সুনয়নার প্রত্যাবর্তন
সুনয়নার প্রত্যাবর্তন
সে চলে গেছে অনেক বছর হলো, তার চলে যাওয়ার পর আমার জীবন থেকে প্রায় ছয়টি বসন্ত কেটে গেলো। হয়তো তার স্মৃতি আজও ভেসে আছে মনে কিন্তু মৃত আত্মীয়ের স্মৃতির মতো। তার অস্তিত্ব মন থেকে প্রায় বিলীনের পথে, মনে হয় আর কিছুদিন পর আবছা আবছা স্মৃতিটুকুও বহন করবো না। আমার জীবনে কোনোদিন কোনো কাঙ্খিত চাওয়া আর পাওয়া হয় না।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতিটাকেও মেনে নেওয়া খারাপ লাগে না আর। এখন অব্যস্থ হয়ে গেছি বিধাতার এই সুন্দর খেলায়। আমার জীবনে আমি আর কোনোদিন সুনয়নার ফিরে আসা প্রত্যাশা করি না কিন্তু হঠাৎ সুনয়নার ফোন আসলো। সেদিন সুনয়নার ফোন আসাটা আমার কাছে অনেকটা আমবস্যার চাঁদের মতো। আমার জীবনের আশু পূর্নিমার আলো বন্ধ হয়ে গেলো সুনয়নার জন্য। সুনয়না ফোনে বললো, "অনির্বান কেমন আছো? আমি ক্ষমা প্রার্থী "আমি বললাম "সুনয়না আক্ষেপ করো না, তোমাকে ধন্যবাদ, তোমাকে পাওয়া হলে হয়তো আমরা একটা গ্লানি বয়ে বাঁচতাম জীবনের বাকি বসন্ত গুলো। "সুনয়না আবার একটু ভেজা ভেজা কন্ঠে বললো,"অনির্বান এতো কথা কীভাবে শিখলে,এতোশত বুঝি না বাপু পার্কে আসো
"আমি কোনো কথা না বলে তার ফোন রাখলাম।আমি জানতাম তার কথায় কিছু ভেজাল আছে। কিন্তু ভেজাল থাকলে কি আর হবে আমার তো আর পরিবার বলতে কিছু নেই। চৌদ্দ তে গেলো মা , ১৮ তে গেলো বাবা, পরিবার বলতে একটা সহোদর ছোট ভাই আছে । কোনো বিলম্ব করলাম না সুনয়নার কথাগুলো জানিয়ে দিলাম আমার একমাত্র সহোদর কে। সহোদর কে বললাম,
"আনজুম সুনয়নার কথা তুই তো জানিস, সুনয়না ফোন দিয়েছিলো "আনজুম বললো, "সুনয়না আপু কি বললো? " আমি বললাম সে পার্কে যেতে বলেছে আমাকে। তুমি বাসস্ট্যান্ডে আসো পরে বিস্তারিত কথা বলবে। আমি তার কথা আবার বাবার কথার মতো মূল্যায়ন করি, যদিও সে আমার ছোট। তার সিদ্ধান্ত বাবার সিদ্ধান্তের মতো নিখাদ ভেজালহীন। বাসস্ট্যান্ডে গেলাম তারপর আনজুম আমাকে তার বাইকে করে পার্কে নিয়ে গেলো। পার্কে পৌঁছতে আনজুম আমার ফোন থেকে সুনয়নাকে কল দিলো। হিমু আড্ডার সামনে সুনয়না কে পেলাম সুনয়নাকে দেখার পর অতীতের সকল ব্যাথা মূহুর্তের মধ্যে ভুলে গেলাম। সুনয়না কিছু বললো না শুধু কাঁদছে আমি আমার কঠিন স্তরটাকে আর রাখতে পারলাম না ভেঙ্গে দিতে হলো। সুনয়না বললো, "আমরা আবার কি হাসিমুখে চলতে পারি না বাকি দিনগুলোতে, তুমি চলে যাওয়ার পর কোনো পুরুষ মূখে আর শান্তি খুজিনি "আমি কিছু বললাম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। আনজুম আর সুনয়নার দিকে পাল্টে পাল্টে তাকাচ্ছি। আনজুম পায়ে পড়ে গেলো আর বললো, "তুমি তাকে ফিরে দিও না, তোমার ভেতর থেকে সিদ্ধান্ত নাও বাইরে থেকে নিও না। " আমিও কোনো নাকচ না করে সেদিন জীবনের সবচেয়ে বড়ে সিদ্ধান্ত নিলাম। আস্থাশীল মানুষ বলতে সুনয়না আর আনজুম ছাড়া এ পৃথিবীতে আমার আর কেউ নাই। হয়তো সেদিনের আমবস্যার চাঁদ পূর্নিমা হয়েছে আজ। দূরত্ব বেড়ে যায় ভুল বোঝাবোঝি থেকে, কিন্তু চোখের ভাষা তো মনেরই কথা বলে।

