পাগলিনী
পাগলিনী
রাস্তার পাশে জটলায়
উঁকিঝুঁকি দেয় পথচারী
পাগলিনী ফুটপাথে ব'সে
মুখখানি মায়াময় ভারি
আলুথালু ছেঁড়াফাটা শাড়ি
বোঝা যায় দামী ছিল বেশ
সোনার অঙ্গ মাখে ধুলো
তেলহীন অগোছালো কেশ
কেউ কেউ দয়া পরবশে
এটা ওটা কিনে খেতে দিলে
পাগলিনী চুপ করে দ্যাখে
মুখে কিছু নেয় না সে তুলে
সারাদিন কাকে যেন খোঁজে
দূর ওই সীমানায় চেয়ে
কে এমন হানল আঘাত?
পাগলিনী হ'ল সোনা মেয়ে!
কিছু যেন বলতে সে চায়
বিড়বিড় করে অবিরাম
ফুটপাথে বুলিয়ে আঙুল
লেখে এক অদৃশ্য নাম
কেউ যদি ডেকে ভালোবেসে
পাশে বসে দুটো কথা বলে
অমলিন হাসি ফোটে ঠোঁটে
চোখ তবু ভেসে যায় জলে
কতবার শুধিয়েছে লোকে
"কি নাম রে, কোথা তোর বাস?"
পাগলিনী শুনেও শোনে না
ফেরবার নেই বুঝি আশ
এমনি করেই কাটে দিন
মাস আর বছরও পেরোয়
পাগলিনী রোজ নাম লিখে
তার 'পর মাথা পেতে শোয়
একদিন যুবতী সুবেশী
কোনো এক থমকে দাঁড়ায়
বলে, "একে চেনা চেনা লাগে!
দেখেছি কি আমার পাড়ায়?"
পাগলিনী মুখ তুলে চায়
হয়ত বা তারও লাগে চেনা
এ মুখ তো 'তারই' জলছবি
হারিয়েছে সে যার ঠিকানা।
পাগলের মতো দুটো হাত
যুবতীর শরীরে বোলায়
পরিচিত জন্মের দাগ
হয়ত বা খুঁজে সে বেড়ায়
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়ে
দুই পা যায় পিছিয়ে,
তারপর পিছনেতে ফেরে
সঙ্গের যুবাটিকে নিয়ে
ধীরে ধীরে মাথা নিচু ক'রে
কান্নায় ভাঙে এলোকেশী
বলে, "গিয়ে একবার বোলো...
আমি তাকে আজও ভালোবাসি।"