Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Maheshwar Maji

Others

0  

Maheshwar Maji

Others

আঠারো বছর পর

আঠারো বছর পর

10 mins
2.5K


কেষ্টর মনটা বেজায় খারাপ হয়ে গেল।এ রোগ বড় বেহায়া!কিছুদিন হল এখন সে বন্ধুদের আড্ডায় যায় না। তার ভাল লাগে না।উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে।এর মধ্যে তার শরীরটাও কেমন বাঁশপাতার মত হাল্কা হয়ে যাচ্ছে।বেশিক্ষণ বসে থেকে উঠলেই,মাথাটা ঝিমঝিম করে।চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্ধকার ছেয়ে যায়।গাঁ থেকে পাঁচ কিমি দূরে গুঁসাই ডাক্তারের চেম্বার।ওখানেই একদিন দেখিয়ে এসেছে।তারও একটা কারণ আছে।আসলে উনি গোপন রোগের চিকিৎসা করেন।তারসাথে ভালো-ভালো কথাও বলেন।

কেষ্টর অর্ধেক কথা শুনেই গুঁসাইবাবু এক গাল হেসে বলে উঠেছিলেন,


----আরে এত চিন্তা কীসের?তুমি তো আর কচিটি নও।আঠারো বছর বয়স হল।এই বয়েসে অল্পস্বল্প জাঙ্গিয়া ভিজে।শরীরের ধর্ম।সামনে পরীক্ষা আসছে।তাই সময়ে খাওয়া,দাওয়া করে ভোর,ভোর উঠে একটু লাফ,ঝাঁপ করো।শরীর চনমনে থাকবে।আর হ্যাঁ... এই কয়দিন এখন মোবাইলে বাজে ছবি-টবি দেখা বন্ধ রাখবে।পারলে বাজে কথা প্রসঙ্গও এড়িয়ে চলো।তাতে মন ভাল থাকবে।পড়াশুনোয় একাগ্রতা বাড়বে।তবু মাঝে-মাঝে এসব হলে একদম দুশ্চিন্তা করবে না। মানুষের পেচ্ছাব,পায়খানার মতই এটা একটা সাধারণ ব্যাপার।তার জন্য অত চিন্তা করার দরকার নেই।গোটা কয়েক ভিটামিন ক্যাপসুল আর একটা সিরাপ লিখে দিলাম।সময় মতো খাও।ঘুম আসবে ভাল।


কেষ্ট কিন্তু কিন্তু করে বলেছিল,

----ডাক্তারবাবু এটা তাহলে কোন রোগ নয় তো?

---অতিরিক্ত সবটাই খারাপ।পেটের খিদেটাও।তোমার এটা রোগ না। আরে বাবা পুরুষ হয়ে জন্মেছ...যৌবন এলে তো খেয়ালে মেয়েদের চিন্তা আসবেই।সেটাই স্বাভাবিক।তবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আচ্ছা তুমি হ্যান্ডেলিং করো নাকি?

---সেটা আবার কী জিনিস?

----আরে বাবা হাত দিয়ে নাড়াও কিনা সেটাই শুধোচ্ছি?

---বন্ধুদের দেখে একবার চেষ্টা করেছিলাম।বড্ড শিরশির করতো,পারিনি।

----চেষ্টা করো।আট,দশদিনে একবার কাজটা করে নিলে এসব প্যান্টভেজা জিনিসটা সহজে হবে না।যাও এবার দুশ্চিন্তা বন্ধ করে,পড়াশুনোই মন দাও গিয়ে।

এই কদিনে শরীরের দূর্বলতাটা অনেক কেটেছে।পড়াই মন দিতে পারে।সময় মতো ঘুম এবং খিদে ঠিকই আছে।শুধু মাথার ঝিমুনিভাবটা কাটল না।কেষ্ট বিছানা ছেড়ে ওঠে এল।জায়গাটায় হাত লাগতেই সে একবার শিউরে উঠল।অল্প কাঁপুনি এসে গেল।গন্ধটাও বিদঘুটে।মনে হল সে বমি করে ফেলবে।অনেক কষ্টে নাকটা একহাতে দেবে প্যান্টটা চেঞ্জ করে নিল।দাগ লাগা প্যান্টটাকে গোল করে পাকিয়ে বিছানার তলে চাপা দিয়ে রাখল।চান করার সময় লুকিয়ে কেচে আনবে।


 সকাল হতে এখনো আধ ঘন্টা।কেষ্ট একটু বই নিয়ে বসল।যেই আকাশটা একটু আলো হয়ে এল,খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে পড়ল।

 সকালে চা আর শুকনো মুড়ি নিয়ে বসল।খিদেটা এখন সামলানো যায় না। তার মা বালিশের কয়েকটা পুরনো কভার উঠোনে ছুঁড়ে বলে উঠলেন,


---এই বিথী।যা গিয়ে দাদার বিছানার পুরনো চাদর আর খোল কটা নিয়ে আয়।যতই ময়লা হোক না কেন,মনে করে সেই আমাকেই কাচতে হবে।আঠারো বছর বয়স হতে চলল,এখনো ময়লা আর পরিস্কারের তফাত বুঝল না।কী করে যে কাড়ি-কাড়ি নাম্বার তোলে,ভগবান জানে।

 বিথী কিছুক্ষণ পরই কেষ্টর বিছানা চাদরের সাথে লুকোনো তার প্যান্টটাও নিয়ে হাজির হল।


এসেই উঠোনে ছুঁড়ে বলে উঠল,

----ওয়াক!ছি!কী গন্ধ!সারারাত যত কফ মুছেছে প্যান্টে।দাদার কুড়েমীগিরি আর ঘোচার নয়!সেটা আবার লুকিয়ে রেখেছে!দ্যাখো,দ্যাখো মা..আমি মিথ্যে বলছি তো?


কেষ্টর মুড়ির বাটিটা তখনো অর্ধেক শেষ হয়নি।গলায় লেগে বিষম খেল।একেবারে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা।চোখে,মুখে জল ছিটানো হল।বসিয়ে তার মা আঁচল দিয়ে হাওয়া করে বলে উঠলেন,

----এখন ভাল লাগছে বাবা?

কেষ্ট স্বাভাবিক হওয়ার ভঙ্গীতে বলে উঠল,

----আমি ঠিক আছি মা।তুমি বরং যাও বাবাকে একবার দোকানে গিয়ে ডেকে আনো।


উত্তরে তার মা বলল,

---- অ্যাই! বিথী দাদার কাছে একটু দাঁড়া।আমি তোর বাবাকে খবরটা দিয়ে আসি।পারলে একবার ডাক্তারের কাছ থেকে ঘুরে আসবে।

তার মা বেরিয়ে যাওয়ার পর কেষ্ট সোজা হয়ে উঠে বসল।তারপর বিথীকে বলল,

----যা তো! এক গ্লাস খাবার জল নিয়ে আয়।গলাটা তখন থেকে কাঠ হয়ে আছে।

বিথী যেতেই কেষ্ট তড়িৎ বেগে গিয়ে ভোরের গুটানো প্যান্টটা ধরে জ্বলন্ত উনোনে পুরে দিল।

বিথী এসেই গন্ধ শুঁকে বলে উঠল,

----মনে হচ্ছে কারো বাড়িতে উনোনে কিছু পুড়ছে---কাপড়,চোপড়!


কেষ্ট কোন কথা না বলে চোরা চোখে জ্বলন্ত উনুনটার দিকে তাকিয়ে আছে।শিখাটা একটু বেড়েছে।খালি গ্লাসটা বিথীকে দিয়ে বলল,

----শোন আমি টিউশানি যাচ্ছি।মা এলে বলিস,দাদার শরীর ভাল হয়ে গেছে।


 সন্দীপ স্যারের এমন কড়া ধমক কেষ্ট আজই প্রথম খেল।সেই থেকে মনটা বেজায় চটে আছে।বুকের ভেতরটায় যেন একটা লু অনেকক্ষণ ধরে পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে।মোড়ের মাঝেই সাইকেলটা পথের আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে নম্রতাদের যাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ করে দিল।নম্রতার সাথে আরো তিন-চারজন মেয়ে আসছিল সাইকেল ঠেলে।এই জায়গাটায় সবাই হেঁটেই পার হয়।চারিদিকে নানা দোকানদানি ছড়িয়ে আছে।মানুষ আর গাড়ির ঠেলাঠেলিতে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াটা একটু বিপদজনক।

নম্রতার লাগালাগি যে মেয়েটা হেসে আসছিল।বলে উঠল,

----কীরে রাস্তার মাঝে এমনভাবে দাঁড়িয়ে পড়লি যে!আমরা বুঝি তোর মাথার উপর দিয়ে যাব?

কেষ্ট দমটা চেপে বলে উঠল,

----কাল থেকে তোরা আলাদা বসবি।

---কেন?

---তোদের পোশাক পরার কোন ঢং নেই।বুকের ওড়নাগুলো নিচের দিকে বেশি ঝুলিয়ে কেন রাখিস?একসাথে পড়তে হলে ওসব ঠিক রাখতে হবে।না হলে সন্দীপস্যারকে বলে দেব।

কথাটা শুনে সবাই মুখ চাপা দিয়ে হাসতে শুরু করল।

নম্রতা সংযত হয়ে বলে উঠল,

----সেদিকে তোর তো তাকানোর কোন দরকার নেই।

কেষ্ট রাস্তা ছেড়ে দিল।মেয়েগুলো যেতে-যেতে আর একবার তার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল।


 সন্ধ্যের সময় হঠাৎ করে আলোটা চলে গেল।কেষ্ট নিজের ঘরে একা বসে আছে।মোবাইলটা সামনে রাখেনি।না হলে বাইরে বেরোনো যেত।এই অবস্থায় সিঁড়ি ভেঙে নিচে বা ছাদে কোথাও যাওয়া যাবে না।

এমন অবস্থায় হটাৎ তার মনে অদ্ভূত একটা খেয়াল চেপে বসল।প্যান্টের চেনটা ধীরে-ধীরে খুলে ফেলল।রাগে নম্রতার উঁচু বুকটাকে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হল।তার সেই ইচ্ছের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল হাতের বেহিসেবি ছন্দ।


একদম শেষ মুহূর্তে তার মা চার্জার আলোটা নিয়ে তার সামনে হাজির হলেন।কেষ্টর চোখে,মুখে অদ্ভূত ছাপ।তার সাথে ঘামের ধারা মিশে কেমন যেন অচেনার মত ঠেকল।তার মা অবাক হয়ে বলে উঠলেন,

----কী হল?ভয় পাসনি তো?একবার কি গুনীন জেঠুকে খবর দেব?

কেষ্ট নিজের ঘাম মুছে হাসার চেষ্টা করল।

---তুমি যাও, আমি ঠিক আছি।গরম লাগছিল তাই এরকম মনে হচ্ছে।

---না কেষ্ট ।আজকাল তোর ব্যাপার-স্যাপার আমি বুঝে উঠতে পারি না। দেখলাম একটা সিরাপ আর কিছু ক্যাপসুলও এনেছিস।কী হয়েছে সত্যি করে বল তো?

----তুমি না অযথা টেনশন বাড়াও।যাও তো!নিজের কাজ করোগে।আমি ঠিক আছি।কদিন রাতে ঠিকমত ঘুম আসছিল না তাই ডাক্তার ওসব দিয়েছেন।এখন ঘুমও আসে।খিদেও খুলেছে।

ছেলের কথাই তিনি আশ্বস্ত হয়ে বললেন,

----অন্য কিছু নয় তো?

----এবার তুমি যাও ।আমার অনেক পড়া বাকি আছে।


 চুপি-চুপি ঘাড় ঘুরিয়ে কেষ্ট দেখে নিল।তার মা নিচে নেমে গেছে।তারপর ভেজা জায়গাটা থেকে খাতাটা ওঠাতে গিয়ে দেখল চিট খেয়ে বীভৎস আকার ধারণ করেছে।আর তো ছোঁয়াও যাবে না।অনেকগুলো অঙ্ক ওতে লেখা আছে।মাঝে,মাঝে প্রয়োজন পড়লে দেখা যায়।এখন সেটা কোনরকমে বা হাতে উঠিয়ে ফেলে দিলে জানলা পথে ঝোপের মধ্যে ।


  তারপর দিন বিথীকে কাছে ডেকে কেষ্ট ধমক দিয়ে বলে উঠল,


---আমার ঘরে যখন-তখন একদম ঢুকবি না।

বিথী উল্টে রাগ দেখিয়ে বলে উঠল,

---আসি কী আর সাধে?জামা,কাপড় আর বিছানার যা ছিরি করে রাখিস,আমার তো ছুঁতেও ঘেন্না ধরে! ওগুলো পরিস্কার না করলে তুই সুস্থ থাকতে পারবি?যদি পারিস তাহলে আসব না।

----যবে যেটা ময়লা হবে, আমি নিচে গিয়ে দিয়ে আসব।এবার যা সামনে থেকে।

---আর আমার অঙ্কগুলো?করে দিবি না?

---নিচে যা।পরে গিয়ে দেখিয়ে আসব।এখানে থাকার দরকার নেই।


বিথী ঘাড় লটকে বলে উঠল,

----আমার উপর রাগ করেছিস! তাই না রে?বোনটা তোর বড্ড জ্বালায় দিনরাত।পাঠিয়ে দিস তাড়াতাড়ি করে কোন যমের ঘরে।আর আসবো না বিরক্ত করতে।চিরদিনের মত।

কেষ্ট ধমক দিয়ে ডেকে উঠল,

----এই শোন।


বিথী ঘুরলো না।

কেষ্ট উঠে গিয়ে নিজের অভিমানী বোনের মাথায় একটা হাত রেখে বলে উঠল,

----আমি সেইজন্য তোর উপর রাগ করিনি বোন।তুই শুধু, শুধু রাগ করছিস।

সাথে-সাথেই বিথী তাকে চমকে দিয়ে হেসে উঠে বলে উঠল,


----রাগ আর আমি!এত সহজ নয় দাদা।তোর ঘাড় জ্বলিয়ে তবে যাব।তার আগে নয়।আমি শুধু তোর দরদ মাপছিলাম।তুই থাক না পড়ে তোর কান্ড কারখানা নিয়ে।আমি কেন ঝাঁপ দিতে আসব।আমি এখন আসি।পরে অঙ্ক কটা করে দিয়ে যাস!


দিন সাতেক হল নম্রতারা আলাদা ব্যাচ করে পড়ছে।নম্রতারাই সকলে মিলে একদিন সন্দীপ স্যারের কাছে প্রস্তাবটা রেখেছিল।তারা মেয়েরা আলাদা ব্যাচে পড়বে।একদম সকালের দিকে আসে কেষ্টরা।তাদের ব্যাচটা শেষ হওয়ার এক ঘন্টা পর নম্রতারা আসে।মাঝের সময়টাতে স্যার অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন।বাড়ির বাইরে আসার একটা মিনিটও সময় পান না।

আজ কেষ্ট,স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছোট বটগাছের তলাটায় সাইকেল নিয়ে ঠাঁই এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইল।

মেয়েগুলো আসতেই সে সজাগ হল।নম্রতাকে দেখতে পেয়ে ডাকল,

----এই নম্রতা এদিকে শোন।

নম্রতা আগে-পিছনে একবার তাকিয়ে নিল।তারপর আস্তে করে এগিয়ে বলে উঠল,

----কী হল?

---আমার সাথে ঘুরতে যাবি?

---ঘোরার জন্য বুঝি আমি এখানে এলাম?

---আজকের নোটগুলো আমি তোকে দেব।প্লিজ না করিস না। তোর সাথে অল্প না ঘুরলে আমার পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে।প্লিজ..দয়া কর।


কেষ্টর চেহারা দেখে নম্রতা নরম হল।


---কোথায় যাবি?

---ড্যাম্পে।

---আর সাইকেলটা?

---ওটা নিয়েই চল।

---পুরো আট কিলোমিটার।

---তুই চেপে থাকবি।আমি চালাব।

---ভালবেসে ফেলবি নাতো?

----তুই না বাসলেই হল।

---চল।দেড় ঘন্টা সময় আছে।সেটা মাথায় রাখিস।

 

কেষ্টর মা এই প্রথম কেষ্টকে রুমের দরজা বন্ধ করে পড়তে দেখলেন।প্রথমটাই ভেবেছিলেন,হয়তো হাওয়াতে দরজাটা লেগে গেছে।ছেলের খেয়াল নেই।যখন দেখলেন,ভেতর থেকে খিল আঁটা তখন একটু ধাক্কা খেলেন।মনে হল ছেলেটা এতদিনে একটা আলাদা জগতের বাসিন্দা হয়ে গেছে,যার ভেতরে ঢোকার জন্য এবার তাকে নিজের ছেলেরই আদেশ নিতে হবে।ভেবেছিলেন ছেলের কপালটা একবার ছুঁয়ে আসবেন।শরীরটা ঠিক আছে কিনা?আর গেলেন না। তিনি বুঝে গেলেন,কেষ্ট এবার বড় হয়ে গেছে।ছোটখাটো প্রয়োজন এবার সে নিজেই মিটিয়ে নিতে পারবে ।


ইংরেজি পরীক্ষার শেষে আজ আবার কেষ্ট নম্রতাকে নিয়ে সামনের রেল স্টেশনে ঘুরতে চলে গেল।কিছুক্ষণ ঘুরল,ফিরল তারপর হোটেলে মিষ্টি খেতে ঢুকল।সেখান থেকে বেরিয়ে একটু নিরালাই এসে কেষ্ট খপ করে নম্রতার ঠোঁটে তার ঠোঁটটা চুম্বকের মত বসিয়ে দিল।একটা অদৃশ্য ধুয়ো উড়ছিল তাদের শরীর থেকে।একটা কুকুর চেঁচিয়ে উঠতেই তারা পরস্পর থেকে ছিটকে গেল।

নম্রতা ঠোঁটে রুমাল চাপা দিয়ে বলে উঠল,


----রাক্ষস কোথাকার!আর একটু হলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতিস।আজ থেকে তুই আমার সাথে আর একদম কথা বলবি না। রাসকেল..ইডিয়ট।

কথাটা শেষ করেই নম্রতা গটগট পায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।


কেষ্ট মুখের রক্তমেশা লালাটা ফক করে ফেলে দিয়ে বুকটায় অল্প হাত বুলিয়ে চোখদুটো বুঁজে ফেলল।


শেষ পরীক্ষা ফিজিক্স।সব কটা জানার মধ্যে।শুধু ত্বরণের অঙ্কটা করতে গিয়ে কেষ্ট কাদার মধ্যে মোটর গাড়ির মত ফেঁসে গেল।পাঁচটা নাম্বার কম নয়।এর জন্য একটা স্কলারশিপ এমনকি স্ট্যান্ড পিছিয়ে যেতে পারে।এমন সময় আবার তার মধ্যে সেই অদ্ভূত নেশার ঘোর চেপে গেল।চেনের নিচটা আস্তে-আস্তে ফুলে উঠছে।সে প্রাণপণে দমানোর চেষ্টা করছে।রাক্ষসী ফণা যেন তত মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই।অন্যদিকে অঙ্কের টেনশন।পাঁচটা নাম্বার বাড়ানোর অদ্যম জিদ।সবে মিলে যা হওয়ার তাই হল।অঙ্কটা শেষ হওয়ার সাথে-সাথে তার প্যান্টটাও চ্যাটচ্যাটে আঠালো জিনিসে ভিজে একসা।

কোনরকমে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে খাতাটা জমা করেই কেষ্ট দৌঁড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।গিয়েই প্রথমে হড়হড় করে মনের সুখে বমি করল।তারপর হাতটা কলের জলে ধুয়ে,চোখ,মুখ পরিস্কার করল।

আজ আর বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরল না।অনেকক্ষণ একা-একা মাঠের দিকে ঘুরল।কয়েকটা বাচ্চা ছেলে ক্রিকেট খেলছিল।কিছুক্ষণ তাদের সাথে বলটা লোফালুফি করল।তখনি একটা মেয়ের ডাক তার কানে এসে ধাক্কা খেল।


----এই কেষ্ট..আয়..আয়..এদিকে আয়।

কেষ্টর চিনতে অসুবিধা হল না।ডাক পেয়েই দৌঁড়ে গেল।

---হ্যাঁ বল।কী হয়েছে?

---নম্রতা আজ তোকে লাইব্রেরির পিছনে ডেকেছে।ছটার সময়।তোকে সেই একঘন্টা ধরে তন্ন-তন্ন খূঁজছি।তোর বন্ধুদের গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।দেখলাম তুই উঠিসনি।

--দরকারটা কী শুনি?আর ওই বা কেন এল না?

---আজ ও হাফ টাইমে বেরিয়ে গেছে।পরীক্ষাটা বেশ দিতে পারেনি।

---কেন?

---সে তুই বুঝবি না।

---সব বুঝি।অবুঝের মত থাকিস তোরাই।

---ব্লাড নামছিল।তাই আর থাকতে পারেনি।

---আচ্ছা এটা তোদের কখন থেকে শুরু হয় রে?

---নম্রতার ব্যতিক্রম।ওর এ বছরই প্রথম।

কেষ্ট কী একটা বোঝার মত ভঙ্গী করে বলে উঠল,

----বুঝেছি।

---আমি চললাম।তুই যাস কিন্তু ।

কেষ্ট কব্জি উল্টে সময়টা দেখে নিল।চারটে পঁয়ত্রিশ।তারপর উল্টো দিকের পথটা ধরে শর্টকার্ট মেরে পাঁচ মিনিটে বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে গেল।মাত্র পনের মিনিট।তারপর নেমে পড়ল গাঁয়ের মোড়ে।


নম্রতার সাথে আজ একমাস মেলামেশার পর কেষ্ট বুঝতে পারল,সে নম্রতাকে অল্পও ভালবাসে না।একবার খালপাড়ে কুইক সেক্স নামক খেলাটা খেলেছিল বটে।তাতে ভালবাসার থেকে সেক্সের তাড়নাই বেশি ছিল।এখন সেটা কেষ্ট হাড়ে,হাড়ে টের পাচ্ছে।নম্রতার ভালবাসা সেদিক থেকে দেশি গাওয়া ঘিয়ের থেকে বেশি শুদ্ধ।কেষ্ট সেটাই ভাবছে,কী করবে?রেজাল্ট যে তার নাইন্টি সেভেন পার্সেন্ট হবে,সে একরকম নিশ্চিত।এরপর কলকাতায় যাবে সে।নামী কলেজে এডমিশন নিতে।তার এই উজ্বল ভবিষ্যতের মাঝে নম্রতার শরীরটাকে ঢুকিয়ে লাভ নেই।কিন্তু সে কথা নম্রতাকে বোঝায় কীভাবে?

কেষ্টর এখন আর যখন-তখন চেনের গোড়া ফুলে ওঠে না।যেন সে একটা অবাধ্য কেউটেকে এতদিনে খেলাতে শিখে গেছে।যখন ছোবল মারার দরকার পড়ে ঠিক তখনি ঝাঁপিটা কিছুক্ষণের জন্য অবাধে খুলে দেয়।আপনা থেকে আবার ঠিক ফিরে আসে।

---বেচারি নম্রতা!আই অ্যাম সরি।


নম্রতা প্রথমটায় ভাবতে পারেনি ব্যাপারটা এত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে?শেষে একজন বান্ধবীর কথা শুনে টেস্টটা করে বুঝতে পারল।তার সর্বনাশ হয়ে গেছে।এ ব্যাপারটা সে কেষ্টকে শোনাতে কখনোই চায়নি।কারণ ভূলটা শুধু কেষ্টর একা ছিল না। কিন্তু একবার পরামর্শ নেওয়া দরকার ভেবে খোঁজ করল।তখনি সে জানতে পারল,কেষ্ট তাকে কিছু না জানিয়েই কলকাতা চলে গেছে।ফোন করেও পেল না। নাম্বারটাই পাল্টে ফেলেছে।পুরো ব্যাপারটা নম্রতার কাছে পরিস্কার হতে সময় লাগল না। সেই রাতটা তার দুশ্চিন্তায় ঘুম এল না।কাঁদলোও অনেকক্ষণ।তারপর সকালেই একা,একা শহর ছুটল।একজন ভাল গাইনোর পরামর্শ নিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে।সেইজন্য দিন দশেক সে ভালই কষ্ট ভোগ করল।শারীরীক কষ্ট যতটা না পেল,তার থেকে মানসিকটাই বেশি।বাড়ির সবাই জানল,নম্রতার শরীরে মাসিকের গন্ডোগোল,তাই এই অবস্থা!


সে যাত্রায় তার পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় একমাস লেগে গেল।রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে।নাইন্টি পার্সেন্ট মার্ক কম না। সবাই তাকে ফিজিক্সে অনার্স করার পরামর্শ দিল।শহরের হোষ্টেলে থেকে পড়াশুনো করবে।

কিন্তু নম্রতা সিদ্ধান্ত নিল একদম সকলের বিপরীত।সামনের কলেজে ভর্তি হল। ইংরেজিতে অনার্স করবে।একটা অদম্য জিদ নিয়ে বসল।সে ইংরেজির টিচার হবে।এটাই তার একমাত্র ভবিষ্যত।


ওদিকে কেষ্ট প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হল।ফিজিক্সে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর তার হঠাৎ মনে হল,সিদ্ধান্তটা তার ভুল।আবার কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হল।তারপরও মনে হয়েছিল যে ম্যাথে চলে যায়।অনেক কষ্টে নিজেকে দমিয়েছে।এখন আর আগের মত পড়াশুনোয় মন বসে না। টিউশানিও ঠিকমত করে না। বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা বেড়েছে।দুটো বান্ধবীও জুটে গেছে।তাদের সাথে সব খেলায় মাতে!

ধাক্কা খেল ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্টের সময়।কোনরকমে পাশ মার্ক।নিজেই নিজের রেজাল্ট শুনে চমকে উঠল।দৌঁড়ে এল বাড়ি।খোঁজ শুরু করল নম্রতার।নম্রতা তার কোন ডাককেই আর গ্রাহ্য করে না।

একদিন ভর্তি বাজারে বাস স্ট্যান্ডের সামনে নম্রতা কষিয়ে একটা চড় মেরে দিল কেষ্টর গালে।সেই চড় নিয়ে গাঁয়ে বেশ কিছুদিন ফিসফাস চলল।

কেষ্ট ফিরে গেল কলকাতায়।দুবছর আর গাঁয়ে মুখ দেখাল না।তার বি.এস.সির রেজাল্ট যে ভাল হয়নি।বাড়ির সবাই জেনে গেছে।

এদিকে নম্রতা ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে বর্ধমান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল।

খবর পেয়ে পাগলের মত কেষ্ট তার সাথে দেখা করতে গেল।অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর নম্রতার দেখা পেল ।


কেষ্টর এতদিনে চেহারায় আমূল পরিবর্তণ এসেছে।মুখভর্তি দাড়ি।চোখে পাওয়ার চশমা।মাথার চুল এলোমেলো।তবু অবশ্য নম্রতার চিনতে অসুবিধা হল না।শক্ত গলায় বলে উঠল,

----কেন এসেছ?

----চড় খেতে।

----আমি আর হাত নোংরা করি না। এটা শহর।তার জন্য পুলিশ আছে।ওরাই যা করার করবে।

---তুমি আমায় বাঁচাও নম্রতা।না হলে আমি শেষ হয়ে যাব।

----কেউ কারো জন্য শেষ হয় না।ওরকম মনে হয়।

----আমারো একদিন সেরকম মনে হয়েছিল।আজ সে ভুল সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।আমি সত্যি বলছি,তোমাকে ছাড়া আমি শেষ হয়ে যাব।তুমি দেখতে পাচ্ছো না?শেষ হয়নি বলো?

---আমার সেসব দেখে কোন লাভ নেই।একদিন আমিও ভেবেছিলাম,তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তখন তোমাকেও অনেক ডেকেছিলাম।পাইনি।এখন আর কাউকে দরকার নেই আমার।

----আমার যে দরকার তোমাকে।সত্যি করে বলো তো নম্রতা, তুমি কী আমায় সত্যিই ভালবাসো না?

----না...না...না।হল?এবার রাস্তা ছাড়ো।


  নম্রতা পাশ কেটে চলে গেল।কেষ্ট অনেকক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইল।সে শুনেছে,যদি সত্যিই কেউ,কাউকে ভালবাসে একবার অন্তত পিছন ফিরে চাইবেই।নম্রতা তার জীবনে ফিরে না আসুক।ক্ষতি নেই।অন্তত ফিরে একবার চাক।তবেই সে বাকি জীবনটা জীবিত থাকবে।না!নম্রতা চলে গেল।একবারও চাইল না।

কেষ্ট ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে।তার সমস্ত শক্তি যেন অদৃশ্য কোন দানব শুষে নিল।

কতক্ষণ ওইভাবে পড়ে ছিল তার মনে নেই। হাসপাতালের বেডে চোখ খুলে দেখল নম্রতা তার পাশে বসে আছে।কেষ্টর হাতে সেলাইনের সূঁচ ঢোকানো আছে।তার কী হয়েছিল মনে নেই।


মনে করে লাভও নেই।তার পাশে এখন নম্রতা বসে আছে।ওর স্পর্শটুকুই এখন তার কাছে সত্য।বাকি সব মিথ্যে ।

নম্রতা কেষ্টর একটা হাত ধরে বলল,


----আমি কিন্তু মা হতে পারব না। আমাদের প্রথম ভুলের এটাই সাজা ধরতে পারো।

কেষ্ট অনেকদিন পর অল্প হাসল।তারপর নম্রতাকে সামনে আসার ইঙ্গিত করল।কেষ্ট তার কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠল,

----পৃথিবীটা দিন-দিন এমনই বিষাক্ত হয়ে পড়ছে।জন্মের ভার বয়ে লাভ কী?

যে কটা দিন আছি।একসাথেই কাটিয়ে দেব।


       ---------সমাপ্ত--------


Rate this content
Log in