অজানা পথে(পর্ব ১৭)
অজানা পথে(পর্ব ১৭)
বিনয় বিষন্ন মনে বলল,
"জরায়ু ক্যান্সার,ওর খুব সহ্যগুন আর এত সংসারী সন্তান পাগল মা, স্বামীর যত্ন নিয়েই ব্যস্ত নিজের কষ্ট ভাবতই না।কিছুই বলত না। আমি মিলনের সময় ওর আড়ষ্টভাব দেখে চেপে ধরলাম তুমি আগে এমন করতে না!তখন বলল ওর মিলন কালে কষ্ট হয় জ্বালা যন্ত্রনা করে তলপেটে খুব ব্যাথা লাগে।"
আমি সেদিনই স্ত্রী বিশেষজ্ঞকে দেখলাম। তারপর অনেক কান্ড অনেক চিকিৎসা, কলকাতা বোম্বে সব ছুটেছি।গোপালকে মামার বাড়ি রেখে ছুটি নিয়ে তিন মাস, খ্যাপা কুকুরের মত দৌড়াদৌড়ি করেছি।তখন থার্ড স্টেজ, বোম্বে টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, কলকাতায় ফিরে যান। এখানে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যাপেলো ক্যান্সার ইউনিট সব ঘুরলাম। কেমো নিতে নিতে ও কেমন আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ল।শরীর দুর্বল ক্ষীণ, চুল উঠে কেমন নিজেকে আয়নায় দেখে কাঁদত। বাঁচার খুব স্বপ্ন, ছেলের জন্য কী টান! শেষটা বলত আমি তো বাঁচব না,আমার জন্য তুমি হায়রানী হচ্ছ। ছেলেটার সব টাকা আমার জন্য ফালতু নষ্ট করছ।ওর কি থাকবে! পি এফে ধার,কো অপারেটিভে ধার,গহনা অবধি বেচে দিচ্ছ। আমি বলতাম তোমার জন্য সব বেচব দরকারে বাড়ি বেচব।"
ও চমকে গেল!"কেন বেচবে! তোমার তো আর কিছুই নেই!"
কী জানি একদিকে যন্ত্রনার কষ্ট আর সন্তান নিঃস্ব হবে আমাকে বলত।"সংসারে তুমিই স্তম্ভ, আর স্ত্রীর তুমি একমাত্র স্বামী নও!আগে তুমি গোপালের বাবা, ছেলে তোমার ভবিষ্যত ওর সব কিছু শেষ করবে না।আমি বাঁচব না,আর কদিন বড়জোর এক দুবছর! সেটাই আমার কাছে অনেক বলতাম,আমার এক কলিগের স্ত্রী নবছর বেঁচে আছে।ও পাগল হয়ে যেত,এত কষ্ট করে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ছেলেকে নিঃস্ব করব!
মায়ের কোন বিকল্প নেই, আমার বাল্য কালে বাবা মারা যায় ,আজ যা কিছু মায়ের জন্য। সারাজীবন মা কষ্ট করল,চাকরী পেলাম তার পর ভাবলাম শহরে বাড়ি করব মাকে শহরের বাড়িতে আনব তার পর বিয়ে সংসার, মা আমার ঘর তৈরি আরাম্ভ দেখে খুব আনন্দ তবে ভোগ করতে পারেনি।মা মারা যায়।মায়ের কোন বিকল্প হয় না, তাই গোপালের কথা বলতাম ও তো মা বলতে পারছে ,মায়ের আশীর্বাদ পাচ্ছে।
যাক অনেক বকলাম। এঘরেই তুমি গোপাল শোবে এ ছবি দেখলেই আমার মন আনচান করে সব হারিয়ে মনে হয় পাগল হয়ে যাব।"
"দাদা চা করব! চারটে তো হল।"
"হ্যাঁ করো,তোমার কথা চা খেতে খেতে আমার ঘরে শুনব। গোপাল ঘুমুচ্ছে।পাঁচটার পর তুলে ওকে দুধ আর ড্রাই প্রোটিন ফুড মিশিয়ে দেবে।"
বিনয়ের ঘরে ময়না চা বিস্কুট নিয়ে গেল। বিনয় লাল চা খায় ময়না জানে। বিকালে বিস্কুট খায় না।ময়না জানা ছিল না। বিনয় হেসে বলল এনেছ যখন চা টা দুই খাই।"
"দাদা টা মানে!"
"বিস্কুট, আমি সকালে চায়ের সাথে খাই বিকালে শুধু র চা, তুমি বিকালে তোমার চায়ের সাথে বিস্কুট খাবে।আমি না খাই তোমার যা ভালো লাগে খাবে।"
ময়না বলে,"আমার চায়ের নেশা নেই ,এখানে দাদার চায়ের নেশা তাই আমিও চায়ের নেশা করব।"
চা পান করতে করতে একটু হেসে ময়না বলল ,
"দাদা আপনার সাথে অন্য গল্প করব আপনি কেমন মন খারাপ করা গল্প করছেন। আপনার কষ্ট আমারও খুব দুঃখ কষ্ট হচ্ছিল। "
বিনয় বলল,শোন ময়না দুঃখ কষ্ট এসব আমরা বোকা মানুষ করি,ঈশ্বর সব আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন। যদি শিবানী বেঁচে থাকত ,তোমার সাথে দেখা হত না।আর তুমি আমার বাড়ি আজ থাকতে না। তুমিও খুব ভাল মেয়ে,আর কত বয়স কম তোমার! এখনও মনে হয় আঠারো হয়েছে কীনা সন্দেহ যা তুমি বললে।"
ময়না মুখ নামিয়ে কেমন চুপচাপ ছিল।
"তুমি আবার মন খারাপ করছ।"বিনয় বলল।
ময়না মুখ তুলে বলে
"না দাদা আপনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভাল লাগছে।"
"তুমি তখন বললে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলে কিন্তু রেজাল্ট বের হবার আগেই তোমার জীবনে ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসে।তোমার স্কুল গ্রামের নাম সব বলো আমি আমার পরিচয়ে ঠিক কৌশলে তোমার মার্কসিট সার্টিফিকেট স্কুল থেকে বের করে আনব।"
দাদা আমি ভাল ছাত্রী ছিলাম। গঙ্গার পাশে সিরাজদহ আমাদের গ্রাম, কেতুগ্রাম থানার মধ্যে।গঙ্গার ওপারে মুর্শিদাবাদ জেলা।আমাদের গ্রামের স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মনে হয় আমার সব মার্কসিট সার্টিফিকেট স্কুলে থাকবে,কে আর নিয়ে যাবে।আমি হয়ত মরে গেছি সৎমা গ্রামে ফিরে বলেছে। কলকাতার বেশ্যাপল্লির মাসী আমাকে বলেছিল তুই বেঁচে আছিস,তোর সৎ মা ছাড়া কেউ জানে না।তোর বাবা আত্মীয়স্বজন গ্রামের মানুষ সবাই জানে তুই গঙ্গার জলে তলিয়ে গেছিস। লঞ্চ থেকে পড়ে গেছিস তখন অন্ধকার। তোর মা তোর নামে হাওড়া থানায় ডাইরি পর্যন্ত করবে এমন কথা আছে।
তোকে কুচিয়ে কুচিয়ে কেটে রান্না করে খেলেও কেউ টের পায় না।আর এই নিষিদ্ধ পল্লিতে হাজার অবরাধ খুন অপহরণ হয়,পুলিশ এদিকে নজর দেয় না। ওদের নাকি ভাগের ব্যপার আছে।বড় বড় রাজনৈতিক দলের লিডার এই সব নিয়ন্ত্রণ করে।আমাকে তো বলেই দিল একটু ট্যাঁফু করবি দেবে হুকে ঝুলিয়ে। আমি ভয়ে কাঁদতে লাগলাম। বলল,তুই আমার কথা মত চললে খেতে পাবি।মারধর খাবি না।বাবুরা তোকে আদর করবে এখন তো তুই ফুল নয় ফুলকলি বলে খুব হাসতে লাগল।"
"হুকে ঝুলিয়ে দেবো মানে!"
"ওরে বাবা,ভাবলে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।সে অনেক বড় কাহিনী।এত মানুষ নৃশংস হয় ভাবতে আমার বমি চলে আসে।হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
"ওরা মানুষ! সব্বাই কে আমি সাজা দেবো।জাল গুটিয়ে যত বড় রুই কাতলা হোক সব্বাইকে জেলের ঘানি টানাব।"