Sutapa Roy

Fantasy Inspirational

3  

Sutapa Roy

Fantasy Inspirational

প্রাপ্তি

প্রাপ্তি

3 mins
266



হৃদি কড়াইয়ে মাছ ভাজার তেলটা গরম করতে দিয়ে সামান্য অন‍্যমনস্ক ছিল, বাড়ির কাজের মেয়ে রোশেনারার চিৎকারে ভাবনার ঘোর কাটে-" ও বউদি তেলটা তো জ্বলে যাচ্ছে।" দ্রুত হাতে গ‍্যাসটা অফ করে হৃদি, আজকাল এই হয়েছে, থেকে থেকে কি যে হয় হৃদির। ফেলে আসা দিনের কথা চিন্তা করেই দিন কেটে যায়, আর যখন তখন কাজে ভুল হয়ে যায়। যেমন সেদিনই পুপুনের টিফিন তৈরী করছে, হঠাৎ মনে এলো কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে আবৃত্তি করা সুনীল গাঙ্গুলীর সেই কবিতাটা-

" একটি কথা বাকি রইলো থেকেই যাবে

মন ভোলানো ছদ্মবেশী মায়া

আর একটু দূর গেলেই স্বর্গনদী

দূরের মধ্যে দূরত্ববোধ কে সরাবে।"

- এ হে পুপুনের টোস্টটা পুরো পুড়ে গেল, নিজেরই এতো খারাপ লাগছিল হৃদির, আবার করে দিল। কবিতাটার মতো তারও মনে যে কি কথা বাকী রয়ে গেল। মনে পড়ল, কলেজে প্রথম যে বছর দেওয়াল পত্রিকা বেরোল,

দায়িত্বে ছিল হৃদিই, সবার মন কেড়েছিল সেই পত্রিকা।

কত বছর হয়ে গেল, পুপুনের হোম ওয়ার্ক রেডি করানো

ছাড়া, কালি কলমের সঙ্গে সম্পর্ক নেই হৃদির। অথচ এমন একদিন ছিল, যখন কলেজ ক‍্যান্টিনে সবাই জড়ো হোত হৃদির কবিতা শুনবে বলে; বাংলা অনার্সের ভ্রমর আবার গান বাঁধত হৃদির কবিতা নিয়ে। থার্ড ইয়ারের ফিজিক্স অনার্সের সুপ্রকাশও তো একদিন ভিড়ের মাঝে 

এসে দাঁড়িয়েছিল হৃদির কবিতা শুনতে, আজ কি আর মনে পড়ে সুপ্রকাশের সেসব কথা। " এ কি দশা হয়েছে জামাপ‍্যান্টগুলোর, একটু আয়রন করে রাখতে পার নি,

কি এতো ভাবো দিনরাত"-ভাবনার ঘোর কাটে হৃদির, কাটা ছন্দ ফিরে আসে বাস্তবের মাটিতে, সুপ্রকাশের চিৎকারে, উত্তরে বলে-" এখনি করে দিচ্ছি।" " না থাক, আজ এই পরে নিচ্ছি,"- উষ্মা দেখায় সুপ্রকাশ।


মাষ্টার ডিগ্রিটা শান্তিনিকেতন থেকে করার ইচ্ছে ছিল হৃদির, সুপ্রকাশ কলকাতায় এমবিএ- তে ভর্তি হল, ওর আব্দারে হৃদিকেও কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হল। তারপর সুপ্রকাশের চাকরি, ওদের বিয়ে, পুপুন, সংসারী হৃদি আস্ত লোপাট হয়ে গেল সংসারের চাকায়।

কোথায় গেল হৃদির মনের ভাবুকতা, কাব‍্য, চোখ ছলছল

করে ওঠে, জোর করে তাড়ায় ভাবনাটাকে।


সেদিন নিউমার্কেটে দ‍্যাখা পল্লবদার সঙ্গে, লম্বা লম্বা চুল পনিটেল করে 

বাঁধা; একইরকম, এখনো বোহেমিয়ান, হৃদিকে দেখে যেন হাতে স্বর্গ পেল। পুপুনের জন্য কেক বানাবে বলে কয়েকটা জিনিস কিনতে গেছিল, পেছন থেকে কিল খেয়ে তাকিয়ে দ‍েখে পল্লবদা। " কি রে কেমন চমকে দিলাম বল, তোর যদি তাড়া না থাকে তো চল কোথাও বসি।" এরপর কফি খেতে খেতে পল্লবদা বলল-" তোকে না বলে তোর দুটো কবিতা চুরি করে নিয়েছি।" "মানে"- হাসতে হাসতে বলে হৃদি। " মানে কলেজে লেখা তোর দুটো কবিতা আমি রেখে দিয়েছিলাম, সেগুলোই আমার  ম‍্যাগাজিন "বাউন্ডুলে"-তে ছেপে দিয়েছি, আজ তোর সঙ্গে 

দ‍েখা হল বলে কথাটা বললাম।" উত্তরে খানিক গম্ভীর হয়ে হৃদি বলল-" ভালই করেছো, হাত দিয়ে নতুন কিছু তো আর বেরোবে না, ও দুটোর মধ্যে আমার সাহিত্যিকসত্তার স্মৃতিটুকু থাক।" হৃদির মনখারাপের ভাবনাটা পল্লবকে স্পর্শ করল, স্বভাব উচ্ছলভঙ্গীতে বলল-" কেন,

সুপ্রকাশ কি তোর পেন, খাতা সব কেড়ে নেবে কবিতা লিখলে, লিখতেই তো পারিস, আমার ম‍্যাগাজিনের তাহলে একটা ভাল হিল্লে হয়ে যায়, "বাউন্ডুলে"-র বাউন্ডুলেপনা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।" হৃদি উত্তরে বলল-" না সময়ও হয় না, তাড়াহুড়োর জীবনে আর যাই

হোক, কাব‍্য হয় না, ইচ্ছেটাও মরে গ‍েছে, শুধু অদ্ভুত ভাবনাগুলো মাঝে মাঝে এসে হাজির হয়।" " রাখ তোর কথা"- বাধা দিল পল্লব,-" আমি তোদের বাড়িতে যাব একদিন, সুপ্রকাশের সঙ্গে দ‍েখা হয় নি অনেক দিন,


তোর পুচকেটাকেও আদর করে আসব আর বলে আসব

তার মা একজন ভাল কবি।" আরো কয়েকটা জিনিস কেনার ছিল, হৃদি উঠে পড়ল।


ওমা হৃদিকে চমকে দিয়ে পল্লবদা সত‍্যিই একদিন হাজির হল ওদের বাড়িতে। বাড়ির সবাই পল্লবের মতো এক মূর্তিমান অবাস্তবকে দেখে চোখ কুঁচকেছিল, কাব‍্য ছাড়া জীবনে আর কিছু করতে পারে নি শুনে সুপ্রকাশও অদ্ভুত চোখে তাকিয়েছিল পল্লবের দিকে। চমকের আরো বাকী ছিল, হৃদির আপ‍্যায়ন শেষ হলে পুপুনকে আদর করতে

করতে পল্লবদা ঝোলা থেকে বার করল একটা বই- সুন্দর মলাটে " কাব‍্য কথা"- তলায় লেখা ভাবুক। হৃদিকে বলল-" এই নে, তোর দুটো নয়, সব কবিতাই এখানে আছে,আর তলায় ওটা তোর ছদ্মনাম, এবারের বইমেলায় খুববিক্রি হয়েছে, আর এই গুনে নে তোর রয়ালটির টাকা।"বাড়িশুদ্ধু সবাই ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে পল্লবের দিকে তাকিয়েরইল, শুধু পুপুন লাফিয়ে লাফিয়ে বলতে থাকল-" মাই মাম মাম ইজ আ পোয়েট"- হৃদির মন গুনগুনিয়ে বলে উঠল-" হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy