Nityananda Banerjee

Comedy Romance Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Comedy Romance Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব ঊনিশ

বৃত্তের বাইরে পর্ব ঊনিশ

5 mins
14


পর্ব ঊনিশ


ভিডিও কলে কথা চলছে রাজদীপ ও সম্পাতির । দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়েছে সম্পাতি । মা তো নয় ; যেন জেমস বণ্ড । রুমে কোন নজরদারি যন্ত্র লাগানো আছে কি না তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল সে ।

দোতলার রুমটা তার বাগানের দিকে । আম কাঠালের বড় বড় ডালগুলো প্রায় জানালায় ঘেঁষে গিয়েছে । কতবার বলেছে কয়েকটা ডাল কেটে ফেলতে । নানা কারণে তা' আর করা হয়নি ।

সম্পাতির সন্দেহ হল শম্ভুদা বা তেমন কেউ গাছে চড়ে তার কথাবার্তা শুনছে কি না । রাজদীপকে বলল - হোল্ড অন । আমি জানালাটা বন্ধ করে আসি ।

তারপর ফোন ধরে বলল - জেঠুর ( রাজদীপের বাবা ) কি হয়েছিল বল তো ! 

রাজদীপ বলল - সাডেন হার্ট ফেলিউর । আসলে চাপ নিতে পারেননি । 

- চাপ ? কিসের চাপ ?

- তোমার আমার ভবিষ্যৎ জীবনের চাপ । তোমরা ব্রাহ্মণ কুলীন । আমরা তন্তুবায় । এই চাপটাই সহ্য করতে না পেরে উল্টে দিলেন । অবশ্য আমার মা-ই উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দিয়েছিল ।

সম্পাতি বলল - সিমিলার ঘটনা ঘটেছিল আমার বাড়িতেও । তুমি তো জানো, আমার বাবার মারণ ব্যাধি আছে । মায়ের উস্কানিমূলক কথায় তিনিও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ।

রাজদীপ বলল - তবু তো তোমার বাবা টিকে গেলেন!

যাক এখন রাখি, শ্রাদ্ধের লিস্ট করতে হবে । বড়দারা ডাকছে।

সম্পাতি বলল - এর মধ্যে তোমাদের বাড়ি যেতে পারি ?

হাঁ হাঁ করে উঠল রাজদীপ । বলল - একটু ধৈর্য্য ধরে থাকো সমু ( সম্পাতিকে এই নামেই ডাকে রাজদীপ ) । তোমাকে দেখলে মা আবার নাটক শুরু করে দেবে । কাজ মিটৈ গেলে ডাকব তোমাকে । 

সম্পাতি বলল - আমার কিন্তু তোমাকে কাছে পেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।

রাজদীপ বলল - আমার কি করছে না সমু ? কতদিন তোমাকে চোখে দেখিনি । আচ্ছা, তুমিও কি আমার মত বলেছিলে যে আমরা দুজন দুজনের প্রতি প্রণয়াসক্ত ?

- তার জন্যই তো এত গণ্ডগোল বেধেছিল । জানো আমার দাদু একটা সম্বন্ধ ঠিক করে দিয়েছেন । এই তো গতকালই আমরা সবাই সেখানে গিয়েছিলাম ।

লাফিয়ে উঠল রাজদীপ ।

- কোথায় ? 

- সামনেই - গোপালপুরে । দাদুর বন্ধুর নাতির সঙ্গে । ছেলেটি কলকাতার নামকরা ডাক্তার । আরে ওই তো বাবার চিকিৎসা করছে !

মুখ শুকিয়ে গেল রাজদীপের । করুণ দৃষ্টে সম্পাতিকে বলল - তুমিও নিশ্চয় রাজী হয়ে গেছ ?

সম্পাতি বলল - সাময়িক ! পরিস্থিতির চাপে পড়ে । তবে ভেবো না । যতদূর এগিয়ে যায় যাক - আসল সময়ে ঠিক কেটে পড়ব ।

ফিক করে হেসে ফেলল সম্পাতি ।

রাজদীপ বলল - দেখ সমু, তোমার জন্য বাবাকে খোয়ালাম । ওদিকে তুমি যেন আমাকে ঠকিও না ।

সম্পাতি বলল - আরে রাখ তো ও সব ! খেলিয়ে যাচ্ছি, জান তো ! আমি এদেরকে খেলাচ্ছি শুধু । স্বয়ং ঈশ্বরও পারবে না তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ।

ফোনে আরেক জনের তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে এল ।

- কি রে ভাই ? কি রাজ কাজ করছিস ? কখন থেকে ডেকে চলেছি !

রাজদীপ সম্পাতির কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল । রুমের ভেতর থেকে গাছের ডাল ভাঙার শব্দ পেয়ে জানালা খুলে সম্পাতি দেখল শম্ভুদা এবং আরেক জন মিলে তার জানালার সামনের ডালগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে ফেলছে ।

জানালার নিকটতম দূরত্বে থেকে শম্ভু সম্পাতিকে দেখে হেসে বলল - দিদিমণি ! এতদিনে ফুরসৎ পেলাম ডাল ছাঁটাই করতে ।

সম্পাতি বলল - থ্যাঙ্ক ইউ শম্ভুদা ।

তাঁর নিজের রুমে বসে বসে সব দেখলেন, সব শুনলেন শুভমিতা দেবী ।

সম্পাতির অবর্তমানে তার রুমের বাগানের দিকের একটা জানালার চৌকাঠে - যেখানে চৌকাঠের দুটো কাঠে খিলান লাগানো থাকে - ছুতোর মিস্ত্রি ডাকিয়ে আগেই সেই খিলান খুলে একটা ফুটো করে রাখিয়েছিলেন শুভমিতা দেবী । 

কারণটা এখন জানা গেল । শম্ভুর মুখে মেয়ের অভিসারের কথা শুনে শম্ভুকে বললেন - আজ একজন লোক ডেকে দুপুরে খাবার পর মেয়ের রুমের জানালার সামনের ডালগুলো একটু একটু করে ভেঙে ফেলবি ।

শম্ভু বলল - পুরো ডালখানা নামিয়ে দিলেই হয় ।

বাধা দিয়ে শুভমিতা দেবী বললেন - না । শুধু যে ডালপালাগুলো জানালা ছুঁয়েছে শুধু সেগুলোই কাটবি । তাও আমি যখন বলব তখন । 

তারপরই তো খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে সম্পাতি গেটের বাইরে গিয়ে শম্ভুকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল । সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে শম্ভু এবং শুভমিতা দেবী মিলে কাজ হাসিল করে নিলেন । 

শম্ভুকে ধন্যবাদ দিয়ে সম্পাতি নিজের রুমে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ল । কাকতালীয় ভাবে রাজদীপের ভিডিও কল এল । সম্পাতি মজে গেল প্রেমে । ঠিক তখনই শম্ভু স্পাই ক্যামেরা গলিয়ে দিল ওই জানালার ফুটোয় অতি সন্তর্পনে । সম্পাতি কিছুই বুঝতে পারল না। ছবি এবং কথা রেকর্ড হল এবং লাইভ টেলিকাস্ট হয়ে শুভমিতা দেবীর চোখে এবং কানে পৌঁছে গেল । 

শম্ভুর কথায় খুশী হয়ে জানালা বন্ধ না করেই ভালো মেয়ের মত সম্পাতি চলে গেল বাবার নিকট। সেই সুযোগে শম্ভু ক্যামেরা বের করে নিল রুম থেকে এবং গাছ থেকে নেমে চলে এল গ্যারেজে ।

শুভমিতা দেবী ওদের পুরস্কৃত করলেন কিছু টাকা দিয়ে।

চিন্তা করতে লাগলেন স্বামীকে ঘটনার কথা বলবেন কি না । মেয়ে যে সত্যি সত্যিই প্রেমে পড়েছে এতে আর কোন সন্দেহ রইল না । 

তিনি সমস্যায় পড়লেন । এ মেয়ে তো যে সে মেয়ে নয় ! দস্তুরমত পোড় খাওয়া অভিনেত্রী । বাবা মায়ের ইচ্ছাকে হাতিয়ার করে এ ভাবে নিজের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে । তবে তিনিও শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ডটার অফ সুরঞ্জন চক্রবর্তী । তথাপি কেমন যেন ভয় ভয় মনে হল তাঁর । 

স্বামীকে অবগত করার অর্থ হল দুর্ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়া, আবার না জানালেও মেয়েকে উৎসাহ জোগানো হয় , অর্থাৎ মেয়ের কাজকর্ম সমর্থন করা । 

এই দ্বন্দ্বে পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে পড়লেন । বামুন বৌ এক গ্লাস জল এনে বলল - গলাখান ভিজিয়ে নাও দিদি , তোমাকে দেখে চিন্তা হচ্ছে । 

- আমার কিছু হয়নি গো বামুন বৌ । তুমি একটু বস তো ! একলা হাতে সব কাজ করে যাচ্ছ - যাও খানিক বিশ্রাম নাও ।

আদতে বামুন বৌ কিন্তু ঠিক ধরেছে । মেয়ের মতিগতি যা , কি যে কখন করে বসে ! সব সময় আশঙ্কা হয় । 

সম্পাতির খুব ইচ্ছা করছে রাজদীপের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে , অথচ এই মুহুর্তে তার কোনো চান্স নেই । রাজদীপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ধৈর্য্য ধরতে । সেইজন্য আর বাড়ি থেকে বেরোনোর কোন মতলব আঁটল না ।

বিভূতিভূষণের সামনে যেয়ে শয্যার উপরে বসল । মেয়েকে এরকম অপ্রত্যাশিত ভাবে তাঁর নিকট বসতে দেখে তিনি কম বিস্মিত হলেন না । 

বলে ফেললেন - কি বা হেতু আগমন মাতে !

সম্পাতি বলল - বাবা ! বিনা কারণে কি আসতে নেই ?

- না না । তা কেন ! তবে তুমি তো সচরাচর আসো না - তাই ভাবলাম কোন প্রয়োজনে এসেছ বোধ করি।

সম্পাতি হাসল । বলল - এমন ভাবে বলছ - আমার কিছু বলার থাকলেও আর বলতে পারব না ।

বিভূতিভূষণ বললেন - বলে ফেল । মা'র আসতে এখনও অনেক দেরী আছে ।

- না থাক ! আর বলব না ।

বিভূতিভূষণ মনে করলেন মেয়ের হয়তো অভিমান হয়ে গেল । সেইজন্য বললেন - মা গো ! বাবা হলে বুঝতে তার কি জ্বালা । এখন এসেও যদি না বল তো কষ্ট হবে না ?

সম্পাতি বলল - বললেও তো কষ্ট পেতে পার !

বিরক্ত হলেন বিভূতিভূষণ। 

- নাটক না করে সোজা কথা সোজা ভাবে বল । বিয়েতে যখন রাজী হয়েছ আমার আর কোন কষ্ট হবে না ।

সম্পাতি যেন এমনই কোন কথার অপেক্ষায় ছিল । বলল-

রাজদীপের বাবা মারা গেছেন । বন্ধুত্বের খাতিরে তার কাছে একবার দেখা করতে যেতে পারি ?

গম্ভীর হয়ে গেলেন বিভূতিভূষণ । এ কি ধর্মসঙ্কটে ফেলে দিল মেয়ে !

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy