Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Drishan Banerjee

Crime Thriller

2  

Drishan Banerjee

Crime Thriller

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে ৭

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে ৭

5 mins
9.1K


মিশাই ওদের সাথে গেছে বোঝা গেল। ওরা দলে মোট এগারো জন ছিল।আরো তিনজন কুলি নিয়েছে মানে বেশ বড় দল। এখন হুয়ান আর আলোকরা ঠিক করে উঠতে পারছিল না ঠিক কি করে এগোবে। হুয়ান দের নিয়ে ওরা মোট আট জন। সবাই প্লেন ড্রেসে এসেছে। হুয়ান দুটো বড় তাঁবু আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এনেছিল। এসব ছাড়া এ পথে পা বাড়ানো মানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। ওরা নিজেদের অভিযাত্রী বলেই পরিচয় দিয়েছিল। হুয়ান বলেছিল দুটো হেলিকপ্টার ওদের প্রয়োজনে কভারেজ দেবে। তবে এ পথে ঘন জঙ্গলে হেলিকপ্টার নামার অসুবিধা আছে। হুয়ানের সাথে স্যাটেলাইট ফোন ছিল। আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। আসলে বড় বাহিনী নিয়ে এলে মিশাই এর বিপদ হতে পারে বলে এভাবে এসেছিল। কিন্তু পরদিন থেকে হাঁটা পথ, কুলি লাগবে। টাকা দিলে এ গ্ৰামের লোক কুলি হয়ে ঐ পাহাড় অবধি যাবে, তারপর নিজেদের যেতে হবে।

হুয়ান বলল -" ঐ পাহাড়ের আগেই ওদের ধরতে হবে। রাতটা ওরা নিশ্চই জঙ্গলেই কাটাবে। কাল খুব সকাল সকাল বেরিয়ে ওদের কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে আগে।"

আলোক সাহানা আর পিয়ম কে এ গ্ৰামেই থাকতে বললেও ওরা রাজি হলো না। এই গ্ৰামেও নেট ওয়ার্ক, ইলেকট্রিক কিছু নেই‌ ।সামনের রাস্তা আরো দুর্গম। কিন্তু পরদিন সকালে এমন বৃষ্টি শুরু হলো ,ওরা রওনা দিতেই পারলো না। নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠেছিল, আকাশ অন্ধকার। এই নদীতে কুমির ছাড়াও মাংস খেকো মাছ রয়েছে। এমন দুর্যোগের কবলে ওরা কখনো আগে পড়েনি। তবে হুয়ান বলল যে এই দুর্যোগে ওরাও এগোতে পারবে না। ওদের ও অপেক্ষা করতে হবে।

পরদিন সকালে আকাশের মুখ ভার থাকলেও ওরা এগিয়ে গেলো। এই তৃণভূমিতে চিতার উপদ্রব এখন কমেছে। তবে সামনের জঙ্গলে চিতা ছাড়াও সব বন্য প্রাণীই রয়েছে। বৃষ্টিতে মাটি পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় সাবধানে এগোতে হচ্ছিল। দূরে এক জায়গায় বেশ কিছু শকুন উড়ছিল দেখে কুলিরা ওদের ভাষায় কিছু বলছিল। হুয়ান বলল যে ওরা বলছে ওখানে কিছু মরেছে। আলোক বলল -" আমাদের তাড়াতাড়ি এগোতে হবে এখন। আজ জঙ্গল শেষ করে পাহাড়ের নিচে তাঁবু ফেলতেই হবে।" মাঝে মাঝেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু দুপুরে ওরা জঙ্গলের কাছে পৌঁছে গেছিল। সামনেই ঘন জঙ্গল, যাতে নানারকম বন্য প্রাণী রয়েছে। সাহানার এক অন্য রকম শিহরন হচ্ছিল। এমন ভাবে আদিম অরণ্যের ভেতর আগে কখনো ঢোকে নি। তাও এ ভাবে পায়ে হেঁটে !! এক জায়গায় কাল যে পিটাররা তাঁবু ফেলেছিল বোঝা গেলো। যদিও এবারের এই অভিযান ঠিক ঘুরতে আসা নয়, তবুও মাঝে মাঝেই সাহানা আর আলোক ফটো তুলছিল প্রকৃতির। সামনেই এক ধরনের বেগুনি ফুল দেখে ছবি তুলছিল সাহানা, গাছটার খুব কাছে গিয়ে জুম করতেই পিয়ম ওর হাত ধরে জোরে টান দিল। ক্যামেরাটাই পড়ে যাচ্ছিল একটু হলে। ও তাকাতেই পিয়ম বলল -" ওগুলো শয়তানের রানী। এই গাছ ভয়ানক বিষাক্ত, ঐ ফুল ছুঁলেই স্কিন ডিজিজ৷ আর এই গাছের পাতা, শেকড় সব বিষাক্ত, কোনো ভাবে পেটে গেলে আর বাঁচে না কেউ। এমন গাছ এখানে পায়ে পায়ে। তাই খুব সাবধান।"

কুলি দুটোকে নিয়ে হুয়ান অনেকটাই এগিয়ে গেছিল। হঠাৎ একটা কুলির চিৎকারে সবাই চমকে সেদিকে গিয়ে দেখে একটা আধ-খাওয়া দেহ পড়ে রয়েছে একটা গর্তে।আশেপাশের নরম মাটিতে চিতার পায়ের দাগ। লোকটার ছিন্নভিন্ন জামা দেখে ও যে পিটারের দলের হতভাগ্য একজন বোঝা গেল। আরো কিছুদূর গিয়েই সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তাঁবু খাটাল সবাই মিলে, একটা বড় তাঁবুতে পিয়মরা তিনজন আর হুয়ান থাকবে, অন্য তাঁবুতে বাকিরা, তাই ঠিক হলো।

আগুন জ্বালাবার জন্য শুকনো কাঠ আনতে গিয়ে কুলি দুটো আরো দুজন ওদের গ্ৰামের লোককে নিয়ে হাজির। এরা নাকি পিটারদের কুলি হয়ে এসেছিল। কিন্তু ঐ পাহাড় পার হবে না বলে ফিরে যাচ্ছে।একজন টাকার লোভে থেকে গেছে। এদের কাছ থেকে জানা গেল পিটারদের দলের একজন কে চিতায় তুলে নিয়ে গেছে আর দু জন অজানা জ্বরে কাবু। আজ আরেকজন বিষাক্ত সাপের ছোবলে মারা গেছে। পিটার তবু এগিয়ে যাবেই। রাতটা হুয়ানের লোকেদের সাথেই থেকে গেল ওরা।

আলোক চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে ছিল আগুনের ধারে। হুয়ানের প্রশ্নের উত্তরে বলে -" ঐ ডাইরির লেখা অনুযায়ী আরেকটা গ্ৰাম পাওয়ার কথা ছিল এদিকে!! আমরা হয়তো ভুল যাচ্ছি। এই কুলি গুলোকে ওদের ভাষায় জিজ্ঞেস করে দেখো তো?"

হুয়ান খোঁজ নিয়ে বলল -"আরেকটা উপজাতি গোষ্ঠী এদিকে থাকতো ঠিক, তবে সাত বছর আগে অজানা জ্বরে সবাই মারা পড়ে গ্ৰামটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ ওরা বলছে।"

আলোকের মুখে প্রসন্নতা ফুটে ওঠে।

মাঝ রাতে একটা খসখস শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছিল সাহানার। তাঁবুর বাইরে কিছু রয়েছে বুঝতে পারছিল। আলোক আর হুয়ান যে জাগা টের পেল ওদের নড়াচড়া দেখে। একটু পরেই জন্তুটা হয়তো চলে গেল। অনেকক্ষণ সব চুপচাপ। তাঁবু একটু ফাঁক করে হুয়ান দেখল আগুনটা তখনো ধিকিধিকি জ্বলছে।

পরদিন সকালে চিতাটার পায়ের ছাপ দেখে ওরা বুঝল ওটা আশেপাশেই আছে। কুলি দুটো ওদের পিটারদের যেখানে ছেড়েছিল সেখানে পৌঁছে দিয়েই চলে আসবে ঠিক হলো। ওদের কুলিরাও ফিরে যাবে।

খুব সকালেই তাঁবু গুটিয়ে রওনা দিয়েছিল ওরা, সামনেই দুটি নদী একসাথে মিশেছে। এ বার কুলি দুটোর দেখানো পথে এগিয়ে চলল সবাই। এই অঞ্চলে গ্ৰীন মাম্বা প্রচুর। সাহানা একটা ঝোপের ধারে সকালের প্রাতঃক্রিয়া করতে গিয়েই একটা দেখেছিল । পিয়ম ওদের বলছিল এরা ওয়েস্ট আফ্রিকান গ্রিন মাম্বা বা হ্যালোওয়েলস গ্রিন মাম্বা নামেও পরিচিত। ১৮৪৪ সালে আমেরিকান সরীসৃপ-উভচরবিদ এডওয়ার্ড হ্যালোওয়েল প্রথম এই বিষধর সাপের বর্ণনা করেন। এনার নামানুসারেই হ্যালোওয়েলস গ্রিন মাম্বা নামটি। ওয়েস্টার্ন গ্রিন মাম্বা অতি দীর্ঘকায় ও মুখ্যতঃ বৃক্ষবাসী। এরা গাছের বিভিন্ন অংশে দ্রুত এবং আকর্ষনীয় ভাবে চলাফেরা করতে পারে।

এদের বসবাস প্রধানত পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী ক্রান্তীয় রেন ফরেস্টের ঘন ঝোপঝাড়ে এবং জঙ্গলে। এই ওয়েস্টার্ন গ্রিন মাম্বা হল এলাপিড পরিবারভুক্ত অন্যতম ভয়ানক বিষধর সাপ। এদের বিষের গঠনগত বিশ্লেষণে অতিদ্রুত ক্রিয়াশীল প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিনস (ডেনড্রোটক্সিন), কার্ডও টক্সিনস, ক্যাকিক্লুডিন, এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। এই প্রজাতির ছোবলে মৃত্যুর হার বেশি, কারণ দংশিত ব্যক্তির শরীরে অতি দ্রুত একের পর এক প্রাণঘাতী লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ,মাম্বা জাতীয় সর্প দংশনের বিশেষত্ব। তীব্র বিষক্রিয়া এতটাই প্রাণঘাতী যে ৩০ মিনিটের কম সময়ে দংশিত ব্যক্তি মারা যায়।

হুয়ান স্যাটেলাইট ফোনে সব খবর ওপর মহলকে জানিয়ে রাখছিল। তখনি জানতে পারে জো ওর দুজন অনুচরকে নিয়ে ওদের পিছনে আসছিল। কিন্তু কাল  ওদের নৌকা মোয়া নদীতে উল্টে গেছে। ঐ নদীতে বৃষ্টিতে জল বেড়ে গেছিল। আপাতত ওদের খবর নেই। ঐ নদীতে মাংসাশী মাছ ও কুমির রয়েছে।

আলোক বলে -" জো, আতিফ এরা একটাই দল বুঝতে পারছি। তাই ফোনটা আমাদের আশেপাশেই দেখাতো।"আলোক আগেই হুয়ানকে বলেছিল জোকে নজরবন্দি রাখতে।

বিকেলে পাহাড়ের নিচে পৌঁছে ওরা দুটো গুলির আওয়াজ শুনেছিল। একদল বেবুন গুলির আওয়াজে পালিয়ে গেলো ওদের সামনে দিয়েই। দু টো পাহাড়ের খাঁজ দিয়ে ওপারে একটা সরু পথ চলে গেছে। কুলিদের পিছনে ওপথে ঢুকলো পুরো দলটা। এটা আসলে একটা মরা নদীখাত। কোথাও কোথাও জলের ক্ষীণ ধারা এখনো রয়েছে। হয়তো সেদিনের বৃষ্টির জন‍্য।এ পথের শেষেই দুটো লোকাল লোকের ডেড-বডি পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগেই এদের গুলি করেছে কেউ। প্রাণহীন দেহ দুটো পাহাড় থেকে ফেলেছে অথবা গুলি খেয়ে পড়ে গেছে বলে মাথাও ফেটে গেছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime