Silvia Ghosh

Tragedy

1  

Silvia Ghosh

Tragedy

চাওয়া পাওয়া

চাওয়া পাওয়া

2 mins
1.1K


অনন্ত জীবনে আরো কোন কাজ করুক না করুক সকাল বিকেল নিয়ম করে খেলাটা চালিয়ে গেছে এই তেইশ বছর বয়স পর্যন্ত। বাড়িতে আরো তিনটে ভাই বোন। লেখাপড়াটা টেনে টুনে ঐ মাধ্যমিকের গণ্ডীতেই আটকে রেখেছে। কিন্তু স্টপার অনন্তকে ইন্টার-স্কুল সুব্রত কাপ কম্পিটিশনে জেতার পর খেপ খেলার জন্য আর বসে থাকতে হয়নি।


বাবার একটা ফলের ব্যবসা ছিল। সেই দিয়েই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফোরায় অবস্থা। তাই অনন্ত পড়াশোনা বাদ দিয়ে যখন খেপ খেলতে যেতো, তার বাপ বাপান্ত করতে থাকা মা মনে মনে অঙ্ক কষতে থাকতেন আর ভাবতেন পরের দিন দুটো হাঁসের ডিম অনন্ত'র জন্যে রেঁধে দেবেন ঐ খেপ খেলার টাকায়। আরেকটা মানুষ নিজের অপদার্থতায় ভিতরে ভিতরে গুমরে গুমরে ক্ষয়ে যেতে থাকেন। ফলে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলো না তাকে স্বর্গের রূপ দর্শনের জন্যে।


এরপর সত্যিই অনন্তের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। ছোট ভাইটা সেবার উচ্চমাধ্যমিক দেবে, বোনটা ক্লাস এইট আর সবচেয়ে ছোট্ট ভাইটা সবে ফোরে পড়ে। সব কেমন গোলমাল হয়ে গেলো অনন্তের জীবনে। সংসারটা কেমন রাশহীন আলগা হতে থাকলো। মা যেন পাথর হয়ে গেছেন এই আচমকা শোকে।


ফলের ব্যবসাটা তার দ্বারা হবে না এটা সে বুঝে গেছে। তাই তো ফুটবলের কর্মকর্তাদের দোরে দোরে ঘুরেছে একটা পার্ট টাইম কাজের জন্যে। শেষমেষ অর্কদা মানে সি.এ.বি-র এক চেনা শোনা দাদা অনন্তকে একটা কাজ দিলেন। তেমন উঁচু মানের কাজ নয়। তবুও মাস গেলে কিছু টাকার মাইনেটা হাতে পাবে । সংসারটা আর ছাড়খার হয়ে যাবে না। কিন্তু মার্কেটিং এর চাকরীটা যে তাকে সারাদিন বলের কাছেই আসতে দেয়না এখন। মনটা আজও স্বপ্ন দেখে অনন্ত'র, বল নিয়ে সে ছুটে চলেছে মাঝ মাঠ থেকে কর্ণার করে পেনাল্টি বক্সের ভিতরে.... এরপরে একটা শটেই কাঠির মধ্যেই ঢুকে যাবে বলটা! দর্শক আসন থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে গো... গো.....ল?? কিন্তু স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায় একটা অ্যালার্মের কর্কশ আওয়াজে... গোবোর ডাঙা ... গোবোর ডাঙা যেতে হবে সকাল ন টাতে...


অনন্ত বুঝে গেছে জীবন যুদ্ধে চাওয়াটা সব সময় পাওয়া হয়ে ওঠে না জীবনের !

তাই অফিস ব্যাগ হাতে কোর্ট প্যান্ট পরেও পুরো মনটা মেসির জার্সি আর তার প্রিয় ফুটবলের দিক...

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy