Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Banabithi Patra

Tragedy Drama Classics

3  

Banabithi Patra

Tragedy Drama Classics

ভাঙনের পথ বেয়ে

ভাঙনের পথ বেয়ে

8 mins
1.6K


#ভাঙনের_পথ_বেয়ে

বনবীথি_পাত্র

.

অ্যালার্মটা কখন বেজে বেজে থেমে গেছে বুঝতেও পারেনি রঞ্জিনী । চোখ মেলেই বুঝতে পারল বেশ বেলা হয়ে গেছে । কাল রাতে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের খাতাগুলো দেখতে দেখতে অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছিল শুতে । আর শুলেই তো ঘুম আসছেনা , কত সাধ্যিসাধনায় তার দেখা মেলে । রান্নাঘর থেকে ঠুংঠাং বাসনপত্রের আওয়াজ আসছে , যাক্ রান্নার মেয়েটা তাহলে কাজে এসে গিয়েছে । ঘুম ঘুম চোখেই মোবাইলটা অন করে রঞ্জিনী । আর অন করার সাথে সাথেই চন্দ্রিলের মেসেজ , "ঘুম ভাঙলো ম্যাডাম ? আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কলকাতা পৌঁছাচ্ছি ।" ইস্ আজকেই এমন ঘুমিয়ে গেল রঞ্জিনী ।

!!!! চন্দ্রিলের ট্রেন 09.20 তে হাওড়া ঢুকবে , ওখান থেকে আসতে আরো একঘন্টা । মানে ওর পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে দশটা মতো বাজবে । চটপট কথাকলিকে একটা মেসেজ করে দেয় , শরীরটা ভালো লাগছে না বলে আজ আর কলেজ যাবে না । হাজিরা খাতায় যেন সি.এল.টা লিখে দেয় একটু ।

ঘড়িতে 9.10 বেজে গেছে , আর দেরি না করে রাতপোষাকের ওপর হাউসকোটটা চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে রঞ্জিনী । অবনী দিব্যি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছে আর খবরের কাগজ পড়ছে । ওর মধ্যে অফিস যাওয়ার কোন লক্ষণ-ই যেন নেই । বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে রঞ্জিনীর , তবে কি অবনী আজ অফিস যাবে না !!!!!

অবনীর সাথে রঞ্জিনীর সম্পর্কটা শীতল হতে হতে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁচেছে , যেখানে কথাবার্তা টুকুও নিতান্ত প্রয়োজন ভিত্তিক হয়ে গেছে । গত কয়েক বছরে দুজনের মধ্যে কটা কথা হয়েছে বোধহয় হাতে গুণে বলা যাবে । তবু দুজনে একসাথে বসবাস করে !!!!

এই বয়সে ছাড়াছাড়ি করে লোক হাসানোর থেকে এই বেশ আছে দুজনে । যে যার নিজের দুনিয়াতে ব্যস্ত , কেউ কাউকে অকারণ কৌতুহলে বিব্রত করে না । সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানে খুশি খুশি দম্পতির অভিনয়টা দুজনেই বেশ রপ্ত করে ফেলেছে এখন ।

অনেকদিন বাদে আজ উপযাচক হয়েই অবনীর সাথে কথা বলে রঞ্জিনী ।

অফিস নেই আজকে ?

পেপারের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে একবার ঘুরে রঞ্জিনীকে দেখে নিয়ে ছোট্ট উত্তর দেয় , হুম্ যাব ।

এরপর আর কিছু জিজ্ঞাসা করার মতো সম্পর্ক ওদের মধ্যে নেই ।

হাতে সময় ক্রমেই কমে আসছে । রান্নার মেয়েটাকে একটু তাড়া লাগিয়ে বাথরুমে ঢোকে রঞ্জিনী ।

বাথরুমের আয়নাতে পোষাকহীন নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে রঞ্জিনী । নাহ্ বয়স এখনো তেমন ছায়া ফেলতে পারেনি শরীরে। শরীরের প্রতিটা চড়াই-উৎরাই নিখুঁত-নিটোল সেই আগের মতো । একচল্লিশেও তার নির্মেদ শরীরটা এখনো নেশা ধরাতে পারে যে কোন পুরুষের চোখে । সুগন্ধী বডিশ্যাম্পু আর সাওয়ারের ঠাণ্ডা জলের ধারায় একটু সময় নিয়েই স্নানটা সারে রঞ্জিনী ।

রঞ্জিনী স্নান সেরে বেরতেই অবনী বাথরুমে ঢোকে । স্নান-খাওয়া সেরে আধঘন্টার মধ্যে অফিসে বেরিয়ে পড়ে অবনী । রান্নার মেয়েটা কাজ সেরে চলে যেতেই ফ্ল্যাটে একদম একা রঞ্জিনী । দ্রুত হাতে অগোছালো ফ্ল্যাটটাকে একটু গুছিয়ে নেয় রঞ্জিনী , তারপর নিজেকে সাজাতে বসে নিখুঁত হাতে ।

ততক্ষণে চন্দ্রিলের পরের মেসেজ এসে গেছে , " ম্যাডাম কপাল মন্দ হলে এমনটাই হয় , আজকেই ট্রেনটা আধঘন্টা লেট । আমার যে আর তর সইছে না ম্যাডাম "

নিজের মনেই হালকা হেসে ছোট্ট জবাব দেয় রঞ্জিনী , " বেশ হয়েছে " ।

চন্দ্রিলের সাথে আলাপের দিনটা আজ মনে পড়ছে খুব । সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছে তখন রঞ্জিনী , বারুইপুর থেকেই যাতায়াত করতো । জানলার ধারের জায়গা দখলের ঝগড়া দিয়ে আলাপটা হলেও সম্পর্কটা কখন তে অম্ল থেকে মধুর হয়ে গেছিল , টেরটিও পাওনি রঞ্জিনী ।বছর পাঁচ-ছয়েকের ছোট ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছেলেটাকে যে অতটা ভালোবেসে ফেলেছে , বুঝতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছিল রঞ্জিনী । ততদিনে বাড়ি থেকে অবনীর সাথে বিয়ের সমস্ত ঠিকঠাক হয়ে গেছে ।

সারাদিনের শেষে অনেকগুলো অলস বিকেল তখন কেটে গেছে চন্দ্রিলের সাথে । চন্দ্রিলকে যেদিন বিয়ের কথাটা জানায় , বেশ অবাক হয়েছিল ছেলেটা ।

আমি যে তোমায় ভালোবাসি ম্যাডাম , তুমি আমাকে ছেড়ে অন্যের হয়ে যাবে !!!!

বোকা বোকা হাসিতে সেদিন চন্দ্রিলকে এড়িয়ে গেছিল রঞ্জিনী ।

অবনীর সাথে সংসার জীবনের শুরুর দিনগুলোতেও চন্দ্রিল পাশে ছিল একজন ভালো বন্ধুর মতো ।

অবনী মানুষটাই যেন একটা কাজ আর প্রয়োজনের ছন্দে বাধা । কোনকিছুর এতটুকু বেনিয়ম নেই । ভালোবাসা , কাছে আসা এগুলোও যেন কর্তব্যের নিরিখে । কিছুদিনের মধ্যেই হাঁফিয়ে উঠেছিল রঞ্জিনী । নিয়মবন্দী জীবনে খোলা জানলা হয়ে রঞ্জিনীর কাছাকাছি এসেছে চন্দ্রিল ।

রঞ্জিনীর অনুরোধেই চন্দ্রিল সেবার বকখালি যেতে রাজি হয়েছিল । কলেজের এক্সকারশন ট্যুর বলে তিনটে দিন ম্যানেজ করতে কোন অসুবিধা হয়নি রঞ্জিনীর ।

বকখালির সেই ছোট্ট কটেজের ঘরে প্রথম রাতেই রঞ্জিনীর শরীরে আগুন জ্বেলেছিল চন্দ্রিল । সেই আগুনে পুড়তে পুড়তে চন্দ্রিলকে আরো আঁকড়ে ধরেছিল রঞ্জিনী । সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল চন্দ্রিলকে । ফেরার পথে হাওড়া স্টেশনে নেমে রঞ্জিনীকে কানে কানে বলেছিল , ভালো থেকো ম্যাডাম । নিজেকে ভালো রেখো , ভালো রেখো বুকের তিলটাকেও । কটমট করে চোখ পাকিয়ে ঘুরে তাকিয়েছিল রঞ্জিনী , অসভ্য একটা !!!!

ফিরে আসার পরপর-ই কিছু ঘটনা রঞ্জিনীর জীবনটাকে কেমন যেন এলোমেলো করে দিয়েছিল ।

ফিরে এসেই ব্যাঙ্গালোরে চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা পেয়েছিল চন্দ্রিল । একসপ্তাহের মধ্যে কলকাতার পাট গুটিয়ে চন্দ্রিল পাড়ি দিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর । যাওয়ার আগে একদিন ঘন্টা খানেকের জন্য দুজনের দেখা হয়েছিল ওদের । অনেক কথা বলার ছিল , তবু যেন কোন কথাই বলা হয়ে ওঠেনি সেদিন । পৌঁছে ফোন করেছিল চন্দ্রিল , তারপর ও আরো দু-একবার । ততদিনে রঞ্জিনী পুপুনের আসার খবর জেনে গেছে । এমনি-ই শারীরিক অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল , তখনই জানতে পেরেছিল খবরটা ।

পজিটিভ রিপোর্টটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিল রঞ্জিনী । যে আসছে সে কার , অবনী না চন্দ্রিলের !!!!

তখন তো মোবাইলের যুগ ছিলনা , ইচ্ছা করলেও চন্দ্রিলকে খবরটা দিতে পারেনি রঞ্জিনী । অপেক্ষা করেছিল চন্দ্রিলের ফোনের জন্য । অপেক্ষাটা কখন যেন ধীরে ধীরে উপেক্ষায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল , চন্দ্রিলের ফোন আসেনি ।

এরপর পুপুন কোলে এসেছে , সম্পূর্ণ নতুন একটা জীবন তখন রঞ্জিনীর । ছোট্ট পুপুনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যতবার দেখতে গেছে রঞ্জিনী , চন্দ্রিল বা অবনী কাউকেই যেন ঠিকভাবে খুঁজে পায়নি ।

ইস্ আজ তো পুপুনকে সকাল থেকে একবার ও ফোন করা হয়নি । গতকাল থেকে কিছুতেই ফোনে যোগাযোগ করতে পারছে না পুপুনের সাথে । হয় স্যুইচড অফ নাহলে নট রিচেবল্ । কদিন ধরেই মেয়েটার মুড অফ রয়েছে মনে হচ্ছে , কি হয়েছে তাও তো বলে না । এতো অভিমানী মেয়েটা !!!!

ছোট থেকেই হোস্টেলে বড় হওয়া মেয়েটাকে আজও ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনি রঞ্জিনী । আগে ছুটিতে বাড়ি এলে মা-মেয়েতে তবু দুটো কথা হতো । এখন তো কলেজে উঠে হালচাল-ই আলাদা । বাড়ি এলেও সারাদিন মোবাইল আর ল্যাপটপেই ব্যস্ত থাকে । কিছু বলতে গেলেই ট্যাকস ট্যাকস করে শুনিয়ে দেয় দু-চার কথা । "আমি আর ছোটটি নেই বুঝলে , আমার নিজের একটা জগৎ আছে । আমাকে আমার মতো থাকতে দাও না প্লিজ......।"

রঞ্জিনীর বড্ড আফশোষ হয় , ভালো মা হতেও পারলো না এ জীবনে ।

পুপুনের মোবাইল স্যুইচড অফ বলছে । মনটা অকারণে খচখচ করে ওঠে রঞ্জিনীর , কি যে হলো মেয়েটার !! যতই হোক মায়ের মন , একটুতেই বড় দুশ্চিন্তা হয়। বার দুয়েক চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেয় রঞ্জিনী ।

ঘড়ির কাঁটা দশটা পনের ছাড়িয়ে কুড়ির দিকে । হাতে আর সময় নেই , চটপট রেডি হয়ে নিতে হবে । চন্দ্রিলের পৌঁছানোর সময় আর হয়ে আসছে ।

আলমারী খুলে অনেক ভেবে ভেবে জংলী ছাপ পিওর সিল্কটাই বের করলো রঞ্জিনী ।

সেবার ও একটা জংলী রঙের শাড়ি পড়েছিল । চন্দ্রিল বলছিল , " জংলী আবরণ সরিয়ে তোমায় ছুঁয়ে যাওয়ার একটা মাদকতা আছে জানো তো ম্যাডাম । কেমন একটা আদিম গন্ধ পাই যেন তোমার গভীরতায় । " তারপর-ই সব বাধা দূরে সরিয়ে চন্দ্রিল পৌঁছে গেছিল গভীর থেকে আরও গভীরে । তিরেতিরে ছোট্ট নদীটির মতো বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল রঞ্জিনী আর আরও শক্ত করে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছিল চন্দ্রিলকে ।

নয় নয় করে উনিশ বছর আগের কথা , তবু এখনও মনে পড়লে যেন শিরশিরে সুখ অনুভব করে রঞ্জিনী ।

নিজেকে আর একবার আয়নায় দেখে নেয় রঞ্জিনী । সিঁথির সামনের রূপোলি চুলটা চিরুণী করে চুলের ভেতর লুকিয়ে দেয় কায়দা করে ।

এতবছর পরে চন্দ্রিল কি আর সেই উত্তেজনা অনুভব করবে , কে জানে !!!!

দীর্ঘ এতোদিন পর চন্দ্রিলের ফিরে আসাটাও বেশ আশ্চর্য । বছর খানেক আগে স্যোশাল মিডিয়াতে পুরনো বন্ধুদের খুঁজতে খুঁজতেই একদিন চন্দ্রিলকেও খুঁজে পেয়েছিল রঞ্জিনী । নিতান্ত-ই কৌতুহল বশতই চন্দ্রিলকে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠিয়েছিল সেদিন , প্রায় সাথে সাথেই আবেদনে সাড়া মেলে ।

সাথে ছোট্ট মেসেজ , তুমি কেমন আছো ম্যাডাম ?

ছোট্ট একটা মেসেজেই যেন রঞ্জিনীর এতবছরের জমানো অভিমান ফিকে হয়ে গিয়েছিল মুহুর্তে ।

উনিশ বছর আগে নিতান্ত বাধ্য হয়েই রঞ্জিনীর সাথে যোগাযোগ রাখেনি চন্দ্রিল । রঞ্জিনীকে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে সুখে সংসার করার জন্যই হারিয়ে গেছিল সেদিন । তবু নাকি একটা দিনের জন্যও ভুলতে পারেনি সে তার ম্যাডামকে । যদি কখনো ম্যাডামের ডাক পায় , সেই আশাতেই অপেক্ষা করে ছিল এতগুলো বছর ।

আর বেশি কথার প্রয়োজন হয়নি । রঞ্জিনীর একাকিত্বের জীবনে আবার জায়গা করে নেয় চন্দ্রিল । একটু একটু করে পুরনো সম্পর্কটা আবার গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে । অফিসের কাজে চন্দ্রিল কলকাতা আসছে শুনে দেখা করার ইচ্ছাটা প্রথম রঞ্জিনীই জানিয়েছিল ।

একদিন পর শুধু দেখা করবো ম্যাডাম ? চন্দ্রিলের কথার ইঙ্গিতটুকু বুঝে বেশ লজ্জাই পেয়েছিল রঞ্জিনী ।

প্রথমে রাজি না হলেও শেষ অবধি চন্দ্রিলের আবদার মেনে নিয়েছে রঞ্জিনী । এবার আর বাইরে কোথাও না , নিজের ফাঁকা ফ্ল্যাটেই নির্জন দুপুরটুকু কাটাবে চন্দ্রিলের সাথে ।

কলিংবেলটা বাজতেই যেন হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দ্রুত হয়ে গেলো । নিষিদ্ধতার উত্তেজনায় এ এক অন্য অনুভূতি । বহুবছর পর নির্জনে মুখোমুখি হবে চন্দ্রিলের সাথে । চন্দ্রিল কি এখনো তেমনি দামাল-দস্যু আছে ?

ভাবতে ভাবতে দরজা খুলেই অবাক ------ পুপুন !!!!??????

কোনো খবর না দিয়ে এই অসময়ে !!!! একি বিধ্বস্ত লাগছে মেয়েটাকে ?

ঘরে ঢুকেই হাতের ব্যাগ ফেলে রঞ্জিনীকে জড়িয়ে পুপুন হঠাৎ কাঁদতে শুরু করে । প্রথমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে , তারপর পাগলের মতো । বিশ্বাস করো , আমি ওকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম, আমাকে সুখী সংসারের স্বপ্ন দেখিয়েছ, আমি তো ছোট থেকে কখনও তোমাদের সাথে থাকতে পাইনি; একটা সুখী সংসারের লোভ দেখিয়ে আমায় শেষ করে ফেলে এখন বলছে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি বেঁচে থাকতে চাইনা আর, আমি মরে যাবো, শুধু তোমাকে একবার দেখতে ইচ্ছা করছিল বলে.....

পুপুন তখনো এটাসেটা বলেই চলেছে । রঞ্জিনীর তখন ডানা ভেঙে মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা । তবু মেয়েকে শক্ত করে আঁকড়ে আছে বুকের মধ্যে । ওর এই অবস্থার জন্য কোথায় যেন সে নিজেও দায়ী । ছোট থেকে যদি ভালোবাসা দিয়ে কাছে আঁকড়ে রাখতো মেয়েটাকে , আজকের দিনটা হয়তো দেখতে হতো না এইভাবে ।

একটু সামলে পুপুনকে জোর করে বাথরুমে ফ্রেশ হতে পাঠালো ।

রঞ্জিনীর মনে পড়ছে ঠাকুমা একটা কথা বলতো , "ছেলেরা ভোগ করে আর মেয়েদের মুখ পোড়ে "।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালেটা হাতে সোফায় বসে আছে পুপুন , চোখ-মুখের জলটাও মোছেনি ।

রঞ্জিনীই জানতে চায় , কে ছেলেটা ? তোমার বন্ধু ?

---না আমার থেকে বাইশ-তেইশ বছরের বড়ো । হাত বাড়িয়ে সেন্টার টেবিল থেকে মোবাইলটা নেয় পুপুন । একটা ছবি বের করে ধরিয়ে দেয় রঞ্জিনীর হাতে ।

চমকে ওঠে রঞ্জিনী , চন্দ্রিল !!!!!!!!!!

সময় যেন থমকে যায় কিছুক্ষণের জন্য । এমনটাও কি সম্ভব ?

ফোনটা বাজছে , চন্দ্রিলেরই ফোন । ধরবে না ভেবেও ফোনটা রিসিভ করে রঞ্জিনী ।

---জ্যামে আটকে গেছিলাম ম্যাডাম , আর দশমিনিট অপেক্ষা করো । আমি এসে গেছি ।

----হুম এসো কথা আছে । নিজের কানেই নিজের গলাটা কেমন বরফ শীতল লাগে রঞ্জিনীর ।

পুপুনের জন্মের পরেপরে যেমন করে ওর মুখে ওর বাবাকে খুঁজতো, আজ উনিশ বছর পর ঠিক তেমন ভাবে পুপুনকে দেখে রঞ্জিনী ।

ওর মুখে রঞ্জিনী আজও খুঁজে পায়না ওর পিতৃপরিচয়।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে উঠে যায় পাশের ঘরে ।এখনি চন্দ্রিল এসে পড়বে , তার আগে অবনীকে একটা ফোন করে বাড়ি আসতে বলতে হবে। মেয়ের জীবনের সিদ্ধান্তে ওর ও তো কিছু বলার থাকতে পারে.....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy