Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Inspirational

3.0  

Debdutta Banerjee

Inspirational

গল্প চোর

গল্প চোর

16 mins
5.9K


(কাল্পনিক গল্প, কেউ মিল খুঁজবেন না)


দশমীর ভাসান শেষে শুতে বেশ রাত হয়েছিল। তাই দিঠির উঠতে একটু দেরি হয়েছিল।উঠে দেখল অয়ন নিজেই চা বানিয়ে ব্যালকনিতে বসে পেপার পড়ছে। দিঠি মুখ ধুয়ে আসতেই অয়ন বলল,

-''মাইক্রো ওয়েভের ভেতর তোমার চা রয়েছে। এখনো গরম আছে।''


দিঠিদের ব‍্যলকনিটা বেশ বড়। অয়ন আবার পুরী থেকে একটা দোলনা এনে লাগিয়েছে। সেটায় বসে চড়ুইদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছিল দিঠি। রোদ কড়া হয়নি, বাতাসে আশ্বিনের রেশ। 

-"আজ পেপারে তোমার রেহান আব্বাসের একটা ছোট গল্প বেরিয়েছে।''

দিঠি ভেতরের পাতাটা টেনে নিতে নিতে বলল,

-''রেহান দা আজকাল প্রচুর লিখছে, পূজায় সাতটা উপন্যাস আর নটা ছোট গল্প লিখেছে। '

-''তবে ওঁর বদনাম রয়েছে, টাকা আগে লেখা পরে। টাকা ছাড়া লেখা দেন না উনি।''

-''ঠিকই করে! জানো আজকের এই জায়গাটা পেতে কত খাটতে হয়েছে ওকে। একটা সময় প্রকাশকের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়েছে। আজ প্রকাশকরা ওঁর পেছনে ছোটে। আর প্রকাশকদের আমার চেনা আছে। গল্প ছেপে বেরিয়ে বই শেষ, তবু লেখকদের টাকা দিতে চায় না। আমিই তো কত জায়গায় টাকা পাই।'' দিঠি বলে ওঠে। 


দিঠি লেখালেখি করে। অয়ন রয়েছে একটা মিডিয়া হাউসে। ওদের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া দুটোতেই ও আছে। বড় হাউস। 

অয়ন চা খেতে খেতে বলে

-''আব্বাস ভাই অবশ্য নিজেই বলেন যে 'লেখা বেচে খাই'। উনি ভালো চাকরি ছেড়ে, নিরাপত্তা ছেড়ে এই কলম তুলে নিয়েছেন। তাই টাকা চাইতেই পারেন আগে।''

-'' লেখাটা ওঁর নেশা, আর নেশাটাকেই পেশা করে নিয়েছেন উনি।'' দিঠি গল্পে মন দেয়। 

-''আব্বাসের গল্প ছেড়ে তো ম‍্যাডাম আর আজ জলখাবার বানাবেন না বোঝা গেলো। আমিই তবে যাই আজ কিচেনে।'' 

অয়ন রান্নাঘরের দিকে এগোতেই দিঠি বলে,

-''ফ্রিজ প্রচুর মিষ্টি রয়েছে, ব্রেড ও কলা বের করে আজ চালিয়ে নাও। দুপুরে মায়ের বাড়ি যাবো মনে আছে তো!!''


স্নান সেরে কাপড় পরছিল দিঠি, তখনি ফোনটা বেজে উঠল। মেখলার ফোন, দিঠির মামাতো বোন। আজ ওরাও আসবে মায়ের বাড়ি। আজ বিজয়ার খাওয়া দাওয়া। দিঠি ফোনটা তুলতেই মেখলা বলে,

-''কিরে, ফেসবুক দেখেছিস? রেহান আব্বাসের কান্ড দেখ! আবার চুরি। কি লাভ এসব করে ?''

-''কি হয়েছে বলবি তো?''

-''তোকে একটা লিঙ্ক পাঠালাম, নিজেই দেখ।'' খুট করে ফোনটা কেটে যায়। 

দিঠি একটু অবাক হয়েই হোয়াটস আ্যপে ঢোকে। টুং করে মেখলার মেসেজ ঢোকে। 

-''আমি গাড়ি বের করছি , নেমে এসো তাড়াতাড়ি। '' বলেই বেরিয়ে যায় অয়ন।


দিঠি টিপ আর কানেরটা পরে শেষ বার নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। লিঙ্কটা খুলছে, গাড়িতে বসেই দেখবে। প্রচুর মেসেজ ঢুকছে টুং টুং করে। 


লিফট থেকে নামতেই অনিকের ফোন, -''দিঠি রেহান দা কি করেছে দেখ!! কবি তথাগতর লেখা চুরি করেছে !! আবার !!''

-''কি যা তা বলছিস?!''

-''আজ রেহানদার একটা গল্প বেরিয়েছে শনিবারের গল্প তে। তথাগত বলছে চার মাস আগে এই গল্পটা ও পাঠকের কলমের দপ্তরে মেল করেছিল। গল্পটা কোনও ভাবে চুরি করে রেহান নিজের বলে চালিয়েছে।''

-''শনিবারের গল্প তো পড়লাম একটু আগে, 'স্মৃতি থেকে যায়' গল্পের নাম। ভালো লেখা।''

-''তথাগতদার গল্পের নাম 'দিন বদলের পালা'। ফেসবুকে দিয়েছে। পড়ে দেখ। রাখছি।''


ফোনটা কাটতেই দুটো মিসকল উর্ণার। মেখলা মেসেজ করেছে,

-''কি বুঝলি?''

