উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষা
কতজনের মনে কত স্বপ্ন থাকে। কতজন কতকিছু করতে চায় জীবনে। সবার তো পূরণ হয় না। তারপরেও ছোটখাটো স্বপ্নগুলো থেকে যায়। সেগুলো নিয়ে বাঁচা যায়।
এক গ্রাম্য দেশোয়ালি ভাইয়ের কল্পনায় উচ্চশিক্ষার ধারণার একঝলক এখানে তুলে ধরছি।
তিনি একটু বেশি বয়সে উচ্চশিক্ষা করার জন্য গ্রামের মায়া ত্যাগ করে ফেললেন। নিম্নশিক্ষা করেছেন ছোট একতলা বিদ্যালয়ে। মধ্যশিক্ষা করেছেন দু’তলা বিদ্যালয়ে। উচ্চ মধ্যশিক্ষা করেছেন তিনতলা বিল্ডিংয়ে। শহরে যাওয়ার পর উঁচু উঁচু কোঠাবাড়ির উঁচুতে বসে উচ্চশিক্ষা হয়— এই পূর্ব ধারণা নিয়ে তিনি হাজির হলেন। একেবারে প্রথম দিনের ক্লাসে ঢুকে নিজেকে তার নির্জীব মনে হলো। দেখলেন, সবচেয়ে নিচের তলায় একটি বড় বড় জানালাওয়ালা ঘরে প্রোফেসর পড়াচ্ছেন। উঁচুতে বসে ক্লাস করার স্বপ্ন বড় ধাক্কা খেলো।
পাশে বসা নিজের থেকে কমবয়সী এক ছাত্রের কাছে জানতে চাইলেন, “শোনো ছোট ভাই, এই শহরে উচ্চশিক্ষা করতে এসে কি ভুল করলাম? এসে দেখছি এখানে নিম্নশিক্ষার মতো নিচের তলায় বসতে হচ্ছে! ভালো লাগছে না।”
মৃদু হেসে ছাত্রটি বললেন, “আপনি সিলেবাস দেখেননি? কয়েকদিন এখানে টাটকা মাটি নিয়ে পাঠদান চলবে। প্রোফেসর নিজে গিয়ে পাশের বাগান থেকে নতুন নতুন টাটকা মাটি কেটে আনবেন। যদি উঁচু তলায় বসতেন তবে টাটকা মাটি সহজে পেতেন কোথায়? আবার যখন বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে পাঠদান হবে, তখন আমরা টপ ফ্লোরে উঠে যাবো।”
আরেকটি স্বপ্ন বলে শেষ করি। তারপর জেগে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল।
খুব খেদ নিয়ে একজন প্রতিশ্রুতিময় ছাত্র এটি বলেছিলো। ঠোঁটে লেগেছিলো খুশির আভাস।
“আমি স্বপ্ন দেখতাম কোনো একদিন MIT, অক্সফোর্ড, স্ট্যানফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড প্রভৃতি বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটিগুলোর কোনো একটিতে পড়ার জন্য ভর্তি হবো। ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়লো অক্সফোর্ডে। যথারীতি ইন্টারভিউ দিলাম। ভরসা ছিলো, ভর্তি হচ্ছিই। কয়দিন পর একটি জয়েনিং লেটার পেলাম। খুলে দেখি, নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে আমার চাকুরি হয়েছে। আমি অবাক, কোথায় কী হলো! ......
খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ঐ একই দিনে অনেকগুলো ইন্টারভিউ হচ্ছিলো। ভুল করে ভুল জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছি। ভাবলাম, উচ্চশিক্ষার দরকার নেই স্বপ্নের ইউনিভার্সিটির নাইট ওয়াচম্যান হিসাবে থেকে যাই।”
স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নপূরণের এক বিচিত্র আলাদা জগত আছে। কত গল্পই না আমরা বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকি। কোনোটা রঙিন আবার কোনোটা সাদাকালো।
|| থামছি ||