গুলাল আবু বকর ‹›

Comedy

3  

গুলাল আবু বকর ‹›

Comedy

সামনাসামনি মিথ্যেকথা

সামনাসামনি মিথ্যেকথা

4 mins
329


“সামনে দাঁড়িয়ে কেউ মিথ্যে বললে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কি?” একবার আমার সামনে যখন এই প্রশ্ন দাঁড় করানো হয়েছিলো, আমি একটি লিখিত জবাব তৈরি করেছিলাম। নিচের অংশটুকু পড়লে সেসব জলবৎতরলং হয়ে যাবে।


মিথ্যে দু’ধরণের হয়। এক, সামনাসামনি মিথ্যে বলা। দুই, পিছনে পিছনে বা অসাক্ষাতে বলা। পিছনে পিছনে মিথ্যে কথা বলায় কী ধরণের প্রতিক্রিয়া হয় আজ সেটা আলোচনা করছি না। এটার জন্য অন্য কোনোদিন মুখ খুলবো।

এখন তাহলে সামনাসামনি মিথ্যে কথা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। মিথ্যে কথা বড়ই খারাপ ’বস্তু’। তবে একেবারে সামনাসামনি মিথ্যে বলা পিছন পিছন মিথ্যে বলার চাইতে ঢের ভালো। অর্থাৎ একপ্রকার মিথ্যে অপর প্রকার মিথ্যের থেকে উপরেই রাখছি। অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত ছাড়া উপায় নেই।

এবার মিথ্যার ফলে আমার শরীরে উটকো কিছু প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস বুঝিয়ে বলা দরকার। হিসাব কষে শরীরের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার অ্যাকিউরেট সংখ্যাটা বলতে পারবোনা এই মুহূর্তে। কিন্তু সামনাসামনি মিথ্যায় আমার একাধিক প্রতিক্রিয়া হয় বলা বাহুল্য, এরমধ্যে জটিলগুলো বাদ দিয়ে কিছু সরল উদাহরণ নিয়ে কথা হতে পারে। অন্যথায় ভাবতে পারেন আমি হয়তো এখানে মিথ্যে কথা বলছি। 

এইপ্রকার সন্দেহ থেকে আবার আপনার শরীরে কী কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখতে পাওয়ার সুযোগ আমার নেই।.....


ধরে নিচ্ছি, আমার চেনাজানা একজনের সাথে অনেকদিন পর হঠাৎ দেখাসাক্ষাৎ হলো। আমাকে দেখেই সে চমকে উঠে বললো, “ইস্ কি রোগা হয়ে গেছিস্, শরীরের যত্ন-টত্ন নিস নি নাকি! দাঁড়া, তোর বাড়িতে এটা বলে দিচ্ছি, তোর প্রতি কোনো খেয়ালই তারা রাখেনা....”

শুনে আমি আকাশ থেকে পড়ি। সত্যি কথা, আমি একটুও রোগা হইনি। আমার ওজন গত চার সপ্তাহে দু’কেজি বেড়েছে, এনিয়ে বরং আমি চিন্তিত। নিয়মিত হাঁটাচলা করি, ব্যায়াম করি। ঠিকঠাক খাচ্ছি। এর বেশি যত্ন আর কাকে নিতে বলবো! আমার বাড়িতে বলে উনিই বা কী করবেন? তারা কি আমাকে হসপিটালের ‘আই সি ইউতে’ ভর্তি করে দেবে?

ওর এইরূপ সামনাসামনি মিথ্যে বলায় আমি একটু ঘাবড়ে যাই। আসলে উনি তো চাইছেন, ওনার একটা ছেলের ব্যাপারে আমি একটু চেষ্টা-বেষ্টা করি। সেই ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সেজন্য আমার শরীরকে এরকম রোগা করে দেওয়ার দরকার কি ছিলো!

এবার আরেক রকম মিথ্যের প্রসঙ্গ বলি, খুব কম বিস্তারে। 

সবসময় তো আর বুঝেশুনে বেছেগুনে জামাকাপড় পরে বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠেনা। হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই পরে ফেলি। একবার একটা জামা কিনে বেশ পস্তেছিলাম। জলে ধুয়ে দেওয়ার পর ভুর ভুর করে রঙ উঠে যাচ্ছে। জামার নানা জায়গায় ছোপ ছোপ দাগ হয়ে গেলো। কোথাও রঙ আছে, কোথাও নেই। কিছু না ভেবে সেটা গায়ে চাপিয়ে একদিন বিকেলে বের হয়েছি। পথে দেখা এক উকিল সাহেবের সাথে। দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিলো। লক্ষ্য করলাম, তার চোখদুটো বারবার আমার জামার নানা জায়গায় ঘোরাফেরা করছে। একসময় উনি বললেন, “তোমাকে আজ বেশি স্মার্ট দেখাচ্ছে। আমার ছেলেটা কয়দিন ধরে শুধু জ্বালাচ্ছে বুঝলে। তার একটা নতুন ফরমাটের জামা কিনে দিতে হবে। সে বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিতে পারছে না। বোঝো কি অবস্থা! তোমার এই শার্টটা কোন্ শপিং মল থেকে কিনলে?”

মুচকি হেসে বললুম, “এ জিনিস এখানে পাবেন না, জামাইবাবু মায়ানমার থেকে পাঠিয়েছেন। আপনি কি আর মায়ানমার যাবেন?”

বলে আমি একপ্রকার পালিয়ে এলুম, আর পিছন ফিরে তাকাই নি। এই ছিলো আমার প্রতিক্রিয়া। যেমন বাঘা ওল.....

একটা মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আরেকটি মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া।


সমাজে অনেকে থাকে, মিথ্যা যাদের পুঁজি। তারা মিথ্যা বেচাকেনা করে। আমরা যারা শ্রমজীবী মানুষ সত্য হাতড়ে হাতড়ে বেড়াই। কখনো ধরতে পারি, কখনো ফস্কে যায়।

আমি যুক্তিবাদী মানুষ, রাশিফলের ধারেকাছে যাই না। তবু নিছক মস্করা করে কোথাও একবার লিখেছিলাম, কোন্ কোন্ জাতক/জাতিকার মিথ্যা বলার প্রবণতা আছে।

এখন বলছি, উল্টো কথা। কর্কট রাশির জাতক/জাতিকা নাকি মিথ্যা বলার সময় উদ্বেগ, অস্থিরতায় ভোগেন। যেমনটা আমার নিজের ক্ষেত্রে হয়। আমার রাশি আমি কখনো দেখিনি।

একটা কথা জেনেছিলাম, যারা নাকি অতি নাটুকে হয় তারা মিথ্যাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। বানিয়ে বানিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলায় তাদের অনেক তৃপ্তি।

কোনো একজন আমাকে শুনিয়েছিলো, “আমার এলার্জির ধাত আছে, দাদা। সেজন্য বেশি রাগতে পারিনা। খুব যখন রেগে যাই এলার্জির সিম্পটমগুলো চাগিয়ে ওঠে। আমি নিজেকে তখন বলি, ‘বাবু রাগিস না—চেপে যা। নয়তো চুলকানি শুরু হয়ে যাবে।’ কিন্তু মিথ্যে কথা শুনলে ন্যা আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়!”


প্রতিক্রিয়ার আরও অনেক উদাহরণ আছে। আজ না হয় থাক।


মোল্লা নাসিরুদ্দিনের একটি ডাহা মিথ্যের গল্প আছে, অনেকেই হয়তো জানেন।

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কাছ থেকে যখন যার প্রয়োজন হয় গাধা ধার নিয়ে যায়। কেউ কেউ গাধা নিয়ে গিয়ে আবার ফেরত দিতে ভুলে যায়। একবার স্বল্প পরিচিত এক লোক এসে বললো, “মোল্লাসাহেব, আপনার গাধাটা খানিকক্ষণের জন্য দিতে হবে। কাজ হলেই ফেরত দিয়ে যাবো।”

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বললেন, “এখন আমার গাধা নেই। সে মারা গেছে।” 

লোকটা মুখে চুকচুক শব্দ করে বললো, “ইস্ গাধাটা মারা গেলো! আপনার তো অনেক ক্ষতি হলো মোল্লাসাহেব।”

ওমনি বাড়ির ভিতর থেকে গাধাটা জোরে ডেকে উঠলো।

লোকটি বললো, “ঐ তো হোজ্জা সাহেব, গাধাটা ডেকে উঠলো—।”

নাসিরুদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, “যাও তো বাপু, যে লোক আমার কথার থেকে আমার গাধার ডাক-কে বেশি বিশ্বাস করতে পারে তাকে আমি কীভাবে বিশ্বাস করে গাধা দেবো?”


সত্য বললে নাকি কোনোরকম মাথা খাটানোর দরকার হয়না, কিন্তু মিথ্যা বললে মাথা খাটাতে হয়। মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন এইরকম কথা বলেছিলেন।

খুব হিসেব নিকেষ করে একটা তথ্য আমি পেয়েছি। আমার সামনাসামনি কেউ যখন মিথ্যে কথা বলে, বুঝে নিই, কোনো রাজনীতিকের ভূত ওর ঘাড়ে চেপে বসে আছে। তখন আমার যে যে প্রতিক্রিয়া হয় তার পরিমাপ হলো, আমি ৯০% চুপ করে যাই এবং ১০% কথা বলি, ৭৫% রেগে উঠি আর ২৫% মাথা ঠাণ্ডা রাখি। কথাবার্তা শেষ হওয়া মাত্রই ১০০% পালাতে ইচ্ছা করে। কারণ, সাঁটিয়ে চড় কষাতে ইচ্ছা হলেও পারিনা। সম্ভবত ইহা একটি বৈজ্ঞানিক সত্য। 


এইখানে যাহা কিছু উপরে বলা হইলো সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে বিশ্বাস করিবেন। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিতে অপারগ হইতেছি।


শুধুমাত্র এই দায়িত্বটা নেবো :— পারেন তো মিথ্যুকরা আমার থেকে ব্যবধান রাখুন।


আমার অপছন্দের তালিকার সবচেয়ে উপরে আছে «মিথ্যাকথা» নামক ‘বস্তু’।

             || আজ আসি ||


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy