Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Drishan Banerjee

Tragedy

0.2  

Drishan Banerjee

Tragedy

পরাণ সখা(দ্বিতীয় পর্ব)

পরাণ সখা(দ্বিতীয় পর্ব)

4 mins
8.0K


মনটা কেমন অন্যরকম ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বার বার নিজের কৈশোরে ফিরে যাচ্ছিলাম। একটা স্মৃতি হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছিল গভীরভাবে।

 

পরদিন বিকেলে বসে রয়েছি ঝিলের ধারে, পর্না এসে বসল একটু দূরত্ব রেখে। দুজনেই কিছু শব্দ উচ্চারণ না করে বলে চলেছি কত মনের কথা। সত্যি এই চুপ করে বসে জলের দিকে তাকিয়ে কত কথা মনের মাঝে জেগে ওঠে। সেদিন ও নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলে উঠলো -"তুমি তো লেখক, আমায় নিয়ে একটা গল্প লিখবে?" 

ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখের কোনে জল। গলাটাও ভেজা........

আমি বললাম -"গল্প তো বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, তোমার আমার জীবনের ঘটনা। আর এই বয়সে এসে স্মৃতি সত্যিই গল্পের মত মনে হয়।"

-"না, আমার জীবনে এমন কিছু আছে যা আমি কাউকে বলতে পারি না। অথচ আমি না বলে শান্তি পাই না, তাই আজ তোমায় বলে হাল্কা হতে চাই। "

 

-"প্রত্যেকের জীবনেই কিছু নিজস্ব গোপনীয়তা থাকে। তা কি সবাইকে জানানো দরকার ? থাকনা, সে সব তোমার নিজের কাছেই....'' 

আমি ওকে ভোলাতে চাইছিলাম। আসলে ওর মতো শক্ত মহিলার চোখে জল দেখতে ভাল লাগছিল না।

 

ও চুপ করে বসে ছিল ঝিলের দিকে চেয়ে।ওকে বললাম -" তুমি বরং একটা গান গাও আজ। মনটা ভাল হবে"

 

একটু চুপ করে থেকে ও গেয়ে উঠেছিল -" সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে....."

 

এক অদ্ভুত মাদকতা ছিল ওর গলায়। মনে হত সারাক্ষণ শুনেই যাই.....। ও যখন গাইছিল -" বাঁধিনু যে রাখী পরানে তোমার, 

সে রাখী খুলো না খুলো না...." ওর সাথে সাথে আমার দু চোখ জলে ভরে উঠেছিল।

 

ঘুমের মধ্যে হারিয়ে গেছিলাম আমার কৈশোরে, বহুদিন পর ছোটবেলার স্বপ্ন দেখলাম। কুর্তির বুকে আমি আর মিলু খেলছি, হঠাৎ মিলু জলে পড়ে হারিয়ে গেল। আমি জলে নেমে ওকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। গলা শুকিয়ে আসছে। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, উঠে জল খেলাম। স্বপ্নের রেশ লেগে রয়েছে মনে। ঘামে ভিজে গেছি।রাত দুটো বাজে। এসিটা চালিয়ে আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলাম। কত স্মৃতি মনের মধ্যে ভিড় করে আসছিল।

আমার জীবনে প্রথম প্রেম এসেছিল কৈশোরে, আমি যখন তেরো। মামা বাড়ি ছিল চা বাগানের দেশে, উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ের ঢালে সার সার চা গাছ, শেড ট্রি, পাশে বয়ে গেছে ছবির মত সুন্দর কুর্তি নদী। গরমের আর পূজার ছুটি আমার কাটতো ঐ বাগানে। দুই মামার চার ছেলে মেয়ে, মাসির এক ছেলে, আমি আর আমার বোন, অনেক বড় দল। পাহাড়ের ঢালে ছবির মত সুন্দর কাঠের বাংলো, চার দিকে চা গাছের কার্পেট, নাম না জানা ফুলের গাছ আর ছিল পাখী। কখনো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কুর্তির বুকে নেমে গামছা দিয়ে মাছ ধরতাম, কখনো চা গাছের ভিতর ঢুকে লুকোচুরি খেলা, কখনো নদীর উজান বেয়ে নেপালি বস্তিতে গিয়ে ভুট্টা খাওয়া। মিলুর সাথে পরিচয় ঐ বাগানেই। মামাদের পাশের কোয়ার্টারে ওর পিসি থাকত, ও পিসির কাছেই মানুষ। ওর বাবা মা থাকত পূর্ব পাকিস্তানে। আমাদের সাথে রোজ খেলতে আসত মিলু। খুব ছোটবেলা থেকে ওকে দেখেছিলাম। একসাথে খেলে বড় হয়েছি। কুর্তি নদীর পা়ড়ে পাথর কুড়িয়েছি কত। চা বাগানে লুকোচুরি খেলেছি। আমি তখন চোদ্দ আর মিলু হয়তো একটু ছোট ছিল এগারো বারো হবে। খেলতে খেলতে ও একদিন কুর্তির জলে পড়ে গেছিল। আমরা সবাই হাততালি দিয়ে হেসে উঠেছিলাম। ও জল থেকে উঠে মুখ ঘুরিয়ে একটা পাথরে বসে ছিল। হেমন্তের বাতাসে শীতের ছোঁওয়া, ও কেঁপে কেঁপে উঠছিল। বাকি ভাই বোনরা দৌড়েছে চা বাগানের দিকে। আমি কেন জানিনা ওকে ছেড়ে যেতে পারি নি। কাছে গিয়ে বসেছিলাম। ওকে ধরে কাছে টানতেই ও ছিটকে সরে গেল, আর তক্ষুনি বুঝলাম ও কাঁদছে, আর কান্নার দমকে কেঁপে উঠছে ওর শরীর। ওর ভেজা জামা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছিল সদ্য প্রস্ফুটিত দুটি কলি, চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম। আমার মনে এক অদ্ভুত শিরশিরানি।কেমন এক ভয় মিশ্রিত ভাল লাগার আবেশ, কি মনে করে নিজের শুকনো শার্টটা খুলে দিলাম ওর গায়ে। শীতের বার্তাবাহী হেমন্তের ছোঁওয়ায় যেন ঐ মুহূর্তে আমি বড় হয়ে গেছিলাম। মিলুকে নতুন চোখে দেখেছিলাম। 

মেয়েরা একটু তাড়াতাড়ি বড় হয় বোধহয়, মিলুও কেমন বদলে গেছিল। আমাদের খেলা গুলোও বদলে গেছিল, ও আর আমি চা গাছের ফাঁকে হারিয়ে গিয়ে গল্প করতেই বেশি ভালবাসতাম। দেখতে দেখতে ফেরার দিন চলে এসেছিল। মিলুর চোখে একরাশ দুঃখ, ওর চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে বলেছিলাম -"আবার আসবো, খুব তাড়াতাড়ি।"

ওর দু চোখে নেমেছিল তিস্তা আর তোর্সা। কথা বলে নি। ছুটে পালিয়ে ছিল।

 

এরপরের বার যখন গেছিলাম মামাবাড়ি ও যেন আমার পথ চেয়েই বসে ছিল। পুরো ছুটিটা ওর সাথে খুব মজায় কেটেছিল। ওর বাবা মা থাকত ওপার বাংলায়। ওরা নাকি পাঁচ ভাই বোন। ও সেজো, পিসির কাছেই থাকে‌। ওর পিসি বাগানের হাসপাতালের নার্স ছিলেন। ভালবাসার কাঙ্গাল মেয়েটা আমার ভালবাসায় পাগল হয়ে গেছিল। আমার জন্য কি করবে বুঝে পেত না। আমায় খুশি করতে ও সব করতে পারত। বাগানে একটা লটকা গাছ ছিল। থোকা থোকা লটকায় ভরে থাকত। ও একাই গাছে চড়ে আমার জন্য লটকা পেড়ে আনত। কখনো চা ফুলের বড়া ভেজে আনত। কখনো বা পেয়ারা এনে দিত ডাঁশা, ডাঁশা।

 

ঠিক চলে আসার দিন ওর মুখটা হতো দেখার মতো। এর পরের বার আমার বোর্ডের পরীক্ষা বলে যেতে পারি নি। মাঝে ভাবতাম ওকে চিঠি লিখব।কিন্তু সেই চিঠি যদি অন্য কারো হাতে পড়ে ভেবে সাহসে কুলায় নি। খুব মন কেমন করতো ওর জন্য।

অবশেষে পরীক্ষার পর মামাবাড়ি গেলাম, লম্বা ছুটি। কিন্তু গিয়ে শুনলাম মিলুর বাবা মা বহুদিন হল ওকে নিয়ে গেছে পাকিস্তান। ওর পিসি অন্য বাগানে চলে গেছে। বাল্য প্রেমে যে অভিশাপ থাকে তখন জানতাম না। একা একা মন খারাপ কে সঙ্গে নিয়ে মিলুর স্মৃতির সাথেই দিনগুলো কাটছিল। এবার ভাবছিলাম কত তাড়াতাড়ি ফিরে যাব। আর ভাল লাগছিল না। ওদের ঠিকানা কেউ জানত না। আর ওর পিসির কোনো খোঁজ পাই নি।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy