ওয়ে ট্যাক্সি বাঁয়া যা
ওয়ে ট্যাক্সি বাঁয়া যা
" লিন লিন লামুন লামুন , আরে কি হলো লামুন ? "
" বাসটা সঠিক জায়গায় দাঁড়াবে তবে নামবো । এই রেষারেষির মধ্যে ... "
" আরে ধুর , হবে না নামতে , লে ভাই চল চল । "
সামনের সিটে বসে পুরো বিষয়টা দেখছিল অজিত । মাথায় চড়চড় করে রাগ উঠছিলো । একে প্রাণ ওষ্ঠাগত এই গরমে , তার উপর এই ড্রাইভার আর কন্ডাক্টরের ব্যবহারে যে রাগটা জমছিলো তাতে সে জানে সে উঠে দাঁড়ালেই আজ কিছু একটা হয়ে যাবে ।
বাস চালাতে যাবে ঠিক সেই সময় সে বললো , " বাসটা সাইডে করে ওনাকে নামা । "
সেই কদর্য ভাষায় উত্তর , " বেশী বকবেন না । নামতে বলেছি উনি নামেন নি । "
ভদ্রমহিলা একটু প্রোটেস্ট করলেন বটে কিন্তু কাজ দিলো না । বাস সেই রেষারেষির খেলায় ফের অংশগ্রহণ করলো । অজিত ভদ্রমহিলাকে বললো , " আপনি একটু উঠে দাঁড়ান , আমি নামছি সামনের স্টপে , চিন্তা নেই ঠিক করে নামবেন । "
মাঝবয়সি ভদ্রমহিলা নিজের ছেলের বয়সি একজনের এইরকম ব্যবহারে যথেষ্ট স্বস্তি পেলেন । অজিত নামবে তো বটেই কিন্তু তার রাগ তখন চরমে । প্রতিদিন এই রেষারেষির চক্করে কত অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে চলেছে , যে তার কোনো ইয়ত্তা নেই | তবু কোনো শিক্ষা নেই । তার জেদ চেপে গেলো আজ যথাযোগ্য শিক্ষা দেবেই এই কন্ডাক্টর আর ড্রাইভারকে ।
ভাগ্যবশত সুযোগও এসে গেলো । সামনের স্টপেজে অজিত নিজে ভদ্রমহিলাকে নামতে সাহায্য করে একটা অটোয় ঝট করে তুলে পয়সা দিয়ে ফের বাসে উঠলো । আজ মনে হয় বাড়ি ফেরাটা একটু দেরীই হবে । কিন্তু দুই বাসের টক্কর যে হারে দিন কে দিন স্থানে স্থানে বেড়েই চলেছে তার একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার ।
কন্ডাক্টর অজিতকে ফের উঠতে দেখে একটু অবাক তো হলোই কিন্তু মুখে কিছু বললো না । অজিত ছোটো থেকেই বেশ ডাকাবুকো কিন্তু সহজে রাগেও না । তবে রাগলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে । প্রতিদিনই কলেজ থেকে ফেরার পথে এই জিনিস দেখে এবং মনে মনে মারাত্মক রাগ হয় । আজ এর একটা মীমাংসা করা দরকার ।
এই ভেবে সে তার প্ল্যান সাজালো । এবার রেষারেষি শুরু হলেই সে মাঠে নামবে । তার প্ল্যান আরও খানিকটা সহজ করে দিলো ড্রাইভার । কোনো এক সিগন্যালে গুটখা কিনতে পাঠালো কন্ডাক্টরকে । সামনের দোকান থেকে পুরিয়া কিনতে সময় লাগলো দশ সেকেণ্ড । অজিত তারই বয়সি একটা ছেলের হেল্প চেয়েছিলো । কন্ডাক্টর পুরিয়া কিনে বাসে উঠতে যাবে কি ওই ছেলেটা ড্রাইভারকে হুমকি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে ।
ছেলেটার হাতের চেনটা এতো শক্ত করে ড্রাইভারের গলায় চেপে বসেছিলো যে গলা দিয়ে কথা বেরোচ্ছিলো না । এইবারে অজিত পাদানিতে নেমে গাড়ি স্টার্ট হতেই কন্ডাক্টরের হাতটা ধরে ফেলে । তার এক পা পাদানিতে আরেকটা ঝুলছে । অজিত ইশারায় গাড়ি আরও স্পিডে চালাতে বললো ।
বাসের সমস্ত যাত্রী তখন সিটে এঁটে বসে একটা সিনেমা দেখতে লাগলো যেন । কে কোথায় নামবে ভুলেই গেলো । কন্ডাক্টর একহাতে অজিতকে ধরে , এক পা পাদানিতে দিয়ে , অন্যহাতে পুরিয়া আর অন্য পা ঝুলন্ত অবস্থায় চিৎকার শুরু করলো । ততক্ষণে সাইডের বাসটা ওভারটেক করার জন্য প্রায় গায়ে এসে পড়েছে । কন্ডাক্টরের আর্ত চিৎকার , " মাথাই চেপে দেবে , তুলে ধরুন দাদা । "
অজিত বললো , " উহুঁ না না , তা হবে না । ওই যে ওই বাসটা বেরিয়ে যাবে তো ! " খানিক টেনে নিলো অজিত । ফের টান হাল্কা ।
এবার আরও জোর চিৎকার , " দাদা এই অবস্থায় পড়ে না গেলেও হার্টফেল হয়ে যাবে । প্লিজ টেনে ভিতরে নিন । "
" তোদের এই রেষারেষির ফাঁকে বাস থেকে নামতে গিয়ে কত প্যাসেঞ্জারের কত ক্ষতি হয়েছে তার কোনো হিসাব আছে বল হতভাগা বল । "
এমন সময় পাশের বাসের ড্রাইভারের চোখে পড়ে ব্যাপারটা । ভয়ে চোখ বড় করে ঢোক গেলে ।
অজিত ওদিকে তাকিয়ে বলে , " যাবো নাকি দাদা হাওয়া খাওয়াতে ? "
ড্রাইভারের তখন যা তা অবস্থা সে জিভ বার করে বলে, " না না চাই না । এই তো আস্তেই চালাচ্ছি । "
এবার কন্ডাক্টর বললো , " আর হবে না দাদাভাই , এবার তুলে নিন । "
অজিত এবার তুলে নিলো কন্ডাক্টরকে । দুই বাসেরই স্পিড কমলো ।
অজিত এই পুরো ঘটনার ভিডিও করতে ফোনটা একজনকে দিয়েছিলো । ভিডিও শেষ হওয়ার আগে অজিত সাবধানবাণী দিলো , " আপামর ড্রাইভার , কন্ডাক্টর সাবধান । তোমরা আমাদের মারতে চাইলে তোমাদের নিয়ে মরবো । অতএব সাবধান । "
এক স্টপেজে অজিত নেমে গেলো । ইউটিউবে আর ফেসবুকে দিতে ভিডিও ভাইরাল হতে সময় লাগলো না । খবরেও উঠে এলো এই ঘটনা । সে চ্যানেলে গিয়ে বললো , " এটি একটি আইন বহির্ভূত কার্যকলাপ । তবে এছাড়া উপায় ছিলো না । পুলিশ চাইলে অ্যারেস্ট করতেই পারেন । "
ততক্ষণে খবরের ওই চ্যানেলের অফিসের বাইরে প্রচুর লোকের সমাগম । সবাই অজিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ । ওই ঘটনাতে যে বাকি বাসের ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর যে বেশ কঠোর বার্তা পেয়েছে তা তাদের বার্তা থেকে স্পষ্ট হলো । চ্যানেলের অফিস থেকে বেরিয়ে জনতা তাকে মাথায় তুলে হুল্লোড় করতে লাগলো ।