শেষ কোলাহল
শেষ কোলাহল
বাবুটা আজ আসবে বলে অর্পিতা বেশ বাড়াবাড়ি করছে। এ বয়সে ওর অত ধকল সহ্য হবে না তবু ও নিজে হাতে সব কিছু করতে চায় । আমি বারন করছিলাম শুনলো না, বললো "দাদু ভাই আমার হাতের লুচি ভালো বাসে আমি করে দেবো। তুমি ছেলে ওপর রাগ করেছো নাতির সাথে কথা বলবে না। "
আমি বললাম " কৈ আমি তো বলি , কিন্তু ওদের চ্যাচামেচি আমার ভালো লাগে না। ও ওর বাবার মতই স্বার্থপর, তোমার হাতের লুচি খেতে নয় টাকা পয়সা হাত খরচ বাগাবে বলে আসছে।"
ও বললো " রাখো আমার টাকা আমি দেবো তোমার কি? "
আমাদের নাতির বয়স , চৌদ্দ পোনেরো এ বয়সে হাতে আইফোন। মাসে দুই হাজার টাকা হাত খরচ পায়। তারপর অর্পিতার কাছে থেকে টাকা নেয় মাঝে মাঝেই। কোনো রুচি নেই। এ বাড়িতে এসে কোলহল করে কি সব পঞ্চাবী গান চালিয়ে নাচা নাচি করে।
ওকে আমার পছন্দ নয়। কারণ কেউটে সাপের বাচ্চা কখনো ঢোড়া সাপ হয়না। ওর মা বিয়ের আগে যেনো ভাজা মাছটা উল্লটে খেতে জানতো না। অথচ বিয়ের পর পর একদিন অফিস থেকে এসে বললো ওর নাকী টাকা চুরি গেছে। আমার বৌ ওদের ঘরে গিয়ে ঘর গুছিয়ে টুছিয়ে দেয়। অর্পিতা আসলে কাজ করতে ভালো বাসে। ও বলে কাজ না করলে বুড়ি হয়ে যাবো। কাজ না থাকলে এখনো ছবি আঁকে।
শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলো বৌমা , " তোমার মা আবার টাকা নেননি তো কোন দরকার, উনাদের টাকার দরকার নেই জানি। কিন্তু উনাদের কাছে থেকে কেউ সাহায্য নিতে এসেছিল তখন ঐটাকাটা দিয়ে দিয়েছে।"
সেই দিন ওদের আমি যাদবপুরের বাড়িতে সিফ্ট হয়ে যেতে বলে ছিলাম, আর বলেছিলাম " খোঁজ খবর নিয়ে দেখো এবছর তোমার অফিসের ক্যালেনডারটা তোমার শাশুড়ি মায়ের আঁকা তাই ওর আমার টাকা ছোঁয়ার প্রয়োজন পরে না। সেই দিন পর থেকে এতো বছর হয়ে গেলো আমি ওদের সাথে কথা বলি না।
ও বলে " ও পাহাড় মতো পাষান, নিরব আর আমি সমুদ্র সৈকতে মতো কোলাহল ভয় তবুও কিভাবে এতো বছর সংসার কাটালাম ভেবে পাইনা।"
ও সব অপমান সহ্য করে নিলেও আমি পারি না। ও দুঃখ পেলে যদিও মেঘে মতো আমার কাছে এসে আমাকে ভেজায়। আর সমুদ্রের মত সব দুঃখ কষ্ট কিন্তু গ্রহন করে নেয়।
বাবু এলো কিন্তু লুচি তরকারি খেলো না। ও gym ভর্তি হয়েছে সিক্স প্যাক তৈরি করবে তাই নো আয়েলে ফুড। কিন্তু ও অর্পিতার সাথে কেন যেনো চ্যাচিয়ে কথা বলছিলো। হাতখরচের জন্য ও পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে ছিলো। অর্পিতা দেয়নি ওকে। ও বোধহয় বললো " ছেলে পুলে নাতি নাতনী দের বেলায় তোমাদের পয়সা নেই অথচ গবীর লোকজন নতুন জামা কাপড় দিয়ে সোয়াপ করতে তো ছাড়ো না এই ঘাটে যাওয়ার বয়সেও"
আমি ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করে দিলাম। বললাম " এ বাড়িতে কোন কোলাহল চলবে না"
ঘুরে দেখি অর্পিতা শোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কেমন একটা করছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর মাথাটা কোলে নিয়ে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম " তোমার কি হয়েছে ওরিও? "
ও বললো " কিছু না তোমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরি পিলিজ, আজ থেকে আর দেখো এ বাড়িতে আর কোলাহল হবে না।"