Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Silvia Ghosh

Drama

0.5  

Silvia Ghosh

Drama

নিয়ার বাই

নিয়ার বাই

4 mins
2.1K


সাংসারিক সব রকম দায় দায়িত্ব মিটিয়ে, রাত দশটার দিকে স্যোসাল নেটওয়ার্কিং এ মন দিল অর্ণা। সারাটা দিন ভীষণ রকমের চাপ গেছে তার। পুজোর আগে এত কাজ থাকে বাড়ির তখন পুজোর আনন্দটাই যেন নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, সেই পঁচিশ বছর বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই দেখে যাচ্ছে আর করে যাচ্ছে। আজকাল আর তাল মেলাতে পারছেনা সবটার সঙ্গে । তাই লোক লাগিয়ে কাজ করাতে হলেও কাজটা ঠিক মনঃপূত হচ্ছে না। নিজে হাতে এত বছর ধরে যে কাজগুলো করে এসেছে, সে কাজগুলো অন্য কে দিয়ে করাতে গায়ে যেমন লাগে মনেও তেমন খুঁত খুঁত থেকে যায়।


আজ সকালে কিছুটা বাড়িঘর পরিষ্কার করে তাড়াতাড়ি রান্না বান্না, খাওয়া দাওয়া সেরে সে যে ছুটে গেছিল বন্ধুর কাছে, তারপর থেকেই মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে আছে তার। 


ফিরতি পথে ট্রেনে আসতে আসতে অনেক ভাবে নিজেকে প্রশ্ন করেছে সে, উত্তর ও পেয়েছে তবুও যেন মনটাকে মানিয়ে নিতে পারছে না। এমনটা কেন হয় কে জানে!

বন্ধু! হ্যা বন্ধুই বটে ! শান্তনু সান্যালের সাথে আলাপ এই স্যোসাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমেই। তারপর বাক্যালাপ, মাঝে মাঝে লুকিয়ে চুরিয়ে 'কফি কাফে ডে' তে দুজনের দেখা সক্ষাৎ। সেখানে খাওয়া দাওয়ার খরচ সবটাই অর্ণার তরফ থেকেই হয়। দুজনেই বিবাহিত , কিন্তু শান্তনু কঠিন রোগের শিকার হওয়ায়, কিছুটা আবেগ আর ভালোবাসা অন্যদের তুলনায় বেশিই পায়, সেটা অর্ণা সমেত সেও বুঝে গিয়েছে। শান্তনু বারে বারে জানিয়েছে তার লাইফ পার্টনার তার সঙ্গে থাকে না , সে বড় একা। জীবনে কেউ যদি তাকে এতটুকু ভালোবেসে থাকে সে শুধু অর্ণাই। দুজনের বেশির ভাগ কথাই হয়, শিল্প -সংস্কৃতি বা ভালো প্রবন্ধের বিষয় বস্তু নিয়ে। বই পাগল শান্তনু শ্বাস কষ্টের সময়ও বই হাতে নিয়ে বসে থাকে..... 


পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব দুজনের। কতবার হাতের উপর হাত রেখেছে দুজনে। দুজনেই বলেছে ইসস আগে যদি দেখা হতো তাহলে জীবনটাই বদলে যেতো। অর্ণা খুব সাধরণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে-বউ। সে তার স্বামীকে অরিত্রকে ভালোবাসে, ভালোবাসে তাদের ওই ঘর সংসার, একমাত্র মেয়ে বাইশের মেঘমেলা কে। তবুও  এই একটা সম্পর্ক তার বড় আপন, বড় মধুর। একটা আলাদা স্পর্শ আছে এই সম্পর্কে। একটা বয়সে সারাদিনের ক্লান্তির পর কেউ যদি হাতটা ধরে সামনে বসিয়ে বলে, 'কোথাও যেতে হবে না আমার কাছে বসে থাকো' বা ভিড় রাস্তায় কেউ যদি হাতটা ধরে পার করে বলে, 'এত ভয় কিসের? আমি তো আছি' তখন আর যাই হোক পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়তম বন্ধু হয়ে ওঠে সেই মানুষটি। অর্ণার এই সম্পর্কটিও সেই রকম একটা স্থান করে নিয়েছে অন্তরের মধ্যে নিভৃতে। 


আজ মহা চতুর্থীর দিনে শান্তুনুর একটা আবদার মেটাতে অর্ণা কে যেতে হবে তার বাড়ি। কোনদিন তেমন করে শান্তুনু খাওয়াতেই পারে না অর্ণা কে। আজ সে জেদ ধরছে, তার বাড়ি না গেলে অর্ণার সঙ্গে কোন সম্পর্ক আর রাখবে না। উত্তর কলকাতায় শান্তুনুর বাড়িতে যেতে যেতে অর্ণার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। কতদিন শান্তনু কে এভাবে ঠেকিয়ে রাখবে সে। কফি কাফে ডে তে দেখা হওয়ার সময়ই শান্তনুকে লক্ষ্য করেছে অর্ণা। চোখে চোখ রাখতেই শান্তনু যে টা চায় বুঝে যেত সে। তখনই অন্য প্রসঙ্গ এনে কথা বলেছে দুজনেই। তবে হাতের নীচে হাত রাখা থাকতো বহুক্ষণ, একটা বার্গার ভাগ করে খেয়েছে দুজনে। 


 শান্তনু নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করছিল অর্ণার জন্য। ভিড়ের মধ্যে দূর থেকে অর্ণা কে দেখে এগিয়ে আসে সে। আজ খুব সুন্দর লাগছে পঁয়তাল্লিশের অর্ণা কে। পাকা চুলগুলো যেন আলাদা মাত্রা যোগ করছে ওর সৌন্দর্যে। 


শান্তনুকেও বেশ লাগছে লাল হাফ পাঞ্জাবিতে। বয়সটা যে পঞ্চান্ন আজ কেউ তা বলতে পারবে না। চুল আর গোঁফে পরিমার্জিত কলপ করা হয়েছে। কথা বলতে বলতে দুজনেই এসে উপস্থিত শান্তুনুর বাড়িতে। দরজায় তালা খুলে, আলো জ্বালতেই অর্ণা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে তার ছবিতে দেখা ঘরগুলো। ড্রইং রুমে বসে কথা বলে দুজনে। 


এক সময় শান্তনু প্লেট সাজিয়ে নিয়ে আসে চিকেন পাকোড়া, গ্রেভি চাউ, কল্ড ড্রিংস। কিছুটা গল্প গুজব হবার পর, শান্তনু নিয়ে যায় তার ব্রেড রুমে। চালিয়ে দেয় এ সি। অর্ণা দেখে ঘরের আলমারীর হ্যান্ডেলে ঝুলছে কিছু চুরিদার, শাড়ি, ব্লাউজ, ড্রেসিং টেবলির উপর ছড়িয়ে থাকা কিছু মেয়েদের প্রসাধন। মনটা কেমন যেন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি শান্তনু কে বলে, বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে, রাস্তা ঘাটে ট্রেন বাস তেমন নেই পুজোর দিন বলে। শান্তনু হাতটা ধরে বলেছিল, 'প্লীজ অর্ণা একবার........ '


অর্ণা খানিকটা জোর করেই বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। চটপট নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে শান্তনুর সঙ্গে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। পথে দুজনের আর একটা কথাও হয়নি। শুধু ট্রেনে তুলে দিয়ে শান্তনু বলল ----'ভুল বুঝে দূরে চলে যেও না কোন দিন অর্ণা, তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি'। 

ট্রেনে আসতে আসতে অনেক বার প্রশ্ন করেছে নিজেকে অর্ণা.... তাকেও তো বিবাহিত জেনেই ভালোবেসেছে শান্তনু, তবে সে সবটা জানা সত্বেও কিছু প্রমাণ দেখে মনটা কে মানিয়ে নিতে পারছে না কেন? তবে কি সে হিংসা করছে শান্তনুর লাইফ পার্টনার কে? উত্তর পেয়েছে, ভালোবাসার ভাগ সে করতে পারবে না। 

এত সব লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ করে এসে, ঘরের কাজ সেরে স্যোসাল নেটওয়ার্কিং এ বসতেই স্কুলের বন্ধু কৌশিকের ম্যাসেজ আসল...... কোথায় ছিলিস রে সারা দিন? 

------মায়ের কাছে গেছিলাম রে। কেন কি ব্যাপার রে? 

-------আজ নর্থে গেছিলাম তো ঠাকুর দেখতে ,বউ বাচ্চা নিয়ে... 

-------বাহ বাহ। তারপর? 

------জিও সিমে দেখালো অর্ণা ইজ নিয়ারবাই... 


অর্ণা মনে মনে ভাবে ঠিক কতটা কাছাকাছি হলে নিয়ার বাই হওয়া যায়! 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama