Pranjal Basak

Horror Crime Thriller

4.3  

Pranjal Basak

Horror Crime Thriller

ইন্টেরোগেশন রুম

ইন্টেরোগেশন রুম

4 mins
303


জ্ঞান ফিরলে আস্তে আস্তে চোখ খুললেন সুনীল বাবু। বুঝতে পারলেন না তিনি কোথায়। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। কোথা থেকে যেন খুব বাজে দুর্গন্ধ আসছে। অন্ধকারের মধ্যেও যতটা বোঝা যায়, কোথাও কেউ নেই। তিনি চিৎকার করে ডাকলেন, "কেউ আছেন?" কোনো উত্তর এল না। সুনীল বাবু বুঝতে পারলেন না তিনি কী করবেন। তার হাত-পা চেয়ারের সাথে বাধা। একটুও নাড়ানোর জো নেই। তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন তার কী হয়েছিল। তিনি পরের দিন অফিস যাবেন বলে আগে আগে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। এরপর আর কিছু মনে নেই। কেউ কি তাকে অপহরণ করে নিয়ে এসেছে? হতে পারে। তিনি বিশাল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক। সকলের কাছে টাকার কুমির বলে পরিচিত। কেউ তাকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করতেই পারে। কিন্তু কথা হলো কেউ কীভাবে তার বাড়িতে ঢুকলো? তার বাড়ির চারপাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। কারও পক্ষে বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে অপহরণ করে আবার বাড়ির বাইরে বেরোন কার্যত অসম্ভব। কিন্তু তাই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অন্তত এটাই তার এ রকম এক অপরিচিত অন্ধকার স্থানে নিয়ে আসার একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।

"শুভ অপরাহ্ণ, সুনীল বাবু।"

সুনীল বাবু চমকে মুখ তুলে চাইলেন। কালো চাদরে সর্বাঙ্গ ঢাকা এক ব্যক্তির আকস্মিক আবির্ভাব টের পেলেন তিনি। তার মুখ চাদরের জন্য চেনা যাচ্ছে না। যদিও সুনীল বাবুর মনে হলো মুখ ঢাকা না থাকলেও এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আগন্তুকের মুখ চেনা তার পক্ষে সম্ভব হত না।

"কে আপনি?", জিজ্ঞেস করলেন সুনীল বাবু।

"তার আগে বলুন আপনি কে।"

সুনীল বাবু বিস্মিত হলেন। লোকটি তাকে অপহরণ করে নিয়ে এসেছে কিন্তু তাকে চেনেই না!

"আপনি আমাকে চেনেন না?"

"চিনি। সত্যি বলতে কী, আমার মত ভালো আপনাকে আর কেউ চেনে না। কিন্তু তাও আমি চাই আপনি বলুন।"

"আমি সুনীল মুখার্জী, ফাউন্ডার এন্ড সিইও অব সুনীল হাউজিং এজেন্সি এন্ড সুনীল ফুড এন্ড বেভারেজ, পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সেরা করদাতা।", অনিচ্ছার সাথে উত্তর দিলেন সুনীল বাবু।

"সমাজসেবক?", আগন্তুকের গলার স্বরে শ্লেষ ঝরে পড়ল, "ম্যাঙ্গো জুসে কাপড়ের রং ব্যবহার করা, শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন না দিয়ে নিজের প্রোফিট বাড়ানো, প্রতারণা করে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তিকে বিক্রি করা বুঝি সমাজসেবার উদাহরণ?"

"এসবের কিছুই আমি করিনি।", দৃঢ় ভাবে উত্তর দিলেন সুনীল বাবু।

"কী লাভ মিথ্যা বলে? আপনার করা কোনো অপকর্মই আমার অজানা নেই।"

"আপনি কিছু জানেন না। সব মিথ্যা বলছেন আপনি। বানিয়ে বানিয়ে", রাগে লাল হয়ে গেল সুনীল বাবুর মুখ।


"ওহ, তাই? জোর করে দরিদ্র লোকদের জমি দখল করে অফিস তৈরি, সরকারি বালু তুলে বিক্রি করা, সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, ব্যবসার পার্টনার সুজিতকে খুন করে পুরো ব্যবসা অধিকার করা, তার কোটি টাকার সম্পত্তি হাত করা – এগুলোও মিথ্যা?"


সুনীল বাবু চুপ করে রইলেন। তার হঠাৎ করে খুব দুর্বল লাগছে। এত কথা এই লোক কীভাবে জানল? তিনি অবাক হলেন।


"আর ওই ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে জঘন্য কাজ করে তার লাশ গুম করা, তার পরিবারকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের মুখ বন্ধ রাখা? ওটাও কী আপনার 'সমাজসেবা'?", আগন্তুকের কথায় বিদ্রুপের সুর সুস্পষ্ট। এবার সুনীল বাবু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ঝরঝর করে কেঁদেই ফেললেন। তীব্র বিবেকের দংশন অনুভব করলেন তিনি। "আর সেরা করদাতা হবার জন্য দেওয়া ট্যাক্সের কতটুকু সৎপথে উপার্জিত তার কথা নাহয় আর নাই বা বললাম।"


সুনীল সাহেব ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন। "আচ্ছা, এবার তাহলে আপনার করা প্রশ্নের উত্তর দিই। আপনি জানতে চেয়ে ছিলেন আমি কে।", বলেই আগন্তুক নিজের মুখ অনাবৃত করলেন। "আমি তোমার অন্তরে লুকিয়ে থাকা পিশাচ।" আগন্তুকের সম্বোধন যে 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে নেমে এসেছে তা সুনীল বাবু লক্ষ্যই করলেন না। কারণ চারপাশে অন্ধকার থাকলেও তাতে চোখ সয়ে আসায় এবার তিনি আগন্তুকের মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলেন। এ তো তিনিই! কিন্তু একি বীভৎস তার চেহারা! চোখের কোটর খালি। সারা মুখে দগদগে ঘা। মাংস গলে গলে পড়ছে। এবার তিনি বুঝতে পারলেন বীভৎস সেই গন্ধের উৎস। ভয়ে তার মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। তিনি গলা ছেড়ে চিৎকার করতে চাইলেন কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হলো না।


"ভয় পাচ্ছ, সুনীল? কিন্তু আমাকে ভয় কীসের? আমি তো তোমার ভেতরে থাকা একটা অস্তিত্ব মাত্র। আমি তো একসময় দেখতে তোমার মতই ছিলাম। যখন পৃথিবীতে প্রথম আসলাম, কী নিষ্পাপ ছিলাম আমরা, তাই না? যখন প্রথম স্কুলে গেলাম তখনও দেবশিশুই ছিলাম আমরা। কিন্তু ধীরে ধীরে তুমি পরিণত হলে একটা নরপিশাচে আর ধীরে ধীরে আমার মধ্যেও ঘটল পরিবর্তন। আমার মুখের দিকে তাকাও তো একবার। কী অবস্থা করেছ তুমি আমার? এই যে দগদগে ঘা, পচা-গলা মাংস – এসব কিছুর জন্য দায়ী তুমি – শুধু তুমি। তোমার মতই কত শত মানুষ এভাবেই মুখোশের আড়ালে নিজের আসল অস্তিত্বকে আড়াল করে রাখছে। কী নির্বোধ তারা! তারা বোঝে না যে পুরো দুনিয়ার চোখে ধুলো দিতে পারলেও, নিজের কাছে কিছু আড়াল করা যায় না। তাই একসময় নিজের তৈরি ইন্টেরোগেশন রুমে নিজের তৈরি অস্তিত্বের কাছে এভাবেই তোমার মত নির্বোধদের ইন্টেরোগেটেট হতে হয়।" মণিবিহীন চোখে আগন্তুক এগিয়ে এল সুনীল সাহেবের দিকে। মণিবিহীন শূন্য কোটরজোড়া সুনীল সাহেবের চোখের উপর নিবদ্ধ করে আগন্তুক চিৎকার করে বলল, "কেন আমার এ অবস্থা করলে? কেন?" প্রচন্ড আতঙ্কে সুনীল সাহেব বিছানা থেকে উঠে বসলেন। নাহ, আর নয়। গত তিন বছর ধরে সেই একই দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। অনেক সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছেন। কোনো ফল হয়নি। তিনি শেষ সিদ্ধান্তে অটল থাকাই স্থির করলেন। বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ার খুলে হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা অনুভব করার চেষ্টা করলেন। যা খুঁজতে চেয়েছিলেন পেয়ে গেলেন।


রাত্রির নিস্তব্ধতা খানখান করে দিয়ে গর্জে উঠল একটি পিস্তল।


"মিশন সাকসেসফুল, স্যার।", বললেন সুনীল সাহেবের ম্যানেজার কাম সেক্রেটারি অনাদি হালদার, "তবে মেকআপম্যান সঞ্জয় আর থিয়েটারের অভিনেতা কমল আরও বেশি পেমেন্ট দাবি করছে। মাঝপথে ব্যাটা্রা এমন বেঁকে বসবে জানলে আমরা অন্য কাউকে কাজে লাগাতাম।"

"আচ্ছা, বাদ দাও। ওদের বলে দাও ওদের ইচ্ছা মত পেমেন্ট ওরা পেয়ে যাবে।", বললেন মিঃ সামন্ত। রিসিভার নামিয়ে রেখে প্রাণ ভরে শ্বাস নিলেন। আজ তার বড় আনন্দের দিন। তার আদরের ছোট বোনকে যে পিশাচ পাশবিক অত্যাচারের পর খুন করেছিল দশ বছর আগে তার বিচার আজ তিনি করতে পেরেছেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror