গুলাল আবু বকর ‹›

Abstract Comedy Others

4  

গুলাল আবু বকর ‹›

Abstract Comedy Others

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...১৩

হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...১৩

5 mins
273


          ••কী এক ঝামেলা!••

বেদনাময় জীবন কখন শেষ হবে কেউ জানি না। বেদনাকে টান দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। গত প্রায় দেড় বছর ধরে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে আছে। আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে গেছি। তৈলাক্ত বাঁশে বানর আর কবে উঠবে জানিনা। এই অঙ্ক মিলবে কিনা কে জানে! চোখ বেঁধে দিলেও পি সি সরকার কিন্তু সেই অঙ্ক ঠিক মিলিয়ে দিতেন। করোনার অঙ্ক বেশ কঠিন মনে হচ্ছে!

কি আর করা, মজার কিছু কথায় ফিরে যাই অতঃপর।

কৌতুক বিষয়টি এমনই যে খোলা মনে রসাস্বাদন করতে হয়, হোঁচট খেলে হাঁড়ি ভেঙে সব রস মাটিতে।


করোনার বড় বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে তখন। ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল কর্মী সবাই একেবারে হিমসিম।

গোশালায় দুটো গরু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত।


১ নং পিওর গরু : তোর প্রোডাকশন কেমন হচ্ছে? আমার তো ভাই ডাব্বা ভর্তি। সত্যি ভাই, এতো এতো সবুজ ঘাস আর শুকনো খড়ের ককটেল জীবনে দেখিনি.... মাথা ঘুরে যায়!

২ নং পিওর গরু : পাচ্ছিস কি আর সাধে? প্রোডাকশন টায় টায় রাখতে হবে তাই—। কয়দিন আগে হরিয়ানার গোশালায় ৮০ খানা টাটকা গরু পরলোকগমন করলো না খেতে পেয়ে, খবর শুনিস নি!

যাই বলিস ভাই, করোনা এসে আমাদের মর্যাদা একটু উন্নত করে দিয়ে গেলো বলতে পারিস। এই এখন আর নোংরা আর দুর্গন্ধের মধ্যে আমাদের থাকতে হয়না। যা পড়ছে নিমেষে কর্পূরের মতো হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তবে কি জানিস, আমার ভয় হচ্ছে ওই মানুষগুলো আমাদের মতো প্রাণীদের সাথে সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মানছে না। আমরাও তো ভাই সোস্যাল নাকি, আনসোস্যাল!

১ নং পিওর গরু : দেখ ভাই, অতশত ভাবিস না, আমরা বেঁচে থেকে সেবা করি আবার মরেও করি। শুধু প্রোডাকশন ঠিকঠাক রাখ, আন্দোলন করার দরকার নেই।

২ নং পিওর গরু : অগত্যা কি আর করা... মেনে নিলুম, হ্যাঁ আমাদের তো ভাই সেবাই কর্ম। বিজ্ঞান নিয়ে পড়িনি তাই রাসায়নিক ব্যাপারগুলো তলিয়ে বুঝি নি। তবে এটুকু বুঝি ডাক্তার, নার্স, কর্মীরা এখন নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে পারে। ওদের কাজ অনেক হালকা করে দিয়েছি।


একজন পত্নীনিষ্ঠ স্বামী যিনি আবার ভূগোলের শিক্ষক, আলমারি খুলে পৃথিবীর একটি মানচিত্র বের করে স্ত্রীকে বললেন, 

— চোখ বন্ধ করে তোমার তর্জনী (আঙুল) দিয়ে মানচিত্রের ওপর ছোঁয়াও। যেখানে আঙুল পড়বে সেখানে সপরিবারে আমরা বেড়াতে যাবো, এই প্যানডেমিক অবস্থা কেটে গেলে।

...স্ত্রী এবার চোখ বন্ধ করে মানচিত্রে আঙুল ছোঁয়ালেন। পড়লো গিয়ে সাইবেরিয়ায়। স্বামী আঁৎকে উঠে বললেন,

— বাপ রে! তুমি তো একেবারে নির্বাসনে পাঠাতে চাও। একে তো কতদিন ঘর থেকে বের না হয়ে নির্বাসিতের জীবনযাপন করছি। তারও পর সাইবেরিয়া। ... আরেকটি সুযোগ নাও। আঙুল ছোঁয়াও। এবার স্ত্রী'র আঙুল গিয়ে পড়লো আমাজন।

সত্যি সত্যি প্যানডেমিক অবস্থা কমলে সপরিবারে আমাজন গেলো সবাই।

হেলিপ্যাড থেকে নেমে এগোতে গেলে তির-ধনুক হাতে নিয়ে একদল আদি বাসিন্দা রে রে করে ছুটে এলো।

প্রাণ বাঁচাতে সকলে সোজা দৌড়। হেলিকপ্টার নিয়ে উপরে উঠলে স্ত্রী বললেন,

— দেখলে তো ওরাও করোনাকে ভীষণ ভয় পায়। 

স্বামী জিগ্যেস করলেন,

— কীভাবে বুঝলে?

স্ত্রী বললেন,

— দেখোনি, কারো শরীরে একফোঁটা পোষাক নেই কিন্তু সবাই এসেছে মাস্ক পরা অবস্থায়।


মাঝ রাত্তিরে দুই বন্ধু মোটামুটি গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে গলা জড়াজড়ি করে নিজেদের প্রাইভেট গাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে। আর বলাবলি করছে,

১ম বন্ধু : আচ্ছা, আমি COVID কথাটার মানে তো বুঝলাম। কিন্তু novel coronavirus কথাটা ঠিক বুঝলাম না আর কথাটা মাথা থেকে যাচ্ছেও না।

২য় বন্ধু : দেখ ভাই, এটা একটা বিরাট গল্প। বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে। novel কি আর ছোটখাটো গল্প হয় নাকি! দেখছিস তো, গত দেড় বছর ধরেও গল্প শেষ হলো না......


যতদূর জানা যায় লকডাউনের সময় আমাদের প্রতিবেশী নেশাড়ু ভায়েরা অনেক সংযমী জীবনযাপন করেন। তাদের এই ত্যাগস্বীকার আমাদের কতূহলের জন্ম দেয়। সমগ্র জাতির সাথে তারাও মূহ্যমান হয়ে থাকেন। তাহলে কি এই অবসরে অনেকের নেশা ছুটে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আবার প্রবেশ করেন?...এই কতূহল মেটানোর আপাতত সুযোগ নেই।

এখানে শুধুমাত্র কৌতুক নিয়ে আমার বলা-কওয়া, তাই সীমাবদ্ধ থাকি কৌতুকের গণ্ডিতে।

করোনাকালীন ফুল লকডাউনের সময় F L off শপগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। তখন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলেও ‘রসিক’ ভায়েদের করার কিছু ছিলো না। তাহলে নতুন নতুন কৌতুক সৃষ্টি কীভাবে আর হবে? গলা ভিজে থাকলে তবেই না! তবেই না দর্শক শ্রোতার মনোরঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

       সুতরাং এ থেকে খুব ছোট একটি সিদ্ধান্ত সংযোজন করা যায়। সেটা হলো, লকডাউনের সময়ে তরলঘটিত কৌতুক সৃষ্টির লেভেল বা সংখ্যা শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে মন খারাপের লেভেল উঁচুতে উঠে পড়ে। যাক গে, এ নিয়ে আর অধিক চর্চার দরকার নেই।

       এখনকার এই গল্পটি আমাকে বলেছিলো একটা হাফ-বোকা মার্কা ছেলে। তার অভিজ্ঞতা তার জবানীতেই বরং ভালো শোনাবে—

“সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে, হয়তো খুব সরল আর অল্প বোকা বলে। আমি নিজেকে বোকা মনে করিনা কিন্তু অন্যেরা এটা মনে করে। সবসময় মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকি বলে আমার বন্ধুর সংখ্যা ০ বলা যায়। তাই বাইরে কখন্ কি কি নিয়ম-কানুন হচ্ছে ঠিক ঠিক বুঝতে দেরি হয়ে যায়। করোনার সময় একবার হয়েছে কি.... টিভি, মোবাইল, সংবাদপত্র সবখানে একটা প্রচারণা বেগে শুরু হলো, সব জায়গায় বলা হচ্ছে : ‘বাইরে বেরোনোর সময় কেবল দুটি জিনিস পরে যেতে ভুলবেন না। মাস্ক এবং গ্লাভস।’ বার বার শুনতে শুনতে কথাটা আমার মাথায় গেঁথে গেলো। একদিন বাবা বললেন,

— খোকা, আমার শরীরটা আজ ভালো নেই, তুই একটু বাজারে যা। 

এই বলে বাজারের টাকাটা হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি তার কামরা থেকে বের হয়ে এলাম।

অনেকদিন বাইরে বের হইনি। শুধু মনে হলো কিছু নিয়ম-কানুন পাল্টে গেছে। কিন্তু চটক ভাঙলো বাজারের মধ্যে দাঁড়িয়ে। বুঝলাম বিরাট একটা গড়বড় হয়ে গেছে। সরকারি নির্দেশমতো আমি মাস্ক ও গ্লাভস পরে গেছি ঠিকই অথচ বাকি সবাই দেখছি জামা প্যান্টও পরে গেছে। প্রত্যেকে আমাকে দেখে কেমন যেন চমকে চমকে উঠছে।”

       এবার প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য একটি গল্প শুরু করি। আমার হাফপ্যান্ট বয়েসের এক বন্ধু অনুযোগ প্রকাশ করে বললো,

— দোস্ত, আমার এই আঙুলগুলো একবার দেখ।

আমি ঝুঁকে পড়ে তার আঙুলগুলো দেখলাম। সবকটা একেবারে টিউব লাইটের মতো সাদা হয়ে গেছে। হাতের তালুর রেখাগুলো কোথাও খুঁজে পেলুম না। একদম লোপাট।

বললুম,

— এটা কী করে হলো, বল্?

সে বললো,

— ঐ স্যানিটাইজার আর সাবান ঘষে ঘষে। ঘুমের সময় বাদ দিয়ে, দিনে রাতে কেবল হাতের পরিচর্যা করে এই অবস্থা। কিছু ছুঁলেই মনে হয় হাত স্যানিটাইজ করে ফেলি। ম্যানিয়া বলতে পারিস। হাত দেখে এখন মনে হয় একটা সাদা কাগজ।

বললুম,

— এখন তোর অসুবিধা কী?

সে ডুকরে ওঠার মতো করে বললো,

— আঙুল ছাপ দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছি না।

জিজ্ঞেস করলুম,

— কেন? কীভাবে?

সে বললো,

— আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আধার লিঙ্ক করা যাচ্ছে না।

এবার আমি হেসে ফেলে বললুম,

— তাহলে তো তুই এখন দেশের নাগরিক নয়!

কাঁচুমাচু মুখ করে সে উত্তর দিলো,

— ছবি আর ঠিকানা যতক্ষণ মেলাতে পারছি ততক্ষণ হয়তো আমি নাগরিক আছি কিন্তু আমার এই আঙুলগুলো তাদের নাগরিকত্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে....

© আজ এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তী পর্বে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract