ওদের কথা
ওদের কথা
টিং টং.. বেল বেজে উঠতেই শাল্মলীর মনের ভিতরটাও খুশিতে ভরে উঠল। নিশচই অরিত্র। এইবার নিশচই আসবে সে.. এতো বড়ো দিনটা এমনি কি ভুলে যাবে?? বারবার? কতোবার?? পনেরো বছর বিয়ের প্রথম কয়েক বছরের পর থেকে আর কোনোদিন তাদের এই বিবাহবার্ষিকীর দিনটিতেও কিছু অন্যরকম দেখেনি সে। অরিত্র কাজের জন্য ট্যুরে প্রায় বছরের অর্ধেক সময় বাইরে। তবু কিছু সময় তো আসে, তবু সেটা তাদের এই সময়ে হয়না। দরজা খুলেই আবার মনটা খারাপ হয়ে যায় শাল্মলীর। সেলস্পার্সন। একটু ম্লান হেসে না করে জানলার কাছে সোফাটায় এসে বসে। তাদের দ্বিতীয় বছরের এই দিনটির কথা মনে পড়ে শাল্মলীর। তারা পাটায়া ঘুরতে গেছিল। সী বিচের সেই স্বপ্ননীল রঙ তার মনের স্বপ্নের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। অরিত্র তখন এক অন্য মানুষ, ওর কাঁধে মাথা রেখে যে কতো সময় কেটে গেছিল তার কোনো হিসেব নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল শাল্মলীর। গত দশ বছরে আর সেই সম্পর্ক নেই তাদের। মাঝে যেন দেওয়াল গড়ে উঠেছে তার অজস্র ফাটল নিয়ে। ছেলে অরিন্দম ও তেরোয় পা দিয়েছে। সেও বোধহয় কিছু বোঝে এখন.. মাঝে মাঝে মার চোখের দিকে কেমন যেন ব্যাকুলভাবে চেয়ে থাকে। তাও ও বাড়ি থাকলেও শাল্মলীর মনটা একটু ভরে থাকে। পড়তে গেছে বিকেলবেলা ফিরবে। গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেয়। শাল্মলী আর এখন বলে না অরিত্রকে আসার কথা, ভাবে নিজে মনে করলে আসবে। তবু মনে মনে আশা করে বসে থাক
ে। মনকে একটু ভাল করার জন্য একটা গল্পের বই পড়তে পড়তেই চোখ লেগে এল তার। বিকেলে অরিন্দম ফিরে বায়না ধরল পাশের মলে 'এভেঞ্জার' দেখতে যাওয়ার। শাল্মলী ভাবল তার মনটাও একটু ভাল হবে। কি ভেবে অরিত্র বাইরে থেকে একটা কাঞ্জীভরম এনে দিয়েছিল সেটা পড়ল। তারপর ছেলের তাড়ায় আর বেশী সাজগোজ করার সময় পেল না। টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে এবার তাক লাগার পালা তার। একদম সামনেই তাদের দিকে ফিরে যে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে সে আর কেউ নয়, অরিত্র। নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস হয়না। কি করে হল। অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে ছেলে মিটিমিটি হাসছে। হাসতে হাসতে অরিত্র এগিয়ে আসে। কিছু বলার আগেই অরিন্দম লাফিয়ে ওঠে..
"তাড়াতাড়ি চলো তোমরা মুভি শুরু হয়ে গেল যে"
এরপর রাতের ডিনার করে যখন রাতে একান্তে তাকে পায় শাল্মলী জিজ্ঞাসা করে,
"তোমার মনে ছিল?"
"ভুলিনি কখনোই, তুমিও ডাকতেনা আমিও বিভিন্ন কাজে আটকে যেতাম। কাল ছেলে ফোন করল, বলল আসতেই হবে। স্থির তখনই করে নিয়েছিলাম, তবু বলেছিলাম জানাচ্ছি। দুপুরের ফ্লাইট ধরে পৌঁছে বলি তোমায় নিয়ে মলে চলে আসতে"...
এতো অব্ধি বলে অনেক দিন পর বৌকে জড়িয়ে ধরে অরিত্র..
"শাড়িটায় তোমায় দেখাচ্ছিল কিন্তু ফাটাফাটি"
শাল্মলী কিছু বলতে যাচ্ছিল.. অরিত্রর ঠোঁটদুটো তাকে চুপ করিয়ে দিল।।