অজানা পথে ( পর্ব-১৮ )
অজানা পথে ( পর্ব-১৮ )
পরদিন দশটার পর বিনয় অফিস যাবে,রাতে ফিরতে হয়ত পারবে না।তাকে বিশেষ একটা গোপন তদন্ত কাজে শহরের বাইরে থাকতে হবে।ফোর্স থাকবে।এসব গোপনীয়তা বিনয় কোন দ্বিতীয় ব্যক্তিকে জানায় না।সে কী কাজ করে তাই প্রতিবেশীদের অনেকেই জানে না, কেউ জানে না সে রাজ্যের আই বি পুলিশ,কেউ জানে রেল পুলিশ কেউ আবার সরকারী কাজ করে এইটুকু। বিনয় এখানে না হলেও দশ বছর বেশী এসেছিল। তেমন মেলামেশা করে না।অফিস আর বাড়ি।শিবানী ছিল লাজুক মুখচোরা সে বাড়ির বাইরেই একা যেত না।
বিনয়ের সাথেই বাজার সিনেমা বা বেড়াতে যেত। বাড়িতে না থাকলে বিনয় তাই যাবতীয় বাজার হাট করে যেত।এই পরিস্থিতিতে ময়নার বাড়ির বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।ময়না তো কাজের মাসী, দুধ ওয়ালা অবধি যাতে না আসে বলেছে।
বিকালে বিনয় যা যা বাড়ির বাজার লাগবে ফল মিষ্টি সকালেই এনেছিল। মুদি সব্জি সব আছে।শুধুমাত্র দুটো দুধের প্যাকেট আর ময়নার গায়ে মুখে মাখার কিছু প্রসাধন এইসব কিনে আনল।আর সতর্কতা হিসাবে,নিজের নামে একটা বাড়তি মোবাইল সিম কিনে এনেছিল। ময়নাকে বলল,
" তোমার মোবাইল নম্বর ওরা জানে। পুলিশকে বললে তোমার ঐ নাম্বারে ফোন করলে তোমার লোকেশন ওরা জানতে পারবে ।তোমার মোবাইল সিমটা দাও ভেঙ্গে ফেলে দেবো,আর এই নতুন সিম কার্ড এনেছি তোমার ফোনে ভরে দেখি কালকের মধ্যেই যাতে চালু হয় ভালো, না হলে আবার আমি কাল অফিস ডিউটি গেলে যোগাযোগ করা যাবে না।"
ময়না তার মোবাইল দিয়ে বলল ,
"দাদা আপনি যা করার করে দিন। আমি এসব কিছুই বুঝি না।"
বিনয় ময়নার মোবাইল সিম কার্ড বের করে ভেঙ্গে জানালা দিয়ে বড় ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিল।নতুন সিম ভরে করণীয় কাজ করে ময়নাকে বলল এবার রাখো।কোম্পানি একটা ম্যাসেজ আসবে তার পর তথ্য যাচাই করে অ্যাকটিভেট হবে।
"নতুন কার্ড তো আপনার নামে দাদা!মোবাইল এখন আপনার কাছেই থাক।কাল আবার যাবার সময়ে দিয়ে যাবেন।"
বিনয় বলল,
"তোমার কোন মোবাইলের নেশা নেই!"
"না দাদা,একটু ছিল, এখন আর নেই ,সংসারের কাজ আর গোপালকে নিয়ে এখন আমি অনেক আনন্দে থাকব।মোবাইল দরকার হবে না।"
বিনয় বলল,
"তোমার কথার ধরন আর মোবাইলের ঝোঁক নেই, যেন শিবানীর মতই,এ বাড়িতে ময়না তুমি যে মাত্র কাল রাতে এসেছ মনে হচ্ছে না, কত যেন পুরোন আপনজন।"
ময়না খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,
"ঠিক দাদা আমারও খুব সব আপন আপন লাগছে। আপনি ভীষণ ভাল দাদা।"
"সব ঈশ্বরের খেলা। না হলে এমনভাবে যোগাযোগ হয় কী! তোমার এই আগের পেশা থেকে দশ হাত দুরে নিজেকে রাখতাম, তোমাকে দেখে কেমন মনে হল, তুমি পারবে আমার গোপালের মা হতে।"
ময়না পরিতৃপ্ত মুখে বলল,
"গোপাল আমাকে খুব ভালবাসছে, ঘাড়ে চেপে গলা জড়িয়ে কত আবদার করছে, চুপিচুপি কথা বলছে। কত সব ওর সাথে খেলতে বলছে।"
"তুমি ও যা বলছে শুনবে,তাতে তোমারও ভাল সময় কাটবে। এখন গোপাল কী করছে!"
"আমি একটা ছবি আঁকলাম বললাম দেখে দেখে খাতায় আঁকতে হবে।ভাল হলে রূপকথার গল্প বলব।ও খুব খুশী।"
"রূপকথার গল্প তুমি জানো!"
আমি তো পড়তে খুব ভালবাসতাম, আমাদের স্কুলের লাইব্রেরি থেকে পুজো আর গ্রীষ্মের ছুটির আগে গল্প বই স্কুল থেকে দিতো।ঠাকুরমার ঝুলি।মোহনের গল্প কত সব ভুত প্রেত গোয়েন্দাদের গল্প পড়তাম।"
ময়না রাতে দশটার মধ্যেই বিনয়ের কথামত রান্না করে খেয়ে নিল।বিনয়ের কোন জ্বালা নেই, আটার হাতে গড়া চারটে রুটি আর ছোলার ডাল , কাঁচা পেঁয়াজ আর দুটো রসগোল্লা। ময়না তাই খেলো।
বিনয় বলল "তুমি ইচ্ছা মত খাবে।ডিমের ওমলেট বা ওবেলার রান্নার যদি মাংস থাকে খেতে পারো।"
ময়নার ইচ্ছা থাক না থাক হেসে বলল,
"রাতে তো আমি হাল্কা খাই।আপনার মতই আমি খাব।মাংস আর ঝোল আছে।ফ্রীজে নষ্ট হবে না কাল দিনে খাবেন।"
বিনয় বলল,"আমি একা নয় যা আছে আধাআধি খাব।"
ময়না গোপালকে দুধ রুটি আর মিষ্টি গল্প বলতে বলতে খাওয়াচ্ছিল।
বিনয়ের মনে হচ্ছিল, যেন শিবানী ফিরে এসে ছেলেকে কত ভালবেসে আদর করে খাওয়াচ্ছে।
আজও গতরাতের মত বিনয় ময়নার পাশের ঘরে শুয়েছিল ময়না গোপালের সাথে শুয়েছিল।আজ আর গোপনে নয় মায়ের মতই কত আদরে গোপাল ময়নার পাশে শুয়েছিল। তার ঘুম আসছিল না। দুপুরে অনেক ঘুমিয়েছিল।মায়ের কাছে আবদার করে গল্প শুনছিল। ময়নার ঘুম একটু আসছিল তবু গোপালের আবদারে গল্প বলে যাচ্ছিল।
পাশের ঘরে বিনয় শুলেও দরজা লাগনো ছিল কিন্তু খিল ছিল না।তখন সবে মাত্র বিনয়ের ঘুমটা ধরেছে,গোপালের কান্নাকাটি আর চিৎকারে বিনয়ের ঘুম ভেঙ্গে দেখে গোপাল তার ঘরে তার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
"মা কেমন করছে বাবা! মায়ের খুব কষ্ট হচ্ছে খুব হাঁপাচ্ছে ঘামছে,আমাকে গল্প বলতে বলতে কেমন হয়ে গেল।" তারপর আবার কাঁদতে লাগল।
বিনয় গোপালকে নিয়ে দ্রুত ময়নার ঘরে এল।
সত্যিই তো! ময়না কেমন করছে মনে হচ্ছিল খুব তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে,কেমন হাঁপাচ্ছিল,গরমে ঘেমে সারা শরীর ভিজে গেছে, ময়নার বুকের ব্রাউজ খোলা,অবসন্ন অবচেতন মনে হাত দিয়ে নিজের বুকটা বার বার ঘষছে।
বিনয়ের ফাস্ট এড ট্রেনিং ছিল। তাড়াতাড়ি ময়নার উন্মুক্ত বুকে দুহাত দিয়ে তার বুকের মধ্যে ময়নার হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক করতে ম্যসেজের মত করতে করতে ময়নার মুখে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে তার শরীরের অক্সিজেন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করতে লাগল। গোপালকে বলল মায়ের হাতের তালু আর পা তলা জোরে জোরে ঘষতে থাক। বিনয়ের মন চরম উদ্বিগ্ন একী হল! সেও ভীষণ ঘামছিল, মিনিট তিন চার পর ময়না কেমন ধরফরিয়ে বিছানার উপর উঠে বসে খুব হাঁপাতে লাগল।
বিনয় বুঝল এ যাত্রায় বিপদ কাটল।
ময়না কেমন হতভম্ব হয়ে বিনয় জিজ্ঞেস করল
" কী হয়েছিল আমার! "
ক্রমশ