ব্যর্থ কোকিল
ব্যর্থ কোকিল
জান মা সেদিনও এরকম রজনী নেমেছিল
এমন প্রশান্ত রজনী;
স্নিগ্ধ সমীরণ বয়ে চলেছিল আর দূর আকাশে হাসছিল বাঁকা চাঁদ।
সানন্দে নেমেছিলাম আমি তিলোত্তমার পথে,
এমন মধুর রজনীতে কেমন মায়াবী মনে হয় তিলোত্তমাকে।
হেঁটে চলেছিলাম আমি কানে কোকিলের কুহু নিয়ে
কত শান্ত হয়েছে তিলোত্তমা এখন তবু কেমন নির্ভয়ে
ডেকে চলেছে অক্লান্ত কোকিলটা;
কেউ কি শুনতে পাচ্ছে নাকি আমার কানেই বাজছে ওই মধুর বাণী?
কতই বা রাত হয়েছে পথের ঘড়িটা জানান দিল মাত্র বারোটা
এখন তো তিলোত্তমার গোধূলি বেলা
কিন্তু এদিকের বক্ষটা বেশ নিশ্চল হয়ে আছে তিলোত্তমার
বোধ হয় বেশ শান্তিতে নিদ্রায় পারি দিয়েছে।
আমি কিন্তু বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করেছ
এমন বিজনকালে এরকম মায়াবী পরিমণ্ডল আর উষ্ণ করে তুলছে আমায়-
দীপের ওই সুদক্ষ বাহু জোড়ার স্পর্শ কিছুতেই মুছতে পারছি না,
এইতো কিছুক্ষন আগেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে লবণের স্বাদ নিয়েছি
নিজের বুকের ওপর ওর বলবান বাহু গুলি নিয়ে ভেসে গেছি অজানা দেশে
ওর উগ্র সৌরভ এখনো ভরিয়ে রেখেছে শরীরকানন
মনভ্রূণে গেঁথে দিয়েছে ওর ভালবাসার বীজ।
প্রথমবারের এমন মিলনকালের মত আর অগণিত পূর্ণিমার পণ করে এসেছি ওর কাছে,
থেকে থেকে বেজে উঠছে তোমার দুশ্চিন্তা
ওই ব্যাগের মধ্যে রাখা আধুনিক এর মধ্যে
না আজ আর আধুনিকতা নয় আজ আমি ভীষণরকম সেকেলে
যে বহ্নিতে আমি মনকে পুড়িয়ে এসেছি সে আমাকে ঐতিহাসিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে
তাই আজ তোমায় একটু ভাবাব মা কারন
আজ থেকে এই পাখি তোমাদের ছাড়াও আরেক পিঞ্জরায় বন্দি-
আমার শরীর আমার সাথে চললেও মন আমি সেই পিঞ্জরায় সপে এসেছি।
এইতো এসে পড়েছি তোমাদের কাছাকাছি
তিলোত্তমা আমায় কেমন বয়ে নিয়ে চলেছে
এখনো কানের মধ্যেই কোকিলের কুহু বেজেই চলেছে।
হটাৎ এমন গাঢ় তিমির নেমে আসল কেন মা?
চোখের সামনে শুধুই কৃষ্ণরাশি ভেসে উঠছে কেন-
আমি কোন অতলে হারিয়ে যাচ্ছি যার কুল নেই কিনারা নেই
কোথা থেকে দানবসম কটি করাল এসে পড়েছে আমার ওপর
আমি পালাতে পারছি না সম্মুখ পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে
আমাকে জাপটে ধরেছে ওরা, কি অসীম শক্তি
কেমন ভাবে টেনে নিয়ে চলেছে আমাকে অন্ধকারের দেশে
আমার শরীর থেকে শোণিতধারা বেরিয়ে পড়েছে
রাঙিয়ে দিয়েছে সে তিলোত্তমার শান্ত,নিশ্চল বক্ষ
কি নিষ্ঠুর সেই ক্ষুধিত নখর গুলি- হাজার টা বন্যকেও তারা হার মানায়;
দীপের স্পর্শে তো আমার শরীর এমন ব্যাথা অনুভব করেনি
এক মধুর স্বপ্নে আবিষ্ট হয়ে ওকে গ্রহণ করেছিলাম
প্রতি মুহূর্তে আমার লোমকূপগুলি সূর্যের তেজে জ্বলে উঠেছিল,
আর পারছি না মা-
যন্ত্রনায় চিকন দুটি ছিড়ে যাচ্ছে,শ্বাসরোধ হয়ে আসছে
কি নিষ্ঠুরভাবে ওরা আমার মুখটা গেঁথে দিয়েছে মাটির অন্তরে
আমার কেমন বমি আসছে মা- শরীরের মধ্যে কি যেন প্রবেশ করেছে
একেবারে ছাড়খার করে দিচ্ছে অন্তরটা
নিজেকে দুটুকরো কাগজের মত ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে
ভেসে যেতে ইচ্ছে করছে শূন্যতটে।
এই তিলোত্তমা থেকেই তো রবীন্দ্রনাথ, নেতাজিরা
বিশ্বমাঝে যাত্রা করেছিল,
ওরা তাদের এই পবিত্র পীঠস্থানকে এমন অপবিত্র করে তুলছে কেন?
ওদের মনে কি একবারও তাদের চিন্তা আসে না
ওদের ঘরে কি আমার তোমার মত কেউ নেই
এমন সুন্দর তিলোত্তমা কে ওরা জঙ্গলে পরিণত করল কেন?
এইবার ওদের কাজ ফুরিয়েছে মা-
আমি মুক্তি পেয়েছি, ওদের সজ্জল দৃষ্টির ক্ষুধা লোপ পেয়েছে
হ্যাঁ মা আমাকে ওরা মুক্তি দিয়েছে এইবার।
তিলোত্তমার বুকে আমার মুছে যাওয়া লিপস্টিক আর
রাঙা হয়ে যাওয়া নিথর দেহ নিয়ে আমি শুয়ে আছি
বাহুতলে এখনো দীপের দেহের উগ্র সৌরভের স্বাদটা পাচ্ছি,
আমার হাত দুটো ওরা স্পর্শ করে নি মা-
গোটা শরীরটায় ওই দুটো জিনিসই এখন আমার কবলে।
এই ছিন্নভিন্ন শরীরটা এখন সবার
আজকেই একজনকে সপে দিয়ে এসেছিলাম
এখন সে অনেকের জ্বালা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।
কানের মধ্যে এখনো কোকিলের স্বর ক্ষীণ হয়ে বাজছে
কিন্তু এবার কোথায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছে
কোনো এক দূর দেশের দিকে আহ্বান দিচ্ছে আমায়
আস্তে আস্তে নিদ্রা আসছে মা
আমি ঘুমাব,তোমরাও ঘুমাও-
চিন্তা করো না মা কাল সকালে নিশ্চয়ই দেখা হবে।