Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Romance

3.2  

Sanghamitra Roychowdhury

Romance

একটি রোমান্টিক প্রেমের গল্প

একটি রোমান্টিক প্রেমের গল্প

7 mins
20.3K


ডিভোর্সের নোটিসটা হাতে পেয়েই চমকে উঠেছিল সাগরিকা। অফিসের ঠিকানায়? এর মানেটা কি? কেন চায় সিদ্ধার্থ ডিভোর্স? কি তার অপরাধ? অফিস থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেই ফোন করে সিদ্ধার্থকে, ক্যান্টিনের করিডোরে দাঁড়িয়ে। ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেলো, ধরলো না সিদ্ধার্থ। ক্যান্টিনটা এসময় পুরো ফাঁকা থাকে, লাঞ্চের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে ক্যান্টিন কর্মীরা। এখানে এখন কেউ আসবে না, সাগরিকা জানে সেটা।


একটা চেয়ার টেনে নিয়ে সাগরিকা দু'হাতে কপালের রগ টিপে ধরে টেবিলে কনুইয়ের ভর দিয়ে বসে আছে সাগরিকা। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে সাগরিকার। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলো ওখানেই, তারপর ক্যান্টিন থেকেই ডিপার্টমেন্টে গিয়ে খবর দেয় ক্যান্টিনের ম্যানেজার। সাগরিকাকে অফিস থেকেই কলিগরা হসপিটালে নিয়ে আসে অ্যাম্বুলেন্সে করে। সব দায়িত্ব অফিস থেকেই নিয়েছে। ডাক্তার বলেছে, "অতিরিক্ত স্ট্রেস মানসিক ও শারীরিকভাবে পড়েছে, এই সময়ে। আর তাই এক সপ্তাহের কমপ্লিট বেড রেস্ট।" ভালোই হোলো মনে মনে ভাবলো সাগরিকা।


নিজের কেবিনের বেডেই শুয়ে শুয়েই সাগরিকা আবার গভীর চিন্তায় ডুবে যায়। অন্যমনস্ক ছিলো বহুসময়। হুঁশ যখন ফেরে দেখে, নিজের কেবিনে হাসপাতালের স্টাফ মেয়েদুটি ইতস্তত করছে, কারণ ওরা বেডসেট পাল্টাবে, আর তখনও শুয়ে আছে সে। সাগরিকা উঠে বসলো নিজেই, বেডের ওপর। তারপর মেয়েদুটিই ওকে ধরে ধরে ওকে জানালার পাশে গদি আঁটা ইজিচেয়ারে বসিয়ে দিলো। কাঁচের জানালা দিয়ে শরতের ঝকঝকে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সাগরিকা। মেয়েদুটি কাজ সেরে যাবার সময় সাগরিকাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু সাগরিকা আরেকটু সময় বসেই থাকতে চেয়েছে। ওরা বলে গেছে, অসুবিধা লাগলে যেন ঐ ইজিচেয়ারের হাতলে লাগানো বেলটা বাজিয়ে ওদের সাথেসাথে ডাকে। 


সাগরিকা কিছুতেই মানতে পারছিলো না সিদ্ধার্থর এইরকম একটা ডিসিশন। মাথা কিছুতেই কাজ করছিলো না। এটাই সিদ্ধার্থ চায়? সেই সিদ্ধার্থ, যার সাথে একবছর নয়, দু'বছর নয়, পাক্কা তেরোটা বছর কাটিয়েছে সাগরিকা। শুধু দু'জন দু'জনের থেকে দূরে থাকতে হবে বলে, দু'জনেই কতো ভালো ভালো অফার ছেড়ে দিয়েছে। সাগরিকার সব হিসেব যেন কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সাগরিকা ভাবতেই চাইছে না এতোকিছু, কিন্তু তাও স্মৃতির মেলা সেই ঘুরে ফিরে সাগরিকার অন্তরমহলটাকে গ্রাস করে নিচ্ছে।


যখন প্রথম দেখা সিদ্ধার্থর সাথে, তখন সাগরিকা অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্সের ফাইনাল ইয়ারে, ক্লাস ততদিনে প্রায় শেষ। দু'একটা দিন কলেজে যাওয়া বাকী, ফর্ম ফিলাপের আগে, সামনেই বিকম অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা তখন কড়া নাড়ছে। সাগরিকা লাইব্রেরীতে গিয়েছিলো বইপত্র ফেরত দিতে আর লাইব্রেরী কার্ড সারেন্ডার করাতে, কারণ ওটাই নিয়ম, কলেজের শেষ পরীক্ষার আগে। তখন সিদ্ধার্থও কী একটা বই খুঁজতে এসেছিলো, ইকনোমিক্সের তরুণ হ্যাণ্ডসাম প্রফেসর সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত। এই ভালো লাগালাগির ব্যপারটা বোধহয় দুই-তরফেই একসাথেই ঘটেছিলো।


তারপর বিকম শেষ করে এমবিএতে ভর্তি হয়েছে সাগরিকা, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে, এমবিএ শেষ হতেই চাকরি, মোটা মাইনেতে। সাগরিকাও কোলকাতাতেই থাকতে চেয়েছে, অন্যশহর ছেড়ে। সিদ্ধার্থ তখন বয়সে তরুণ, দেখতে হ্যাণ্ডসাম, সম্মানজনক চাকরিতে, কাজেই প্রফেসর সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত কলেজজোড়া তরুণীদের হার্টথ্রব। আর সপ্তাহের শেষদিনে দেখা হলে সাগরিকা চ্যাটার্জি তাই নিয়ে সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তর লেগপুলিং করতেও ছাড়তো না। পাল্টা রসিকতায় সিদ্ধার্থ বলতো, "তবে ঠিক আছে, আমিও অ্যানাউন্স করে দিই, যে সাগরিকা চ্যাটার্জি নামের এই কলেজের প্রাক্তনী, দারুণ স্টুডেন্ট আর তেমনি ডাকসাইটে সুন্দরী, এমএনসির চাকুরে, তার পারমিশন নিয়ে নিই, আর একটা প্রেম করা যাবে কিনা?" তারপর কফি হাউজ কাঁপিয়ে, লোকজনকে চমকে দিয়ে দু'জনেই ফেটে পড়েছে অনাবিল হাসিতে।


দেখতে দেখতে বছর ঘুরেছে, একের পর এক, গাঢ় হয়েছে প্রেম। দশবছর চুটিয়ে প্রেম করে দুজনেরই মনে হয় এবার বিয়েটা সেরে ফেলা দরকার। দু'বাড়ি থেকেই মত ছিলো এই বিয়েতে। অবশ্য মত না থাকার কোনো কারণও ছিলো না। এক শুভদিনে শুভলগ্নে শুভকাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলো। সাগরিকা চ্যাটার্জি হোলো সাগরিকা চ্যাটার্জি সেনগুপ্ত। দু'জনের সংসারে ছিলো শুধুই আনন্দ আর অপরিসীম ভালোবাসা। তিনবছরের মাথায় সব জটিলতা কাটিয়ে সেই ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে আসছে ওদের প্রথম সন্তান। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। সিদ্ধার্থর পদোন্নতি হোলো, ঝাড়গ্রাম সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল। সংসারে খুশীর জোয়ার। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাসের খবর শুধু যে তিনিই রাখেন।


বজ্রাঘাতের মতো এই খবর। সাগরিকার দুনিয়া উজাড় হয়ে যেতে বসেছে। সাগরিকা এখনো কিছু বলতে পারে নি কাউকে। অফিস থেকেই খবর দেওয়া হয়েছে সিদ্ধার্থকে, ঝাড়গ্রামে, সিদ্ধার্থর কলেজে। তবে সাগরিকা জানে না, সিদ্ধার্থর কাছে সে খবর পৌঁছেছে কিনা। সিদ্ধার্থর মা বাবা গত হয়েছে বছর খানেক, আর কেউ এমন নেই এখানে শ্বশুরবাড়ীর সম্পর্কে, যাকে এই মর্মবিদারক কথাটি সাগরিকা জানাতে পারে। সাগরিকার বাবা মাও এখন ভাইয়ের সংসারে, সাত সাগর পেরিয়ে, দূরদেশে, মেয়ের সৌভাগ্যের উদযাপনে ব্যস্ত।


সবই তো ঠিক ছিলো, ঝাড়গ্রামে গেছে সিদ্ধার্থ মাত্র কয়েকমাস। কাজের দায়িত্ব বেড়েছে, সপ্তাহান্তে ফেরে, যাতায়াতের দূরত্ব নয়, কোয়ার্টারেই থাকে তাই। সাগরিকা কাজের লোকজনের সাহায্য নিয়েই থাকে কোলকাতায়, নিজের চাকরিটাও আছে। এতোকিছুর মধ্যেও তো কোনোদিন ভালোবাসার এতোটুকু অভাব বোধ হয় নি। তবে হঠাৎ কি এমন হোলো? কোনো নতুন সম্পর্ক? আর ভাবতে পারছে না সাগরিকা। বেল বাজিয়ে নার্সকে ডাকলো। বেডে শোওয়ার পরে সাগরিকার পেটে কী হোলো? কুইকেনিং, বাচ্চা প্রথমবার নড়লো, সাগরিকার পেটে। নার্সকে বলতে, হেসে সে অভিনন্দন জানালো। কিন্তু সাগরিকা তো ঠিক ততটা উচ্ছ্বসিত হতে পারছে না। মিস্ করছে ও সিদ্ধার্থকে, প্রবলভাবে। বুকের ভেতরটা উথালপাথাল!


কলিগরাই এসেছিলো এক সপ্তাহ পরে সাগরিকাকে বাড়ীতে পৌঁছে দিতে। সিদ্ধার্থর সাথে কোনো যোগাযোগ করা যায় নি। শেষপর্যন্ত ঝাড়গ্রামে গিয়ে কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধার্থ দু'মাসের জন্য ছুটি নিয়েছে। চার্জ হ্যাণ্ডওভার করে আগের সপ্তাহেই চলে গেছে। কোয়ার্টারও ছেড়ে দিয়েছে। ছুটিতে যাবার আগেই। সাগরিকা মনটাকে শক্ত করেছে। মনে মনে গোছাচ্ছে নিজেকে। ট্যাক্সি নিয়ে সোজা বেহালার বাড়িতে। বাড়ির গেটে তালা, ঠিক সাগরিকা সেদিন অফিসে যাবার সময় যেমন ভাবে বন্ধ করে গিয়েছিলো। সাগরিকার ব্যাগেই চাবিটা থাকে সবসময়। সিদ্ধার্থর কাছেও থাকে ডুপ্লিকেট চাবির সেটটা।


সাগরিকার ব্যাগ থেকেই চাবিটা নিয়ে ওর কলিগ মৌসুমী আর জয়ন্তই সেটা দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢোকে। ওদের পেছনে সাগরিকা। সাগরিকাকে পৌঁছে দিয়ে ওর কলিগরা কিছুক্ষণ বসে, কাজের লোকেদের ফোন করে ডেকে দিয়ে চলে গেলো। ঘরে ঢুকে থেকেই সাগরিকার বুকটা কেমন ধুকপুক করছে। ঘরে ঢুকে দেখেছে, ঘরের জিনিসপত্র যেটা যেখানে যেমন রাখা ছিলো তেমনি আছে। কোথাও কোনো ছন্দপতন নেই। কোথাও কিছু দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই সাজানো গোছানো সংসারটাই ভেঙে যেতে চলেছে। কেন কীভাবে এরকম হয়ে গেলো হঠাৎ? কোর্টে তো নিশ্চয়ই আসবে সিদ্ধার্থ। তখনই তো জানতে পারবে কি অপরাধে এমন শাস্তি দিতে চায় তাকে? না জানা পর্যন্ত শান্তি হবে না। কিন্তু কী আশ্চর্য! কোর্টেও এলো না সিদ্ধার্থ। দু'মাসের ছুটিও শেষ হয়েছে সিদ্ধার্থর, কিন্তু ঝাড়গ্রামেও সে ফেরে নি। সাগরিকা ভাবে, কেমন করে যেন তার একান্ত আপন মানুষটা তার জীবন থেকে হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে গেলো।

***********

ধীরে ধীরে সব জানাজানি হয়েছে। বাবা, মা, ভাই,

আত্মীয়-স্বজন, কলিগরা, বন্ধুবান্ধব...... সবাই বলেছিলো সাগরিকাকে, ও যেন সিদ্ধার্থকে ভুলে যায়। পারে নি সাগরিকা। চায়ও নি। নতুন করে সে জীবন শুরু করেছে ঠিকই, বাঁচতে তো হবে, কিন্তু সিদ্ধার্থর স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই। এভাবেই কেটে গেছে আরো সাত-সাতটি বছর। আজ সিদ্ধার্থ আর সাগরিকার ছেলে রাহুলের জন্মদিন। ছুটি নিয়েছে সাগরিকা আজ, ছেলের সাথেই সারাদিন থাকবে। সকাল থেকে ফোনের পর ফোন। ফুলের তোড়াতে আর উপহারে ভর্তি রাহুলের ঘর, জমজমাট খুশী সন্ধ্যেবেলার ছোট্ট ঘরোয়া পার্টিতে। আটটা বাজতেই রাহুলের বন্ধুরা সব ফিরে গেছে, সবাই ছোট তো! কাজের লোকজনদেরও ছুটি দিয়ে দিলো সাগরিকা, সবাই ক্লান্ত, বিশ্রাম দরকার সবারই। আজ সারাদিনের ব্যস্ততায় এখনো পর্যন্ত খবরের কাগজটাও দেখার সময় পায় নি সাগরিকা।


রাহুল ঘুমিয়ে পড়েছে, সারাদিনের হুটোপুটিতে ক্লান্ত ছেলেটা সাগরিকার ঘরেই শুয়ে পড়েছে। ছেলের মাথায় চুলে বিলি কাটতে কাটতে এতোক্ষণে একটু ফাঁকা সময় পেয়েছে সাগরিকা। খবরের কাগজটা খুলেছে সাগরিকা। তৃতীয় পাতার কোণটায় চোখ পড়তেই চমকে ওঠে ও। এসব কি লিখেছে? ক্যান্সার ফাইটারদের জন্য একটি সংগঠন, ফাণ্ড, বিশাল তার কর্মকাণ্ড, গোটা দেশজুড়ে। সামিল অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা শিবির থেকে শুরু করে ক্যান্সার ফাইটারদের পরিবারের সদস্যদের মনোবল বাড়ানোর ওয়ার্কশপ ইত্যাদি...... সংগঠনের মূল অফিস ভূপালে। তবে সারাদেশেই শাখা রয়েছে, এমনকি কোলকাতাতেও। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত সমাজসেবায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত।


দু'চোখ জলে ভরে ওঠে সাগরিকার। আজই রাত ন'টায় টিভিতে কোলকাতারই এক চ্যানেলে একটা লাইভ ইন্টারভিউ রয়েছে সিদ্ধার্থর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাগরিকা দেখে, ন'টা আট হয়ে গেছে। ঝটিতি বিছানা থেকে নেমে রিমোটটা হাতে নিয়ে টিভিতে নির্দিষ্ট চ্যানেলটি চালায় সাগরিকা, তার হাতটা থরথর করে কাঁপছে, গলা বুজে আসছে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সাগরিকা অপলক তাকিয়ে টিভির পর্দায়, সিদ্ধার্থর দিকে, সেই চওড়া কপাল, সেই মোটা ফ্রেমের চশমার পিছনে উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত দু'টো চোখ, টিকলো নাক আর তার পর থেকে মুখের নিম্নাংশ কালো একটা কভারে ঢাকা। সাগরিকা উত্তেজনায় একহাত মুঠো করে বিছানার চাদর খামচে ধরেছে।


ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে সিদ্ধার্থ বললো, "আমার আজ একজনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আছে। আমি আমার স্ত্রী সাগরিকার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, অনেক কাঁদিয়েছি, আজ আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাই তার কাছে। সে প্রতি মুহূর্তে বিরোধিতা করেছে আমার সিগারেট খাওয়ার। মুখ থেকে টেনে নিয়ে ফেলে দিয়েছে সিগারেট, কিন্তু আমি শুনি নি তার কথা। ফল পেয়ে গেলাম, চেনস্মোকার আমি, ক্যান্সারে আক্রান্ত হলাম, আমাদের সন্তান আসছে তখন। কী করে শোনাতে পারতাম ওকে এই দুঃসংবাদ? ওকে একা ছেড়ে দিলাম, আমার বিশ্বাস ছিলো, ও ঠিক পারবে আমাদের সন্তানকে নিয়ে একলাই এগোতে। ওকে মানসিকভাবে শক্ত করার জন্য সরে গেলাম ওর জীবন থেকে, সব ছেড়েছুড়ে, দূরে দক্ষিণ ভারতে, সামান্য সঞ্চয় সঙ্গে করে। দীর্ঘ সে লড়াই! মুখে গলায় বাসাবাঁধা শত্রুকে ধ্বংস করার জন্য। মুখের অর্ধেকটা বাদ হয়ে গেলো, বীভৎস গলার ফুটো, তারপরও জিতে গেলাম লড়াইটা, সাগরিকার আর আমাদের অনাগত সন্তানের ভালোবাসার টানে।" এর পরের কথাগুলো আর সাগরিকার কানে ঢুকেছিলো না......! "সিদ্ধার্থ! এতো ভুল বুঝেছিলো সবাই তোমায়! আমার তো আশাটা ছিলো তোমার আসার.... প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে, গত সাত বছর ধরেই", ছেলে রাহুলকে জড়িয়ে ধরে সাগরিকার বুকভাঙা কান্নায় রাহুলের জামা ভিজে গেছে।


রাত প্রায় বারোটা, ছেলের পাশেই সাগরিকা শুয়ে আছে, ঝড়ের পরের শান্ত প্রকৃতির মতো। মোবাইল বাজছে, অচেনা নাম্বার থেকে, এতো রাতে আর কে হবে? উঠে বসে ফোনটা ধরলো সাগরিকা। ওপাশে সিদ্ধার্থ, "যদি ক্ষমা করতে পারো, তবে আবার......"

শেষ করতে দিলো না সাগরিকা, "এক্ষুণি ফিরে এসো, এক্ষুণি চাই তোমাকে.....!" বাকীটা ঢাকা পড়েছে কান্নায়। রাহুলকে ঘুম থেকে টেনে তুলে সাগরিকা ফোনটা ছেলের হাতে ধরিয়ে দেবার আগে বললো, "আজ ছেলের জন্মদিনের সেরা উপহারটা নিজেই দাও ছেলেকে"! হতভম্ব রাহুল ফোন কানে চেপে ধরে, ছেলের মুখে হাসি, চোখে জল, "থ্যাঙ্ক ইউ বাবা, লাভ ইউ বাবা, এক্ষুণি বাড়ীতে চলে এসো বাবা....!" আর পারলো না রাহুল, ডুকরে কেঁদে উঠলো।


সাগরিকা ছেলেকে বুকে চেপে ধরে, ফোনটা নিয়ে সিদ্ধার্থকে বলে, "আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি......!"


ফোনের দুই প্রান্তের দুই প্রেমী কথা হারিয়েছে, কিন্তু প্রেম যে কখনো হারায় না, প্রেম অবিনশ্বর!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance