Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Ratna Chakraborty

Romance

3  

Ratna Chakraborty

Romance

সত্যি মিথ্যে

সত্যি মিথ্যে

6 mins
700


বাইরে কালবৈশাখী।পিয়া জানলার কাছে এসে দাঁড়ায়।ঝড়ের ঝাপটা এসে লাগছে মুখে।কিন্তু এই ঝড় কি ততটা প্রবল যতটা ঝড় আজ তার বুকের ভিতর চলছে?

কাল জয় ফিরছে।জীবনে যে পর্যায়ে সে যেতে চেয়েছিল আজ সে সেই কীর্তি শিখরে।সে তার কথা রেখেছে।তাই ফেরার খবর সবার আগে দিয়েছে পিয়াকে।কত্তদিন পর জয়ের গলা শুনল পিয়া।তার তো খুশীতে পাগল হয়ে যাবার কথা।কিন্তু কি হয়েছে তার?কেন এত তোলপাড় তার বুকে?সেটা কি শুভ'র জন্য?

পিয়া জানে পাশের ঘরে শুভও বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে কালকের ভোরের অপেক্ষায়।

শুভ সে আর জয় তিনজনের বন্ধুত্ব একসময় সারা কলেজ মাতিয়ে রাখত।দুষ্টুমি খুনসুটি মজা করতে করতে কবে যেন জয় আর পিয়া কাছাকাছি এসে পরেছিল।দুজনের কেউই শুভকে মনের কথা গোপন করে নি।খুব খুশী হয়েছিল শুভ।হেব্বি মজা পেয়েছিল শুভ।শুভ আর জয় দুজনে প্রাণের বন্ধু হলেও পড়শোনা থেকে খেলাধূলা সবেতেই ছিল ওদের কম্পিটিশন।

জয় ছিল টপার। পড়াশুনা ছিল ওর ধ্যানজ্ঞান।পরীক্ষার সময় ও পিয়াকেও চিনতে পারত না।দেখা পর্যন্ত করত না।পিয়া অভিমান করে।জয় বলে-"পিউ জানিস তো আমি এরকমই।" শুভ ঠিক জয়ের পরের প্লেসটাই পেত।এই নিয়ে বেশ ঝগড়া করত দুজনে।শুভ বলত-"দেখ পিয়া তোর ওই জয়সোনাকে আমি মেরেই ফেলব কোনদিন।শালার জন্য আমি এবারেও দুনম্বরের জন্য টপ করতে পারলাম না।"জয় হাসতে হাসতে বলত-"তুই দুনম্বরী জালই মাল।তাই তুই আমার থেকে দুনম্বর কমই পাস।"

পিয়া হাসত ওদের দেখে।জয় স্বপ্ন দেখত মাস্টার্স কমপ্লিট করে বাইরে হায়ার স্টাডি করতে যাবে।ওর মামা তেমন সুযোগও করে দিয়েছিলেন।ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে।

শুভ আর পিয়া অবশ্য জানত তাদের চাকরী খুঁজতে হবে।ওরা মধ্যবিত্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে মেয়ে।পিয়া মাস্টার্স কম্পলিট করেই একটা বেসরকারী স্কুলে জব পেয়ে গেল।জয় আর পিয়া ঠিক করেই রেখেছিল হায়ারস্টাডি করে জয় ফিরলে ওরা বিয়ে করবে।

কিন্তু সব এলোমেলো করে দিয়েছিল সেই একটা রাত।ক্রিসমাস ইভের দিন জয়ের বাড়ি কেউ ছিল না।পিয়াকে ডেকেছিল জয়।পিয়া জানত না যে সেদিন জয়ের বাবা মা কেউ থাকবে না।জয়ের পাগলামী,জয়ের অবাধ্য আবেগকে সেদিন ফিরিয়ে দিতে পারে নি পিয়া..আর মুহুর্তের ভুলে..


 জয়ের যাওয়া যখন প্রায় ফাইনাল,দিন তিনেক আর বাকী তখন পিয়া জানতে পারে সে অন্তঃসত্ত্বা। কি করবে ভেবে পায় না পিয়া। ক্রীসমাস ইভের একটা দুর্বল ভুল যে এত বড় একটা বিপদ ডেকে আনবে সে ভাবে নি।

সে ছুটে যায় জয়ের কাছে।শুনে জয়েরও মাথায় হাত।কি করবে সে।পিয়াকে নিয়ে পরেরদিনই ডাক্তারের কাছে যায়।যদি ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া যায়।কিন্তু সোনোগ্রাফিতে দেখা যায় পিয়ার বেশ কিছু সমস্যা আছে যার জন্য বাচ্চাটাকে এবোর্শান করাও যাবে না।পিয়ার লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে।হাতে আর একটা দিন।কি করবে তারা।

জয় গুম খেয়ে বসে থাকে।তারপর পিয়া কে বলে-"চল এক্ষুনি শুভর কাছে যেতে হবে।"পিয়া কিছু বুঝে উঠতে পারে না।সারা রাস্তা গাড়িতে যেতে যেতে একটা কথাও বলে না জয় পিয়াকে।প্রশ্ন করেও উত্তর পায়না পিয়া।শুভ'র বাড়ি ওরা এমনিতে প্রায়ই যায় আড্ডা দিতে।তাই বাড়ির সবাই ওদের চেনে।ভালোবাসে।জয় আর পিয়ার সম্পর্কটা সবাই জানে। শুভ'র ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কোন ভনিতা না করে জয় বলে-"ভাই শুভ,বিশাল ঝামেলায় পরে এসেছি তোর কাছে।একমাত্র তুই ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিশ্বাসও করতে পারব না এবিষয়ে।পিয়াকে তোকে বিয়ে করতে হবে।"ঘরে বাজ পরলে এর থেকে কম চমকাতো পিয়া আর শুভ।শুভ বলে-" তুই কি এই রাত দুপুরে মজা করতে এসেছিস?"জয় বলে-"না রে,পিয়া ইজ ক্যারিং।বাচ্চাটা এবোট করা যাবে না।কপ্লিকেশন আছে।পিয়া যে সোসাইটিতে বিলঙ করে বাচ্চাটা আনতে হলে একটা বাপ লাগবেই।আর আমি আগামী কয়েকবছর বিয়ে তো দূর ওর সাথে যোগাযোগ রাখতেও চাই না।কারণ পিয়ার সাথে যোগাযোগ আমার কনসান্ট্রেশন ব্রেক করবে।এই হায়ার স্টাডিটা আমার স্বপ্ন।তুই তো জানিস শুভ।একমাত্র তুই পারবি এটা পূরণ করতে।তুই ওকে বিয়েটা কর।আমি ফিরে এলে তখন ডিভোর্স করে আমরা নতুন জীবন শুরু করব।তুই তো বলিস তুই এমনিও বিয়ে ফিয়েতে বিশ্বাস করিস না।এটা একটা নাটক মনে করে কর প্লিজ।তুই ছাড়া পিয়া আর কার কাছে সেফ থাকবে বল?"

পাথর হয়ে গিয়েছিল পিয়া।এসব কি বলছে জয়?শুভ বলেছিল-"তুই জাস্ট পাগল হয়ে গেছিস।পিয়া আমার বন্ধু।ওকে আমি কোনদিন সে নজরে দেখিই নি।"

জয় বলে -"দেখতে তো বলি নি।এটা তো জাস্ট একটা নাটক।"

সেদিন অনেক রাত অবধি বচসা চলেছিল।শুভ কিছুতেই এই পাগলামি মানতে চায় নি।পিয়া বোবা হয়ে গিয়েছিল।শেষে শুভ হার মানে জয়ের জেদের কাছে।জয় পরেরদিন চলে যায়।পিয়াকে বলে যায় সে ফিরবে,ঠিক ফিরবে।আর ফিরে বিয়ে করবে পিয়াকে।শুভের কাছে সে গচ্ছিত রেখে গেল পিয়াকে।

তারপরের দিন মাস সময়গুলো ছিল যুদ্ধের।পিয়া জয়ের সম্পর্কটা ওদের তিনজনের বাড়ি থেকেই মেনে নিয়েছিল।কিন্তু জয় চলে যেতেই পিয়া শুভর বিয়েটা কেউ মানতে পারলনা।পেটে পেটে এত বেইমানী ছিল শুভর।বন্ধুর হবু স্ত্রী জেনেও...ছিঃ.. আর পিয়া!!এমন মিষ্টি মুখের আড়ালে এই ছিল। শুভর বাড়ি পিয়াকে বৌ হিসাবে ঢুকতে দেয় না।শুভকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এই বাড়িতে তাদের মত পালিয়ে বিয়ে করা নোংরা দুটো ছেলেমেয়ের জায়গা হবে না।মেনে নেয় না পিয়ার বাবাও।শুভ আর পিয়া আলাদা ফ্ল্যাটে জীবন শুরু করে।

তারপর ছয় বছর।পিয়ার মেয়ে শ্রায়া এখন পাঁচ বছর। নিজের যোগ্যতায় উদয়াস্ত পরিশ্রমে শুভ এখন বেশ বড় একটা জায়গায় পৌঁছেছে।কাজ ছাড়া কিছু বোঝে না শুভ।তার সবটুকু শ্রায়ার জন্য।পাগলের মত ভালোবাসে ও শ্রায়াকে।সেই যেদিন নার্সিংহোমে ও প্রথম একটা ন্যকড়ার পুতুলকে ওর হাতে নিয়েছিল সেদিন কেমন করে কে জানে শ্রায়ার বাবা হয়ে গিয়েছিল ও।

পিয়া শ্রায়া হবার পর অসুস্থ হয়ে পরে।তখন একা অপটু হাতে শ্রায়ার সব কাজ শুভই করত।পিয়া দেখেছে শ্রায়াকে কিভাবে আগলে রেখেছে শ্রায়ার বাবা শুভ।আর শ্রায়া সে যে বাবাইয়া ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।সে বাবাইয়ার প্রিন্সেস।পিয়াকে শুভ বন্ধুই ভেবেছে।একবাড়িতে এক ঘরে ছ'ছটা বছর কাটিয়েও শুভ কোনদিন নিজের স্বামীত্ব জাহির করেনি।অথচ পিয়ার খুঁটিনাটি সুবিধা অসুবিধা সব দিকে তার তীক্ষ্ম নজর।পিয়ার একটু শরীর খারাপ হলে শুভ টেনশানে পাগল হয়ে যায়।

পিয়া ভাবে শুভ কি শুধুই বন্ধু।পিয়া বুঝতে পারে না।

জয়ের ফোন আসার পর থেকে তাই তোলপাড় চলছে পিয়ার মধ্যে।চোখের সামনে ফুটে উঠছে ফেলে আসা দিনের ছবিগুলো।যখন সবাই অপমান করেছিল পিয়াকে তখন শুভ শক্ত করে ধরে রেখেছিল তার হাত। তার প্রেগন্যান্সির সময় শুভ তাকে যেভাবে রেখেছিল জয় থাকলেও এত যত্নে রাখতে পারত না।আজ সবার চোখে শুভ ছোট হল কার জন্য?কি পেল সে?পিয়ার মা নাতনী হবার পর যোগাযোগ করেন।কিন্তু শুভর বাড়ির লোক আজো মেনে নেয় নি।সব তো হারালো শুভ পিয়ার সম্মানের জন্য।অথচ আজ জয়কে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে সবকিছু।পিয়া নিজের মন নিজেই যেন বুঝতে পারে না।শুভর জন্য তার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?

শুভও পাশের ঘরে জেগে আছে জানলার ধারে।শুধু জয়ের কথা রাখতে পিয়ার সম্মান বাঁচাতে বিয়ে করেছিল।সেটা তো মিথ্যেই ছিল।কিন্তু এই ছয়বছরে কবে যেন মিথ্যেটা আশ্রয় হয়ে উঠেছে তার।পিয়াকে সে ভালোবাসে কিনা সে জানে না।কিন্তু শ্রায়া?কি করে থাকবে সে তার পুতুল প্রিন্সেস কে ছেড়ে?সে যে ভুলেই গিয়েছিল যে সবটাই জয়ের।জয় তাকে নিজের খেলনা নিয়ে খেলতে দিয়েছে।খেলনা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।জয় তাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করেছে।নিজের প্রেম নিজের পিয়াকে কতখানি ভরসা করে সে গচ্ছিত করে গিয়েছিল শুভের কাছে।আজ তার বিশ্বাস ভেঙে সে কিছুতেই পারবে না বন্ধুত্ব শব্দটাকে অপমান করতে।


সেই পুরানো রেস্টুরেন্ট। এখানে কত আড্ডা দিত ওরা তিনজন।জয় তাই এটাকেই বেছে নিয়েছে দেখা করার জন্য।সেই কোনের দিকের টেবিলটা। জয় আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল।পিয়া আর শ্রায়াকে নিয়ে শুভ পৌঁছালো।পিয়াকে দেখে জয়ের চোখে মুগ্ধ বিস্ময়।শাড়ীতে কত সুন্দর লাগছে ওকে।আর কোলের ওই পুতুলটা তার মেয়ে!!শুভকে কত ম্যাচিওর লাগছে।শুভের মুখে হালকা হাসিটা আজো আছে।কিন্তু মুখে একটা অদ্ভুত কনফিডেন্স।সব কত বদলে গেছে।জয় ওদের সেই কলেজ লাইফের মেনু টাই অর্ডার করল।হালকা কুশল বিনিময়ের পর শুভ একটু হেসে বলল-"আচ্ছা আমার ডিউটি এবার শেষ।পেপার ওয়ার্কগুলো যত তাড়াতাড়ি পারিস মিটিয়ে নে।সামনের জুনে আমি ব্যাঙ্গালোর চলে যাচ্ছি।"চমকায় পিয়া।কই বলে নি তো আগে।

কিছু বলে না পিয়া।শুধু তাকিয়ে থাকে। শুভ হাসছে।একটু বেশীই হাসছে।এতটা কেন হাসছে ও?শুভ বলে-"আচ্ছা চলি তবে।তোরা কথা বল।"শ্রায়া বলে-"বাবাইয়া তুমি যাবে না প্লিজ।"শুভ বলে -"প্রিন্সেস আমার একটু কাজ আছে তো সোনা।"ও উঠে দাঁড়ায়।পিয়া কি রেস্তোরাঁর নীলচে আলোয় ভুল দেখছে?শুভর চোখের কোলটা চকচক করছে।পিয়া বলে-"না শুভ দাঁড়াও।"জয় কৌতুহলী তাকায়।শুভও।পিয়া বলে-"জয় আমি আর একটা মিথ্যের বোঝা বইতে পারছি না।অনেক হয়েছে।একটা সত্যি কথা তোকে আজ বলতেই হবে।জয় শ্রায়া কিন্তু তোর মেয়ে নয়।ও শুভর মেয়ে।তোর বাচ্চাটা জন্মায়নি রে।শ্রায়া শুভর মেয়ে।আমরা এখন একটা হ্যাপি ফ্যামিলি।শুভ তোকে কথা দিয়েছিল বলে আজ সত্যিটা বলতে পারছে না।কিন্তু আমি সত্যিটা বলছি।"

জয় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।শুভ বলে-"কি পাগলের প্রলাপ বলছ পিয়া।"পিয়া বলে-"তুমি বন্ধুর জন্য সেক্রিফাইস করবে করতেই পার।কিন্তু নিজের মেয়েকে অন্যের মেয়ে বলতে পারো না।বুকে হাত রেখে বল শ্রায়া তোমার মেয়ে নয়?"শুভ পিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।জয় উঠে দাঁড়ায়।বলে-"বাহ তবে তো ভালোই।এত কিছু হয়ে গেছে একবার জানাবার দরকার মনে করলি না তোরা।রিয়েলি আই এম এ ব্লাডি ফুল।ঠিকই বলে সবাই।তোদের একটা এফেয়ার ছিল।তাই তখন চট করে বিয়েতে রাজী হয়েছিলি।আমি ভেবেছিলাম আমার অনুরোধে।উফ..কি বড় ব্লান্ডার করতে যাচ্ছিলাম।থ্যাংকস তোদের।বাঁচালি।"জয় আর দাঁড়ায় না।বেরিয়ে যায়।বসে পরে শুভ।বলে-"কেন করলে এটা পিয়া?মিথ্যে কেন বললে বল?"পিয়া শুভর মাথায় হাত রাখে।বলে-"মিথ্যে বলেছি বুঝি?শ্রায়াকে তো জয় নষ্ট করতেই বলেছিল।সেদিন সেটা হয়নি।হলে জয়ের সন্তান থাকত না।শ্রায়ার বাবাইয়া তো তুমি।শুধু তুমি।"শুভ বলে-"কিন্তু তুমি জয়কে আর জয় তোমাকে ভালোবাসে।"পিয়া হাসে।"জয় আমায় নয় ওর কেরিয়ারকে ভালোবাসে।নইলে সেদিন এভাবে চলে যেতে পারত না।আর আমি ভালোবাসি কিনা?সেটা হয়ত কোনদিন তুমি বুঝবে।"চমকে তাকায় শুভ।বলে-"পিয়া... তুমি..."পিয়া বলে-"চল ওঠো এবার।কবে যাচ্ছি আমরা ব্যাঙ্গালোর? ভালোই হবে জান সব নতুন করে শুরু করব।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance