প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকার
প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকার
কথায় আছে 'যারা কঠোর পরিশ্রম করে তারা কখনও হাল ছাড়ে না!' লড়াই তা সে যতই কষ্ট কর হোক না কেন সেটাই লক্ষ্যের দিকে পৌঁছে দেয়। তেমনই পুনে'র প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকার। তাঁর যাত্রা এভাবেই অনুপ্রেরণা দেয়। প্রতিক্ষা একজন সাফাই কর্মী হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে কাজে যোগ দেন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিবাহ হয়েছিল তাঁর। তার ঠিক তিন বছরের মাথায় হারিয়েছিলেন স্বামীকে। আকস্মিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল তাঁর প্রাণ। তারপর বলতে গেলে একপ্রকার পথে গিয়ে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায়, শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্কে সাফাইকর্মীর কাজকেই বেছে নিতে হয়েছিল তাঁকে।
প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকার (Pratiksha Tondwalkar)। হ্যাঁ, এতক্ষণ তাঁর কথাই হচ্ছিল। তিন দশক পেরিয়ে ৫৮ বছর বয়সি পুনের বাসিন্দা আজ স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (Assistant General Manager)। না, কোনো আকস্মিক ভাগ্যবদল নয়। দৃঢ়তা, অধ্যবসায় এবং একাগ্রতার জেরে যে সমস্ত প্রতিকূলতাকেই জয় করা যায়, তাই প্রমাণ করলেন তিনি।
বিবাহের আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন প্রতীক্ষা। তার প্রায় ৭ বছর পর ফের পড়াশোনায় ফেরেন তিনি। স্টেট ব্যাঙ্কে সাফাইকর্মী হিসাবে তখন কর্মরত প্রতীক্ষা। অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে বই নিয়ে বসে পড়তেন তিনি। এভাবেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা তাঁর।
এখানেই শেষ নয়। ১৯৯২ সালে মুম্বাইয়ের ভিক্রোলিতে নাইট কলেজে ভর্তি হন প্রতীক্ষা। ১৯৯৫ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকতা সম্পূর্ণ করেন তিনি। সে-সময় ব্যাঙ্কের সহকর্মীদের থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি। বিভাগীয় পরীক্ষা দিয়ে কেরানীর পদে উন্নিত হন তিনি। তারপর সেখান থেকে প্রোভিশনাল অফিসার এবং ম্যানেজার।
প্রতীক্ষা ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তার স্বামী ব্যাংককর্মী প্রমোদ টন্ডওয়ালকার। প্রতীক্ষা জানান, স্বামীর উৎসাহেই এত পথ পাড়ি দিতে পেরেছেন তিনি। তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বেশ আনন্দেই কাটছে প্রতীক্ষার জীবন।
তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যই নয়। গত বছর ন্যাচুরোপ্যাথিতেও স্নাতকতা সম্পূর্ণ করেছেন প্রতীক্ষা। জানাচ্ছেন, অবসরের পরে মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসাতেও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করবেন তিনি। সেইসঙ্গে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করবেন দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রতীক্ষার এই লড়াই-ই এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের…
প্রতীক্ষার এই স্বপ্নময় যাত্রা সহজ মনে হলেও, তিনি এতে যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তা স্যালুট জানানোর মতো। তবে এই লড়াইয়ে পরিবারকে একলা ছেড়ে দেননি কিন্তু প্রতীক্ষা। সমান ভাগে আগলে রেখেছেন। প্রতিক্ষার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেও যথেষ্ট শিক্ষিত। শুধু তাই নয়, পুনের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরিও করছেন। তবে মেয়ে এখনও কিছু করছেন না। পড়াশুনা করছে তাঁর ছোট ছেলে। তাই প্রতীক্ষা নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ির দায়িত্বও সামলে যান সমান ভাবে।
জীবন সংগ্রাম ও সাফল্য নিয়ে প্রতীক্ষা বলেন, ‘যখন ফিরে তাকাই, মনে হয় অসম্ভব। কিন্তু আমি এটা পেরেছি ভেবে আনন্দ হয়। যদি কেউ বিষাদগ্রস্ত হন, তাহলে আমার জীবনের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারেন।’