STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

গোয়েন্দা ধারাবাহিক

গোয়েন্দা ধারাবাহিক

5 mins
163

পর্ব চল্লিশ


আসামী পবন কুমারকে আদালতে তোলা হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকর শ্রীমান পবন কুমার ঢাঙ মহাশয় । মধ্য বয়সী এই খ্যাতনামা প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনার জীবনভর অনেক কিছু প্র্যাক্টিস করেছেন। তা' সে প্রেম করা থেকে কালা যাদু ভায়া ওকালতি , খুনজখম যাই হোক না কেন এতাবৎকাল সবেতেই তার কুশলতার পরিচয় রেখেছেন । শেষ পর্য্যন্ত তিনি কি করবেন - সে তো লাখ টাকার প্রশ্ন । 

অতএব তিনি বিচারকের সম্মুখে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনটাই স্বীকার করলেন না । যা তথ্য প্রমাণ দিয়ে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে সেগুলো সব হয় ভুয়ো অথবা ভয় দেখিয়ে আদায় করা বলে উল্টে তিনিই বিচারককে এর তদন্ত করতে অনুরোধ করলেন ।

বিচারক বললেন - দীর্ঘদিন ধরে আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। ধুরন্ধর পুলিশ অফিসার এবং গোয়েন্দারা তার তদন্ত করে চার্জশীট জমা দিয়েছেন - আর আপনি বলছেন সব ভুয়ো বা জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় ?

- ধর্মাবতার ! যে কথাগুলো আমার নয় তা' আপনার গোচরে আনা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। যদি অনুমতি পাই তবে নির্ভয়ে বলব ।

- বেশ বলুন , অনুমতি দেওয়া হল ।

বিপক্ষের উকিল আপ্রাণ বিরোধিতা করলেন । এমনকি এ যে তাঁর কোর্টের সময় বরবাদ করার একটি কুটিল প্রয়াস ; সে বিষয়েও বিচারককে অবগত করলেন । বললেন - বিশিষ্ট মনস্তত্ত্ববিদ ডক্টর সৃঞ্জয় বসুও এই বিষয়ের তদন্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন । সুতরাং ধর্মাবতার ! আপনিও তাঁর পাতা ফাঁদে পা দিলে ন্যায়বিচারের অবমাননা করা হবে ।

বিচারক বললেন - ন্যায় বিচারের জন্য অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে । সংবিধানে বলা আছে শত দোষী পার পেয়ে গেলেও একটিও নির্দোষ যাতে সাজা না পায় বিচারকদের সেই দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে । আর সে কারণেই এই আদালত তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুমতি দিয়েছেন ।

আদালতকক্ষে তুমুল হৈ-হট্টগোল বাদানুবাদ শুরু হল ।

দর্শকাসনে বসা লোকজন টেবিল চেয়ার ভাঙতে আরম্ভ করে দিল । এমন আসামীকে আর কোন সুযোগ দেওয়া চলবে না বলে জনতা চিৎকার জুড়ে দিল । 

বিচারক হাতুড়ি পিটিয়ে আদালতকক্ষ শান্ত রাখতে চেষ্টা করলেন । অপারগ হয়ে তিনি কক্ষ ছেড়ে চলে গেলেন। শুরু হল পুলিশের লাঠিচার্জ। বাইরে তখন হাজারো জনতাও এই বিশৃঙ্খলায় সামিল হল । কাতারে কাতারে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিল, রেপিড একশন ফোর্স, আসতে শুরু করল ।

মিঃ পবন কুমার ঢাঙ এই সুযোগটাই চেয়েছিলেন । পেয়েও গেলেন । কাল বিলম্ব না করে তিনি পুলিশ জনতার চোখে ফাঁকি দিয়ে সুড়ুৎ করে পাখির মত পলায়ন করলেন ।

পুলিশ তখন ব্যস্ত জনতা হঠাতে । আর পবন কুমারকে কোর্টে আনার দায়িত্বে যারা ছিলেন পবন কুমার তাঁদের মুখে বিষাক্ত ধোঁয়া উদ্গীরণ করলেন এবং পাখির মত সেখান থেকে উড়ে গেলেন ।

বিশ্বময়ী দেবীর অখণ্ড পরিবার আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন । সূর্য্যকিরণ দেখেছে পবন কুমার মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করছে আর সেই ধোঁয়ার ছোঁয়া যারাই পাচ্ছে ম্যাজিকের মত তারা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।

সূর্য্যকিরণ পবনকে বাধা দিতে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তখন পবন পাখির রূপ নিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সূর্য্যকিরণ হিং টিং ছট মন্ত্র পড়ে পবন কুমারকে আটকানোর চেষ্টা করল ।

আশ্চর্য্যের ব্যাপার ! ওই মন্ত্র তখন কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্ভেজাল সূর্য্যকুমার এক বিহঙ্গীর রূপ প্রাপ্ত হয়ে বিহঙ্গরূপী পবন কুমারকে অনুসরণ করে উড়ে যাচ্ছে । 

কত পাখি তো উড়ে যায়; তা কি কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে ? সেই রকম এই দুই বিহঙ্গ- বিহঙ্গী এমনই করে উড়ছে যেন তারা পরস্পরের প্রতি অনুরক্ত ।

এই পৃথিবী মায়াবী। মায়াময় এই সৃষ্টি। কথায় কথায় ফিরে আসে মায়া মোহের দ্বন্দ্ব । এক্ষেত্রেও যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল ।

পবন কুমার ( পাখিরূপী ) লক্ষ্য করল ঠিক তার পশ্চাতে অনুপ্রভা ধাওয়া করেছে - তার উপর প্রতিশোধ নিতে। দেরী না করে সে ওড়ার দিক পরিবর্তন করে বৈদিক ভিলেজে বিশ্বময়ী দেবীর বাড়ির ছাদে গিয়ে বসল । সে সময় শুভশ্রী শীতের দুপুরে ছাদে ঘোরাফেরা করছিল । একটি সুন্দর পাখি এসে বসেছে দেখে তার মনে খুব আনন্দ হল । সে পাখিটিকে ধরতে উদ্যত হল । অবাক কাণ্ড ! পাখিটি উড়ে গেল না । দিব্যি শুভশ্রীকে ধরা দিল। পাখিকে নিয়ে শুভশ্রী নেমে এল নীচে। 

বিশ্ভবয়ী দেবীকে পাখিটি দেখাতে তিনি আতঙ্কে শিউরে উঠলেন ।

- একি করেছিস তুই ? ওটা একটা বাজপাখি। ছেড়ে দে নইলে চোখ দুটো খুবলে খাবে ।

ভয় না পেয়ে শুভশ্রী বলল - ঠাম্মা ! তোমার চোখ দুটো গেছে। দেখছ না এটা চন্দনা ?

বুদ্ধিমতী বিশ্বময়ী দেবী বুঝতে পারলেন - একই জিনিস দু'জনে দু'রকম দেখতে পারে না । নিশ্চয় এর মধ্যে কোন ইল্যুশন আছে । অমনি তিনি শুভশ্রীর হাতে ঝটকা দিলেন। পাখিটা পড়ে গেল ।

ঠিক সেই সময় আর একটি পায়রার মত দেখতে এমন পাখি ঘরে ঢুকল । ওঁরা তা খেয়াল করেননি । পায়রাটি ঘরে ঢুকে নিজের রূপ বদল করে সূর্য্যকিরণ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে দেয়ালে টাঙানো তলোয়ার দিয়ে বাজপাখিকে মারতে গেল । লোহার স্পর্শে বাজপাখি পবন কুমার হয়ে গেল । তার ডানারূপী একটা হাত কাটা পড়েছে । যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন পবন কুমার। প্রচুর রক্তপাত হল । মুখে ' জল জল ' বলে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন । সূর্য্যকিরণ পুলিশকে ফোন করল । সে নিশ্চিত যে কাটা হাতে পবন কুমার পালিয়ে যেতে পারবে না । 

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - তখনই বুঝে গেছি । দাদুভাই! এই সুযোগ , তুই ওর গলাটা কেটে দে । নইলে আরও কোন বিপত্তি ঘটিয়ে দেবে ।

সূর্য্যকিরণ ঠাম্মার কথা মত সেই কাজ করতে যাবে পবন কুমার করুণ আবেদন জানাল তাঁকে প্রাণে না মারতে ।

আদালত কক্ষের ঘটনা সূর্য্যকিরণ ভোলেনি । সে আর কোন চান্স নিতে চাইল না । এক কোপে ধড় ও মাথা আলাদা করে দিয়ে শান্ত হয়ে গেল ।

যথাসময়ে পুলিশ এসে উপস্থিত হল । ভারী বুটের আওয়াজে সারা বাড়ি যেন কেঁপে উঠল । ডক্টর সৃঞ্জয় বসু এবং মিঃ করালীপ্রসাদ সেনশর্মা উভয়েই এসেছেন । মিঃ সেনশর্মা তো পিস্তল থেকে পরপর তিনবার পবন কুমারের বুকে গুলি করলেন ।

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - তোমাকে আর বীরত্ব দেখাতে হবে না অফিসার । হি ইজ অলরেডি ডেড । দেখছ না, ধড় মুণ্ডু আলাদা হয়ে গেছে !

- কে এমন করল ?

- কেন , আমার নাতি !

- কিন্তু কি ভাবে পবন কুমার এখানে এল ?

তখন সূর্য্যকিরণ সব ঘটনা খুলে বলল ।

শুভশ্রী পাশে দাঁড়িয়ে ছিল । সুর্য্যকিরণও যে এমন ম্যাজিক জানে - বিশ্বাস করতে পারছিল না । 

সূর্য্যকিরণ বলল - ঠাম্মা ! তারাপীঠের সেই সন্ন্যাসীকে তোমার মনে আছে ? যিনি একটা গাছের নীচে বসেছিলেন!

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - খুব মনে আছে । ফেরার সময় তো দেখলাম গাছসহ তিনি ভ্যানিশ ।

সূর্য্যকিরণ বলল - তিনিই হলেন সকল নাটের গুরু। পবন কুমারের দেহে আশ্রয় নিয়ে সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এখন তিনি আমার মধ্যে বিরাজ করছেন । আসলে তিনি মঙ্গলজনক কাজের জন্য পবন কুমারের আশ্রয়ে ছিলেন। 

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - আফিসার! অ্যারেস্ট হিম , আই মিন অ্যারেস্ট মিঃ সূর্য্যকিরণ চৌধুরী। 

সূর্য্যকিরণ বলল - হাসি পাচ্ছে ডক্টর । বুঝতে পারছি এ ছাড়া আপনাদের অন্য কিছু করার নেই। অ্যারেস্ট করার প্রয়োজন নেই । আমি কখনও কোন কুকর্ম করি নাই। তথাপি আমি আপনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।

শুভশ্রী বিশ্বময়ী দেবীর বুকে মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগল - ঠাম্মা ! সূর্য্যকে যে আমি ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। 

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - তোমার ভালোবাসায় জয়ী হয়েছে সূর্য্য । কিন্তু জান তো ও নিজে ভ্যাম্পায়ারের মত আচরণ করল বলে পবন কুমারের মত অসৎ লোকের শাস্তি হল । তথাপি পুলিশ ওকে গ্রেপ্তার করবেই কারণ আইনের অভিধানে ভ্যাম্পায়ার বা ভৌতিক বলে কোন শব্দ নেই ।

( সমাপ্ত )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror