Nityananda Banerjee

Thriller Others

4  

Nityananda Banerjee

Thriller Others

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
364


পর্ব ঊনআশি


এখন রাত্রি দেড়টা । মিঃ আরণ্যক বসুরায় এখন নির্বিঘ্নে মিঃ ঘোষালের বাড়িত অপারেশন ক্লীন শুরু করেছেন । করুন । সে ঘটনায় পরে আসছি ।

এখন একবার ঘুরে আসি লালবাজারের পুলিল হেড-কোয়ার্টারে । রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যস্ত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ; যিনি পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র দপ্তরটি নিজের হাতে রেখেছেন । সুতরাং পুলিশ মন্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। 

রাজ্য পুলিশের ডি জি, এ ডি জি আইনশৃঙ্খলা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার , স্বরাষ্ট্র সচিব, এবং বিভিন্ন কমিশনারেটের কর্তারা এবং সর্বোপরি মাননীয় চিফ সেক্রেটারি মিলিত হয়েছেন । বিষয় একটাই। যে ভাবে মিঃ আরণ্যক বসুরায় পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে সদর্পে ভারতবর্ষ চষে বেড়াচ্ছেন তাতে আদালত যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সে বিষয়েই আলোচনা চলছে। আদালত ছ'মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন । 

এর মধ্যে জীবিত অথবা মৃত আরণ্যক বসুরায়কে আদালতে হাজির করতে হবে ; অন্যথায় মামলা সি বি আই এর হাতে তুলে দেওয়া হবে ।

সেজন্য সরকারের মুখ রক্ষার্থে মুখ্যমন্ত্রী কিছু নিদান দিলেন । তার মধ্যে একটি হল বাংলাদেশের প্রাক্তন আই জি পুলিশ মিঃ দেবেন্দ্র ভৌমিক যিনি সম্পর্কে আরণ্যক বসুরায়ের জ্ঞাতিভাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হোক । আত্মীয়তা সুত্রে তিনি আরণ্যকের সম্পর্কে যথেষ্ট অভিহিত আছেন ।

স্বরাষ্ট্র সচিব মিঃ আলাপন সিদ্ধান্ত সাহেব বললেন - স্যার, আমরা প্রখ্যাত ব্যারিস্টার গোপালকৃষ্ণ চাকলাদার যিনি আরণ্যকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি । এমনকি তাঁর অন্যান্য আত্মীয়দের সাথেও কথা বলেছি । পশ্চিম বর্ধমানের রাণীগঞ্জ শহরে গোপালকৃষ্ণ বাবুর বৈবাহিক মহাশয় থাকেন । নাম অভয়ঙ্কর সরকার ; যিনি রেঞ্জারের চাকরি থেকে বছর তিনেক আগে অবসর নিয়েছেন ; তাঁর সঙ্গে রাণীগঞ্জ থানার হৃদ্যতা হয়েছে। 

আমাদের কাছে খবর আছে তিনি আরণ্যকের এককালের সহযোগী সামওয়ান প্রশান্ত মোহধ সরখেল ওরফে অরবিন্দ সরখেলকে নিজের বাড়িতে গৃহবন্দী করে রেখেছেন ; অবশ্যই পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে।

সেখানকার সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে গীতা আশ্রম সব বিনয়ই মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হল । 

মুখ্যমন্ত্রী বললেন - ভেরি ওয়েল এণ্ড গুড । এবার মি: ভৌমিককেও যুক্ত করুন। আমাদের হাতে সময় কিন্তু ছয় মাস। খেয়াল রাখবেন । আমি চাই না কোন ভাবে এই মামলা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাত থেকে সি বি আইএর হাতে যাক । এতে শুধু পুলিশ নয়; গোটা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অবনতির দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে ।

সকলে একবাক্যে তা' স্বীকার করে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে শপথ নিলেন যে কোন উপায়ে হোক তাঁরা আরণ্যক বসুরায়কে গ্রেপ্তার করবেনই । সি আই ডি এ বিষয়ে যথেষ্ট হেল্প করছে এবং করবে ।

তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন ।

এবার চলুন নয়ডায় প্রদ্যুম্ন ঘোষালের অন্দর মহলে।

সেখানে ঘুমের হাই ডোজ ট্যাবলেট খাইয়ে আরণ্যক বসুরায় তখন আলমারির চাবি খুঁজতে ব্যস্ত । কোথাও তা খুঁজে না পেয়ে প্রথমে মিঃ ঘোষালের দেহ তল্লাশি নিলেন। পেলেন না । 

তারপর এলেন শ্রীমতি সুমিতা ঘোষালের ঘুমিয়ে পড়া শরীরের কাছে । মিঃ আরণ্যক বসুরায় বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সুমিতা দেবীর দিকে । সন্তর্পনে হাত ঢোকালেন শরীরের বিভিন্ন অংশে। নিটোল শরীর। প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল। কাছাকাছি আসতেই মুগ্ধ হয়ে পড়লেন । তাঁর বিকৃত কামনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল । 

ভাবলেন অনেকদিন নিরামিষাশী রয়েছেন । আজ একবার স্বাদ নিলে হয় । সেইমত ভেবে সুমিতা দেবীর বুকের কাপড় সরিয়ে দিলেন । ব্লাউজের বোতাম খুলতে যাবেন ; দেখলেন একগাছা চাবি সযতনে রাখা। 

ভুলে গেলেন কামলালসা । এখন এ সব করার সময় নয় । তাঁকে অপারেশন চালাতে হবে । সুতরাং বুকের ভেতর থেকে চাবির গোছা বের করে নিলেন । 

সুমিতা দেবীকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। সামনে যে আলমারি দুটো আছে খুলে ফেললেন। হঠাৎ তাঁর খেয়াল হল - অভিজাত পরিবার ; অতএব গোপন ক্যামেরা ফিট করা থাকবেই । 

নয়ডা সম্বন্ধে তিনি জেনেছেন ইণ্ডাস্ট্রিয়াল হাব বলে এখানে কলকাতার মত ঘনঘন লোডশেডিং হয় না । পাওয়ার কাটের প্রয়োজন হলে নোটিশ জারি হয় । সুতরাং লোডশেডিংয়ের আশা নেই দেখে মেন সুইচ অফ করে দিয়ে এলেন । ইনভার্টারের কানেকশন কেটে দিলেন । এরপর মোবাইল টর্চের আলোয় আলমারি, লকার খুলে ব্যাগ ভর্তি করতে লাগলেন । সোনাদানা নগদ অর্থ ভালোই পেলেন ।

সে সকল ব্যাগে ভরে সদর দরজায় এসে দাঁড়ালেন। গেট খুলে বেরিয়ে যাবেন তাঁর মনে হল এবার মেন সুইচ ও ইনভার্টারের কানেকশন দিয়ে না দিলে বাইরের কেউ বা মোবাইল পুলিশ সন্দেহ করতে পারে । ইণ্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে দুর্বত্তদের বেশ বাড়-বাড়ন্ত ।

তিন বাইরে ব্যাগ নামিয়ে কানেকশন ঠিক করে আবার গেটের সামনে এলেন । এখন রাত তিনটে। ভোর হতে বেশী দেরী নেই । যান চলাচল শুরু হয়েছে । তবু তাঁর মনে হল এখন বেরোনো ঠিক নয় । অন্ধকার তো রয়েছে। আলো ফুটলেই বেরোবেন। 

তিনি নিশ্চিত ঘুমের ওষুধের প্রভাব কাটতে বেলা বারোটা বাজবেই । সুতরাং অপেক্ষা করায় কোন ক্ষতি নেই । বরং একবার সুমিতা দেবীর সঙ্গে ---

নাহ্ । নিজেকে সামলাতেই হবে। সবসময় হঠকারিতা বিপরীত কাজ করতে পারে ।

ততক্ষণে ভোর হয়ে গেছে । তিনি গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন । একরাশ ধোঁয়াটে হাওয়ায় শ্বাস নিলেন । তারপর ওলা বুক করে চললেন হিমাচল প্রদেশের পহেলগাঁও অভিমুখে । পথে তিনবার গাড়ি বদল করলেন। এবং গন্তব্যে পৌঁছে পর্যটকদের ভিড়ে মিশে গেলেন ।

বেলা এগারোটা নাগাদ ঘোষাল সাহেব আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠলেন । মাথা ঝিমঝিম করছে। সুমিতার দিকে নজর পড়তেই চমকে উঠলেন।

রান্নাঘরের দরজায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে রয়েছেন। পরিধান অগোছালো। ভয় পেলেন । চারদিকে নজর দিয়ে দেখলেন আপনার সর্বনাশ । বুক হাহাকারে ভরে উঠল । সুমিতাকে কোনমতে এনে বিছানায় তুলে চোখেমুখে জল দিলেন । সুমিতা দেবী জাগলেন । এরপর শুরু হল চিৎকার চেঁচামেচি। ঘোষাল সাহেব সজ্জনকে ফোন করলেন - অভি আইয়ে সাব। ও আদমী করকে চলা গয়া । সবকুছ লুট লিয়া । সত্যনাশ

সজ্জন সিং ছুটে এলেন । পুলিশে খবর দিলেন ।ললন্তিকাও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে এল । কারসাজি কার - বুঝতে তার কোন অসুবিধা হল না । 

সজ্জন সিং বললেন - ভেরি সরি স্যার । অনজান আদমীকো ঘর মে রাখকে ঠিক নেহি কিয়া আপনে । 

ললন্তিকা বলল - আই অ্যাম সিওর ; এটা আরণ্যক বসুরায়ের কাজ ।অন্য কারও নয় ।

পুলিশ এল । হিডেন ক্যামেরাগুলো খুলে নিল । পায়ের ছাপ, হাতের ছাপ, বিবরণ নথীবদ্ধ করে চলে গেল ।

ললন্তিকা সজ্জনকে বলল - হমে ঔর দের তক ইয়াহাঁ নেহি রহনা চাহিয়ে । আমি আজই অরবিন্দের সঙ্গে কথা বলে দেখি ।

ললন্তিকা বাড়ি ফিরে এল । সজ্জন বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন । 

বাড়িতে এসে মেয়েকে খাইয়ে ফোন নিয়ে বসল ললন্তিকা। অরবিন্দের নাম্বারটা আজ আবার নট রিচেবল হচ্ছে কেন ? তার সঙ্গে যে খুব দরকার !

আবার কল করল । এবারও পাওয়া গেল না । মিনিট দশেক পরে পুনরায় ফোন করতেই অরবিন্দ বলল - আমি এখন থানায় এসেছি স্যারেরা ডেকেছেন বলে । তুমি দুপুরে ফোন কোরো ।

ললন্তিকা বলল - কিন্তু আমার যে তোমিকে ভীষণ দরকার। বড় বিপদে পড়ে আছি যে !


- ললন্তিকা ! এখন কথা বলতে পারছি না । পুলিশের উঁচু মহলের সাহেবরা এসেছেন । আমার সঙ্গে কথা বলছেন । এখন প্লীজ ফোন রাখ। 

ললন্তিকা বলল - ঠিক আছে তাহলে দুপুরেই করব । তখন যেন কোন বাহানা কর না !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller