Gulal Abu Bakor

Comedy

4  

Gulal Abu Bakor

Comedy

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৭

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৭

6 mins
246


               • আসক্তি •

এক চটপটে ছাত্রী একদিন কলেজে ভর্তি হতে যায়। সে ফেসবুকে বড়ই আসক্ত। কলেজে ঢোকার একটু আগেও সে ফেসবুক টেসবুকে উঁকি দিয়ে এসেছে।

কলেজের ক্লার্ক বলছেন : তোমার নাম কি? 

ছাত্রী বলছে : অ্যাঞ্জেলিনা সারিনা জুহিনা "স্বপ্নপরী"।

ক্লার্ক : ফেসবুকের জন্য নাম জানতে চাইছি না, এটা কলেজ। আসল নাম বলো।

ছাত্রী : ও সরি, আমার নাম সারিনা জুহিনা।

ক্লার্ক : এখন বয়স কত তোমার?

ছাত্রী : ১৩ বছর।

ক্লার্ক : ননসেন্স! এটা ফেসবুক নয়।

ছাত্রী : সরি, আমার বয়স ১৮ বছর।

ক্লার্ক : ফ্যামিলি মেম্বার কয়জন?

ছাত্রী : আপাতত চল্লিশ। আরও কিছু ঝুলে আছে।

ক্লার্ক : স্টপ ননসেন্স! আবার ভুলে যাচ্ছ, এটা কলেজ।

ছাত্রী : সরি স্যার, পরিবারে আমরা মোট চার জন।

ক্লার্ক : বৈবাহিক অবস্থা কী?

ছাত্রী : সিঙ্গেল।

ক্লার্ক : সেকি! তোমার মা যে গতকাল খোঁজ নিতে এসে বললেন, আমার মেয়ে বিবাহিতা?

ছাত্রী : মা বলেছে বুঝি! হ্যাঁ, আমি বিবাহিতা। কিন্তু ফেসবুকে এখনো সিঙ্গেল আছি স্যার।

ক্লার্ক : রাখো তোমার ফেসবুক... আমি কি ফেসবুক ঘাঁটছি নাকি!

       আজকের বিষয় আসক্তি। আসক্তি হলো কোনো কিছুতে ডুবে থাকা, মানে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া। এটা এমন একটা বদভ্যাস যা ক্রমান্বয়ে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। তৈরি হতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক বা পারিবারিক অশান্তি। নেশার দ্রব্য গ্রহণ করে যেমন আসক্ত পরিচিতি-লাভ করা যায় তেমন বিশেষ কোনো নেতিবাচক হবির প্রভাবে একপ্রকার আসক্ত হয়ে পড়া যায়। উদ্বেগজনকভাবে আসক্তি তৈরি হয় মোবাইল ব্যবহারেও।

       আসক্তি কথাটা বলতে বোঝায় অনভিপ্রেত ও ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ বর্জিত কোনো একটি কাজ। বেশিরভাগ দৃষ্টিতে এখানে একটি নেশা আছে বলে কথাটির ব্যবহার হয় মূলত নেতিবাচক অর্থে।

এই পর্বটিতে আমি আসক্তির হাস্যকর দিকগুলো নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা শুরু করবো।

       প্রথমে ড্রাগ সহকারে শুরুটা করা যাক। সকলেই জানি, ড্রাগ আসক্তি একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তরুন সমাজের অধঃপতনের একটি অন্যতম প্রধান উপাদান এই ড্রাগ। এটা অনেকটা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ এর মতো। ভুলভুলাইয়া নামে যাকে ডাকা যায়। সহজে ঢুকবেন কিন্তু বেরোনোর পথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। বলা যায়, বিপদের দিক থেকে মদ্যপানের স্থান ঠিক এর পরেই।

       ইতস্ততঃ ভ্রমণকারী এক ব্যক্তিকে সন্দেহ করে সেখানে কর্তব্যরত একজন পুলিশ অফিসার তাকে অনুসরণ করলেন। পুলিশের সঙ্গে রয়েছে একটি প্রশিক্ষিত কুকুর। পুলিশ একসময় ঐ ব্যক্তির নিকট এগিয়ে গেলেন এবং বললেন,

— মশাই, শুনছেন! আমার সঙ্গে থাকা এই কুকুরটি বলছে, আপনি সঙ্গে করে ড্রাগ নিয়ে ঘুরছেন।

ব্যক্তিটি একথায় চমকে গিয়ে পুলিশের দিকে আপাদমস্তক তাকালো। বললো,

— ওঃ তাই বুঝি! তা কুকুরটি আপনাকে ঠিক কী বলেছে?

— ও আমাকে বললো, ঐ যে ব্যাগটি আপনি বহন করে চলেছেন, ওটির মধ্যে ড্রাগ রাখা হতে পারে। সেকারণে ও-ই আমাকে এখানে নিয়ে এলো।

       অবাক হয়ে ঐ ব্যক্তি একবার পুলিশের মুখের দিকে তাকান, একবার কুকুরটির দিকে। কুকুরটিও যেন ততক্ষণে কিছু রসের সন্ধান পেয়েছে। দেখে মনে হলো, সে এটা ভালোই উপভোগ করছে। সে তার ছোট লেজ ঘন ঘন নাড়িয়ে চলেছে। এবার ঐ ব্যক্তি মুখে মৃদু হাসি ছড়িয়ে রেখে বললেন,

— আমি ভীষণ মজা পাচ্ছি আপনার এই কথায়। লাইফে সর্বপ্রথম শুনলাম একটি কুকুর একটি মানুষের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে এসেছে। জানেন, ইউটিউবে ভ্রমণের ওপর আমার একটি চ্যানেল আছে। যদি কিছু মনে না করেন তবে একটি ভিডিও করতে চাই, যেখানে আপনার সাথে থাকা কুকুরটি এবং আপনি কথাবার্তা বলতে থাকবেন, আর আমি ভিডিও রেকর্ড করতে থাকবো। এই বলে ব্যাগের পকেট থেকে একটি মোবাইল ফোন তিনি বার করলেন। এবং সেইসাথে ব্যাগটি হস্তান্তর করলেন পুলিশের কাছে।

       এখান থেকে এখন আমরা বিদায় নিচ্ছি। লোকটির কাছে ড্রাগ আছে কি নেই তা দেখার কাজ আমাদের নয়, সেটি করার জন্য পুলিশই যথেষ্ট। আমরা শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির কনফিডেন্সের একটু তারিফ করতে পারি।

       এরপর সুরাপান তথা মদ্যপানের আসক্তির মধ্যে আমরা অনায়াসে ঢুকে পড়তে যাচ্ছি।

একবার অল্পখ্যাত একটি পানশালায় সচরাচর দেখতে পাই এমন সাইজের একটি মশা এবং সচরাচর দেখা যায় এমন সাইজের একটি হাতি পরস্পর শুঁড় ধরাধরি করে ঢুকলো। কারণ কি! ... এরা দু’জন হচ্ছে একে অপরের জিগরি দোস্ত। দরজা দিয়ে ঢোকামাত্র আর তর সইলো না মশার, দ্রুত উড়ে গিয়ে বসলো মদ বিক্রেতার পাশে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— একখানা বিয়ারের দাম কত? 

বিক্রেতা জানতে চাইলো,

— কে খাবে, আপনি? ফ্রি-তে পাবেন, কোনো দাম লাগবে না।

ঠিক এর পরেই দুলতে দুলতে গজগমণে পিছনে হাতি এসে হাজির, বিক্রেতার কাছে সে জানতে চাইলো,

— একখানা বিয়ারের দাম কত পড়বে?

এবার বিক্রেতা তাকে বললো,

— কে খাবে, আপনি? তিনহাজার টাকা দিন।

একথা শোনার পর হাতি তার শুঁড়খানা উঁচিয়ে প্রতিবাদ করলো। বললো,

— কী! দুই বন্ধু একসাথে এসেছি, এখানে একসাথে ঢুকেছি। তার জন্য দিচ্ছেন একেবারে বিনে পয়সায় আর আমার বেলায় কড়কড়ে তিনহাজার! কেন? ... এই ব্যাপারটা একেবারে অন্যায়।

       আমার অন্য আরেকটি লেখায় সুরাপানের অনেকগুলো কাহিনী একসাথে গেঁথে দিয়েছি। তাই এখানে আপাতত এই একটাই রইলো। এবার অন্য আরেকরকম আসক্তির কথা তুলে ধরবো।

       মোবাইল আসক্তি নিয়ে কাহিনীর অন্ত নেই। আমরা নিজেরা নিজেদের অজান্তে এমন অনেক কাহিনীর জন্ম দিয়ে চলেছি। হাতে মোবাইল, শুতে মোবাইল, পকেটে মোবাইল, প্যাকেটে (ব্যাগে) মোবাইল...এ দৃশ্য হরহামেশা দৃষ্টিগোচর হয়ে চলেছে। মোবাইল থেকে আজ আর নিস্তার নেই যেন। ভবিষ্যতে মোবাইলের গঠনে কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তন আসবে হয়তো, কিন্তু উপযোগিতা ও ব্যবহারে পরিবর্তন আসবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন বরং ভয় হচ্ছে, এমন ঘটনা না ঘটুক যাতে মোবাইল হাতে নিয়ে ঘোরাফেরা করায় রেস্ট্রিকশন লাগু হয়ে যায়।

       কোনো একদিন এক জায়গায় নিজের কান পেতে রেখে দাঁড়িয়ে ছিলাম, অবাক করা একটি মন্তব্য জোর করে কানে ঢুকে গেলো। একটি তন্বী তরুণী বলছে, অবশ্যই তার মোবাইলে, সম্ভবতঃ বলছে তার বান্ধবীকে,

— তুই তো আমার মোবাইল অ্যাডিকশন সম্বন্ধে ভালোমতো জানিস, তাই না! দেখ, আমি সব হারাতে রাজী আছি, এমন কি আমার ভার্জিনিটি হারাতে পর্যন্ত দ্বিধা করি না কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় এই নতুন মডেলের আই ফোনটা কোনোমতে হারাতে চাই না।

       জানি, অনেকেই এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন। অনেকেই আবার আমার পক্ষ নিয়ে বলবেন, হ্যাঁ এমন আসক্তি থাকতেই পারে, তবে তা অবশ্য বেশ সাংঘাতিক! এইক্ষেত্রে আমি নিজে কিন্তু এমন এক আসক্তিতে আশ্চর্য হইনি। চারিদিকে পরিবর্তন হচ্ছে অনেককিছুর। মূল্যবোধ চর্চায় নিরুৎসাহী ট্রেণ্ড এসে গেছে এবং উপভোগের যেসব নতুন নতুন শো-ডাউনের বুদবুদ উপচে পড়ছে... এর ফলে একপ্রকার লোভাতুর কামনা আমার আকাঙ্ক্ষার কোটরে বাসা বাঁধবে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে! যুগ যুগ ধরে যেটি সঠিক হিসাবে চলে আসছে তাকে এখন ভুল প্রমাণিত করা এবং যেটি বরাবরই ভুল ছিলো তাকে ঠিক বলে মনের দেওয়ালে গেঁথে দেওয়ার পাঁয়তারা কষে চলা, এসবই এখন একটি গবেষণার বিষয় এবং অপরাধপ্রবণ এরূপ মনস্তাত্বিক সংকোচনকে  আলোচনায় বারবার তুলে আনা দরকার। মূল্যবোধের অবমূল্যায়নের পেছনে রয়েছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর অসাধু কলকাঠি আর অন্যশ্রেণীর আছে বিকারগ্রস্থ লিপ্সা। এই অপরাধে আকন্ঠ ডুবে থাকা সংকীর্ণ সেই গোষ্ঠী নিজ নিজ স্বার্থে মূল্যবোধের অবমূল্যায়ন করে থাকে এবং আপন লিপ্সাকে নিরন্তর প্র্যাকটিস করতে থাকে। তাই তাদের পক্ষ থেকে অপরাধকে দেখানো হয় সহজ করে, আর অপরাধীকে তুলে ধরা হয় সহানুভূতির পাত্রপাত্রী হিসেবে। বিপরীতে মূল্যবোধকে তারা সেকেলে বস্তাপচা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার অপপ্রয়াস করে চলে ও তাদের প্রধান কর্মসূচি হয় অপরাধের পাশে থাকা, তাকে উৎসাহিত করা, তার হয়ে গলা ফাটানো। আমি যদি মনুমেন্টের তলায় দাঁড়িয়ে কেবল উপরদিক যাচাই করি তবে উপরদিক থেকে নীচের দিক কেমন দেখায় এবং তারও উপরদিক ঠিক কেমন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে তা বুঝবো কীভাবে!

ঠিক তেমনি মূল্যবোধের চর্চা করে বুঝতে হবে মূল্যবোধের গুরুত্ব এবং এর উপযোগিতা আসলে কী ও কতটা বিস্তৃত! ...

       অপরাধের উৎস খুঁজে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অপরাধীর সংখ্যা কীভাবে কমানো যাবে? ... মূল্যবোধ কিভাবে একটা একটা করে হারিয়ে ফেলছি তা গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।    

       আর একটি শোনা কথায় এই মুহূর্তে আমরা কান পাততে পারি, এখন সেটাই দেখা যাক।

       একজন ফিটফাট তরুনকে তার নিজ মামা ফোন করে নিচের কথাটা জানতে চাইছেন,

— ভাগিনা, এখন ওখানে কী করা হচ্ছে?

তরুনটি ফোনে মামাকে অকপটে বললো,

— মামা, আমি ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। মাঝে মাঝে নানারকম অ্যাপস খুলে দেখি গান.. লেখা.. ছবি এইসব। ঠিক এই মুহূর্তে চ্যাটিং করছিলাম।

মামা একথা শুনলেন, তারপর বললেন,

— তুমি কী কোনো ফ্রী টাইম পাও?

তরুণ জবাব দিলো,

— হ্যাঁ মামা পাই, কিন্তু কেন...।

মামা বললেন,

— তাহলে ফ্রী টাইমে তুমি কী করো?

এবারেও তরুনের সাফ উত্তর,

— মামা, আমার ফ্রী টাইম যদিও খুব কম তবু বলছি, একমাত্র যখন আমি ফোন চার্জে দিয়ে রাখি সেই সময় আমার ফ্রী টাইম থাকে, তখন কিছু করি না।

       আসক্তির কথা তোলায় একবার একজন তো প্রবল প্রতিবাদ ঠুকলো। তার যুক্তিকে কিভাবে আমি খণ্ডন করবো তখন একেবারেই মাথায় আসছিলো না। সে বলেছিলো,

— দূর দূর...মদে আমার ছিটেফোঁটা আসক্তি নাই। বিভিন্ন কোম্পানির অনেকরকম যে ব্র্যান্ড বাজারে আছে, শুধুমাত্র সেগুলো একবার করে টেস্ট করে দেখি, তার বেশি তো কিছু নয়! আমার কোনো ব্র্যান্ডের প্রতি কোনপ্রকার আসক্তি নেই! দূর দূর...

       বিষয়ভিত্তিক কোনো লেখা লিখতে গেলে নানান টুকরো টুকরো ঘটনার কথা মনে পড়তে থাকে। তাই ছোট করে সেইসব প্রতীকি চমকমার্কা সংলাপ বা ক্ষুদ্র মুহূর্ত এখানে তুলে ধরে থাকি। এদের একেকটিকে আদরের একেকটি চুম্বনের সাথে তুলনা করলে মন্দ হয় না, যার স্থায়িত্ব ক্ষণকাল কিন্তু রেশখানা কিছুক্ষণ স্থায়ী থাকে।

       এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বলছে,

— শুনেছি সমস্ত জুয়ায় তুই হেরে আসিস। একবার বললি যে বরাবরের জন্য ওটা ছেড়ে দিবি। তাসত্ত্বেও এই নেশা তুই ছাড়িসনি কেন?

— তোকে কে বলেছে একথা? আমি কবেই এই সব্বনেশে জুয়া ছেড়ে দিয়েছি। যদি বিশ্বাস না হয় তবে আমার সাথে বাজি ধর, কী...ধরবি তো বল?

       মৃত ইংরেজি পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসনের মুখের প্লাস্টিক সার্জারির কথা মনে আছে কি? তার এই শখকে ম্যানিয়া ছাড়া আর কিই বা বলবো! ....অনেকটা একইধরনের ম্যানিয়াগ্রস্ত এক ব্যক্তির অদ্ভুত ধরনের এক আসক্তি ছিলো। প্রায় প্রত্যেক বছর তিনি মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করাতেন। ফলস্বরূপ তাকে প্রত্যেক বছর একটি করে নতুন বান্ধবী হারাতে হতো। কারণ নতুন সার্জারির ফলে পুরনো প্রেমিকা তাকে আর চিনতে পারতেন না। অচেনা কোনো মানুষের সাথে কেউ কখনো থাকতে চাইবে?


© আবার দেখা হবে পরেরবার ৮ নং পর্বে। আশা করি, আমাকে চিনতে ভুল হবে না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy