ট্রান্সজেন্ডার
ট্রান্সজেন্ডার
প্রায় তিন বছর আগের কথা, তখন লেক গার্ডেন্স স্টেশন সংলগ্ন লেক’ই ছিলো রোজকার যাতায়াতের পথ। প্রায়সই সময় পেলে বেশখানিকটা সময় কাটাতাম লেকের ধারে বসে। আর সেইসূত্রেই পরিচয়, মলি মাসীর সাথে, ওঁ ছিলো ওই চত্বরের হিজরা জনগোষ্ঠীর হোতা। সর্বক্ষন সাথে পাঁচ-ছ’জন চ্যালা, বেশ রাসভারি চেহারার দীর্ঘকায় এক মানুষ।
আমার থেকে কোনদিন টাকা নিতো না। বলেতো-
- তুই আর আমি দুজনেই এখানে পেটের দায়ে টাকা কামাতে আসি, তাই তোর থেকে তোলা নেবো না।
একদিন প্রশ্ন করেছিলাম,
- তুমি কেন এত বয়সেও বেরোও মাসী?
উত্তরে বলেছিলো-
-হাসালি রে মেয়ে! না বেরুলে হতচ্ছাড়াগুলো যে নিজেদের মধ্যেই কামড়াকামড়ি করে মরবে।
ওদের তো আর কেউ বাসন মাজার কাজও দেবেনা! পেটের দায়ে তাই মেগে বেড়াতেই হবে! কয়েকটা ছাড়া আদ্দেকের বাড়ির লোকগুলাও তো ফিরে তাকায়না।
আর নেতাগুলোও নেতা হওয়ার আগে বেশ কিছুদিন তোয়াঁচ করে তারপরে আবার যে-কে-সেই। আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার থেকে মরণ’টা অনেক সুখের, জানিস তো ছ্যেমরি!
মনে পরছিলো গ্র্যাজুয়েসন এর দ্বিতীয় বছরে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ফর্ম ফিলাপের সময় ''ট্রান্সজেন্ডার" অপশনটা জেন্ডার কলামে যুক্ত করা হয়েছিলো, কিছু সহপাঠী তা নিয়ে হাসাহাসিও করেছিলো বিস্তর।
সেদিন ট্রেনে বসে মলি মাসীর কথাগুলো মনে পরছিলো খুব, তাচ্ছিল্যতার হাসি মেখে আরও মনে পরছিলো-
ছোটবেলায় সম্প্রসারণ করতে গিয়ে একটা লাইন পড়তাম বইয়ের পাতায়-
“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।”