Rajit Kumar Banerjee

Crime Thriller

3  

Rajit Kumar Banerjee

Crime Thriller

Untitled

Untitled

9 mins
246



।। ১. ।। 

      আচমকা ভীড়ে ধাক্কা খেয়ে আমার দেহটা ফুটপাতের পাশের নালায় পড়তে পড়তে বেঁচে গেল । যার সঙ্গে কলিশনটা হয়েছিল তিনি ফুটপাত লাগোয়া আখরোট দোকানে ঝুকে পড়েছিলেন । 

সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম । আমার বিস্মিত মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল , 

-- গুলফাম স্যার ! 

জুল জুল চোখে খানিক চেয়ে থেকে সেই পরিচিত রস সিঞ্চিত স্বরে বললেন , 

-- বচ গয়ে মুন্নু । অভিতক তো দো চার হাত হো জাতা ভাই !  

ওর সেই সরল কথায় হেসে ফেললুম । 

দোষটা আসলে আমারই । সবেমাত্র শ্রীনগর পৌঁছেছি । উঠেছি রেসিডেন্সি রোডের আমার সেই পরিচিত পছন্দের হোটেল আদুসের দ্বিতলে । অনেক দিন পরে আসা । কাজের চাপে এসেই বেরিয়ে পড়েছিলাম লালবাগের উদ্দেশ্য । মাথায় একরাশ চিন্তা উদ্রেককারী প্রশ্ন এলো মেলো ছুটে বেড়াচ্ছে । এবার হাতে বিশেষ সময় নেই । তাই চিন্তায় ভাবনায় আকুল হয়েই পথ চলছিলাম । 

চোখের দিকে চেয়ে মনে হল গুলফাম স্যার চিন্তিত । কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই চমকে থমকে দাঁড়ালেন তিনি ।  

-- ক্যায়সে জানে আপ ?  

পরক্ষণেই হেসে ফেলে বললেন ,  

-- অরে হ্যাঁ , আপ তো কেবল ক্রাইম রাইটার নহী , ডিটেকটার ভী হো ! 

পরক্ষণেই আমায় একটা দোকানের পিছনে আলতো ভাবে টেনে নিয়ে বললেন, 

-- আপসে হোগা । ম্যায় নিশ্চিত হুঁ । 

-- অরে ক্যা হোগা ? ক্যা নিশ্চিত ! 

আমি তো ভেবেই অস্থির । একেই তো জম্মু - কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ জাভেদের সমস্যা , তার উপর গুলফাম স্যার । মরে গেল বাবা ! 

তবুও তাঁর সঙ্গে যেতেই হল । হেজি পেজি লোক নন গুলফাম স্যার । জে এন্ড কে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্তাব্যক্তি তিনি । বছর তিনেক আগে এই শ্রীনগরেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় । তখন হাজি বাবার এক ছকের ব্যাপারে আমায় আসতে হয়েছিল । সেই সূত্রেই আলাপ হয়েছিল ।  

ডাল লেকের ধারে বুলেভার্ডে এসে যখন বসলাম , তখন সন্ধ্যের সোনালী রোদে পিকচার পোষ্টকার্ড মনে হচ্ছে চারিপাশটাকে । আমাদের চারিদিকে টুরিস্টের ভীড় থিক থিক করছে । ডালের জলে তখন রঙিন ঝালর ঢাকা শিকারা গুলো ব্যস্ত নৌকা বিহারে । স্থানীয় মানুষের হাতে ফুলের বোঝা । ভেসে বেড়াচ্ছে কত কত দোকান ! আর জলের পিছনে থাকা হরি পর্বতের ওপার টপকে নেমে যাওয়া সূর্যের নরম লাল আলোয় সিনেমাটিক পটভূমি , তার উপর আচমকা ডালের জলে ছিটকে এসে পড়েছে লাল রঙের ছিটে !  

একটা কফি হাউসের ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিল ঘিরে পাতা চেয়ার গুলোর একটা টেনে বসে পড়লেন গুলফাম স্যার । অগত্যা আমাকেও বসএ পড়তেই হল । কফি সার্ভ হওয়া পর্যন্ত গোমরা মুখে কী সব চিন্তা করছিলেন তিনি । কফির কাপে এক দু চুমুকের পর গলা ঝেড়ে কথা কয়ে উঠলেন গুলফাম স্যার , 

-- প্রব্লেম ব্যানার্জি , প্রব্লেম ! 

তারপর তিনি যা বললেন তা সাজালে মোটামুটি এই রকম হয়ঃ  

এই শহরের পশ এলাকা ওয়াজির বাগে একের পর এক কুকুর গুম হয়ে যাচ্ছে , তাদের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না । বড় লোকেদের কুকুর । ক্রমে পুলিশ হয়ে ঘটনাটি এসে পড়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চে । অফিসাররাও হদিস না পেলে আসরে নেমে পড়েন খোদ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্তা গুলফাম হোসেন স্বয়ং ! আজ সকালে ঐ এলাকার একটি পোষা কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে । পুলিশ কুকুরটার রক্ত পরীক্ষা করত পাঠিয়েছে । কিন্তু দুপুরে হঠাৎ এলাকায় একটা দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে । পুলিশকে দুর্গন্ধের উৎস সন্ধান করতে বলা হয়েছে । এখনও অবধি তার কোনো খবর আসেনি । 

আমার মুখের দিকে চেয়ে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করলেন গুলফাম স্যার , 

-- ক্যা হো সকতা হ্যায় ব্যানার্জি ?

আমি ভ্যালভ্যালিয়ে চেয়ে রইলাম তাঁর দিকে । সত্যি বলতে কী , আমি ঘটনাটার বিন্দু বিসর্গ কিসস্যু বুঝতে পারিনি । আচমকা গুলফাম স্যারের পকেটে রাখা ওয়াকি টকির আওয়াজে দুজনেই চমকে উঠলাম । সেটাকে কানে তুলে শুনবার পর কাশ্মীরী ভাষায় কাউকে কিছু নির্দেশ দিলেন বুঝলাম । একটু পরে একটা মারুতী জিপসী এসে দাঁড়ালো আমাদের পাশ ঘেষে প্রায় নিঃশব্দে । 

আমার চোখে চোখ রেখে উনি আমায় বললেন , 

-- চলিয়ে ব্যানার্জি সাহাব স্পট ঘুমকে আতে হ্যায় । 

বলেই সোজা গিয়ে বসলেন গাড়িটাতে । অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়লাম ।


 ।। ২ ।।   

       স্পটে পৌঁছাতেই গন্ধটা টের পাওয়া যাচ্ছিল । একজন কনেষ্টবল দৌড়ে এসে আমাদের দুজনকে দুটো আপারেশন থিয়েটারের মত মাস্ক বেঁধে দিয়ে গেল । দুর্গন্ধটা একটু কমলো তাতে । আমাদের সামনে হিন্দী সিনেমার কাশ্মীরের মত একটা কাঠের বাংলো বাড়ী । যেতে হল তাক ঘুরে বাড়িটার পিছনে । 

সেখানে দেখলাম একটা গর্ত ঘিরে পুলিশের মাস্ক পরা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়এ যেন কী দেখছে । কাছাকাছি গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের দুজনের চক্ষু স্থির । প্রায় চার পাঁচটা গলা পচা কুকুরের লাশ ! অর্থাৎ কেউ এদের মেরে পুঁতে ফেলেছিল।            ফরেনসিক এক্সপার্টদের লাশের স্যাম্পল নেওয়া হয়ে গিয়েছে । গুলফাম স্যার একটু দূরে তাদের সাথে কথাবার্তা বলছেন । ভারী বাতাস ছেড়ে আমি সরে এলাম । আমার মন বলছে , যে এটা করেছে , সে পুলিশের আগমনে অবশ্যই বিচলিত হয়েছে এতক্ষণে । হঠাৎ নজরে এল দুজন কনেষ্টবল বাংলোটার পিছনের ঘোরানো সিঁড়িতে বসে খৈনী ডলছে । আমি তাদের কাছে এসে দাঁড়ালাম । উঠে পড়ে স্যালুট ঠুকল তারা । ভেবেছে বড় সাহেবের সঙ্গে যখন এসেছি , আমিও কেউ কেটা । আমি ওদের নাম জিজ্ঞেস করতেই একজন বলল ফরহাদ খান , অপর জন শিউচরণ সাহু । আমি বললাম ,  

-- খোঁজ নিতে পারবে , এখানের কেয়ার টেকার বা অন্য কারুর মধ্যে কোন ব্যস্ততা বা অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে কিনা ?  

দুজনেই স্যালুট করে সেই যে উধাও হল আর দেখা নেই ! রাতের অন্ধকার নেমে এল গুলফাম স্যারের কথা শেষ হতে হতে । চারিদিকের ঘর বাড়িতে তখন লাইট জ্বলে উঠেছে । আমি চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে । আমার কাছে এসে গুলফাম স্যার হেসে বললেন ,  

-- সরি ব্যানার্জি , আপকা দের কর দিয়ে । 

আমি হেসে বললুম ,  

-- কোই বাত নহী । 

দুজনে গিয়ে উঠলাম জিপসীতে । গাড়ি স্টার্ট হতেই হই হই করে একটা লোককে টানতে টানতে নিয়ে এল ফরহাদ আর শিউচরণ । এসে উত্তেজিত গলায় আমায় বললে ,  

-- এ স্যার ওহ আদমি হ্যায় , মালিক কো কুছ খবর না করকে , আনন ফানন মে ভাগ রহা থা ।  

গুলফাম স্যারের চোখে দুর্বোধ্য জিজ্ঞাসা । আমি জিপসী থেকে নেমে পড়লাম । লোকটার বয়স পঁয়ত্রিশ - এর মধ্যে । মুখে দাড়ি । কোঠরাগত চোখে ধুর্ততা । নেশারু বোঝা যায় । কাঁধে একটা মামুলী কালো ব্যাগ । আমি কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করলাম,  

-- কিউ ভাগ রহা থা ?  

কিছু না বলে ঘাড় গুঁজে নিরুত্তর দাঁড়িয়ে রইল । গুলফাম স্যারও ততক্ষণে নেমে এসে দাঁড়িয়েছেন । অন্য অফিসাররাও এসে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ততক্ষণে । 

গুলফাম স্যার ইতিমধ্যে শিউচরণকে ডেকে জেনে নিয়েছেন ব্যাপারটা । প্রশংসার চোখে তাকালেন আমার দিকে । মুখে পাশের অফিসারকে আদেশ করলেন কাশ্মীরীতে । লোকটাকে দুই অফিসার মিলে ধাক্কে নিয়ে চললেন কাছেই রাখা একটা গাড়ির দিকে ।   


।। ৩ ।।  


      আমরা আবার উঠে পড়তেই গাড়ি ছেড়ে দিল । আমরা আবার ফিরে এলাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রে । আমায় হোটেল আদুসে নামিয়ে দিয়ে গুলফাম স্যার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দিকে চলে গেলেন ।  

হোটেলর রিসেপসনে পৌঁছাতেই দেখলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ জাভেদ বসে রয়েছেন । সরি বলতেই উনি মেনসন নট , মেনসন নট বলে উঠলেন । 

আমরা এসে বসলাম আমার রুমে । আমার এই রুমের চারপাশে সহসা কেউ আসতে পারবে না , সে ব্যবস্থা করা আছে । ঘরের দরজা বন্ধ হতেই , উনি সোফায় বসে পড়ে বললেন , 

-- মিঃ ব্যানার্জি , বিমান বন্দরের লাউঞ্জ থেকে সর্বত্র ভালো করে পরীক্ষা করা হয়েছে , কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি ।  

আমি স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইলাম । মিঃ জাভেদ হঠাৎ বললেন , 

-- মনে হল পুলিশের গাড়িতে ফিরলেন , কী ব্যাপার ? 

উনাকে ঘটনাটা জানাতে হাসলেন , 

-- গুলফাম হোসেন ? বেড়ে লোক !  

তারপর উঠে পড়লেন । যাবার সময় বললেন , 

-- আমি কনটিন্যুয়াসলি ওয়াচ রাখতে বলেছি । 

আমি গম্ভীর কন্ঠে বললাম , 

-- গুড ।  

উনি বিদায় নিলেন ।  


   ।। ৪ ।।  


         হোটেলের লাউঞ্জে খেয়ে ফিরছি , হঠাৎ রিসেপশনের মেয়েটার ডাকে ফিরলাম ।  

-- আপকা ফোন স্যর !  

কুঞ্চিত কপালে ফোন ধরলাম । ওপার থেকে গুলফাম স্যারের কথা শোনা গেল । জানালেন , লোকটা থার্ড ডিগ্রীতেও কথা ছাড়েনি । স্পেশাল ব্রাঞ্চ ওর ছবি নিয়ে সব জেলাতে খোঁজ চালাচ্ছে । কিছু বেরাবেই । তবে পুলিশের কাছ থেকে একটা রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে । সকালের কুকুরটার রক্তে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সন্ধন পাওয়া গিয়েছে । তার থেকেও অবাক ব্যাপার যে , যে রাসায়নিকটির উল্লেখ করা হয়েছে তা একমাত্র টিয়ার গ্যাসেই সুলভ । 

আমার হৃৎপিন্ডটা ধক্ করে উঠল । তোতলাতে তোতলাতে শুধউ এইটুকুই বলতে পারলাম , 

-- লোকটার ব্যাগটা কোথায় ? ওটা রাখুন , আমি আসছি । 

আমি কোন রকমে রিসিভারটা মেয়েটির হাতে ফিরিয়ে দিয়ে হোটেলের সদর দরজার দিকে প্রায় দৌড় লাগালুম । কী মনে হতে পিছু ফিরে দেখি মেয়েটি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । 

আমি অনুমান করেছিলাম লোকটা কিছুই বলবে না । ওর সমস্ত গোপনীয় সংবাদ সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে নিশ্চই । কিন্তু কোথায় ? পুলিশে ধরা পড়ে পার পেলেও পরবর্তী কালে যে তাকে দীর্ঘ দিন অনুসরণ করা হবে এটা জানা কথা । অথচ তার কাজ কর্ম অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা নিশ্চই করবে না । অতএব এমন জায়গায় তা আছে , যা সুলভ । তখনই আমার মাথায় আসে তার ব্যাগ । পুলিশ ক্যাজুয়াল জিনিসই তাতে নিশ্চই পেয়েছে , তাই তার উল্লেখ নেই । তবে , সেই ' তবেই ' আমার কাছে ব্যাগটার মূল্য বাড়িয়ে তুলেছিল । 

স্পশাল ব্রাঞ্চে পৌঁছে আমি ব্যাগটাকে শুধু তন্ন তন্ন করে তল্লাসিই নিইনি , একজন দর্জিকে ডাকিয়ে ব্যাগটাকে পার্ট বাই পার্ট খুলে ফেলে তল্লাসী চালাতেই বেরিয়ে পড়ে ক্যানভাসে আঁকা এই মানচিত্রের টুকরোটা । দুজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে যিনি ঢুকলেন , তাকে আলাদা করে সেনা বাহিনীর লোক বলে উল্লেখ করবার দরকার হয়না ।  



।। ৫ ।।   


       এখন রাত প্রায় তিনটে , আমরা চলে এসেছি শ্রীনগর এয়ারপোর্টে । লাফ দিয়ে নেমেই আমি আর গুলফাম স্যার বাঘের মত দৌড়াতে শুরু করলাম লাউঞ্জের দিকে । আসে পাশে থাকা সেন্ট্রী , লোকজন দুজনকে পুলিশের জিপসী থেকে এভাবে লাফিয়ে পড়ে দৌড়াতে দেখে সন্ত্রস্ত চোখে চাইতে লাগল । দুজনে ভ্রুক্ষেপ না করে লাউঞ্জে ঢুকে পড়লাম । গুলফাম স্যার বা হাত বেছে নিয়ে কেবল বললেন, 

-- আপ উস তরফ দেখিয়ে ।  

কিন্তু কোথায় কী , কিচ্ছু নেই । দুজনে হতাশায় চুর হয়ে ফিরে আসছি ; এক্সপার্ট পুরো ম্যাপটার জায়গাগুলোর নাম বের করে ফেলেছিল আধ ঘন্টায় । যেই দেখেছি এয়ারপোর্টের নাম , আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ জাভেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি । তাদের কাছ পাক্কা খবর আছে , কোন এক সন্ত্রাসবাদী দল শ্রীনগরের বিমানবন্দরে হামলার ছক কষছে । এবং ডি - ডে আসন্ন !  

হতাশায় ফিরে আসছি, হঠাৎ চোখ পড়ল কফি কর্ণারের দিকে । এক কাপ হলে মন্দ হয় না । আমি হঠাৎ পথ বদলে সেই দিকে এগোতে গুলফাম স্যারের চোখে দুর্বোধ্যতার ছায়া ঘনাল । আমি নীরস গলায় বললাম ,  

-- এক এক কাপ কফি হো জায় ?  

উনি মাথা নাড়লেন হ্যাঁ - এ । দুজনে এগিয়ে গেলাম ।  

কফি নিয়ে চুমুক দিতে দিতে আমি চারিপাশটায় নজর বুলাতে লাগলাম । দূরে কাউন্টারে লোকেদের কিউ । ওপাশে একগাদা খালি ট্রলি একত্র করে রাখা । আমাদের বা দিকে কিছু বসবার বেঞ্চ । আর তার অনতি দূরে ' ইউজ মী ' পেঙ্গুইন পাখির আদলে ডাস্টবিন । বেঞ্চিতে দু তিনজন যাত্রী অঘোরে ঘুমাচ্ছে ! ঘুমন্ত যাত্রীদের দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা কথা মনে উঁকি মারল । কিন্তু তা হবে কি ? 

            হঠাৎই আমায় আধা কফির কাপ ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিতএ দেখে অবাক হলেন গুলফাম স্যার ! আমার তখন সেদিকে মন দেবার অবসর নেই । ছুটে গিয়ে দুহাতে পাগলের মত নাড়িয়ে চলেছি এক এক জন যাত্রীকে ঘুম ভাঙ্গাতে । গুলফাম স্যার চেঁচিয়ে বললেন ,  

-- আপ ক্যা পাগলা গয়ে ব্যানার্জি সাহাব ?  

আমি ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি এ কী ঘুম । আমার চিৎকারে ছুটে এলেন মিঃ জাভেদ । চারিদিকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ আর এন আই এ - র লোকজনে ততক্ষণে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে জায়গাটা । এরা সবাই চব্বিশ ঘন্টা ডিউটিতে ছিল । অদ্ভুত তৎপরতায় আমার কথায় ডাস্টবিনটা সরিয় নিয়ে যাওয়া হয়েছে দূরে । ওতে ডিসপোজাল টিয়ার গ্যাস শেলের রাশ কফির ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও কাগজের কাপের তলায় রয়েছে । আর তার রাসায়নিক বিক্রিয় গ্যাসই যে আসলে উগ্রবাদীদের হামলার ছক , এটা একেবারে হতবিমূঢ় করে দিয়েছে জে এন্ড কে ইন্টেলিজেন্স কে । বিমানবন্দর ছাড়ার সময়ে পাশে এসে গুলফাম স্যার কৃতজ্ঞ গলায় সমস্ত কাশ্মীরের হয়ে যেন তাঁর সেই স্বভাব সুলভ নম্র স্বরে বললেন ,  

-- ধন্যবাদ ব্যানার্জি সাহাব । 

আমি তাঁর দিকে উচ্ছসিত দৃষ্টিতে শুধু তাকালাম ।  




Rate this content
Log in

More bengali story from Rajit Kumar Banerjee