কাক বসল কাপড়ে
কাক বসল কাপড়ে


"উঁহু হুঁ হুঁ বসিস না,বসিস না,বাবুন আমার বিছানায় বসিস না,চেয়ারে বস,চেয়ারে বস",মাসি হৈহৈ করে উঠল। বেবুদি কানে কানে বলল,"হল তো? তুই চলে গেলেই মা বিছানা কাচতে যাবে।" "এ্যাই এ্যাই,কি বললি রে ফিসফিস করে আমার নামে?" উত্তরে বাবুন বলল,"ও তেমন কিছু নয়, বেবুদি বলল ভাল করে পা-টা তুলে বসতে।" "তবে রে বদমাশ ছেলে,বেবু কক্ষনো তাই বলেনি,বলতেই পারে না।"বেবু অদূরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল,এবার সে মুখ খুলল,"বলি মা বাবুনকে সব বলি?" "বল না বল,কি বলবি বল।"
"শোন তবে বাবুন,মায়ের বয়স এখন কত তুই জানিস,৯৬ পেরিয়ে গেছে, ৯৭ চলছে। মা এখনও নিজের কাপড় নিজে কাচে,কাজের লোকেরা নাকি ভাল করে ধোয় না"-বেবু বলে। বাবুন হাতে তালি দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। "আরে,দাঁড়া আগে পুরোটা শোন,এরপর কাপড় নিয়ে মা তিনতলার ছাদে যায় মেলতে,এখানেও শেষ নয় কিন্তু। কাপড় মেলে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকবে শুকানো পর্যন্ত,যদি কাক বসে কাপড়ে। নেমে এলে দেখতে পাবে না কাক বসেছিল কিনা কিন্তু সর্বদা তার মনে হবে নিশ্চয়ই কাক বসেছিল।" "বল বল,আরো কি বলে ফেল"- মাসি একটু রাগতস্বরে বলেন তাঁর মেয়েকে।
বাবুন এবার ফিল্ডে নামে,"নাগো মাসি,তুমি চালিয়ে যাও। আর তো কটা বছর,দেখতে দেখতে ঠিক সেঞ্চুরি করে ফেলবে তুমি। কথা দিয়েছ সেঞ্চুরি হলেই খাওয়াবে। তাই চালিয়ে যাও,শরীরটা ফিট থাকবে তাতে,আমরাও বেশ কব্জি ডুবিয়ে খাব। ৮০ পার করে ডবল পেনশন পাচ্ছ,মেনু কিন্তু ভাল হওয়া চাই মাসি,আচ্ছা আমিই নাহয় মেনু ঠিক করে দেব।"
"ও হো শোন আরো,বলাই তো হয়নি,মায়ের দুটো বালতি আলাদা,আমাদের বালতিতে তিনি কাপড়ও কাচবেন না, চানও করবেন না,এমনকি বালতিগুলো বাথরুমে রাখাও চলবে না,তাতে নাকি আমাদের চানের জলের ছিটে পড়বে। যতদিন যাচ্ছে মায়ের এসব তত বাড়ছে। বাতিক মায়ের চিরকালই ছিল,বাবা বেঁচে থাকতেও আঁশ-নিরামিষের বিচার,দশবার হাত ধুতে ধুতে হাত সাদা হয়ে যেত আর এখন তো কথাই নেই। আমার এই ৭০ বছর বয়সেও মাকে খেতে দেওয়ার আগে আমায় কাপড় ছাড়তে হয় জানিস? ভাগ্যি মায়ের কোনও ছেলে নেই,নাহলে ছেলের বউ কক্ষনো মায়ের সঙ্গে ঘর করত না,নেহাৎ আমি মেয়ে তাই।
এই নিয়ে খানিক হাসাহাসির পর বাবুন বাড়ি ফিরে এল। এর দু'দিন পরেই বেবুদির টেলিফোন,"মা পড়ে গিয়ে ফিমারবোন ফ্র্যাকচার,অপারেশন করাতে হবে কিন্তু মায়ের বয়সের কারণে ডাক্তাররা ভরসা পাচ্ছেন না।" "সে কি?কি করে পড়ল?" "আর বলিস না,কাপড় শুকাতে দেবার সময় একটা কাক মাথার ওপর ঘুরছিল। অর্ধেক কাপড় তারে,অর্ধেক হাতে,এই অবস্থায় কাক তাড়াতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে ছাদেই পড়ে যায়। 'বেবু' করে চিৎকার করলে আমরা কেউ শুনতে পাইনি। বাগানে মালি কাজ করছিল সে শুনেছে,বলল,ছাদ থেকে বুড়িমা 'বেবু'করে চেঁচালেন। ছুট্টে গেলাম ছাদে,মা মাটিতে পড়ে। তুলতে গেলে কঁকিয়ে উঠল। পিকলু বাড়ি ছিল,কোনোরকমে চ্যাংদোলা করে নামাল,ডাক্তার ডাকল,বাড়িতেই এক্সরে হল,এইসব কান্ড,একন ডাক্তাররা কি ডিসিশন নেন তার ওপর।
বাবুনের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এমনিতে ওর মাসি খুব রগুড়ে,এই বয়সেও তাঁর জ্ঞানের নাড়ি টনটনে। সবথেকে বড় নিজেকে নিয়ে মাসি রসিকতা করে এই বয়সেও। আর তাইতে সবাই মাসিকে নিয়ে মজা করে 'খাওয়াতে হবে'বলে। মাসি হাসে আর বলে," মনে হচ্ছে তোদের খাওয়াতে পারব"। খালি ওই বাতিকেই মাসিকে খেল।
মাসিকে হসপিটালে ভর্তি করা হয় আর অপারেশনও হয়,যদিও প্রথমদিকে ডাক্তাররা অপারেশন করতে সাহস পাচ্ছিলেন না,মাসির বয়সের কারণে। সমস্ত ব্লাডরিপোর্ট ঠিকঠাক থাকায় শেষমেশ অপারেশনটা হয়ে যায়। ৭দিন পর মাসিকে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাবুন দেখতে যায়। পিকলু হাসতে হাসতে বলে,"মামা,দিদু কিন্তু এখন বিছানাতেই পটি করছে,ছুঁয়ো না যেন। তবে কোমর তুলে বেডপ্যান দেওয়া যাচ্ছে না বলে ডায়াপার পরানো থাকছে। আমি অবশ্য দিদুকে বলেছি,তুমি মনের সুখে যতবার খুশি পটি করে যাও,আমি ডায়াপার সাপ্লাই দিয়ে যাবো,নো চিন্তা।"সবাই হো হো করে হেসে ওঠে,মাসিও যন্ত্রণা ভুলে হেসে ফেলে।