকদের কথা মত বন্ধ ছিল ওটা।"

হোটেলের মোট দশজন কর্মীকে খুটিয়ে জেরা করেছিল দুবে। কিন্তু কিছুই জানা যায়নি। সবাই প্রায় নতুন। হোটেলটা তিন মাস আগেই কিনেছে ঠাকুররা। চৌধুরী আছে প্রথম থেকেই। আপাতত দেবেনকেই গ্রেফতার করতে হয়। আশেপাশের ঘরগুলো সব ফাঁকা। এটা অফ সিজিন। এই পেলিংএ এই সময় হানিমুন কাপল ছাড়া কেউ আসেনা। সামনের মাস থেকে টুরিস্ট সিজিন শুরু হবে।

নিজের ঘরে বসে দুবে সব কটা কেস আবার খুব মন দিয়ে দেখছিল। প্রতিটা কাপল আলাদা, প্রথমটা লাভ ম‍্যারেজ, ইউপির লোক। তার পরের তিনটেই এ্যারেঞ্জ ম‍্যারেজ। পরেরটা বর্ধমান। তারপরেরটা জামসেদপুর। এবার কলকাতা। পণের বা সম্পত্তির লোভে খুন এমন কিছুও জানা যায়নি। কারোর কোনো পারিবারিক শত্রুর খবর পাওয়া যায়নি। দেবেনের বিরুদ্ধেও তেমন জোরালো প্রমাণ নেই। যে কোনো ভালো উকিল ওকে বাঁচিয়ে দেবে। এর মধ‍্যে আরো কয়েকজন গেস্ট এসেছিল হোটেলে। গ্ৰুপ এসেছিল কয়েকটা। তারা ঠিকঠাক ফিরে গেছেন। কারো কোনো অনুুুযোগ নেই।

নড়বড়ে কেসটাকে স্ট্রং করার জন‍্য দুবে এই সব কেসের চরিত্রদের লাইফহিষ্ট্রি আনিয়েছে। কিন্তু কোনো মিল পায়না। এটা যদি কোনো সাইকো কেস হয় তবে হোটেলে নজর রাখতে হবে। দুটো হোটেলের সব স্টাফদের সাথে আবার কথা বলে‌ দেখেছে, হোটলটা ভালো মাইনে দেয়। তাই সবার মধ‍্যেই একটা চাপা টেনশন,... এই বোধহয় বন্ধ হলো হোটেল। আসলে এই পাহাড়ের মাথায় ভাল হোটেল একটাই। বাকি হোটেল চার কিমি নিচে, বাজারে।কম্পিউটারে এসব ঘাঁটতে ঘাঁটতে দুবের নজরে পড়ে, তার আসার প্রায় চার মাস আগেও একটি মেয়ে মারা যায়। তবে ওটা এ্যাক্সিডেন্ট। সেলফি তুলতে একটা পাহাড়ের মাথায় উঠেছিল। পা পিছলে পড়ে যায় অতল খাদে। ড্রাইভার সাক্ষী দিয়েছিল যে, মেয়েটির স্বামী সেই সময় সোয়েটার আর জ‍্যাকেট রাখতে গাড়িতে এসেছিল। মেয়েটির চিৎকারে দু জনেই দৌড়ে যায়।আরো কয়েকজন ছুটে এসেছিল।ততক্ষণে সব শেষ।

"বদলাতে হবে টেকনিক, নতুন কিছু ভাবতে হবে। এই কিচেনে .....সবার আড়ালে এভাবে.... না, এবার অন‍্য কিছু করতে হবে। হোটেলটা পুলিশের নজরে রয়েছে। দুষ্টু মিষ্টি কাপল গুলোকে ...."

জানালা দিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন হেলিপ‍্যাডটার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় দেব।

"......... তবে একলা চলো রে..." গুন গুন করতে করতে অন্ধকারের বুক চিরে এগিয়ে যায় ওদিকে।

স্পটে পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল হয়েই গেছিল। হেলিপ‍্যাডের উপর পুলিশ ভর্তি। 'সানরাইজ' দেখতে অনেকেই এই পাহাড়ের মাথার হেলিপ‍্যাডে আসে। অন্ধকার থাকতেই এসেছিল মৈনাক আর তুলি। পাশের একটা হোম ষ্টেতে উঠেছিল ওরা। তাড়াহুড়োয় ক‍্যামেরার দুটো লেন্স ঘরে ফেলে এসেছিল মৈনাক। তুলি একাই ফটো তুলছিল। মৈনাক নেমে গেছিল লজে লেন্স আনতে। ফিরে এসে দেখে দামী ক‍্যামেরা পড়ে রয়েছে তুলি নেই।কুয়াশার মধ‍্যে একটা অবয়ব দেখেছিল মৈনাক লেন্স নিয়ে ফেরার সময়। আলো ফুটলে খাদের ধারে ওর শালটা দেখে লোক নামানো হয়েছিল। সব শেষ।

দুবে বসের সাথে ফোনে বহুক্ষণ আলোচনা করে কেসটা নিয়ে। বস বলেছে এটা সাইকো কেস। সব হোটেলকে ইনফর্ম করা হয়েছে কোনো গেস্ট যেন একা কোথাও না যায়। পুলিশ পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে। টুরিস্ট নেই বললেই চলে। পুলিশ চার্জশিট দিতেই পারছে না।

একটা কাগজে সবার নাম লিখে সব দিক ভেবে একটা একটা করে নাম কাটছিল দুবে। কাটাকুটি অঙ্কের মতো । শেষ থেকে শুরু করেছে দুবে। বস বলেছিল খুনীর মত করে তার দিক দিয়ে ভাবতে কেসটা। সব ঘটনাতেই কাছাকাছিতে যারা ছিল তারা হোটেলের লোক। হঠাৎ একটা নামের উপর এসে গোল করে দুবে। এর ব‍্যপারে খোঁজ নেওয়া হয় নি। সাথে সাথে ফোন তুলে হোটেলের মালিককে ধরে দুবে। আকাশ ঠাকুর ছুটে আসে থানায়। কয়েকটা প্রশ্ন, ধাঁঁধার উত্তর প্রায় মিলে যায়। একটু ঘুঁটি সাজাতে হবে এবার। কমিশনার আর বসেদের সাথে আলোচনা করে নেয় দুবে।

 

বিকেলে রিনি আর অভি এসে উঠেছে স্কাইভিউ এর হানিমুন কটেজে। পনেরো দিন বিয়ে হয়েছে, গায়ে নতুন গন্ধ এখনো। একটু পরেই বেয়ারা নিয়ে এল গরম কফি, ম‍্যাডামেরটা অবশ‍্য ব্ল‍্যাক।

কিন্তু দরজার সামনেই দুবে আটকালো রুম সার্ভিসের ছেলেটাকে। সবাই ছুটে এসেছে। দুবের নির্দেশে কফির দুটো কাপ ফরেন্সিকে পাঠানো হলো। ছেলেটাকে জেরা শুরু করল দুবে। দুটো হোটেলের একটাই কিচেন। খাবার সাজিয়ে আনার সময় ম‍্যানেজারের ঘর থেকে ডাক এসেছিল একটা ট্যুর প্ল্যান এদের পৌঁছে দেওয়ার জন‍্য। কাপ প্লেটের পাশেই শোভা পাচ্ছে হোটেলের ট্যুর প্ল্যান।

এটুকুই শুনতে চেয়েছিল দুবে। চৌধুরীর কাঁধে হাত রেখে বলে,-" চলুন, থানায় গিয়ে বাকি কথা হবে। "

-"আমায় কেনো ? আমি .... " চৌধুরী তোতলাতে থাকে।

-"আপনার স্ত্রী যে কয়েকমাস আগে সেলফি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে ....." দুবের কথা শেষ হওয়ার আগেই চৌধুরী চিৎকার করে বলে -"স্টপ ইট অফিসার। আমি নিজেই ওর খুনিকে খুঁঁজছি।তাই চাকরী নিয়ে এখানে এসে রয়েছি.... "

-'',আমি যদি বলি আপনি স্ত্রীর শোকে খুন করছেন। আর খুন করার জন‍্যই এখানে চাকরী নিয়ে এসেছেন। বাকিটা না হয় থানায় গিয়েই বলব।"

-"বিশ্বাস করুন, আমার স্ত্রীকেও কেউ ....."

-"প্রতিটা খুনের সময় আপনি কাছে ছিলেন। গিজার খারাপ করে রেখেছিলেন। দুর্ভাগ‍্যবশতঃ ছেলেটি আগে স্নানে যায়। পাস্তা যে দিতে এসেছিল সে বলেছে আপনি কিচেনে ছিলেন। ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস এর সাথেও আপনি ছিলেন। দেবেন বাবুকে আপনি রিসেপশনে ডাকতে বলে ওনার ঘরে গেছিলেন। সব ঘটনায় আপনার উপস্থিতি প্রমান হয়ে যাবে। ভোর রাতে জিৎ আপনাকে হেলিপ‍্যাডে যেতে দেখেছিল।"

বিহ্বল চৌধুরী দু হাতে মুখ ঢেকে ভ‍্যানে উঠলো।

কি করবে, কি বলবে বুঝে পায় না।

চারতলার জানালা দিয়ে জিপটাকে চলে যেতে দেখে জিৎ এর ঠোঁঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে। বোকা পুলিশটা বড্ড বেড়েছিল। অথচ খেয়াল করেনি ও তিনমাস হল এই হোটেলটা কিনেছে। তার আগে চার বছর ও ছিল আলাদা আলাদা শহরে। তন্নিকে ভোলার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রোজই তন্নি রাতে আসে।ও ভীষণ একা ওখানে। 

দেবজিৎ যখন তন্নিকে পায়নি একা হয়ে গেছে এদেরকেও একাই থাকতে হবে।তাই মেয়ে গুলোকে বেছে বেছে পাঠিয়ে দেয় তন্নির কাছে। চৌধুরীর বৌটাকেও, তারপর বোকাটাকে চাকরী দিয়ে শিখন্ডী র মতো সামনে রেখে একে একে,এত সুন্দর পরিষ্কার কাজ যে কারোর চোখেই পড়েনি। 

উফ, খেলাটা জমেছিল। কিন্তু না , এ শহরে আর হবে না। আবার অন‍্য শহর, অন‍্য জায়গা.....

গুনগুন করে তন্নির প্রিয় গানটা গায় দেবজিৎ -"যদি তোর ডাক শুনে কেউ..... একলা চলো রে....."

#positiveindia


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror