বাগানবাড়ি
বাগানবাড়ি
।।বাগানবাড়ি।।
সৃষ্টি নিয়ে ভাবনা যত
মনে এদিক-ওদিক ধায়,
সেই ভাবনাই আজ শব্দ হলো,
আমার বাগানবাড়িটায়।
ছোট্টবেলা থেকেই কবিতার ওপর একটা বিশেষ ভালোলাগা ছিল। যদিও লেখার প্রয়াস কখনও করিনি! তবে মনে মনে একটা প্রশ্ন ভীষণ গাঢ় ছিল। কোথা থেকে আসে এই কবিতা? অতি পরিচিত শব্দগুলোকে ছন্দের সুতোয় শৃঙ্খলে বেঁধে তৈরী হয় অনবদ্য সৃষ্টি। কিন্তু এ বাঁধন কেন বাঁধেন কবি?
অচিরেই আমার এ জ্ঞানের ক্ষুধার নিবৃত্তি হলো। তখন প্রকৃতির শীতল স্পর্শে বসুন্ধরা ঋতুরাজের প্রতিক্ষায়। শীত হলেও শৈত্যের দাপট সেভাবে ছিল না। তাই বাড়ির সবাই মিলে স্থির হলো দুদিনের জন্য ঘুরতে যাব সেই বাগানবাড়িটায়। খুব একটা সেখানে যাওয়া হয়না। জ্ঞানত ওই বাগানবাড়ির স্মৃতি আমার জ্ঞানে নেই। তাই উৎসাহের পারদ তুঙ্গে।
অবশেষে পৌছোলাম। কিন্তু যে উচ্ছ্বাস কল্পনা করেছিলাম, তা একেবারেই হলো না। শান্ত পরিধির সেই অবিরল শান্তি মনটা কেড়ে নিল। প্রথমেই নজর কারলো ছাদের কার্নিসের মাধবিলতা। সন্ধ্যেতে একা ছাদে বসে আছি। হঠাৎ একটু বাতাসে দেখি সেই দুপুরের ফুলটার পাপড়ি গুলো ঝড়ে গেল। এ দৃশ্য তো অপরিচিত নয়! কিন্তু তাও চোখে জল এলো। হয়তো দিনের প্রথম প্রভাতে হেসে উঠেছিল সে, এখন সাঙ্গ তার খেলা। এভাবেই আমাদের গোচরে বা অগোচরে কত প্রাণ থেমে যায় প্রকৃতির নিষ্ঠুর নিয়মে। নিচে এসে বসি। একদিনের অতিথি, আমায় শব্দহারা করে গেল।
শেষে এসে বসলাম আমার পুরোনো ডায়েরি টার পাশে। সেই চিরাচরিত বন্ধু। কিন্তু সেদিন যে কি হল, কিছু লিখতে পারছি না। মনের ভেতর যে আবেগটা প্রচন্ড ছিল, সেটাই যেন আমার সব শব্দ ভুলিয়ে দিলো। খুব কষ্টে লিখলাম,
একদিনের অতিথি তুমি,
এসেছিলে কোন সকালে,
আমার সব ভাষা কেড়ে,
চলেছো অন্তরালে।
লেখার পর মুহুর্তে আমি হতবাক। এ তো কবিতা! তখন বুঝলাম সৃষ্টির উৎস সৃষ্টিতেই। সাধারন একঘেয়ে জীবনের মাঝে ভিন্ন স্বাদ লাভ ও দানের জন্যই তো কবিতা বাঁধা। মানুষের মাঝের সুপ্ত অর্ন্তচক্ষু, যাদের জাগ্রত, তারাই সাধারনত্বের মাঝে অসাধারনত্বকে দেখতে পায়। সাদা আলোর মাঝে যে অপুর্ব সাত রঙের বাহার রয়েছে তা দেখতে পায়, আর শব্দশৃঙ্খলে তা পৌছে দেয় সবার মাঝে। যে ভাবনা থেকে প্রথম লাইনগুলির রচনা। গতানুগতিকতার চক্রব্যুহে আজ সবাই আমরা অভিমন্যুর মতো। আর সেই ব্যুহ ভাঙতেই এই সব মানুষদের ত্রিনয়ন। প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে আজ নিজেই সেই নয়নের অংশ হয়ে গেলাম। এই বাগান বাড়ি সাধারন জীবন থেকে আজ কবিত্বজীবন এনে দিলো আমায়। এ জীবন অক্ষয় হোক।