-''সামথিং সিরিয়াস!! কি হয়েছে ?'' গাড়ি চালাতে চালাতে অয়ন আড় চোখে তাকায়। 

-''বলছি !! কেলো হয়েছে একটা।''


দিঠি লিঙ্কটা খোলে, তথাগত দার পোষ্ট। লিখেছেন,

-"এই গল্পটা চার মাস আগে পাঠকের কলমের দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম। আজ প্রায় একই গল্প (চরিত্রের নাম বদলে) শনিবারের গল্পে এক বিখ্যাত লেখকের নামে প্রকাশিত হয়েছে দেখে যথেষ্ট অবাক হলাম। আমার গল্পটা আপনারা পড়ে দেখুন। নিচে মেলের স্কিন শট দিলাম। পাঠকের কলমের দপ্তরে আজ আবার মেল করেছি গল্পটা ফিরিয়ে নিলাম বলে। কারণ ছেপে বার হলে লোকে আমায় চোর বলবে যে।''


এর নিচে গল্পটা দিয়েছেন। দিঠি দশ মিনিটে পড়ে হতভম্ব। এমনও কি সম্ভব, এত মিল !! নিজে লেখিকা তাই জানে গল্পে থিম চুরি হয়, কিন্তু প্রতিটা ঘটনা এ ভাবে মিলে যেতে পারে কি? রেহান আব্বাস এত বোকার মত কাজ করবে কেনো ? তর্কের খাতিরে যদি ধরাও হয় সেম থিমে লিখছিলেন তবুও গল্পটা ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ওঁর ছিল। তা না করে একই লেখা উনি দেবেন কেনো? দিঠি অয়নকে খুলে বলে ঘটনাটা। 

অয়ন মুচকি মুচকি হাসছিল, বলল,

-'' এমন চুরি এর আগেও হয়েছে। বড় বড় লেখকদেরও একটা সময় মাথায় প্লট আসে না। তখন তারা এমন করে।''

-''অর্থাৎ তুমি ধরেই নিয়েছ এই ঘটনাটায় রেহানদাই চোর !!'' 

-''না, উল্টোটাও হতে পারে, রেহান আব্বাসের সাথে নিজের নাম জড়িয়ে ফেমাস হওয়া .... কবি তথাগত বয়সে বড়, বহুদিন ধরে লিখছেন কিন্তু তেমন নাম হয় নি। লিটিল ম‍্যাগ বা দু চারটে পত্রিকায় লেখেন। ওদিকে মাত্র দশ বছরে আব্বাস ভাই কোথায় উঠে গেছেন। আকাদেমি পুরস্কার যার ঝুলিতে তার পিছনে লাগার লোকের অভাব নেই। রিয়া মিত্র দিকে চেনো? ওর একটা লবি আছে, যাদের ও কাজে লাগায় এদের পেছনে লাগার জন্য। এর আগে অনিলদার পেছনে লেগেছিল। বড় বড় লোকেদের বড় বড় ব‍্যপার।''

-'' কিন্তু রেহানের মত লোক বদনাম হয়ে গেলো তো !! নিজে লিখি তাই খারাপ লাগে। কে চোর জানি না! দু জনেই ভালো লেখে। কি দরকার ছিল এসবের?''


দুপুরে খাওয়ার পর মেখলা আবার তুলল প্রসঙ্গটা। মামাতো ভাই পিসতুতো বোন সবাই যোগ দিল। পাল্লা তো তথাগতদার দিকেই ভারী। কারণ মেলের স্কিন শটে দেখা যাচ্ছে উনি চারমাস আগে গল্প পাঠিয়েছিলেন।  


রাতে বাড়ি ফিরেও মনটা তিতকুটে হয়ে ছিল দিঠির। কি মনে করে রেহানদাকে একটা ফোন করল। ধরতেই দিঠি বলল,

-'' কিছু একটা বলো রেহানদা। তুমি চোর বিশ্বাস হয় না। তথাগতদা কেন এমন বলছেন?"

-" আমিও বিকেলে দেখলাম। সারাদিন আজ নেট বন্ধ ছিল। এত মেসেজ ঢুকছিল বিজয়ার, তাই। এক বন্ধু ফোন করে জানালো। আমি নিজেও অবাক হচ্ছি, এত মিল কি করে সম্ভব।''

-'' নিচের মন্তব্য গুলো পড়ে দেখো। যারা তোমার বন্ধু বৃত্তে রয়েছে তারাও আজ ওখানে তোমায় চোর বলেছে। রিয়াদি বলেছে তোমার গতবারের উপন্যাসটাও টোকা।''

-''দুঃখ হয় দিঠি, লেখার ইচ্ছা চলে যায় এসব দেখলে। কি করি বলো তো? উত্তর যে আমিও জানি না।''

ফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসে। 


পরদিন সকালের পেপার হাতে নিয়ে অয়ন বলল,

-''রেহানের খবরটা কাগজে এসেছে। অনেকেই এবার মুখ খুলছে। ওর আরও দুটো গল্পকে নিজের লেখা বলছে আরও দুজন উঠতি লেখক। ''

দিঠি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,

-'' এরা চুরি কেনো করে কে জানে !! লিখতে না পারলে লিখবে না। কিন্তু এসব করে কি লাভ? তবে রেহানদা এমন করছে বিশ্বাস হয় না।''

-''লাভ অনেক কিছু। রেহান বা তথাগত তো দুটো গুটি মাত্র। আসল খেলা যে কে খেলছে !!''

-''মানে !! কি বলছ তুমি ?''

-'' আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে রেহান চোর। এবার প্রশ্ন ও তোমাদের কলমের গল্পটা পেলো কি করে? লোকে বলছে, ও ঐ দপ্তরে যায়। হয়তো মেল বক্স খোলা ছিল , গল্পটা পড়েছে। অথবা মেল হ‍্যাক করেছে। এখন প্রশ্ন কেন চুরি করল? প্লটের অভাব।''

-''শোন, আমরা যারা লিখি একই বিষয়ের উপর দশ রকম লিখতে পারি। বিভিন্ন গ্ৰুপে প্রতিযোগিতা হয়। থিম দেওয়া হয় বা গল্পের অংশ দেওয়া হয়। সেটা কেন্দ্র করে আমরা কত কি লিখি! মেলে না তো কারো সাথে। আবার কমন বিষয়ে লিখলে অচেনা লোকের সাথেও মিলে যায়। আজকাল তো অনুপ্রাণিত লিখেই সবাই চুরি করে। রেহানের লেখার স্টাইলই আলাদা। তথাগত'র আগে আমি রেহানেরটা পড়েছি। একবারও মনে হয়নি এটা ওর লেখা নয়।''

-''ঠিক বলেছ। রেহান নাকি মামলা করেছে! দেখা যাক কি হয়।'' অয়ন উঠে পরে। অফিস খুলে গেছে আজ। 


ও স্নানে যেতেই ফোনটা এসেছিল ওর অফিস থেকে। দিঠি ধরতেই ও পাশ থেকে দত্তদা ওদের এডিটর বললেন অয়ন বের হলেই ফোন করতে। 

রান্না ঘরে দুধ জ্বাল দিতে দিতেই দিঠি অয়নের কথা শুনতে পাচ্ছিল। আব্বাস নামটা কানে যেতেই ও এঘরে এসেছিল। ফোনটা রেখে অয়ন বলল -''দত্তদা রেহানের কেসটা ধরতে বলছে। বড় স্টোরি হবে ওটা নিয়ে।''

-''আমিও এর শেষ দেখতে চাই।''


দুপুর তিনটায় রেহানের সাথে একটা কফি শপে মিট করেছিল অয়ন আর দিঠি। আকাশি পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা, মুখে দু দিনের বাসি দাড়ি রেহানকে দেখলে বয়স আন্দাজে বাচ্চা লাগে। ওঁর পাঠিকারা ওর জন্য ফিদা, পাঠকের সংখ্যাও হিংসা করার মত। নতুন বই আসলে প্রি বুকিং এই হাজার কপি শেষ হয়। গত চার বছর ধরে বই মেলায় বেষ্ট সেলার ওর উপন্যাস। 

তিনটে ক‍্যাপুচিনো আর কুকিজ নিয়ে মুখোমুখি বসল ওরা। অয়ন বলল,


-''তুমি শুধু আমায় গল্পের পেছনের গল্পটা বল। এই গল্পটা কবে লিখেছিলে। কবে পাঠালে, কি করে পাঠালে, কেউ কি এমন আছে যাকে গল্পটা বলেছিলে?''

-'' সবার চোখে আমি চোর। আমার কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?'' রেহানের কথায় তীব্র শ্লেষ ঝরে পড়ে। 

-''কে চোর জানি না, তবে এর পেছনে বড় কেউ আছে জানি। তাকে বার করাটাই উদ্দেশ্য।''

-'' গল্পটা মাথায় এসেছিল ট্রেনের একটা ঘটনা দেখে। দুই বন্ধুর বহুদিন পর দেখা, স্মৃতি চারণ। গল্পটা নিয়ে আমার বৌয়ের সাথে আলোচনা করেছি। আর লেখাটা মেল করার আগে আমার শালা পড়েছে। ও আমার সব গল্পের প্রথম পাঠক। তবে আমি গল্পটা মাত্র দু মাস আগে লিখেছি। আমি এটাই বুঝে পাচ্ছি না তথাদা এটা চার মাস আগে লিখলে ওটা তো চুরি নয়। ওর নিজের লেখা। খটকাটা এখানেই।''

-''তোমার মেল হ‍্যাক হয়নি তো?'' 

-''তাহলেও দু মাস আগের গল্পটা চারমাস আগে কেউ পেলো কি করে?''

-''ঠিক, আচ্ছা ট্রেনের ঘটনাটা কবে ঘটেছিল? যেটা দেখে প্লটটা মাথায় এলো ?''

-''ঐ লেখার একমাস আগে। চেন্নাই থেকে ফিরছিলাম তখন।''

-''তাও চার মাসের হিসেব মিলছে না।'' অয়ন ভ্রু কুঁচকায়। 

-''গল্প দুটোই পড়েছি। ট্রেনে এমন ঘটনার সাথে আমাদের অনেকের পরিচয় আছে। তবে লেখা দুটো প্রায় একই গতিতে এগিয়েছে। শেষটাও পুরো এক-- ঐ ফোনের ঘটনাটা।'' দিঠি বলে ওঠে। 

-''আমি যদি চোর প্রমাণিত নাও হই এই ঘটনার ফলে আমার অনেক পাঠক কমবে। কারণ ঘটনাটা লোক মুখে ছড়িয়ে গেছে। লোকে বলছে আব্বাস চোর। এর আগেও চুরি করেছে। তথাদাই দু বছর আগে একটা অভিযোগ এনেছিল এমন, তখন পাত্তা দিই নি। আজ মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম। সেদিন উত্তর দিলে আজ আর এমন হত না।'' কফির কাপে শেষ চুমুক দেয় রেহান। 

-''সেবারে ঠিক কি হয়েছিল ''

-'' এমনি একটা গল্প বেরিয়েছিল দর্পণের পাতায়। তথাদা সেবার বলেছিল লেখাটা হাতে লিখে পরিবর্তনে দিয়েছিল। হাতে লেখা বলে সেবার কিছু প্রুফ হয় নি।'' 

-''আর কি এক উপন্যাস নিয়ে অনেকে বলেছে,সেটার ব‍্যপারটা ঠিক কি?''

-''আহেলি। ঐ উপন্যাসটা সত্যি ঘটনার উপর। যে এনজিওর কথা বলেছি ওটা আছে মালদায়। বাংলাদেশের এক লেখক ওদের নিয়ে লিখেছিল তার আগে। এটুকুই মিল। সত্যি ঘটনায় কিছুটা মিল তো থাকবেই।''

-''আহেলি আমি পড়েছি। অন্য লেখাটাও। দু টো গল্পের যোগসূত্র ঐ এনজিও। আর মিল নেই।'' দিঠি বলে। 


আর কিছুক্ষণ আলোচনার পর রেহান চলে যায়। অয়ন বলে,

-''আধঘণ্টা পর নন্দনের সামনে ডেকেছেন তথাগতদা। যাই, ওঁর বক্তব্য শুনি।''

-'' গল্পটা উনি চার মাস আগে লিখলে ওটা ওঁর লেখা।'' দিঠি বলে । 


তথাগত দা বললেন,

-''আমি গল্পটা লিখেছিলাম ছ মাস আগে। আমার দু জন বন্ধু পড়েছিল। আমার টাইম লাইনে মাত্র কয়েকজন পড়তে পারবে এমন তিনজনকে পাঠিয়েছিলাম। তার স্কিন শট দিতে পারি। তবে ওটা সিক্রেট। ঐ তিনজন আমার প্রিয় বন্ধু মাধব, তন্ময়, আভাস। ওরা কেউ রেহানকে দেবে না। চারমাস আগে পাঠকের কলমে পাঠাই। ওটা ওদের দপ্তর থেকেই চুরি হয়েছে। রেহান চুরি করে লিখেছে এটাই সত্যি, কি করে করেছে? কবে করেছে এসব জেনে কি হবে। আগেও বহুবার করেছে। ভবিষ্যতেও হয়তো করবে। বাদ দাও।''

-''না, এভাবে একজন চোরকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। চুরি করলে শাস্তি পেতেই হবে।''

-'' এমন অনেকেই করে। আমাদের নাম যশ নেই , তাই আমাদের কলমের লেখা পত্রিকায় জায়গা পায় না। ঐ লেখাই লেখকের নাম বদলে পত্রিকায় বার হয়। লোকে বাহ বাহ বলে পড়ে। জানো, কত লেখা পত্রিকা দপ্তরে বাতিল হয়ে ফিরে আসে? ফেবুতে সেই লেখাই সাত আট হাজার লোক পড়ে। দারুণ বলে। অবশ্য তোমরা বলবে ফেবুতে আবার পাঠক আছে নাকি? না পড়েও লোকে লাইক দেয় । আমি বলব ফেবু একটা শক্তিশালী মাধ্যম। পাঠক ওখানেও আছে। বই কিনে কয়জন পড়ে ? ফেবুতে বেশি লোক পড়ে। যাক, আমার গল্পটা দশ হাজার জন পড়েছে। শনিবারের গল্প কে লোকে ছি ছি বলছে এখন। রেহান এটা না করলেও পারত।''

-''রেহান চুরি করেছে আপনি শিওর?'' দিঠি বলে।

-''এত মিল, প্রতিটা মোচড় এক!! কি করে হলো?''

-''রিয়াদি বলেছে গরীব লেখকদের লেখা রেহান খুব অল্প টাকায় কিনে নেয়। তারপর নিজের বলে চালায়। দুটো ছেলের নাম বলেছে। যারা রেহানকে গল্প বিক্রি করে। পাঁচশ টাকার উপন্যাস কিনে রেহান তিরিশ হাজারে এ বিক্রি করে বলছে। এটা কি ঠিক ?''

-''এমন অনেকেই করে। কেউ পেটের টানে, কেউ নামের জন্য। মনে করো তোমার গল্প আমার নামে বছরে পাঁচবার ছাপা হলো। আমি টাকা দিলাম। বছরে দুটো পত্রিকায় তোমার নামেই গল্প ছাপিয়ে তোমায় অল্প সুযোগ দিলাম। এসব তো চলেই এ লাইনে।''


আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা উঠে পড়ল। রাতে দিঠি ফেসবুক ঘাঁটতে গিয়ে দেখল অর্ণা বলে একটি মেয়ে একটা ভূতের গল্প লিখেছে কুণাল দাবী করছে ওটা আগের দিন কুণাল লিখে পোষ্ট করেছিল। কুণালকে দিঠি চেনে। ভালো লেখে, বাচ্চা ছেলে। কিন্তু অর্ণা একটা স্কিন শট দিয়েছে নিজের টাইম লাইনে ছ মাস আগে ও গল্পটা লিখেছিল। এতে প্রমাণ হয় কুণাল চোর। মনটা খারাপ লাগছিল দিঠির। আজকাল ও আর ফেসবুকে লেখে না। কারণ সত্যি এখানে যা চুরি হয় !! দিঠির সাথেও হয়েছে দুবার। 

ফোনটা রেখে শারদীয়া একটা পত্রিকা টেনে নেয়। রেহানের একটা উপন্যাস পড়তে চেষ্টা করে। কিন্তু মন বসে না। তবে কি রেহান ফুরিয়ে যাচ্ছে? এগুলো কি সত্যি ও লিখেছে? বড্ড একঘেয়ে লাগছে কি উপন্যাসটা!!

বারান্দায় এসে দাঁড়ায় দিঠি। বহু দূরে কোথাও আজ ভাসানের মিছিল বেরিয়েছে। বাজনা আর বাজির আওয়াজ আসছে। মা দুর্গার যাওয়া আসা আর নিজের হাতে নেই এ যুগে!!


পরদিন অয়ন বলে গেছিল তথাদার তিন বন্ধুর সাথে দেখা করবে। আর দুটো পত্রিকার দপ্তরেই ঢু মারবে। প্রয়োজনে রেহানের স্ত্রী আর শালার কাছেও যাবে। দিঠি জলখাবার খেয়ে রান্না সেরে ব্যালকনিতে এসে বসেছিল। ফেসবুকটা অন করেই দেখল বিশাল ঝড় উঠেছে অর্ণা আর কুণালের লেখা নিয়ে। অর্ণা যে স্কিন শটটা দিয়েছিল ওটা নাকি এডিট করা হয়েছিল মাত্র কয়েক মিনিট আগে। ঐ স্কিনশটের এডিট হিষ্ট্রি তে দেখাচ্ছে ঐ গল্পটা ওখানে আগে ছিল না। ছিল একটা ছোট্ট স্ট্যাটাস। পুরোটাই এডিটেড। 

মাথা ঘুরে যায় দিঠির। সত্যি তো!এভাবে তো ও ভাবে নি। পাঁচ বছরের পুরানো গল্প এডিট করা যায়। আরেকজন লিখেছে টাইম লাইনের পোষ্টের ডেট টাইম ও এডিট হয় ডেক্সটপ থেকে। সুতরাং যা দেখছ সব মায়া, কোনটা যে সত্যি আর কোনটা ছায়া কে জানে। ফেসবুক বন্ধ করে দিঠি ভাবতে বসে এরপর কি হবে?


প্রতীক্ষা পত্রিকা থেকে ফোন এসেছিল ওর উপন্যাসটা নাকি পুরোটা যায়নি মেলে। পরের মাসে আসবে উপন্যাস টা। ও ল‍্যাপিটা টেনে নতুন করে এটাচমেন্টটা পাঠায়। হঠাৎ কি মনে করে ও তথাদার একাউন্টে ঢোকে। বেশ কিছুদিনের মধ্যে কবিতা ছাড়া কিছু নেই আর। ছোট গল্প রয়েছে দু একটা। রেহানের ওয়ালে বিস্ফোরক সব মন্তব্য। যাদের এতদিন প্রিয় পাঠক বলে জানত সবাই তাদের দাঁত নখ বেরিয়ে এসেছে। কিছু সাহিত্যিকের ভাষার কদর্যতা সীমা ছাড়িয়েছে। রেহান আমার উকিল এর শেষ দেখবে বলে মন্তব্য করেছে। দুটো পত্রিকার কর্ণধারেরাই বলেছে তদন্ত চলছে। ওনারাও চাইছেন ত্রুটি মুক্ত তদন্ত। 


প্রতীক্ষার মেল এলো, আবার পাঠাতে বলেছে অন্তত পাঁচশ শব্দ কমিয়ে ।গল্প বড় হয়ে গিয়ে প্রবলেম হচ্ছে। গল্পটা এডিট করতে করতে দিঠির হঠাৎ একটা কথা মনে হয়। একটু বদলে আবার পোষ্ট করে অ্যাটাচমেন্ট টা। মাথার পোকাটা কামড়েই চলেছে। আবার তথাদার প্রোফাইলে গিয়ে স্কিন শটটা ভালো করে দেখে, একটা দু লাইনের চিঠি, গল্পটা সম্পর্কে। নিজের অপ্রকাশিত লেখা এবং মৌলিক বলে ডিক্লারেশন।অ্যাটাচম‍্যান্টে রয়েছে গল্পের নামের ফাইল। দিঠি অয়নকে ফোন করে--- নট রিচেবেল। একটু পরেই অয়নের ফোন আসে। দিঠি বলে সেও একবার পাঠকের কলমের দপ্তরে যেতে চায় । আধঘণ্টায় দিঠি পৌঁছে যায়। তনয়দার দপ্তরে এর আগেও গেছে কয়েকবার নিজের লেখার জন্য। ওদের মেল তনয়দা আর কাঁকনদি দেখে। তারপর লেখা যায় এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে। তনয়দা দেখাল টেকনিক্যাল কোনও ফল্টে অ্যাটাচম‍্যান্ট টা খুলছে না। এতএব প্রমাণ হয় এখান থেকে গল্প চুরি হয় নি। অ্যাটাচম‍্যান্ট না খুললে গল্প কেউ পড়তে পারবে না। দিঠি বলল,

-''আমি যতদূর জানি আপনাদের দপ্তরে গল্পের শব্দ সীমা ১২০০ , অথচ ফেসবুকের গল্পটা ৩৫০০ শব্দের। অতবড় গল্প তো আপনারা নেন না জানি। ''

-''হ‍্যাঁ, ঠিক তাই। বড় গল্প ছাপি না আমরা।''

দিঠি বেরিয়ে আসে। অয়নকে বলে,

-''এবার চল শনিবারের গল্পর দপ্তরে। গল্পটা জমে উঠেছে। একটু খোঁজ নিতে পারবে তথাদার কি কি গল্প আজ অবধি বানিজ‍্যিক ম‍্যাগাজিনে ছেপেছে আর আগামী ছ মাসে কি কি ছাপবে? ''

-''কি কি ছেপেছে তথাদা বলেছিল? মোটে চার বার। দু বার দেশের মাটি, একবার ভাষা আর একবার কল্লোলিনীতে। আগামী তো উনি নিজেই জানেন না। বললেন অনেক জায়গায় দেওয়া আছে।''

-''সেই লিষ্টটাই চাইছি। ''

-''চাইলেই উনি দেবেন কেন?''

-''যদি দোষী না হয় তদন্তের স্বার্থে দেবেন। চেয়েই দেখো না। গল্প চাই না। নাম আর পত্রিকার নাম। ''

অয়ন ফোন লাগাল। দু একটা কথা বলে ফোন রেখে বলল,

-''দেখে জানাচ্ছেন বললেন। রেহানেরটাও চাই নাকি ?'' 

-''আপাতত নয়। শনিবারের দপ্তরে চল আগে। প্রদোষদাকে ধরি।''


প্রদোষদা খুব ব্যস্ত। বড় পত্রিকা। বললেন,

-''রেহান মেল করেছিল। আমি ফরোয়ার্ড করেছি এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে। তাতে রয়েছে তিন জন। অন্বয়, ভবানীদা, আর হরিপদ বাবু। এরপর প্রিন্টে গেছে। কিন্তু ঘটনাটা তো বেশ পুরানো। চারমাস আগে যদি তথাগত লিখে থাকে গল্পটা ওর, এত মিল কেন থাকবে?''

-''যে মেলটা তথাদা পাঠিয়েছে তাতে অ্যাটাচম‍্যান্ট খুলছে না। এবার যারা পড়েছে তারা যদি দিয়ে থাকে ওঁকে। আসলে ঐ অ্যাটাচম‍্যান্টে এই গল্পটা ছিল প্রুফ হয় না। শুধু নাম দেখে কিছুই প্রুফ হয় না।'' দিঠি বলে। 

-''তথাদা কবিতা ভালো লিখলেও গল্প ..... তাই লেখাটা পড়ে অবাক হয়েছিলাম। কারণ গল্পের ফ্লেবারটা রেহানের। নাম ছাড়া পড়লেও রেহানের লেখা আমরা চিনি।'' প্রদোষ বাবু রুমাল দিয়ে মুখ মোছেন। 

-''আচ্ছা, এই অন্বয়দা রিয়াদির ভাই না?'' দিঠি বলে। 

-''হ‍্যাঁ, তাতে কি ?''

-''গল্প কি নাম সহ যায়, নাকি লেখকের নাম ছাড়া?'' দিঠি একটা সূত্র পেয়ে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে।

-''রেহানেরটা নামসহ গিয়েছিল। ও তো প্রতিষ্ঠিত। ওর লেখা রিজেক্ট হয় না। নতুনদের নাম ছাড়া যায়।'' 

-''এবার বুঝতে পারছি কিছুটা। আপনাদের পত্রিকার লেখকের বিরুদ্ধে কথা উঠেছে। দায় তো আপনাদের। রেহান আব্বাস নির্দোষ। সবাইকে কাল ডাকুন। আমি প্রমাণ দেবো।''

-''সত্যি বলছেন, রেহান নির্দোষ। আমিও ঘাবড়ে গেছিলাম এবার। আপনাদের সাথে রয়েছি।''

প্রদোষ বাবু উঠে দাঁড়ান উত্তেজনায়।


পরদিন দুপুরে শনিবারের কনফারেন্স রুম জমজমাট, বেশ কিছু লেখক ছাড়াও রয়েছেন ওদের দুই কর্ণধার। রেহান ও ওর উকিল, তথাগত, ওঁর তিন বন্ধু।রিয়া মিত্রও এসেছিল। আর এসেছিল অয়নের বস দত্তদা আর পাঠকের কলমের কর্ণধার ও তনয়দা। 

অয়ন বলল,

-''যদিও দত্তদার কথায় স্টোরিটা করতে নেমেছিলাম, এখন দেখছি ভালোই হয়েছে। রেহানও চাইছিল সত্য সামনে আসুক, অবশেষে এসেছে। তবে এবার সব হয়েছে দিঠির জন্য। তাই দিঠিই বলুক সত্যিটা।''


সবার চোখ দিঠির দিকে। দিঠি উঠে দাঁড়ায়। সবাইকে নমস্কার জানিয়ে বলে,

-''তথাগতদা অভিযোগ এনেছেন রেহান দার বিরুদ্ধে যে রেহানদা ওঁর লেখা চুরি করেছে। অভিযোগ, কাকতালীয়ভাবে মিল বা অন্য কিছু নয়। এমন অভিযোগ কয়েক বছর আগেও উঠেছিল। তথাগতদাই এনেছিল রেহানদার বিরুদ্ধে। সেবার কিছুই প্রমাণ হয়নি। এবার ইমেলের ফটো কপি দিয়েছেন তথাগতদা। আচ্ছা তথাদা, আপনি শিওর ঐ মেলে ঐ গল্পটাই হুবহু ছিল? অন্য গল্প নয়।"


-''আমি স্কিন শট দিয়েছি।''

-''তাতে গল্প নেই, অ্যাটাচ ফাইলের নাম আছে। ঐ নাম থেকে প্রুফ হয় না সেম গল্প। এই ল‍্যাপিতে খুলুন মেইলটা। আমরাও দেখি অ্যাটাচমেন্টটা কি ছিল? ''

-''আমি মেলটা ডেল করে দিয়েছি রাগ করে। আমি তো চোর নই। যে নিজেকে বাঁচাতে প্রমাণ সাজাবো।''

-'' আচ্ছা, তনয়দা খুলুক ওদের মেইল বক্স।''

-''তাতেও হবে না, অ্যাটাচমেন্টটা খুলছে না যে। আমদের দপ্তরে মেলটা খোলা হয় নি।'' তনয়দা বলেন।

-''তাহলে কি করে প্রমাণ করবেন যে গল্পটা আপনার?'' তথাগতর দিকে ঘুরে দিঠি।

-''আর পাঠকের কলম গল্প নেয় কম শব্দের। অত বড় গল্প ওরা নেয় না। আপনি জানতেন না?''

-''এটা জানতাম না। তবে গল্পটা ছয় মাস আগে আমার টাইম লাইনে দিয়েছিলাম। আমার এই বন্ধুরাও পড়েছিল। ওদের পাঠিয়েছিলাম।''

-''খুলুন টাইম লাইন, দেখি।''


দিঠি মিটি মিটি হাসে। তথাগতদা ল‍্যাপিতে নিজের টাইম লাইনে গিয়ে গল্পটা বার করে। দিঠি ডেটটা সবাইকে দেখায়। এবার ও নিজের টাইম লাইনে যায়। দু বছর আগের একটা ডেটে গল্পটা ওর টাইম লাইনে জ্বলজ্বল করছে, লেখকের নাম রেহান আব্বাস। গল্পটা হুবহু তথাগতর লেখা নামও এক। উত্তেজনায় সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে। সবাই কথা বলতে ভুলে গেছে। রেহান হঠাৎ বলে ওঠে,


-''এটা আমার লেখা নয়। এই নামে এই ভাষায় আমি লিখিনি। এটা তো তথাদার গল্পটা।''

-''ঠিক তাই, আমি কপি করে তোমার নামে ব্যাক ডেটে পোষ্ট দিয়েছি। অনেকেই জানে না ফেসবুকে ডেক্সটপ বা ল‍্যাপিতে এই অপশন রয়েছে। চেঞ্জ ডেট বা এডিট ডেট। তথাদার ডেটটাও এডিট করা, তাই ছমাস আগে পোষ্ট করা গল্পেও ওঁর বন্ধুদের লাইকগুলো মাত্র একমাস আগের। বাকিটা কি আমি বলবো নাকি তথাদা বলবেন।''

-''এসব কি হচ্ছে? কিছুই বুঝতে পারছি না। এই মেয়েটার কথায় বিশ্বাস যোগ্যতার অভাব রয়েছে।'' অন্বয় মিত্র'র দিদি লেখিকা রিয়া মিত্র উঠে দাঁড়িয়েছেন। 

-'' আপনি একটা পত্রিকা চালান না ম‍্যাডাম, ভোরের পাখি। তাতে নাকি সামনের মাস থেকে তথাদার একটা তিরিশ পর্বের উপন্যাস আসছে?'' অয়ন বলে। 


রিয়া মিত্রর মুখটা ক্রমশ রক্ত শূন্য হয়ে ওঠে। বলে,


-''হ‍্যাঁ, ওটা তো কয়েক মাস আগেই সিলেক্ট হয়েছিল। ''

-''আলোকের এডিটোরিয়ালে আপনি আছেন। ওখানেও শুনলাম তথাদার গল্প যাচ্ছে পরের মাসে।'' দিঠি বলে ওঠে। 

-''তার সাথে এ কেসের কি সম্পর্ক?'' প্রদোষ বাবু বলেন। 

-'' বলছি, রিয়াদি দু বছর ধরে রেহানদার কাছে লেখা চাইছেন। রেহানদা টাকা ছাড়া লেখা দেয় না। রিয়াদিরা টাকা দিতেই চায় না কাউকে বদনাম রয়েছে। অন্বয়দার মেইলে রেহানের গল্পটা পেয়ে কপি করে নেয় রিয়াদি। এবার তথাদাকে রাজি করায় লেখাটা ব্যাক ডেটে নিজের বলে চালানোর জন্য। বদলে ওঁর উপন্যাস ও গল্প ছাপা হবে দুটি বানিজ‍্যিক পত্রিকায়। আমি খোঁজ নিয়েছি। আর কোথাও ছাপা হচ্ছে না ওঁর গল্প। তথাদা বহু চেষ্টায় যা এতদিন করতে পারেনি সেই সুযোগ চলে এসেছিলো। রেহানের উপর পুরানো রাগ ছিল। কয়েক বছর আগে একটা লেখা দু জনের মিলে গেছিল কিছুটা। সেবার তথাগতদা অভিযোগ আনলেও প্রমাণিত হয় নি। কারণ কাছাকাছি হলেও হুবহু এক ছিল না গল্প। এবার রিয়াদি সুযোগ দেয় যে গল্পটা এক রাখতে হবে। শুধু চরিত্রর নাম বদলাতে হবে। গল্পটা ব্যাক ডেটে টাইম লাইনে আর বন্ধুদের পড়াতে বলেছিল রিয়াদি। তারপর অপেক্ষা করছিল কবে রেহানেরটা আসবে। পাঠকের কলমে চারমাস আগে পাঠানো গল্পটা অন্য গল্প। নামটা ওটা ব্যবহার করেছিল তথাদা কারণ ওটা পাকা প্রমাণ। গল্পটা যে খোলে নি উনিও জানত। নামটাও কাছাকাছি। তাই ওটা ব্যবহার করেছিলো। ওঁর তিন বন্ধুকেই বলছি, গল্পটা কবে পড়েছিলেন মনে আছে কি?''

-''কয়েক মাস আগে, তবে চার মাস নয়।'' একজন বলে ওঠেন। 

-''এবার যদি আপনারা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেন ভালো। নয়তো উকিল বাবু রয়েছেন। উনি সবাইকে কোর্টে টানবেন।'' দিঠি বসে পড়ে।

ঘরে চাপা গুঞ্জন, ফিসফিস। রিয়া মিত্র মাথা নিচু করে বসে ছিল। রেহান চুপ। 


- '' আমি স্বীকার করছি ওটা আমার লেখা নয়। ওটা রেহানের লেখা। মাথাটা ঘুরে গেছিল ওর সাফল্য দেখে। সবাই বলে ও ভালো লেখে। আমি কি সত্যি খারাপ লিখি ? পত্রিকা ওদের লেখা পেলে লুফে নেয়। আমাদের লেখা পড়ে থাকে, কেউ পড়েও দেখে না। ওরা সব পত্রিকায় সুযোগ পায় । সাতটা উপন্যাস নয়টা গল্প, আমাদের একটাও নেই। এতই কি খারাপ লিখি?''

-''আসল ব্যাপারটা হল লেখকের সংখ্যা বৃদ্ধি। দপ্তরে কত যে লেখা আসে, তার মধ্যেও আমাদের খুঁজে নিতে হয়। সবাই ভাবে তার লেখাই শ্রেষ্ঠ।'' প্রদোষ বাবু বলেন,

-''তার উপর আছে রাজনৈতিক চাপ, এর লেখা নাও, ওরটা ছাপতেই হবে। হয়তো অনেক ভালো লেখা তাই হারিয়ে যায়।'' তনয়দা বলেন। 

-''আর লেখকরা তখন ফ্রাস্টেশনে ভোগে। দিদির হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। ও নিজেও ফ্রাষ্টেশনের শিকার।'' অন্বয়দা বলেন। 

রিয়াদি সেই থেকে দু হাতে মুখ ঢেকে বসে রয়েছে। 

-''আমি এখনি দোষ স্বীকার করে পোষ্ট দেবো। রেহানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো। এরপর যদি ও লিগাল স্টেপ নেয় আমি সাজার জন্য প্রস্তুত। তবে এমন চুরি হয় এ লাইনে। রেহান বড় লেখক বলে সবাই ছুটে এলো। আমার গল্প বহুবার চুরি গেছে। আমার পাশে কেউ দাঁড়ায় নি।'' তীব্র হতাশা তথাগতর স্বরে।  

রেহান ওঁর পিঠে হাত রাখে। বলে,

-''দাদা, আপনি কত ভালো কবিতা লেখেন। আমি তো পারি না। কবি তথাগতকে সবাই চেনে। আপনি কবিতা লিখুন। ওটা দিয়েই লোকে একদিন চিনবে আপনাকে।''


বাড়ি ফেরার পথে চারদিকে লক্ষ্মী ঠাকুর বিক্রি হচ্ছে দেখে দিঠি কপালে হাত ছোঁওয়ায়। সন্ধ্যায় লক্ষ্মী পূজা। মায়ের বাড়ি যাবে ওরা। অয়ন বলে -''চিরকাল জেনে এসেছি লেখকরা গরীব, ওঁরা সরস্বতীর উপাসক। এখন দেখছি লক্ষ্মী লাভের আশায় সবাই এই পথে আসছে । তাই এত হিংসা আর চুরি।''


-''ফেসবুকে চুরি করাও সহজ, চোর ধরাও পড়ে। পত্রিকায় সব সময় চোর ধরা যায় না। কত পত্রিকা রোজ বের হয়। কটার খোঁজ রাখি আমরা। চুরি আগেও ছিল। আগে লেখকরা ছিল দূর গ্ৰহের প্রাণী। এখন ঘরের লোক। তাই এসব চোখে পড়ছে, ধরা পড়ছে।''

আকাশে গোল থালার মত পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে তখন। 

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational