Sutapa Roy

Comedy

3  

Sutapa Roy

Comedy

পরাস্ত

পরাস্ত

4 mins
288



সূর্যের স্বভাবে এক আশ্চর্য রঙ খেলা করে, ঠিক যেন গিরগিটি, দুনিয়া তোলপাড় হলেও ও ঠিক সুট করে সেঁধিয়ে যাবে; আড়ালে যে যাই বলুক, ওই শিল্পকে রপ্ত করা চাট্টিখানি ব‍্যাপার না, অফিসের কাঞ্চনদা একবার চেষ্টা করেছিল, দেখে শেখা আর ঠেকে শেখার মধ্যে তফাৎ আছে, অতএব ডাহা ফেল।


বস যদি কোন পুরুষ হয়, সূর্য সব ডিসকাউন্টের খবর,

শেয়ার বাজার কিংবা মদের ব্র‍্যান্ড নিয়ে এমন গল্প জুড়বে, বাঘা বাঘা লোক-ও খাবি খেতে বাধ‍্য। আর যদি 

কোন ম‍্যাডাম হন তো বুটিক, পার্লার, সঙ্গীত মেলার ঝাঁপি

খুলে বসবে, সাথে সাথে চলবে টুকটাক গিফ্ট দেওয়া বা সময়মত কিছু জোগাড় করে এনে দেওয়া; এরকম চলতে

থাকলে ডিপেন্ড করতে বাধ‍্য হবে। একবার ঘোষদা ঐ বিদ‍্যে রপ্ত করতে গিয়ে এক জাঁদরেল বস মিস জুঁই-এর কাছে খেয়েছিল মোক্ষম চড়।


এটা একটা পুরোনো ব্রিটিশ ফার্ম, কোনরকমে টিকে আছে কলকাতার বুকে। ক-দিন ধরে শোনা যাচ্ছে হেড অফিস থেকে নতুন বস আসছে; শোনার পর থেকে সূর্য টাইমের আগেই অফিসে চলে আসছে, কি জানি হঠাৎ করে নতুন বস এসে পড়লে যদি ওর ইমেজ খারাপ হয়।

অবশেষে এলেন এক মাঝবয়সী ম‍্যাডাম, সূর্য-ও তক্কে তক্কে আছে, কিভাবে আলাপ করে আলাদা জায়গা করা যায়। একদিন অফিস খালি হতে সূর্য গেল ম‍্যাডামের কেবিনে। কথার ফাঁকে, হঠাৎ ঝুঁকে পড়া সূর্যের কাছাকাছি হতে চাইলেন ম‍্যাডাম, সূর্য ঘামছে, ম‍্যাডাম কি চাইছেন? এ বিদ‍্যে তো তার জানা নেই; বার বার বউ মালার মুখটা মনে পড়ছে, একবার বাড়ি অব্দি এ খবর পৌঁছলে আর বাড়ি ঢোকবার উপায় থাকবে না। ম‍্যাডামের ঘর থেকে কোনরকমে ছিটকে বেরিয়ে আসে সূর্য, দারোয়ান সিংদেও বাঁকা চোখে তাকায়; আজ আর বাস নয়, ট‍্যাক্সি ধরে সূর্য, অফিস যেন ওকে খামচাতে আসছে। বাড়িতে ঢুকতেই সূর্য-র নার্ভাস ভাবটা বউ-এর

চোখ এড়ালো না, ছেলের হোম ওয়ার্ক দেখার ছিল, তাই

 এ যাত্রায় কোনক্রমে বেঁচে গেল। পরদিন অফিস যেতেই আকাশ বলল, "সূর্যদা একবার ম‍্যাডামের কেবিনে যান, ম‍্যাডাম আপনাকে ডেকেছেন,"- বস বলে কথা, ডাকলে তো যেতেই হবে, পালোয়ানরা যেমন কুস্তিতে নামার আগে তেল মেখে প্রস্তুত হয়, সূর্য-ও মনে মনে তৈরী হয়ে কেবিনের দরজা খুলে বলে-"May I come in Madam?"

চেয়ারে বসেই ম‍্যাডাম জবাব দিলেন-" Yes,come in darling." সূর্য ঘরে ঢুকে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ম‍্যাডাম বার বার বলায় চেয়ারে বসতেই, বেহারা-কে ডেকে ম‍্যাডাম দু-কাপ কফির অর্ডার দিলেন, যে সূর্য এই

কেবিনে ঘন্টার পর ঘন্টা আজুরে কথা নিয়ে কাটাতে পারত, সে এখন পালাবার পথ খুঁজছে; কফি খেতে খেতে ম‍্যাডাম জিজ্ঞাসা করলেন, "সন্ধ‍্যে বেলায় কি করছ, any plan?" সূর্য বলে উঠল-"Home work,Madam"খানিক মাথা চুলকে বলল-"For my son, Madam." বস রিনি বোস বললেন,"ওসব Madam বলা ছাড়, I am Rini, only Rini." যে সূর্য সন্ধ‍্যে সাতটার আগে অফিস ছাড়ে না,

সে বিকেল পাঁচটায়ে সিধে বাসস্টপ, কানে এখনো বাজছে ঘোষদার টিটকিরি। তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে মালা ভাবল কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে বোধ হয়, যদিও

সেরকম সদুত্তর কিছু পেল না, ছেলে বুবাই-এর করা কটা অঙ্ক চেক করতে যাবে এইসময় ফোন বেজে উঠল, মালা পাশের ঘর থেকে ফোনটা এনে দিল, স্ক্রীনে নাম দেখে সূর্য

ধরতে চাইছে না দেখে মালা বলল, "ইনি তোমাদের নতুন ম‍্যাডাম না, বাপ রে! এরমধ্যে এনাকেও পটিয়ে ফেলেছো,

ধর ধর ফোন রিসিভ কর।" ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল-"Hi darling, what are you doing now?" সূর্য আবার বলে উঠল-"Home work, Madam."সামলাতে না পেরে ঝপ করে ফোনটা কেটে দিয়ে মালার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি হেসে বলল,-"যা! কেটে গেল।" মালা সরলভাবে বলল,-"আবার কর, কিছু দরকার আছে মনে হয়।" সূর্য অস্বাভাবিকভাবে চেঁচিয়ে বলে উঠল-" না কোন দরকার নেই।" বুবাই আরো মনোযোগ দিয়ে অঙ্ক কষা শুরু করল, ও ভাবল, ওর ভুল অঙ্কের কারণে বাবা বুঝি রেগে গ‍্যাছে। পরদিন অফিস যেতেই দেখল, তার টেবিলে একটা সুদৃশ‍্য গিফ্ট প‍্যাকেট, চারিদিকে তাকিয়ে নিয়ে দ্রুত

হাতে খুলে ফেলল প‍্যাকেটটা, বার্থ ডে কার্ড আর গিফ্ট, তালেগোলে সূর্য নিজের জন্মদিন নিজেই ভুলে গেছিল, অফিসে কে এমন হিতৈষী আছে যে এত সুন্দর গিফ্ট দিয়ে তাকে তার জন্মদিন মনে করাচ্ছে, সাথে মালার ওপর অভিমান হল ওর জন্মদিনটা বেমালুম ভুলে যাওয়ার জন‍্য; প্রেরকের নাম দেখে পুরো প‍্যাকেট-টাই হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল আর কি, ওর বর্তমান সময়ের মূর্তিমতী বিপদ-"রিনি বোস।"প‍্যাকেট-টা তাড়াতাড়ি ডেস্কে ঢুকিয়ে, ও কাজ নিয়ে বসলো, মনে মনে ভাবল তার গিফ্ট থেরাপি বুমেরাং হয়ে তার-ই কাছে ফিরে আসবে, এ কি কেউ ভেবেছিল। দিন দিন রিনি বোসের গায়ে পড়ার প্রবণতা সূর্য-র কাছে অসহ‍্য হয়ে উঠছে, মুখে কিছু বলতে পারে না, ঘরে মালাকে শেয়ার করলে ও যদি ভুল বোঝে। সূর্য একটা সিদ্ধান্তে এল, এ অফিস ওকে ছাড়তে হবে; এরপর সবাইকে অবাক করে সূর্য-র তেল-শিল্প বন্ধ হল। সবার জিজ্ঞাসু চাহনিতে ও আরও কুঁকড়ে গেল;

অফিসে শিকড় গেড়ে বসা সূর্যকে দ‍্যাখা গেল নতুন চাকরির অ‍্যাপ্লাই করতে। ঘোষদা মনে মনে খুব খুশি, ওনার চান্স বেড়ে গেল, এই ভেবে। সূর্য কালে কচ্চিৎ ম‍্যাডামের কেবিনে যায়, গেলেও পাশের টেবিলের আকাশকে ডেকে নেয়। মনে মনে নিত‍্য প্রার্থনা করে চলে,

হয় ম‍্যাডামের বদলি হোক আর নয়তো তার নিজের নতুন

চাকরি হোক, দ‍্যাখা যাক কোন শিকেটা আগে ছেঁড়ে।

ইন্টারভিউ দেওয়া নতুন একটা চাকরি প্রায় কনফার্ম হয়ে গ‍্যাছে, অফিসে একমাস আগে নোটিশ করতে হবে, নোটিশ লেটারটা হাতে নিয়ে সূর্য ম‍্যাডামের কেবিনে পৌঁছল, পর্দা সরিয়ে ঢুকতে যাবে, শুনতে পেল ম‍্যাডাম

কাকে ফোনে বলছে-"আপনার ইনফরমেশনগুলো, আমার খুব কাজে লাগছে মিঃ শ্রীবাস্তব, আর ঐ তেলুয়া সূর্যকে এমন ঘোল খাইয়েছি যে ও ওর টেবিলেই বসে থাকে কাজ নিয়ে, আমার রুমে আসতে ভয় পায়।"

সূর্য একি শুনছে, শ্রীবাস্তব তো ওদের আগেকার বস, হাতের লেফাফা ওর হাতেই ধরা রইল, এইসময় রিনি বোসের সঙ্গে ওর চোখাচুখি হতেই ওনার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে অস্ফুটে বেরিয়ে এল-"Home work, madam."

বলেই একছুটে নিজের টেবিলে, সেই যে ফাইল আর কম্পিউটারে ডুবে গেল; কয়েকদিন এরকম-ই চলল, আসতে আসতে আকাশ, বাদল, এদের চেষ্টায় সূর্য নর্মাল হল, সকলের আন্তরিকতায় অফিস ছাড়ার ইচ্ছেও ত‍্যাগ করেছে, তবে জীবনের এই পরিবর্তন আর ওর আশ্চর্য অভিজ্ঞতার কথা মালাকে এখনো অব্দি বলে উঠতে পারে নি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy