Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aparna Chaudhuri

Drama Romance

3  

Aparna Chaudhuri

Drama Romance

তিন্নি (পর্ব ২)

তিন্নি (পর্ব ২)

3 mins
311



তিন্নির যখন জ্ঞান ফিরল তখন ও আশ্রমে শুয়ে আছে আর ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আশ্রমের ছেলে মেয়েরা আর স্বয়ং গুরুদেব।

ও আসতে আসতে উঠে বসলো। বাঁ চোয়ালটা বেশ টন টন করছে। মাথার চুলগুলো সব ভিজে। ওর জ্ঞান ফেরানোর জন্য নিশ্চয়ই জলের ছিটে দেওয়া হয়েছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর জামার হাতাটা ছেঁড়া , জিন্সটা ধুলো কাদা মাখামাখি।

“ ঠিক কি হয়েছিল বলত মা।“ ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করলেন গুরুদেব।

তিন্নি উত্তর দেবার আগেই হন্তদন্ত হয়ে সবাইকে ঠেলে ঢুকে এলেন সেঁজুতি মামমাম। তার হাতে কাপড়ের আঁচল দিয়ে ধরা এক গ্লাস গরম দুধ।

“ আগে এটা খেয়ে নে তো মা । তারপর সব সওয়াল জবাব হবেখন।“

তিন্নি আর কোনও আপত্তি না করে লক্ষ্মী মেয়ের মত দুধটা খেয়ে নিল। গলাটা বেশ শুকিয়ে গিয়েছিল। দুধটা খেয়ে ভাল লাগলো।

“ ভাগ্যিস রিকশাওয়ালা হরি এসে খবর দিল আশ্রমে নাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না এত কাণ্ড! “ আঁচল দিয়ে নিজের মুখটা মুছতে মুছতে বললেন সেঁজুতি মামমাম। তিন্নি দেখল ভিড়ের মধ্যে পিছন দিকে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে হরি। ওর সাথে চোখাচুখি হতেই একটা লাজুক হাসি হাসল হরি। 

“ আমি রিক্সা করে আসছিলাম...... বলে চলল তিন্নি।

ওর সমস্ত কথা শুনে মাথা নাড়তে লাগলেন গুরুদেব। “ ছি ছি ছি, কি লজ্জার কথা। আমি ওদের বলেছিলাম যেন তোমাকে বিরক্ত না করে , আর ওরা কিনা সেই......।“

গুরুদেব ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

সেদিন আর সেরকম কোনও কাজকর্ম হল না। আশ্রমের দাদারা ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেলো। বাড়ি ফিরে বাবা মা কে সব কথা খুলে বলতে ওঁরা খুব ভয় পেয়ে গেলেন।

“ তুই ওদের সাহায্য করতে চাস এতে আমার কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু এই যে ঝামেলাটা বেঁধেছে এটা সহজে মিটবে বলে মনে হয় না। আর এবার ভাগ্য জোরে তুই বেঁচে গেছিস। এর পরের বার যদি আশ্রমের লোকেরা খবর না পায়?”

কথাটা মনে হতেই তিন্নি শিউরে উঠলো, সত্যিই তো অতজনের সঙ্গে ও একা পেরে উঠতও না। ভাগ্যিস হরি আশ্রমে গিয়ে খবর দিয়েছিল আর সঙ্গে সঙ্গে আশ্রমের দাদারা রে রে করে ছুটে গিয়েছিল। ওদের দেখে নাকি ছেলে গুলো ঊর্ধ্ব শ্বাসে দৌড়ে পালিয়ে যায় ওকে মাটিতে ফেলে রেখে। ওর জামা ছিড়ে গেছে, জিন্‌স এর তলায় হাঁটু ছড়ে গেছে। ব্যাগটা নাকি একটি ছেলে খুলে দেখছিল, কে জানে কিছু খোয়া গেছে কিনা? মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলও , স্ক্রিন টা ফেটে চৌচির।

বাবার কথার কোনও উত্তর দিল না ও। চুপ করে বসে ভাবতে লাগলো। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বাবা মা দুজনেই একসাথে ওকে বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো, নানা যুক্তির অবতারণা হল। শেষে তিতিবিরক্ত হয়ে ও বলল, “ আরে বাবা! আমি ভাবছি ওদের কিভাবে ওয়েবসাইট টা দিয়ে দেওয়া যায় , যাতে আমি না গেলেও ওরা ওটাকে ব্যবহার করতে পারে। “

ওর কথা শুনে বাবা মা দুজনের মুখেই হাসি ফুটল।

তারপর আর কি, আশ্রমের একজন দাদা আর একজন দিদি ওর বাড়ি এসে , কি ভাবে ওটাকে ব্যবহার করতে হয় শিখতে লাগল । দু তিন দিন শেখার পর ওরা বেশ ভালো ভাবেই ওটা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। তিন্নির বেশ নিশ্চিন্ত লাগছিল। ও একদিন গিয়ে ওদের আশ্রমের কম্পিউটারে সফটওয়্যার টা লোড করে দিয়ে এল।  

তিন্নির নতুন চাকরির পোস্টিং হল বাঙ্গালুরুতে। সত্যি কথা বলতে কি ওরও আর কলকাতায় থাকতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু মা বাবার কথা ভেবে একটু সঙ্কিত হচ্ছিল। ওরা ওকে ছেড়ে কখনও থাকেনি। দুজনেরই বয়স হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে যখন ও জানালো কথাটা বাবাকে, বাবার প্রতিক্রিয়া দেখে ও অবাক।

“ খুব ভালো হয়েছে। এখন সব বড় কম্পানি ওখানেই ওদের অফিস খুলছে। দারুন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তোর খুব ভালো লাগবে। আমার অনেক বন্ধু থাকে ব্যাঙ্গালুরুতে। প্রথম কিছুদিন তুই থাক কোম্পানির দেওয়া শেয়ার্ড ফ্ল্যাটে । তারপর না হয় দেখে শুনে অন্য কোনও জায়গায় যাবি। “বলল বাবা।

মা বেশ খুশি, “ যাক বাবা, তুই এখান থেকে দূরে চলে যাবি ভালোই হবে। আর বাবার চাকরির তো আর কয়েকটা বছরই বাকি আছে। তারপর আমরাও তোর কাছে গিয়ে থাকতে পারব।“

তিন্নির বেশ নিশ্চিন্ত লাগছে। চাকরির জয়নিং ডেট পরের মাসে। মা আর মেয়ে মিলে খুব শপিং করলো। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা আর পার্টি চলল বেশ কয়েকদিন। যেন ফুর ফুর করে কেটে গেল দিনগুলো।

নিজের জিনিষপত্র নিয়ে যখন কলকাতা এয়ারপোর্টে পৌঁছল তিন্নি, একটু ভয়, একটু উত্তেজনা , একটু মনখারাপ আর অনেক অনেক কৌতূহলে ভরা ছিল ওর মন। বাবা মা কে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে যখন ও সিকিউরিটি চেকের দিকে রওনা দিল, চোখের কোন দিয়ে দেখতে পেল শাড়ির আঁচল দিয়ে মা চোখ মুছছে।

(ক্রমশ...)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama