Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Maheshwar Maji

Others

2  

Maheshwar Maji

Others

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি

6 mins
1.3K


বিজন ঘুম থেকে উঠে পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখে নিল।ছটা পাঁচ।

বাড়ির সবাই নিজেদের কাজে লেগে পড়েছেন।


তার বাবা সাড়ে পাঁচটার মধ্যে উঠে যান।প্রাতঃকর্মটা মাঠেই সারেন।সেখান থেকেই একটা নিমের দাঁতন চিবিয়ে এসে কুয়োতলায় মুখটা পরিস্কার করেন।


বিজনের দাদা বাড়ির চাষবাস দেখাশুনো করেন।বয়স পঁয়তাল্লিশের গোড়ায়।স্ত্রী এবং দুই ছেলে,মেয়েকে নিয়ে গ্রামের এই বাড়িতেই থাকেন।বাড়ির সামনে একটা নতুন দরজা কেটে,বছর দুয়েক হল মুদিখানা দোকান খুলেছেন।যদিও দোকানে তিনি খুব কমই বসেন।বিজনের বৌদির ভরসাতেই চলছে।


তার দাদাটি মেজাজে উগ্র টাইপের।খদ্দেরকে বোঝানোর জায়গায় উল্টে ধমকে দেন।সেটা বিজনের বৌদি ঠিক মানতে পারেন না।অনেকজন তার কাছে নালিশও করেছেন।তাই জিনিসপত্র দেওয়ার কাজটা তিনিই করেন।


তার স্বামী কেবল মালপত্র বাজার থেকে এনে হিসেবগুলো মিলিয়ে রাখেন।টাকাকড়ি পর্যন্ত তিনিই ব্যাঙ্কে জমা,তোলা করেন।

বিজন বিছানা ছেড়ে উঠল।পূর্ব দিকের জানলাটা খুলে দিতেই মিষ্টি সকালের একগুচ্ছ সোনালি কিরণ তাকে আদর জানাল।

এই বাড়িটা তৈরি করতে সমস্ত টাকা বিজনই দিয়েছে।খুব ইচ্ছে ছিল মনের মত একটা পাঁকা বাড়ি বানানোর।তার বাবা অমলবাবু তো জীবনে দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে শুধু বড়ই করেছিলেন।তাদের সকলের পড়াশুনোর খরচ অব্দি বইতে পারেননি।আয় বলতে চাষের ধান,চালটুকু।তার সাথে আনুসঙ্গিক কিছু ফসল।দুই মেয়ের বিয়ে দিতে কিছু জমিও খুইয়েছেন।


বড় ছেলে সুজন।পড়াশুনোয় মাথা ছিল।কিন্তু স্কুলে যেতে পারতেন না।তার বাবার দুর্দশা দেখে পড়াশুনো করতে ইচ্ছেও আর হয়নি।

কোন রকমে এইটে উঠে আর ইস্কুলে যাননি। বাবার সাথে মাঠের কাজে লেগে পড়েছিলেন।

সুজনের পর বিজনের দুই দিদি, শবরী ও ভাবরী।শবরীর বিয়েতে তেমন খরচপাতি হয়নি।কারণ পরিবর্ত বিয়ে হয়েছিল।তারা দুই ভাই,বোন অন্য একটি পরিবারের ভাই,বোনকে বিয়ে করেছিলেন।


ভাবরী মাধ্যমিকটা পাশ করেছিল।চেহারায় একটা শহুরে জেল্লা ছিল।তাই পাশের গ্রামের একজন ব্যাবসায়ী ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। 

গয়নাগাটি ছাড়া নগদ কিছু পণও দিতে হয়েছিল।তাই সেবার,কিছুটা জমি তার বাবা বেচে ছিলেন।


বিজন তখন সবে এইটে উঠেছে।বই,খাতার অভাব।টিউশানি নেয়।তবে অনটন থাকলেও তার মাথার উপর কোন চাপ ছিল না। তাই পড়াশুনোটা চালিয়ে গেছিল।চেয়ে,চিন্তে বই পত্তর জোগাড় হয়ে যেত।তাছাড়া সে ক্লাসের প্রথম। চাইলে সকলেই কমবেশি সাহায্য করত।এমনকি ইস্কুলের শিক্ষকরাও তাকে অনেক রকমভাবে সাহায্য করতেন।


বিজন চপ্পল গলিয়ে বাইরে বেরোল। বয়স আটত্রিশ বছর।চাকরিটা তিরিশেই পেয়েছিল।তার তিন বছর পর বিয়ে।চাকরির পরের বছরই হোম লোনটা পাশ হয়ে যায়।তাই পুরনো মাটির ঘরটা ভেঙে দেয়।সেই জায়গার উপরেই এই বাড়িটা তৈরি করা হয়েছে।

এক বছরের মধ্যেয় বাড়ি,কুয়ো,পাঁচিল,বাগান সব তৈরি হয়ে যায়।


তার ইস্কুলটা ছিল চল্লিশ কিমি দূরে।

মিস্ত্রিদের সাথে গল্প করে সময় পেরিয়ে যেত।বাস পেত না।বাধ্য হয়ে একটা পুরনো বাইক জোগাড় করেছিল। যাতে সে ইটগুলোর সাথে গল্প করার সময় পায়।


অনটনের সাথে লড়াই করে তার হাঁপ ধরে গেছিল।তবু ভেতর থেকে নিজেকে কোনদিনও ভাঙতে দেয় নি।রাতদিন এক করে এস.এস.সির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল।দু চোখে তার অনেক স্বপ্ন!চাকরিটা তাকে পেতেই হত।সেইভাবে নিজের যুদ্ধটা পরিচালনা করে ছিল।

যেবার সে এস.এস.সি পাশ করল। খবরটা কাউকে জানায় নি। স্কুলে প্রথম জয়েনের দিন সকলে জেনে ছিলেন।একমাত্র তার মা জানতেন।

অমল সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিল।সর্ব প্রথম সে একটা বাড়ি বানাবে।


চাকরির পর বিজনের শরীরে অল্প করে সুখের মেদ বাড়তে থাকে।

রাখির সাথে তার বিয়েটা দেখাশুনো করেই হয়েছিল।

পড়াশোনাতে সেও যথেষ্ট ভাল। সে ছিল মা,বাবার বড় মেয়ে। বাবা সামান্য একটা কেরাণির চাকরি করেন। মধ্যবিত্তের লড়াইটা রাখিকেও লড়তে হয়েছিল।তাই জেদ এবং স্বপ্ন দুটোই বুকের মধ্যে ভরা ছিল।


প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিংটা করার সুবাদে।

টেট পরীক্ষায় পাশ করার সাথেসাথেই সেও প্রাইমারি ইস্কুলে চাকরিটা পেয়ে গেল।

বিজনের ইস্কুল দিক করে একটা সেন্টারে জয়েন করে নেয়।


তারপর দুজন মিলে তারা সদর শহরে ভাল একটা ঘর ভাড়া করে থেকে গেল।

সেখানেই তাদের সন্তানের জন্ম হল।

রুমার বয়স এখন তিন বছর।


পাশেয় একটা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করেছে।বিজনের মা তাদের সাথেয় থাকেন।রুমাকে ইস্কুলে পৌঁছানো থেকে শুরু করে,সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখা তার কাজ।রান্না করার জন্য একজন মাসি আছে।

যেদিন আসে না।সেদিন শাশুড়ী, বউমা মিলে করে নেয়।

নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে রবিবারটা বিজন গ্রামের বাড়িতে কাটিয়ে যায়।প্রতিবার সবাইকে সাথে আনা সম্ভব হয় না।তাছাড়া রুমাও এখন ছোট আছে।


বিজনদের এই গ্রামটা যথেষ্ট বড়।হাই ইস্কুলটা এ বছর এইচ.এস হল।

অনেকদিন পর স্কুলের মাঠ দেখার লোভটা সামলাতে পারল না।আগে বাইরে থেকেই দেখা যেত।চারিদিকে এত উঁচু পাঁচিল ছিল না। পুরনো বিল্ডিংটা আর্ধেক ভেঙে নতুন বানানো হয়েছে।সুসজ্জিত গেট।


এই ইস্কুলের প্রতিটি ঘাস আর কাঁকরের বুকে তার লড়াই-এর ইতিহাস খোদাই করা আছে।মাঠের গাছগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখছে!তখন গাছগুলো ছোট ছিল।আজ একএকটা মহীরুহ।

বিজন গেটের ফাঁক দিয়ে দেখল।মাঠটাকে আর চেনা যায় না।

মঞ্চ,বেদী আর কংক্রীটের রাস্তায় মাঠের আর্ধেক জায়গা শেষ হয়ে গেছে।গাছগুলোও অনেক কেটে ফেলা হয়েছে।নারকেল গাছদুটো আর নেই।


বিজনের মনটা একটু ভারি হয়ে গেল। পরিবর্তনই জগতের ধর্ম।

রোদের তেজ একটু বাড়ল।গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে।তাই বিজন পিছন ঘুরে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিল।

চা খেয়েই তাকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে।কোয়ার্টারে পৌঁছতে এক ঘন্টা লাগবে।

তারপর চান,খাওয়া সেরে আবার সাড়ে দশটায় স্কুলে পৌঁছতে হবে।রাখি আর বিজন একসাথেই বাইকে চেপে বেরোয়।আগে রাখি নেমে পড়ে।তারপর আরো মিনিট কুড়ি গিয়ে বিজনের হাই স্কুলটা পড়ে।


একমাস আগে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিজন জানতে পারল।তার ফ্যাটি লিভার আছে।সেই জন্য সকাল বিকেল অল্প করে হাঁটতে হচ্ছে।

স্কুলের কয়েকজন অভিভাবকের পীড়াপীড়িতে এখন আবার সন্ধ্যেটায় তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসতে হয়।

বিজন প্রথমটায় ভেবেছিল, যাক সময়টা তো কাটছে। বরাবর সে অঙ্ককে খুব ভালবাসে।কিন্তু ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক পদে নিযুক্ত হওয়ায়, অঙ্ক কষার খিদেটা রয়েই গেছিল।এখন সেটাও পূরণ হয়ে যায়।


এক মাস যেতেই যখন সব অভিভাবকগণ মিলে কিছু ফীজ দিতে এলেন।সব মিলিয়ে দেখা গেল, তা প্রায় হাজার ছয়েক।

এখন আবার তার মায়ের পিছনেও ডাক্তার দেখাতে কিছু খসছে।ঘর ভাড়াটাও বেড়েছে।তাই আর ফেরালো না। নিয়েই নিল।

এখন সেটা আটে দাড়িয়েছে।


হঠাৎ একটা চেনা, পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে বিজন পিছন ঘুরে তাকাল।

মহাদেববাবু।বিজনের অঙ্কের মাষ্টারমশাই।এ গ্রামেয় বাড়ি।এই হাই ইস্কুলেই পড়াতেন।রিটায়ার হয়ে যাওয়ার পর তিনি ছেলে,বউ-এর সংসারে কোলকাতায় চলে গেছেন।তাই অনেক বছর দেখা সাক্ষাত হয়নি।বলতে গেলে,বিজনের চাকরি পাওয়ার পর এই প্রথম দেখা।

মহাদেববাবু এগিয়ে আসার আগেই বিজন পা ছুঁয়ে প্রণাম করে বলে উঠল,কেমন আছেন মাষ্টারমশাই?শরীর ভাল তো?

তিনি উত্তরে দুহাতে আশির্বাদ বুলিয়ে বলে উঠলেন,আছি।জীবনের বাঁচাগুলো তো অনেকদিন আগেয় শেষ হয়ে গেছে।এখন শুধু প্রতীক্ষা।তা বলো বিজন।তুমি কেমন আছো? শুনলাম বউমাও নাকি প্রাইমারিতে পেয়েছে?

----সবটাই ওর নিজস্ব চেষ্টা ।

---খুব ভাল হয়েছে বাবা।জীবনে তুমি অনেক কষ্ট করেছ।তোমার পরিশ্রম এতদিনে সার্থক হয়েছে।আমি খুব খুশি বিজন।তুমি আরো বড়ো হও। তবে হ্যাঁ।সেদিনের কথাটা ভুলে যেও না বিজন।আমি জানি।তুমি ভুলে যাওয়ার দলে নও।কারণ একদিন আমিই তোমাকে, এলজেবরাটা জলের মত সহজ করে মাথায় ঢুকিয়ে ছিলাম।আমার বিশ্বাস আছে।তোমার উপর।


কথাটা শুনে বিজন একটু ইতস্ততবোধ করল।মাষ্টারমশাই তাকে কোন কথাটা মনে রাখার ব্যাপারে এত জোর দিচ্ছেন? তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। এখন সরাসরি জানতে চাওয়াটাও খুব বোকামী হবে।


মহাদেববাবু আবার বলতে লাগলেন,তোমার মাধ্যমিকের বইপত্রগুলো আমিই সব মাষ্টারমশাইদের কাছে চাঁদা তুলে কেনার ব্যবস্থা করে ছিলাম।


ইংরেজির টিচার সুবীরবাবু বড্ড কঠিন হৃদয়ের ছিলেন।কমন রুমে বসে কত করে বোঝালাম। তোমার টিউশানি ফিটা অন্তত না নেন।কিছুতেই মানলেন না। শেষে আমিই দশ মাসের ফিটা ওনাকে গোপনে দিয়েছিলাম।


বিজন বলে উঠল,আপনাদের সাহায্য আমি কোনকালও ভুলতে পারব না মাষ্টারমশাই ।আপনাদের আশির্বাদেই আজ আমি এই অবস্থায় পৌছতে পেরেছি।


মহাদেববাবু স্মৃতি রোমন্থন করে বলে উঠলেন,সেদিন আমার চোখেও জল চলে এসেছিল রে বিজন।যেদিন মাধ্যমিকের মার্কসিটটা নিতে এসে অঞ্চলের সাংবাদিকের প্রশ্নে তুমি বলেছিলে,আমি বড় হয়ে একজন শিক্ষক হতে চাই।বুকটা আমার গর্বে ভরে উঠেছিল।এত খুশি তো নিজের ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার পাশ করতে দেখেও হয়নি।


তুমি বলেছিলে,শিক্ষকতা করে তোমার মত মেধাবী,গরীব ছেলে,মেয়েদেরকে বিনা পয়সায় শিক্ষা দেবে।তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবে।

আমি জানি বিজন।তুমি ভোলার মত ছেলে নও।


চলি বিজন।কোনদিন তোমার স্কুলটা একবার দেখার ইচ্ছে আছে।নিজের যোগ্য ছাত্রের শিক্ষকতার সুনামটা স্কুলের সকল ছাত্র,ছাত্রীদের মুখ থেকে শোনার বড় লোভ আছে!


এইবার তো হবে না। যাব..কোন সময়।চলি।

বিজন থমকে গেল।তারও তো পথ চলার কথা।পিছনে তাগাদা তাকেও রাক্ষসের মত তাড়া করছে।

কিন্তু কোন এক মন্ত্রমুগ্ধ বলে যেন তার দু পা আটকে পড়ল।


বুকের অন্তস্থল থেকে অনেকদিনের পুরনো কিছু গন্ধ ভুরভুর করে চরা গর্ত বেয়ে বেরিয়ে পড়ল।

তার সমগ্র সত্ত্বাকে অজ্ঞান করে দেওয়ার জন্য ।


সেদিনের কথা,সেদিনের লড়াই,সংঘর্ষের ধুলো সে আজ সত্যিই গা থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলেছে।

মাষ্টারমশাই না বললে হয়তো তার মনেই পড়ত না।সেদিন সে কী কথা সমাজের মানুষকে দিয়েছিল?

বিজন নিজের সাথে যুদ্ধ করতে,করতে এগিয়ে গেল বাড়ির অভিমুখে।


Rate this content
Log in