টিফিন বক্স
টিফিন বক্স
স্কুল কলেজ টিফিন বক্সের খাবার ভাগ করে খাওয়া কমন ব্যাপার। এটা আমার মত নিরস শুকনো লঙ্কার মতো মানুষের জীবনে ও এসেছে। কিন্তু টিফিন বক্স নিয়ে প্রেম, ভেজ সুপের মতো জীবনে গোলমরিচ মতো একটা স্বাদ এনে দিয়েছিল।
মোটামুটিভাবে ওয়ান লাইনার বা সর্টক্যাটে , যদি গল্পটা বলি তবে শুরু করি এভাবেই, আমি সকালের কাছে পরিচিত চারু বলেই। ছাত্র রাজনীতি দৌলতে নামটা পাওয়া। কলেজে উঠে পাখা সবার গজায়, আমার একটু বড় সর গজিয়ে ছিলো। আসলে বেশ অহংকারী হবার কারণ একটাই ছিলো। বাবা মায়ের টাকায় আমি পড়ালেখা করতাম না। টিউশনি পড়িয়ে কলেজ করতাম। আর দুই বছর একটু চেষ্টা চরিত্র করে শহরের একনম্বর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাই পা তখন অহংকারে মাটিতে পরছে না।
পুরাতন কলেজ তখন যাতায়াত বন্ধ করি নি। ইউনিয়ন রুম টা আমার দখলে। সবাই আমাকে একটু সন্মান করে, অথচো শ্রাবন্তী বেহেন জী টাইপের মেয়ে হয়েও আমাকে পাত্তাই দেয়না।এমন ভাব করে চেনেই না আমাকে। মনে মনে ভীষন অপমানিত বোধ হয় আমার।
শাস্তি দিতে হবে, মেয়ে আবার শুনেছি পড়াশোনায় ভালো, তাই রিগিং করা যাবে না। তাই আক্রমণ বা টার্গেট করা হল টিফিন বক্স। চুরি করে ওর টিফিন খেয়ে নেওয়া হলো। তিন দিন ধরে লক্ষ করলাম, ও চিফ ক্যান্টিয়ে এসে খাবার দাবার দাম জিজ্ঞেস করে আর পরে চা বিস্কুট খেয়ে চলে যায়। আর বাড়িতে দেরিতে ঢুকছে।
তৃতীয় দিন ইউনিয়ন রমে ডাকা হলো ওকে। জিজ্ঞেস করা হলো। কেন ও টিফিন খায় না ক্যান্টিনে।
উত্তর জানালো, এমন রসিকতা নাকি আমাদের মতো, নির্বোধ ছেলেমেয়েদের ছেলেমানুষীতে সাজে। সে অন্য আশ্রিতা তাই তাকে অনেক বেশি হিসাবে করে ই চলতে হয়। একটু সরাসরি আমাকে করে ই বললো," যার প্রশ্রয় এই কাজ টি করা হয়েছে। সে মানে নাকি ওসব বুঝতে পারবে না। কারণ সোনার চামচ মুখে দিয়ে সে মানুষ"
ওর এক বান্ধবীর কথা গুলো গায়ে লাগলে, একটু প্রতিবাদ করে বললো। " তোর টিফিন খাওয়ার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই, আনিসতো ঐ আলুভাজা, আর তিনটে রুটি।চুরুদা শুধু খেয়েছে ওগুলো জানিনা কিভাবে।"
সত্যি একটা টিফিন বক্স মানুষের অর্থনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে দেয়। হয়তো একটা সময় তাই আমি ও স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতে লজ্জা পেতাম। আজ বাবা চাকুরি পেতে সব কিছু বদলে গেছে। যদিও আমি কোনদিন অতবেশি কষ্ট পাইনি। তবে ওর উত্তরের অপেক্ষা করছিলাম। ও আমার বাড়িতে থাকে তাই আমার নাড়ি নক্ষত্র জানে। কিন্তু ওযে হাটতে হাঁড়ি ভেঙে দেবে ভাবতে পারি নি।
ও বললো" যে মানুষ টি ডিম পোঁচ করতে গিয়ে , ডিম পুড়িয়ে ফেলে , সে বোধহয় রুটি করতে গেলে, অস্ট্রেলিয়া কিংবা শ্রীলঙ্কা র ম্যাপ বানাবেন, এবং সে গুলিকে রুটি না বলে পাঁপড় বলা যাবে। তাই আমার খাবার গুলো তার কাছে অখাদ্য হবে না আশাকরি।আমরা জন্মই সবাই উল্লঙ্গ ভাবেই, ঐতিহাসিক কোন সময়ের ষড়যন্ত্রের ফলে তোদের টিফিন বক্সে, নুডোল, পাস্তা, আর আমার বাক্সে শুকনো রুটি, কখনো পিঁয়াজ পান্তা, ও নিয়ে আমার লজ্জা নেই। কারণ পৃথিবীতে একদিন বড়লোক গরীব লোক ছিলো না। এটা তৈরি করা হয়েছে।"
ইউনিয়ন রুম সবাই চুপচাপ হয়ে গেলেও আমি চুপচাপ থাকার পাত্র নয়। পরেরদিন নিজে টিফিন বক্স চুরি করে টিফিন খেয়ে একটি চিরকুট রেখে এলাম। তাতে কি লেখা ছিল।
" ভাড়া নিতে কাল আপনার ঘরে গিয়ে ছিলাম। আপনার হাতের তালের বরা খেলাম।দিদি কাল আপনার সেলাইয়ের কাজ দেখালো। একটা আসনে আপনি লিখেছেন ক্ষমা পরম ধর্ম। খুব খিদে পেয়েছিলো তাই আপনার টিফিন খেয়ে নিয়েছি। আপনার টিফিন পিরিয়ডে পরে ক্লাস বাংলা , তাই ওটাতে উপস্থিত থাকতে হবে না। ম্যাভাম তো আপনাকে খুব স্নেহ করে। ম্যাডামই বলেছিলেন, আপনার বই কেনার পয়সা নেই কিছু একটা ব্যবস্থা করো। তাই আপনাকে ন্যাশানাল ল্যাইব্রেরী কার্ড করতে নিয়ে যাবো আমি। কারণ কলেজের লাইব্রেরীতে ইংরাজী সাহিত্যের বই তেমন নেই। তাই উনি উপস্থিতি দিয়ে দেবে। বাকি আপানার ওপর। দেখা যাক ক্ষমা করেন কিনা আপনি। টিফিন টা আপনি আমার সাথে করেন কিনা। বাস স্ট্যান্ড আমি অপেক্ষায় থাকবো।"
কি হয়েছিল জানতে চাইছেন? আমার টিফিন বক্স এখন ফুটবলের মতো গোল রুটি থাকে, সাথে ফ্রেন্চ ফ্রাই এর মতো আলু ভাজা, তাও আমার নিজের হাতে বানানো। বাকি আপানারা বুঝে নেন।