পঞ্চাশতম প্রথম সাক্ষাৎকার দিবস
পঞ্চাশতম প্রথম সাক্ষাৎকার দিবস
প্রীতমবাবু স্ট্র দিয়ে সর সর আওয়াজ করে গ্লাসের জুসটা পুরো শেষ করে সামনে বসে থাকা ওনার গিন্নির দিকে তাকালেন। ওনার গিন্নি বীনাদেবী এখনো সেই একভাবে বসেই আছেন। ওনার সামনে রাখা জুসের গ্লাসটাও ওয়েটার যেমন রেখে গেছে ঠিক তেমনি পড়ে আছে। তা দেখে প্রীতমবাবু রসিকতা করে বললেন, "ও গিন্নি, মনে আছে আমরা সেই পুরী ঘুরতে গিয়ে একটা ডাবের মধ্যেই দুটো স্ট্র রেখে কেমন খেয়েছিলাম। তুমি কি আজ সেই দিনের স্মৃতি পুনঃমন্থন করতে চাও? "
প্রীতমবাবুর এমন কথা শুনে বীনাদেবী চোখ গরম করে ওনার দিকে তাকালে প্রীতমবাবু বললেন, "আরে এতো রাগের কি আছে বলতো?"
বীনাদেবী কটাক্ষ করে বলে উঠলেন, "এই বুড়ো বয়সে তোমার কি ভীমরতি চেপেছে? লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে আর তোমার স্মৃতি পুনঃমন্থনের পড়েছে! দেখো আশেপাশের লোকে কিভাবে তাকাচ্ছে?"
প্রীতমবাবু একটু গলা উঁচিয়েই বললেন, "আরও বেশি করে দেখুক। আমরা আমাদের পঞ্চাশতম প্রথম সাক্ষাৎ দিবস পালন করে কোনো অপরাধ করছি নাকি! বরং আমাদের তো সবাইকে আরও বলা উচিত, দেখো আমরা একসাথে জীবনের পঞ্চাশটা বসন্ত কাটিয়েছি। আর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাকি বসন্তগুলোও একসাথেই কাটাবো।"
হটাৎ করে প্রীতমবাবুর এমন স্বগোক্তি শুনে বীনাদেবীর সব সংকোচ একনিমেষে গায়েব হয়ে গিয়ে পঞ্চাশ বছর আগে তাঁদের দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ-এর সেই আনন্দনুভূতি এসে ভিড় করলো মনে। নিজের অজান্তেই হটাৎ করে একরাশ লজ্জা এসে কেমন যেন এলোমেলো করে দিল বিনাদেবীকে। এদিকে প্রীতমবাবু বিনাদেবীর লজ্জার রাঙা মুখখানি দেখে ভাবপ্রবন ভাবে রসিকতা করে বললেন, "এই বুড়িবয়সে আমাকে নিয়ে ভেবে আর এভাবে লজ্জা পেতে হবে না। তার থেকে বরং তুমি তাড়াতাড়ি করে জুস্'টা খেয়ে নিয়ে চলো। আমরা পড়ন্ত বিকেলে হাত ধরে ছোলাসেদ্ধ খেতে খেতে গঙ্গার পাড় দিয়ে একটু হেঁটে বাড়ি ফিরবো। কেমন? "
বিনাদেবীও নিজের আড়ষ্টতা কাটিয়ে হাসি হাসি মুখে প্রীতমবাবুর দিকে চেয়ে মৌন সম্মতি জানিয়ে জুসের গ্লাসে মনোনিবেশ করলেন।
©Copyright Reserved