Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Debdutta Banerjee

Drama

3  

Debdutta Banerjee

Drama

রাঙা পলাশ

রাঙা পলাশ

3 mins
1.4K


অবশেষে টাইম মেশিনটা তৈরি করতে পেরেছি। আমার আর তর সইছিল না। চড়ে বসলাম মেশিনের পেটে। আমার সাথে আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী কুটুশ পাশের সিটে বসে ডাকল ভৌ ভৌ। যন্ত্র বলতে সেই আগেকার দিনের যে এলার্ম ক্লক হত তেমন একটা জিনিস। মাথায় দুটো টুপির মত ঢাকনা। একদিকে ভবিষ‍্যত, একদিকে ফেলে আসা সময়। আমি তারিখের ঘরে একশ বছর আগের ডেট আর সময় দিয়ে ম্যাপে আমার জন্মস্থান সেট করলাম। সিট বেল্ট বেঁধে মেশিন অন করতেই তীব্র ঝাঁকি দিয়ে সব কাঁপতে শুরু করলো। ধুলার ঝড় উঠল যেন। 

কয়েক মিনিট পর থামতেই দরজা খুলে বাইরে এলাম, ঢেউ খেলানো চা বাগান আর নীল পাহাড়। প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে নেমে পড়লাম। মেশিনটাকে একটা ঝোপের আড়ালে রেখে আমি আর কুটুশ এগিয়ে চললাম চা গাছের ফাঁক দিয়ে। দূরে চা পাতা তুলছিল কিছু মহিলা। তবে পোশাক বহু পুরানো। পাশের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে পর পর তিনটে আদ‍্যিকালের বড় বড় ট্রাক এসে দাঁড়ালো। একটা বড় শেড ট্রির আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি আর কুটুশ সব দেখছিলাম। ট্রাক থেকে টেনে হিচরে নামানো হল প্রচুর আদিবাসী পুরুষ আর রমণীকে। কয়েকজন খাকি হাফ প্যান্ট পরা লোক গাদা বন্ধুক হাতে ওদের ঠেলে ঠেলে নিয়ে চলল অন্য দিকে। একটা কান্না মিশ্রিত গুঞ্জন..... সকলেই অনিচ্ছার সাথে এগিয়ে গেল। আমি আর কুটুশ একটু আড়াল রেখে অনুসরণ করলাম।


একটা ব্যারাক মত জায়গা, ওদের দুটো বড় ঘরে ঢুকিয়ে রাখা হল। দুজন পাহারাদারের আলোচনায় বুঝলাম সুদূর সিংভুম, ছোট-নাগপুর থেকে এই চা বাগানে কাজ করার জন্য এদের আনা হয়েছে। একটু পরে দুই লাল মুখো সাহেব এলো ঘোড়ায় চড়ে, কয়েকটা কিশোরী মেয়েকে টানতে টানতে বাইরে আনল পাহারাদার। সাহেব দুটো মেয়েকে পছন্দ করল। একটা আদিবাসী পুরুষ এগিয়ে এসেছিল বাঁধা দিতে। সাহেবের গুলিতে লুটিয়ে পড়লো মাটির বুকে। মেয়ে দুটোর কান ফাটানো চিৎকারে আর গুলির আওয়াজে অনেকেই বেরিয়ে এসেছিল। পশ্চিমাকাশে লাল আবীর গুলে সূর্য তখন অস্তাচলে যাচ্ছে। আমি কুটুশ কে চেপে ধরে রেখে ভাবছিলাম এরা কতটা নিষ্ঠুর!!


দুটো লোক মেয়ে দুটোকে নিয়ে চলেছে সাহেবদের পিছনে, তাদের লক্ষ্য করে গাছের আড়ালে লুকিয়ে চলেছি আমরা। একটা বড় বাংলোয় এসে ঢুকল ওরা, একটু পরে লোক দুটো চলে গেল। আমি বাংলোর জানালায় গিয়ে চুপি দিলাম। একটা বিশাল বসার ঘর, দামি আসবাব দিয়ে সাজানো। পাশের ঘরটা খাওয়ার ঘর। দুটো বাবুর্চি রান্নাঘর সামলাচ্ছে। একটা ছোট দরজা পিছনের দিকে, ঠেলে ঢুকলাম। একটা বড় ঘর পার হয়ে আরেকটা ঘর, দরজার ফাঁক দিয়ে সাহেবটাকে দেখলাম গ্লাসে রঙ্গিন পানীয়। একটা বড় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছি আমরা। দুই সাহেব বিশ্বযুদ্ধ ,রাশিয়ায় বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করছে। কখনো স্বদেশী আন্দোলনের কথা উঠে আসছে। একটু পরে মেয়ে দুটোকে জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দিল দুটো লোক। ওদের পরিষ্কার করে স্নান করিয়ে কাপড় পরিয়ে এনেছে। মাথায় গোজা আগুন রাঙ্গা পলাশ ফুল। আমি ভাবছি কি করবো!! দুই সাহেব এগিয়ে আসছে মেয়ে দুটির দিকে। হঠাৎ একটা মেয়ে পাশের ফল কাটার ছুড়িটা নিয়ে চালিয়ে দিল এক সাহেবের মুখে। চিৎকার করে মুখ চোখ চেপে বসে পড়েছে লাল মুখো সাহেব। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভাগ অন্যজন। চকিত অন্য মেয়েটা একটা বোতল ভেঙ্গে তা ঢুকাতে গেল অন্য জনের পেটে। এই সাহেব একটু তৎপর ছিল, খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে গেল। আমার কোল থেকে ঝাঁপিয়ে পরে কুটুশ সাহেবকে লক্ষ্য করে ঢুকে গেছে ভেতরে, ওদের চিৎকারে দুটো পালোয়ান মতো লোক ছুটে এসেছে। সাহেবটা ততক্ষণে গুলি চালিয়ে দিয়েছে। একটা মেয়ে লুটিয়ে পরল, আমি লাফ দিয়ে ঢুকে অন্য মেয়েটিকে টেনে নিয়ে দৌড়লাম পিছনের দরজার দিকে। কুটুশ আমাদের পেছনে। প্রাণপণে দৌড়চ্ছি আমাদের টাইম-মেশিনের দিকে। পিছনে একটা কোলাহল। বন্ধুকের শব্দ। চা বাগান আর শেড ট্রি এর আড়ালে অন্ধকারে আমরা এঁকে-বেঁকে ছুটে চলেছি, আমার হাতে মেয়েটার হাত। মেশিনে ঢুকে ওকে বসিয়ে কুটুশ কে কোলে নিয়ে দ্রুত হাতে তারিখ সেট করে মেশিন চালু করলাম। একটা গুলি মেশিন ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিনে ধুলার ঝড় তুলে মেশিন কেঁপে উঠল। মেয়েটা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরল ভয়ে। যখন যন্ত্রটি থামল আমি ঘামছি কুলকুল করে। চোখ খুলে পাশের সিটে তাকিয়ে দেখি ........ সে নেই, পড়ে রয়েছে এক গোছা আগুন রাঙ্গা পলাশ ফুল!!!!


ইতিহাসকে ভবিষ‍্যতে আনতে অক্ষম আমার মেশিন। বোধহয় ইতিহাসকে বদলাতে পারবো না। সময় বয়ে চলে , তাকে ধরে রাখা যায় না। ফিরে গেলেও বদলানো যাবে না। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama