STORYMIRROR

Piyali Mukherjee

Abstract Tragedy Inspirational

4.5  

Piyali Mukherjee

Abstract Tragedy Inspirational

ফাঁসি

ফাঁসি

3 mins
413

#ডায়েরির পাতায়

ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর আগে এক শাস্তি পাওয়া মেয়েকে প্রশ্ন করলো জল্লাদ, "শেষ ইচ্ছে কি ? শেষবার কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছে থাকলে বলো। "

মেয়েটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে উত্তর দিল - "আমাকে মেরে ফেলার পর আরেকবার বাঁচিয়ে তোলা যাবে কি?"

কারণ জানতে চাওয়ায় বলল, "আমি জানি, আমি মৃত্যুর পর আর এই পৃথিবীর কিছু দেখতে পারব না। কিন্তু আমি চাই, আমি মৃত্যুর পর আরেকবার বাঁচতে।"

জল্লাদ এর প্রশ্ন, "বেঁচে কি হবে? তুমি তো বেঁচে থাকার মতন এমন কিছু করোনি যে তোমায় আবার এখানেই ফিরে আসতে হবে! তোমার বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না। তুমি এই পৃথিবীর যোগ্য মানুষ হতেই পারোনি তাই মৃত্যুই-ই তোমার একমাত্র সমাধান। হয়তো মৃত্যুর পর তুমি বেঁচে যাবে।"

মেয়েটি কথা শুনে হাসছে৷ তারপর বলল, "আপনি আমাকে দড়িতে ঝুলিয়ে মারবেন ! এই মৃত্যু আমার কাছে খুব সহজ৷ আপনি আমাকে মেরে ফেলার পূর্বেই আমি মরে গিয়েছি। মরে গিয়ে আবার মানুষকেও মেরেছি।" কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটা হাসছে।

 সবাই অবাক হয়ে দেখছে।

"তুমি হাসছো কেন? একটু পর তোমার মৃত্যু হবে। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো। চিন্তা করো ঐ জীবনে গিয়ে কি করবে , নয়তো পাপের ভাগীদার হতে হবে যে ! "

কি অদ্ভুত!! মেয়েটা হাসছেই। বুঝলাম বিন্দুমাত্রও কষ্টের কোনো ছিটেফোঁটা তার মাঝে নেই। উল্টে

জল্লাদকে প্রশ্ন করলো, " আপনি যে ফাঁসি দেন, আপনার কি কখনো কষ্ট হয়?"

-- "হ্যাঁ, হয়।"

এবার মেয়েটা অনেকটা গম্ভীর হয়ে গেলো। হাসি মুখটায় দুঃখের একটা ছাপ দেখা যাচ্ছে।

--- জানেন আমাকে ফাঁসি দেওয়ার কারণটা কি?

--- হুম।

----কি জানেন আপনি?

---- তুমি তোমার সন্তানকে নির্মম ভাবে খুন করেছো। টুকরো টুকরো করে দিয়েছো লাশটাকে।

--- হ্যাঁ, আমি আগমনীকে হত্যা করেছি। এই যে আমার গলায় দাগ দেখতে পাচ্ছেন, জানেন কেন? কারণ আমাকে প্রতিটা দিনই এইভাবেই মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই যে আমার শিরায় কাটা দাগ দেখতে পাচ্ছেন, জানেন কেন? কারণ আমায় নিয়তি যেন প্রতিটা দিন যন্ত্রণাদায়ক মুক্তির স্বাদ আগেই উপভোগ করিয়েছে।

আপনি আমাকে মেরে ফেলার পর কেন আবার বাঁচতে চেয়েছিলাম জানেন? জন্ম থেকে মরতে মরতে এই পর্যন্ত আমি কখন যে বড় হয়েছি, তা নিজেই জানিনা। মা হারা, বাবা হারা এই আমি একজন অনাথ। পরিচয় নেই আমার নিজের। নামটা কে দিয়েছে, কে জানে! টাইটেল যে মানুষ করেছে তার দেওয়া। যদিও আমি এখন আর ওই টাইটেল ব্যবহার করি না। 'সতী' বলেই এখন আমায় সবাই জানে।

দশ টাকা দিয়ে যদি একটা কনডোম এর ব্যবহার তখন করতো, তাহলে আজকে হয়তো আমাকে পৃথিবীতে এই ভাবে আসতে হতো না।

বছর তেরো হওয়ার পর যখন কাজ নেই , এক বাড়ীতে কাজ নিলাম। বছর চল্লিশের ঊর্ধ্বে এক ভদ্রলোকের বাসায়। তিন দিন যেতে না যেতেই উনি আমাকে ভোগ করে নেন। সেইদিনই মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলাম। তারপরও রোজ রাতে কনডমের প্যাকেট খুলে আমাকে ভোগ করতো। মাঝেমধ্যে কোনো সেফটি ছাড়াই, আর সকাল হলে একটা কন্ট্রাসেপটিভ ট্যাবলেট ছুঁড়ে মারতো মুখের উপর। দু'বেলা খাবার জোটানো আর বেঁচে থাকার তাগিদেই শুধু বেঁচে ছিলাম।

এই সমাজের কতো মানুষের মুখে ভালো মানুষের মুখোশ আছে জানেন! কিন্তু সবগুলো যে কখন পাল্টে যেতো আমার শরীরের কাছ এসে , তা তো আপনি জানেনই না। আমি কখনো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিনি। কখনোই না। ওরা শরীর চায়, কিন্তু বোঝে না মৃত মানুষের শরীরে আর কিই বা থাকবে! এভাবে বাসা পাল্টাচ্ছে। মানুষ পর্যন্ত পালটে যায়, শুধু আমার শরীরটা আর যেন পাল্টায় না ।

বছর বিশেক হওয়ার পর একটা রাস্তার ছেলে বিশু আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। করেও নিলো। ছেলেটার সাথেও পরিচয় সেভাবেই। কোনো এক রাতে বিছানায়। বিয়ের চারমাস পর সেও নিখোঁজ। পেটে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার কোনো উপায় না পেয়ে তাকে দশ মাস পেটে রাখি। বাচ্চাটা হয়। যখন এক বছর হয় প্রথম ' মা' ডাক শুনি আমি। জীবন যেন সার্থক হয়ে ওঠে।

কিন্তু আমি আমার আগমনীকে আমার মতো করে বড়ো করে তুলতে চাই নি। তাই তাকে মেরে ফেলি আমি। আর আজকে এইভাবে মরার জন্যই যেন আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আমি পারতাম সেই দিনই নিজেকেও মেরে ফেলতে কিন্তু আমি চেয়েছিলাম সবাই জানুক সব।

সবাই জানুক, এই সমাজ আমাকে আমার মতন করে বাঁচতে দেয়নি। তবুও এই সমাজ কোনো অপরাধ করেনি, সমাজের কখনো ফাঁসি হয়না। আমি অপরাধী। তাই আবার বাচঁতে চাই আমি৷ এই সমাজের মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখার জন্য... সময় হয়ে গেছে। চলুন, ফাঁসি দিন আমায়।

এগিয়ে গেল মেয়েটি ধীরে ফাঁসির মঞ্চের দিকে।

জল্লাদ চোখটা মুছে মুখে কালো কাপড়টা মেয়েটার মুখে বেঁধে দিলো....

(কলমে -পিয়ালী মুখোপাধ্যায় )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract