ঝরাপাতার কান্না
ঝরাপাতার কান্না
ঝরাপাতার কান্না
১২/৫/২৩
বিকাশ ঘোষের বয়স এখন আশি বছর ছুঁই ছুঁই। স্ত্রী তমাদেবীর বয়স প্রায় সত্তোর বছর। ওদের দুই সন্তান ও এক কন্যা। বড়ো ছেলে সুমন রেলদপ্তরে চাকরিসূত্রে বাইরে থাকে। ছোট্ট ছেলে সুজন চাকরিসূত্রে থাকে বিদেশে। কন্যা রাখি বিয়ের সূত্রে এখন ভারতের বাইরে।
বিকাশবাবু কৃষিজমি চাষবাস করে বেশ কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সারাদিন নিরলস পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েছেন,সংসার চালিয়েছেন। কাউকে কোনভাবে অভাবের টের পেতে দেননি।
তার তিন ছেলেমেয়েই পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিল। ক্লাসে প্রতিবছর স্ট্যান্ড করতো। লাঙ্গল কাঁধে মাঠ থেকে ফেরার সময় পাড়া প্রতিবেশিরা বলতো বিকাশ তোমার স্ত্রী রত্নগর্ভা। শুনে বিকাশবাবুর গর্বে বুক ফুলে উঠতো। বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে রাগানোর জন্য বলতো ওরা সব আমার ছেলেমেয়ে বুঝলে গিন্নি। গিন্নিও রেগে গিয়ে বলতো, হ্যা হ্যা সব তোমার পেট থেকে বেরিয়েছে। দুষ্টু রসিকতায় পরিশ্রমের সাগরে সুখের ঢেউগুলি গোধুলি আলোয় হাসতো।
বিপত্নিক কর্মশক্তিহীন বৃদ্ধ বিকাশবাবু বৃদ্ধাশ্রমের গাছের তলায় বসে এসব কথা চিন্তা করছেন। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে জীর্ণ পোশাক ভিজে যাচ্ছে। এমন সময় গাছ থেকে একটা পাতা খসে পড়ে। বাতাসের ঠেলায় কাঁদতে কাঁদতে সামনের ড্রেনে গিয়ে পড়ে।
বিকাশবাবু বিড়বিড় করে বলতে থাকেন শুধু গাছই কি খাবার জোগাতে না পারলে পাতা ঝেড়ে ফেলে দেয়? শত কান্নাতেও কর্ণপাত করে না? এই সমাজ,এই সংসারও তার মতো অক্ষম পাতাদের প্রয়োজন ফুরালে ঝেড়ে ফেল দেয়। স্মৃতির বাতাসে কান্নায় যাদের সম্বল।