Rifat Islam

Others

4.5  

Rifat Islam

Others

অসমাপ্ত প্রেম!

অসমাপ্ত প্রেম!

2 mins
231


সবই ঠিকঠাক চলছিলো। সুখে শান্তিতে ছিলাম দুজন। এইতো সেদিনই হাতে হাত ধরে পাশাপাশি বসে গল্প করেছি। পায়ে পা মিলিয়ে চলেছি বহু পথ।দুজন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেজ, কলিং এ কাটিয়েছি কতো নির্ঘুম রাত। 

একদিন বাসা থেকে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরুচ্ছি। এইসময় হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।ফোন ধরতেই পুষ্পর (আদ্রিতার ছোট বোন ) কান্না শুনতে পেলাম।বললাম...


আমিঃ কি হয়েছে?

পুষ্পঃ....(শুধু কান্না করছে কোনো কথা বলছে না)

আমিঃ আদ্রিতা (আমার প্রিয়) কই? ওর কি কিছু হয়েছে?

পুষ্পঃ আদ্রিতা হসপিটালে। (কান্নার স্বরে)


আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ওর ব্লাড ক্যান্সার আবার তীব্র আকার ধারণ করেছে(মাঝে মাঝেই আদ্রিতা বলতো ব্লাড ক্যান্সারের কথা)।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। হসপিটালে গেলাম তাকে এক নজর দেখার জন্য। 


কিন্তু দেখা হলো না। আমাদের সম্পর্কটা তো এখনও কাগজে কলমে পূর্ণতা পায় নি। ইচ্ছে করছিলো ছুটে গিয়ে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু অদ্ভুত এই সমাজ তা মেনে নিবে না। ডক্টর এর কাছ থেকে শুনতে পেলাম অবস্থা খুব খারাপ। 


সারাদিন কিছু করতে পারলাম না। হসপিটালের সামনেই ছিলাম সারাদিন। পুষ্পর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম। ওর বাবা-মায়ের সাথে থাকায় ফোন ধরতে পারে নি।


দুশ্চিন্তায় বাসায় এসে শুয়েছিলাম। সারারাত ঘুমাতে পারি নি। শুধু দুজনের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছিলো আর চোখেরা মেতে উঠেছিল নোনা জলের বৃষ্টিতে। 


সকাল হতেই ছুটে গেলাম হসপিটালে। হসপিটালে পৌছানোর আগেই পুষ্পর ফোন। ওর নাম্বার দেখেই বুকের বা পাশে কেমন ব্যাথা অনুভব করলাম। বুকের বা পাশে কেমন শূন্যতা অনুভব করলাম। ফোন রিসিভ করতেই...


পুষ্পঃ আদ্রিতা আর নেই...

আমিঃ কি বলছো(বিস্মিত হয়ে) 

পুষ্পঃ...... 


পুষ্প আর কোনো কথা বলল না। হসপিতালে গিয়ে যখন নিশ্চিত হলাম সত্যই আমার বুকের বা পাশটা শূন্য হয়ে গিয়েছে,ততক্ষনে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছি।


শেষ বারের মত তাকে দেখতে পারলাম না। শেষ বারের মত তার মুখ থেকে ভালোবাসি শোনা হলো না। খুব কাছাকাছি থেকেও আর তাকে স্পর্শ করা হলো না।


কথা বলতে পারিনি দীর্ঘক্ষণ। কিছুটা অচেতন হয়ে ছিলাম। একটু স্বাভাবিক হতেই ছুটে যাই আদ্রিতাদের বাড়ির সামনে। ততক্ষনে তার জীবনের শেষ আয়োজন চলছে। 


আমার জন্য বাড়ির ভিতরে যাওয়ার অনুমতি ছিলোনা। এই শহরে সম্পর্কটা গভীর হলেও পাশাপাশি থাকাটা খুবই গৌণ। এজন্যই হয়তো শোনা যায় "স্ত্রীর মৃত্যুর থেকে প্রেমিকার মৃত্যু খুব কষ্টের" কারণ স্ত্রীর মৃত্যুতে লাশের অধিকার থাকে কিন্তু প্রেমিকার মৃত্যুতে লাশের কোনো অধিকার থাকে না।


রাত তখন ১০ টা, তার সব আয়োজন শেষে তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে। তার সাথে পথ চলার মুহূর্ত, তার সাথে কাটানো মুহূর্ত, তার মুখে "ভালোবাসি" শোনার আকাঙ্খা এসব মনে করতে করতে অশ্রুসিক্ত নিথর দেহটি তার কবরের পাশে দাড়িয়ে। 


চারপাশ বিদঘুটে অন্ধকার। নির্জন পরিবেশ। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে তার কন্ঠে ভালোবাসি শব্দটা। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে অনেক বেশি ভালোবাসি। 


হয়তো তাকে প্রতিদিনই দেখতে আসবো।পাশাপাশি সময় কাটাবো। কিন্তু তার মুখ থেকে আর ভালোবাসি শব্দটা শোনা যাবে না। জড়িয়ে ধরে কখনো ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি করা হবেনা!


Rate this content
Log in