বাইশে শ্রাবণ
বাইশে শ্রাবণ


আজ ১৯৪১ সাল। অনাথবাবু বাড়ির বৈঠকখানাতে বসেছিলেন । আকাশে মেঘের ঘনঘটা: গুরু গুরু গর্জন ও সৌদামিনীর চমক । আজ কি কিছু ঘটবে ?
হাতে একটা আধুনিক কবিতার বই ছিল অনাথবাবুর; একটু পড়তে চেষ্টা করেছিলেন । একেবারেই ভালো লাগেনি । না আছে ভাব, না আছে অর্থ। কেবল ভোগবাসনাই যেন আজকাল কবিদের উপজীব্য!
কোথায় সেই কবিগুরুর লেখা; কত মধুর! কত বাঙ্ময়! সেই লেখা কবিতা পড়লে মনে নতুন উৎসাহের সঞ্চার হয় ।..বাংলাগান, বাংলা সাহিত্য, বা বাংলা সংস্কৃতির জগতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান কত তা বুঝতে বাঙালির আরো অনেক অনেক বছর লাগবে ।...
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আজ রোগশয্যায় । আর লিখতে পারছেন না।
বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যত খুব একটা উজ্জ্বল নয় । নতুন যুগকে দিন দেখাবে, কে জানে!
হঠাৎ কড়াৎ করে বাজে পড়লো । মনে হলো ঘরের একদম কাছেই । অনাথবাবু চমকে উঠলেন ।
দেখলেন, প্রতিবেশী চরণ ছুটে আসছে ।
" কী হলো রে চরণ? ছুটছিস কেন ?"
" দা ঠাউর, তিনি আর নাই গো ।"
" কে রে ? কে নেই ?!"
" তিনি গো, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই আধঘন্টা আগে গত হলেন। "
অনাথবাবুর মাথা যেন ঘুরে গেল। তবে সব আভাসই ছিল!
কালও সূর্য উঠবে, দিন হবে, রাত আসবে ।
শুধু এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ঝরে গেল; ঝরার আগে সারা দুনিয়া আলোকিত করলো !
এই আলো সবাইকে রাস্তা দেখাবে , আরো অনেক বছর!!