SHUBHAMOY MONDAL

Horror Action Thriller

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Horror Action Thriller

মশান জ্বলে শ্মশানে

মশান জ্বলে শ্মশানে

3 mins
168


 

আমার অনেক কম বয়সের ঘটনা। গ্রীষ্ম্যের বিকেলগুলোতে আমরা সবাই আড্ডা দিতাম নদীর চড়ে। তার পাশেই ছিল গ্রামের শ্মশানটা।

আমাদের এখানে, সাধারণত মৃতদেহের সৎকার গঙ্গায় গিয়েই করা হয়। আমাদের এই নদীটি আকারে ছোট হলেও নগণ্য নয়, গঙ্গার অন্যতম উপনদীগুলির মধ্যে তার নামটাও উল্লেখ্য।

যাই হোক, এদিকের কোনো গ্রামে কারোর অপমৃত্যু হলে, পুলিশের হস্তক্ষেপ এবং নানা সামাজিক বাধা এড়িয়ে যেতে, শবদাহ করা হয় এইসব গ্রামীণ শ্মশানেই। সঙ্গে মানসিক স্বস্তিও থাকে এই ভেবে যে, মৃতের চিতাভস্ম এই নদীর মাধ্যমে তো সেই গঙ্গাতেই যায়।

আমাদের গ্রামের ছেলে ছোকরাদের নিরুদ্বিগ্ন জীবনে, বরাবরই সব আলোচনার অন্যতম খোরাক জোগায় এই শ্মশান, আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান গুজব কাহিনী।

মাঝে মাঝে তো, আমাদের নানারকম সাহসী কর্ম করে দেখানোর মঞ্চও হয়ে ওঠে - এই শ্মশানটাই। এই রকম কারণেই, আমাকে একদিন বলা হলো - পাশের গ্রাম থেকে রাতে ফেরার সময়, আমার হাতের লন্ঠনটা ঐ শ্মশানের বেলগাছের ডালে, ঝুলিয়ে দিয়ে আসতে। আমি চ্যালেঞ্জটা নিলাম।

কিন্তু, সেদিন আমি পাড় পেয়ে গেলেও, পরে যতবার ঐ পথ ধরে রাতে গেছি, মনে হয়েছে - কেউ যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, লক্ষ্য রাখছে আমার গতিবিধি, চালচলনের প্রতি।

আর সত্যি বলতে কি, পরে এক ঝড় জলের রাতে ঐ রাস্তা দিয়েই ফেরার সময়, আমার যে অভিজ্ঞতা হল তাও নেহাত ফেলনা নয়।

আমি ভয়ানক ডাকাবুকো না হলেও, একেবারে ভীতুর ডিম নই। ছোট খাটো সাহসী কাজ করেও দেখিয়েছি আগে। তবু সেদিনের ঘটনায় আমার বুক কেঁপে গিয়েছিলো ভয়ে।

সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। একহাতে ছাতা, আর একহাতে সাইকেলের হ্যাণ্ডেল ধরে আছি। খুব জোড়ালো না হলেও, মোটামুটি ঝমঝমিয়েই বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঝোড়ো হাওয়াও খুব একটা ছিলো না, তবু সাইকেল চালাতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিলো।

তখন রাস্তাঘাট মোটেই পাকা, অর্থাৎ পিচের বা ঢালাইয়ের, ছিলো না। বেশির ভাগই কাঁচা মাটির রাস্তা। কোনো কোনটায় বড় জোড় ঝামা ইঁট পেতে, তারওপর লাল কাঁকুড়ে মাটি বা মোরাম বিছানো হত।

বৃষ্টির সময়, রাস্তার সব খানা খন্দে জল জমে, ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি করতো। চাকায় জমে যাওয়া রাস্তার সেই কাদার জন্য, সাইকেলের হেডলাইটের মোটরটাও অকেজো হয়ে গেলো!

অগত্যা, ঐ অন্ধকারের মধ্যেই বাধ্য হয়ে আমায় সাইকেল চালাতে হচ্ছিলো। মাঝে মাঝে চমকে ওঠা, বিদ্যুতের আলোতেই যা একটু সাহায্য পাচ্ছিলাম - একঝলক রাস্তাটা দেখে নেবার।

তবু, একপ্রকার বহু পরিচিত ঐ রাস্তার খানা খন্দ গুলোকে শুধু স্মরণে রেখে, সেই আন্দাজ মতই সাইকেলটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

রাস্তায় এরপর এসে গেলো ঐ শ্মশানটাও। সেই অন্ধকারে আর কিছু দেখা না গেলেও, একটা ভয়ানক দৃশ্য দেখে মাথা ঘুড়ে গেলো আমার! দেখি - সেই বেলগাছের ডালে, আমার সেদিনের ঝুলিয়ে রেখে যাওয়া লন্ঠনটা জ্বলছে!

ঐ ঝড় বৃষ্টির মধ্যে, বেলগাছের ডালে স্থির হয়ে ঝুলতে থাকা, জ্বলন্ত সেই লন্ঠনটা - ঐ অন্ধকারে আলো পাওয়ার খুশি দিয়ে, যে আমায় মোটেই উৎফুল্ল করে তুলতে পারেনি, সে তো বলাই বাহুল্য।

আমি কোনো মতে, যতটা দ্রুত সম্ভব, সাইকেলটা প্যাডেল করে, জায়গাটা পাড় হয়ে যাবার চেষ্টা করলাম। তখনই পিছন থেকে কেউ যেন ভয়ানক নাকি সুরে বলে উঠলো - আঁধারে কষ্টঁ হঁচ্ছে তোঁ, তোঁর লন্ঠনটাঁ নিয়েঁ যাঁ!

আমি তোয়াক্কা না করে, চালিয়ে যেতে থাকি সাইকেলটা। তখনই পিছন থেকে আবার বলে উঠলো - আমাঁদেঁর তোঁ আঁলোঁয় অঁসুবিধাঁ হঁয়। কিন্তু, তোঁদের তোঁ খুঁব সুঁবিধা হঁয়, তাঁই না? তোঁ এঁই নেঁ দেঁখ, এঁই আঁলোটা কেঁমন লাঁগে....

বলতে বলতেই আমার চোখ ঝলসে দিয়ে, ভয়ঙ্কর শব্দে বজ্রপাত হলো কাছেই। আমার তো সারা শরীর কেঁপে উঠলো আতঙ্কে। দাঁতে দাঁত চেপে, চোখ বুজে, গায়ের জোড়ে সাইকেলটা চালিয়ে, সোজা পালিয়ে এলাম গ্রামে।

ওখান থেকে, আর প্রায় তিন চারশ' মিটার দূরেই, গ্রামের জনবসতি শুরু হচ্ছিলো। অতদূর পৌঁছে, তবে যেন বুকে বল পেলাম। সেখান থেকে আরো এক কিলোমিটার ভিতরে, গ্রামের ঠিক মাঝখানে আমাদের বাড়ি।

সেখানে পৌঁছে দেখি - বাড়ির চিলেকোঠার ঘর থেকে, দাউদাউ করে জ্বলন্ত আগুনের শিখা আর কালো ধোঁয়া বেড় হচ্ছে, আর চারিদিকে ছড়িয়ে মারাত্মক পোড়া গন্ধ।

জানতে পারলাম - তখন ঐ বজ্রপাতটা এখানেই হয়েছিলো! সাড়া বাড়ির ওয়্যারিং জ্বলে গেছে। নষ্ট হয়েছে বাড়ির টিভি আর ফ্যানগুলোও!

যাই হোক, কোনক্রমে ছাদের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে, সেদিন বিপন্মুক্ত হওয়া গেলো। আমি এরপর আর কখনও, সাহস দেখাতে ঐ শ্মশানে কিছু করতে যাবার রাস্তায় হাঁটি নি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror